আমি সেই সময় রান্না ঘরের গন্ধ সহ্য করতাম না।
#নিজের_বলার_মত_একটা_গল্প
গল্পের শুরু এখানে
২০০০ সাল বাবা মায়ের সাথে চট্টগ্রাম আসা। বাবা আর্মিতে চাকুরির সুবাদে চট্টগ্রাম এর আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুলে আসা। সেখানে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলে নাইনে ভর্তি।
সেই সেন্টারে জীবনের সুন্দর অধ্যায়ের শুরু। কিশোরী মেয়ে নানান রঙ্গীন স্বপ্ন দুচোখে তখন পড়াশোনা বন্ধু বান্ধব এটাই জীবন।
একটা স্বপ্ন অবশ্য ছোট বেলা থেকে লালন করেছি আমি শিক্ষক হবো। স্কুলে থাকাকালিন আমি আমার স্যার ম্যাডামদের ফলো করি কিভাবে তারা পড়ান, পড়া আদায় করেন।
দেখতে দেখতে এসএসসি দিলাম কিছুদিন পর কলেজে ভর্তি হলাম। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। আমি বলি ওটা বড়লোকদের কলেজ আমরা মধ্যবিত্তরা কেবল বাবার চাকুরির সুবাদে চান্স পাই কাটন ওখানে সব ধনাঢ্য ব্যাবসায়ি,সচিব, সরকারি আমলাদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দ থাকে আসন।
কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে এক বসন্ত আমার রঙ্গিন হয় কারও আগমনে। কিন্ত সেই বসন্তের রঙ্গে রঙ্গিন হওয়া হয়নি ২/৩ মাস সেই বসন্ত ছিলো। তখন চিঠীর যুগ তাতেই প্রেমের প্রজাপতি উড়ে বেড়াতো। যদিও সেই প্রেমিক আমার মায়ের কাছে তার প্রেমের পরিনয় ঘটাতে আমার হাত চেয়েছিলো। আম্মু এইচএসসি পরীক্ষা অবধি সময় চাইলো।
ঠিক তার ১৫ দিন পর বর্তমান পতি মহাশয় তার বোনের জামাই নিয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিলেন। ধার্মিক আর গোবেচারা ইঞ্জিনিয়ার ছেলে দেখে আমার বাবা এই পাত্র ছাড়তে নারাজ। আমি বাবার বড় মেয়ে। বাবার কথার অমর্যাদা না করে ২/৩ মাসের কাচা প্রেম ছিন্ন করে বিয়েতে অনিচ্ছায় রাজি হলাম।
চলনে বলনে স্মার্ট ছিলাম বইকি। মেয়েরা বাবার ঘরের মায়ায় ভাই বোনের মায়ায় কাদে বিয়ের সময়। আমি কেদেছিলাম অসমাপ্ত প্রেমের জন্য আরেক টা কারন ছিলো আমার বর মহাশয় ইয়া বড় দাড়ি আর জুব্বা পরে। আমি কেদেছি এই দরবেশ নিয়ে কিভাবে জীবন যাবে বন্ধু বান্ধব দের সামনে কি করে যাবো??
সে যাই হোক নিজের স্বপ্ন,প্রেম আর শখ সব একপাশে রেখে কাবিনে সই করেছি।
সেই শুরু সংসার।
স্কুল,কলেজে আমি কবিতা আবৃতি,গল্প বলা, বিতর্ক, বক্তৃতা এসব করতাম। বলা চলে বেশ প্রথম সারিতে ছিলাম।
বিয়ের ২ মাস পর আমার এইচএসসি পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা হলো। তখন আমি বাবার বাসাতে থাকি বর আবুল খায়ের স্টিল মিলে জব করেন। আমি তখনো শশুর বাড়ি যাইনি।
পরীক্ষার মাঝামাঝি আব্বুর পোষ্টিং হলো ময়মনসিংহ। আমি পড়লাম ভালো বিপদে না পারছি আব্বু আম্মুর সাথে যেতে আবার বরের সাথে থাকবো তার জন্য প্রস্তুত নই।
ঠিক সেই সময় বর একটা ৩ রুমের বাসা ভাড়া করলেন। আব্বু, আম্মু চলে গেলেন ময়মনসিংহ আমি ভাড়া বাসায় উঠলাম। এই প্রথম ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে বাইরে থাকা এ নতুন জীবন।
এদিকে বরের বেতন মাত্র ৭০০০ টাকা বাসা ভাড়া ২৫০০ বাড়ীতে শাশুড়ী আছেন মায়ের খরচ ২০০০ তারপর মাস চলা।
এসব কিভাবে হবে কি করবো? এদিকে পরীক্ষা শেষ রেজাল্টের অপেক্ষা।। চিটাগং আব্বু আম্মু ছাড়া ৫/৬ মাস হয়ে গেছে। আমি ময়মনসিংহ যাবো সে কথা বরকে বলতে পারিনা কারন ২৫০ টাকা গাড়ী ভাড়া তখন একটু বেশি মনে হতো।
আব্বু এলো আমাকে নিতে আব্বুর সাথে গিয়ে কিছুদিন বেড়ালাম।
আমার বেশ মনে আছে তখন ২/৩ বছর আমি তাকে আমার কোনো আবদারের কথা বলিনি যেখানে মাসের বাজার করাটা হতো টেনেটুনে শখ পূরন বিলাসীতা এমনি করে চলে যাচ্ছে দিনকাল। আব্বু আম্মু বেশ ভালো সাপোর্ট দিতো।
