জীবন অনেক বৈচিত্র্যময়।
আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই। আমার জীবনের গল্প সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইলো।
মানুষের জীবনে কখন কি পরিবর্তন আসে তা কেউ বলতে পারে না।
জীবন অনেক বৈচিত্র্যময়। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মধ্যবিত্ত বলা হয়তো ভূল হবে। গরীব ঘরের সন্তান আমি।। আমার বাসা রংপুর জেলার মাহীগঞ্জে।যেহেতু রংপুর হাঁড়িভাঙ্গা আম ও সুপারির জন্য বিখ্যাত তাই আমার বাবা ছোট পরিসরে সুপারি নিয়ে ব্যবসা করতেন। সংসারে অভাব ছিল কিন্তু কোনো মতে দিন চলে যেত আমাদের দিন।
আমরা ছিলাম ৩ ভাই ও ১ বোন। আমি ভাই-বোনের মধ্যে বড়। বাবার আয়ে আমাদের দিন চলত। ধীরে ধীরে আমি বড় হতে শুরু করি। পড়ালেখায় মোটামুটি ভালো ছিলাম তাই মা-বাবার ইচ্ছা ছিল অনেক দূর পর্যন্ত পড়ানোর।যখন আমি ১০ম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার বিদ্যালয় থেকে আমাকে এস.এস.সি. পরীক্ষার জন্য ফরম ফিল আপ করতে বলা হয়। কিন্তু আমার বাবার অত টাকা দেয়ার সামর্থ্য ছিল না। তবুও তারা খুব চেষ্টা করেছিল কিন্তু এর মধ্যে ফরম ফিল আপের সময় পার হয়ে যায়।আমি ফরম ফিল আপ করতে পারিনা আর এস.এস.সি পরীক্ষাও দিতে পারি না। পরিবারের অভাব অনটন দেখে তখন আমি নেমে পড়ি কর্মজীবনে।
যেহেতু আমি পরিবারের বড় সন্তান তাই আমার উপর পরিবারের অনেক দায়িত্ব থাকে। আমি তাই কর্মজীবনে প্রবেশ করি।আমার কর্মজীবনের শুরুতে আমি প্রথম এক কসমেটিকস এর দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করি এবং বেতন পাচ্ছিলাম ২৫০০ টাকা করে। এর মাঝে আরও ভালো কাজের এবং বেশি বেতনের কাজের সন্ধানে সব সময় চেষ্টা করতে থাকি।।দিন যেতে যেতে একদিন একটা শো-রুমের কাজ পাই।
শুরু হয় আমার জীবনের নতুন এক অধ্যায় ।আমি শো-রুমে কাজ শুরু করি। কিন্তু অন্যের অধীনে কাজ করা অনেক কষ্টের একটা ব্যাপার তবুও করতে হবেই। সেখানে কাজ করা অবস্থায় আমি দেখেছি আমাদের মত মানুষদের কত অবহেলা পোহাতে হয়।যারা সাধারণ কর্মচারী ছিল তাদেরকে যা তা করে বকাবকি করত মালিক। রোজ কারণে অকারণে তাদেরকে গালি দিত। আমাকে কখনও গালি দেয়নি কেননা আমি সিনিয়র ছিলাম। কিন্তু অন্যেদের গালি দিত দেখে আমার খুব কষ্ট হতো। মনে হতো কবে যে আমি নিজে কিছু করতে পারব । কেননা অন্যের অধীনে কাজ করলে এমন বকাবকি শুনতে হবে এবং মার পর্যন্ত খেতে হবে।। মনে মনে সাধ জাগে আমার উদ্যোক্তা হওয়ার। কিন্তু আমার কোনো মূলধন ছিল না।
আমি ফেসবুক ব্যবহার করতাম।। তখন সেখানে পরিচিত-অপরিচিত দেশ-বিদেশের অনেক মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হয়।অনেকের সাথে টুকটাক কথা হয়।। ২০১৮ সালে আমাদের দেশের কিন্তু বর্তমান ওমান প্রবাসী Abdul Hakim ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। অনেক দিন যাবৎ আমাদের কথা হয়।ভাই আমার পারিবারিক অবস্থা জানতে চান। আমি ভাইকে সব বিষয়ে বলি।পরে ভাই আমাকে অনেক সাপোর্ট করে এবং অনুপ্রেরণা জোগায় জীবনে এগিয়ে যাওয়ার।ভাই আমার সাথে ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা করেন।
একপর্যায়ে আমাকে তিনি যুক্ত করেন প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে।আমি এখানে রেজিস্ট্রেশন করে আজীবন সদস্য হয়ে যাই।প্রিয় মেন্টরের সেশন গুলো ফলো করতে বলে ভাই আমাকে এবং আমি ভাইয়ের কথা মত শিখতে থাকি।ভাই আমাকে বলে ব্যবসা শুরু করতে। তখন তিনি আমাকে মূলধন দিয়ে সাহায্য করেন এবং আমি আমার এলাকার বিখ্যাত পণ্য সুপারি দিয়ে শুরু করি ব্যবসা জীবন। চলছিল ব্যবসা জীবন।এর মাঝে একটা ধাক্কা খাই।আমি খুব ঘাবড়ে যাই এবং ভয় পাই। বিশেষ করে আমার খারাপ লাগে আব্দুল হাকিম ভাইয়ের জন্য। কেননা উনি এত দূরে থাকেন আর বিশ্বাস করে আমাকে দিয়ে ব্যবসা করাচ্ছেন।আমি কি পারব ভাইয়ের বিশ্বাস রক্ষা করতে???