আমর এইচএসসির রেজাল্ট হলো তখন বললাম আমি অনার্স পড়বো তিনি আর পড়াবেন না। আমার অঘোষিত এক যুদ্ধ চলছে। কান্নাকাটি, রিকোয়েস্ট কোনো কিছুই মন গলেনি আমিও হাল ছাড়িনি। ভিতরের তৃষ্ণা রয়ে গেলো। এদিকে বিয়ের দুবছর গেলো টের পেলাম মা হবো।
সেই মা হবার আরেক যুদ্ধ একা বাসায় থাকি বর অফিস করে শিফটিং ডিউটি ( যা আজও আছে)৮-১০ ঘন্টা অফিসে বাকি সময় বাসায় থাকলেও আমার কষ্ট যেনো শেষ হয়না। প্রথম মা হবো একা একা জানিনা বুঝিনা কিছু খেতে মন চাইলে এক আমি তখন ভালো রাধতেও পারিনা। এরমাঝে প্রচন্ড বমি প্রবলেম।
তবে আজ মনে হয় সেই সময় বর পাখির ডানায় আগলে রেখেছে। অফিসে যাওয়ার আগে সব রান্না করে রেখে যেতো না হয় এসে রান্না করতো বাসার সব কাজ করতো নিজ হাতে।
আমি সেই সময় রান্না ঘরের গন্ধ সহ্য করতাম না। সারাদিন না খেয়ে শুয়ে থাকতাম আর কাদতাম। নয়মাসের যুদ্ধ শেষ আমি মা হলাম হাসপাতালে রাতের দুটোয় আমার জন্য কবুতর দিয়ে ভাত যোগাড় করলো আমার শাশুড়ীর নির্দেশ। সারারাত নামাজ পড়েছে তার ফাকে ফাকে আমার আর ছেলেকে দেখেছে।
প্রতিটা মুহুর্তে তাকে পাশে পেয়েছি। সন্তান এলো আমাদের জীবনে সেই একটা সময় স্বপ্ন ভরা জীবন আনন্দের হাত ছানি।
২০০৬ এ হুজাইফার জন্ম তারপর আবার নতুন অধ্যায়ের শুরু। বর তার কিছুদিন পর জব চেঞ্জ করলো এদিকে সংসারে আয় ব্যায় দুটো বাড়লো এবার নিজেদের কিছু স্বচ্ছলতার দেখা পেলাম ২০১১ তে আমাদের ঘরে এলো হুমায়রা।
সেই একই ভাবে আগলে রেখেছে আমার বর তার সন্তানের মাকে। হুমায়রার জন্মের পর আমি আবার বায়না ধরলাম পড়বো। আমার পড়াশোনা শেষ করবো।।
সে এবার মানলো আমাকে ভর্তি করলো উন্মুক্ত থেকে শেষ করলাম ৩ বছরের বিএসএস কোর্স। হুমায়রা ছোট প্রচন্ড শীতের সকালে বাচ্চাদের ছোটকালার বাসায় রেখে কলেজে যেতাম ক্লাস করতে। আগের দিন রান্না করে সব রেডি করে তবে যেতাম। বরও যথেষ্ট হেল্প করলেও দু বাচ্চা নিয়ে ১০ বছর পর পড়াশোনা কতটা কঠিন তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।।
প্রথম সেমিস্টারে ২/৩ সাবজেক্ট খারাপ হলো সেগুলো সহ ২য় সেমিস্টারের প্রস্তুতি কতোটা কঠিন তা ভাবলে গায়ে কাটা দিয়ে উঠে।
দু বাচচা, শাশুড়ী সংসারের কাজ তারপর রাতে বই নিয়ে বসলে মাথা আর কাজ করেনা। অনেক কষ্টে সবগুলো সেমিষ্টার শেষ করলাম পাশ ও করলাম তবে রেজাল্ট মন মতো হলো না। এরপর এমএ করবো করবো করেও সাহস করতে পারছিনা।
নিজের স্বপ্নের দাফন বিয়েতে করেছি কিন্তু কিছু করার স্পৃহা তো রয়ে গেলো সেই গল্প আগামি পর্বে
তবে এই #নিজের_বলার_মতো_একটা_গল্প_ফাউন্ডেশন আমাকে আমার সোনালি অতীত ফিরিয়ে দিয়েছে। আমার কবিতার ভালোবাসা আবৃত্তির জায়গা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
প্রতিটা মিটআপ শেষে আড্ডা হয় গান হয় কবিতা হয়। আমি উপাস্থাপনা ও করেছিলাম কলেজে সেই উপাস্থাপনা ও আবার করতে পারছি।
কথা বলছি প্রতিনিয়ত নিজেকে চিনতে পারছি। তৈরি হয়েছে কিছু সম্পর্ক ভাই বোন বন্ধুত্বের।
খুব সহজ ভাষায় বলি নিজের যে গুনটার সাথে নিজের পরিচয় ছিলো না আর আমি জানি আমি পারবো আমাকে তো পারতেই হবে। ভালোবাসার জায়গা এই ফাউন্ডেশন।।।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০৫**
Date:- ২৪/০৮/২০২১
ফেরদৌস আরা ইয়াসমিন
জেলাঃ ফেনী
উপজেলাঃ সোনাগাজি
বর্তমান অবস্থানঃ চট্টগ্রাম
ব্যাচ ১৪
রেজিষ্ট্রেশন ৬৪৬৮০
Ferdous's Closet
কাজ করছি
নকশিকাঁথা, শীতলপাটি
কুশির পন্য,কুশির জামা
হাতের কাজের থ্রিপিস