তখন আমি ভাইয়ের সাথে কথা বলি।।ভাই এত ভালো মনের একজন মানুষ এবং এতো সুন্দর করে আমাকে সব বুঝিয়ে আশ্বস্ত করলেন যা আমার কল্পনার বাইরে। ভাইয়ের সাথে কথা বলে আমার সব ভয় দূর হয়ে যায়।ভাই আমাকে বলেন ব্যবসা জীবনে ছোট-বড় ধাক্কা আসতেই পারে।লাভ-লস তো ব্যবসার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।লস হলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। তিনি আমাকে বলেন ব্যবসায় যা হবে সব তুমি আমাকে সত্যি বলবা। কেননা সততার সাথে কাজ করলে কখনও কেউ বিফলে যায় না। কখনও আমার কাছে কিছু লুকাবা না। তখন তিনি আমাকে আবারও নতুন করে শুরু করতে বলেন এবং পরামর্শ দেন সুপারির পাশাপাশি কাপড়ের ব্যবসা করার।
ভাই যেহেতু প্রবাসী আর আমার কোনো মূলধন নেই তাই আমার সহযোগিতায় দেশে অর্থাৎ আমার এলাকায় রংপুরে ভাই একটা কাপড়ের শো-রুম দিয়ে দেয়। যদিও ছোট পরিসরে কিন্তু আমরা শুরু করেছি। এস.কে. ট্রেডার্স এন্ড আফসানা কালেকশন নামে একটা শো-রুম দেই আমরা রংপুরে।শো-রুম ভাইয়ের কিন্তু রাজত্ব আমার,পুরো দায়িত্ব আমার উপর।আমি নিজের মতো পরিচালনা করছি এই ব্যবসা। চেষ্টা করি সব সময় ভাইয়ের বিশ্বাস টিকিয়ে রাখতে। কেননা উনার সহযোগিতার জন্য আজ আমি এতোটা স্বচ্ছল জীবন যাপন করছি।
আমার কাছে সব ধরনের গার্মেন্ট পণ্য পাচ্ছেন।আমি কাজ করছি মেয়েদের থ্রি পিস, বোরকা,খিমার বোরকা সহ সব ধরনের ল্যাডিস আইটেম নিয়ে। অনলাইন ও অফলাইনে বিজনেস করছি আমি।
করোনা কালীন সময়ে বিজনেসের অবস্থা খুব বেশি ভালো না গেলেও আলহামদুলিল্লাহ ভালো চলছে এখন। দেশের প্রায় ১৫-২০ টা জেলায় আমার শো-রুম থেকে পাইকারি পণ্য যায়। এছাড়াও অনলাইনে আল্লাহর রহমতে ভালো সেল করতে পারছি। সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী আমি।
যেকোন প্রয়জন এ কল করুনঃ
01751084793
01992590383
পরিশেষে একটা কথা সকলকেই বলতে চাই, জীবনে লেগে থাকার কোনো বিকল্প নেই।লেগে থাকলে সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ। আমি অপেক্ষায় আছি আপনাদের সকলের সহযোগিতায় একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০৫**
Date:- ২৪/০৮/২০২১
আমি
আলমগীর হোসেন
ব্যাচঃ১১
রেজিষ্ট্রেশন ঃ৩৫৯৬২
প্রোঃএস কে ট্রেডার্স এন্ড Afsana Collection
জেলাঃরংপুর।