সকালে ঘুম ভাঙলো সূর্যের আলো চোখে পড়াতে
আফ্রিকার ডায়েরি:
২০০৭ সাল এর শেষের দিকে , টিউশনি করে বাড়ি ফিরছি ।পথে দুঃসম্পর্কের এক ভগ্নিপতি সাথে দেখা।
উনি কৌশল বিনিময় শেষে জিজ্ঞেস করল -কি করছো ?
আমি বললাম - পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশন করে যাচ্ছি।
সে বললো - তোর বাবা বিদেশ থেকে চলে এসেছে শারীরিক অবস্থা ততটা ভালো না, ফ্যামিলির খরচ বাবা-মায়ের দেখাশোনা ভাই-বোনদের পড়াশোনা সবকিছুই বড়দের উপর বর্তায়। তুই ফ্যামিলির বড়। এখন যদি কিছু না করিস। টিউশনি করে কি সবকিছু ম্যানেজ করা সম্ভব?
আর পড়াশোনা করে , মামা বা টাকা না থাকলে ভালো একটা চাকরি পাওয়া সম্ভব না।
আমি মন দিয়ে তার কথা শুনে যাচ্ছি ।
অনেক কথা বলে, এক পর্যায়ে উনি বলল - আমার ছেলে সাউথ আফ্রিকা গিয়েছে এক বছর হল খুব ভাল অবস্থায় আছেন প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা পাঠায় । সাউথ আফ্রিকা বিজনেস করার সুযোগ আছে , তুই যদি যেতে চাও তাহলে আমি তোকে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
.
আমি তাকে বললাম - বিদেশ যাওয়ার কথা কখনো চিন্তাও করিনি। বাবাও কোনভাবে আমাকে বিদেশ পাঠাতে রাজি না। যদি মাকে বলে রাজি করানো যায়।
উনি বললো - আমি কথা বলে রাজি করাবো।
.
এরপর আমার এই ভগ্নিপতি আমাদের বাড়িতে গিয়ে মা বাবা দুজনকে রাজি করে করায়। বলল উনার ছোট ভাই সাউথ আফ্রিকায় লোক পাঠায়।
আমাকে উনার নাম্বার দিয়ে বলে আমি যেন উনার সাথে যোগাযোগ করি। উনি আমার বিষয়টা ওনার ভাইকে জানাবে। আমি উনার ভাইকে ফোন দিই। উনার নাম কালাম(ছদ্মনাম)। কালাম ভাই কে ফোন দিয়ে আমার সাউথ আফ্রিকা যাওয়ার ইচ্ছাটা জানাই। এবং সাউথ আফ্রিকার কন্ডিশন জানতে চাই। উনি বলে আমি ঢাকায় আছি নোয়াখালী ফিরলে তোমাকে ফোন দেব। এক সপ্তাহ পর উনি আমাকে ফোন দিয়ে বলল গ্রামের বাড়িতে আসছি তুমি দ্রুত আমার সাথে দেখা কর ।
আমি উনার সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখলাম সাউথ আফ্রিকা থেকে ছুটিতে আবার কালাম ভাইয়ের ফুফাতো ভাই আসছেন ।
কালাম ভাই তার ফুফাতো ভাইকে লক্ষ্য করে বললো সে সাউথ আফ্রিকা থাকে । আমি চাইলে ওনার কাছ থেকে সাউথের বিষয় যেনে নিতে পারবো ।কালাম ভাইয়ের ফুফাতো ভাইয়ের নাম মিরন(ছদ্মনাম) ।
মিরন ভাই ভাই আমাকে সাউথ আফ্রিকার পজেটিভ দিকগুলো তুলে ধরে। সবাই শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য করে। উনারা টাকা পাল্লায় মেপে নেয়। দেশে নাকি সে কয়েকটা বাড়ির মালিক। সব সাউথ আফ্রিকা দিয়েই হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বড় ধরনের লোভ দেখায় ।
.
কালাম ভাই আমাকে বলল - যদি যেতে চাও তাহলে ইমিডিয়েটলি পাসপোর্ট দিয়ে দিয়ে দাও। ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা লাগবে। পাসপোর্ট ও টাকা জমা দিলে এক সপ্তাহের মধ্যে প্লাইট দিয়ে দেবে। এবং সরাসরি নেবে। কোন সমস্যা কিংবা কষ্ট হবে না। তোমাকে সাউথ আফ্রিকা রিসিভ করবে আমার বড় ভাইয়ের ছেলে , নাম রাশেদ(ছদ্মনাম) ।
সব কিছু বলার সময় আমার ঐ ভগ্নিপতিও ছিল সামনে।
তাদের এসব কথা শুনে সাউথ আফ্রিকার প্রতি মন ছুটে গেল নাছোড়বান্দা হয়ে গেলাম। ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট করে, বাবার বিদেশ ফেরত দু লাখ ৬৫ হাজার টাকা ছিল তার সাথে জমি বন্ধক ঋণ নিয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা মিলিয়ে উনার বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসলাম। উনি আমাকে বলল এক সপ্তাহের ভেতর ফ্লাইট হয়ে যাবে। এরপর প্রায় তিন মাস হয়ে গেল কিন্তু উনার এক সপ্তাহ আর শেষ হয়না।
টাকা আর পাসপোর্ট নেয়ার জন্য প্রতিদিন সকাল বিকাল রাত্রে আমার খোঁজখবর নিত এখন টাকা পাওয়ার পর আমাকে ফোন দেয় না , উল্টো আমি ফোন দিলে ধরতে চায়না। মাঝে মাঝে ধরলেও খুব বিরক্তি প্রকাশ করেন। যেন আমি উনাকে অনৈতিকভাবে বিরক্ত করছি।
.
অবস্থা বেগতিক দেখে চাপ দিতে লাগলাম সাউথ আফ্রিকা যাব না পড়াশোনা করব আমার টাকা পাসপোর্ট যেন ফেরত দেয়। উনি আমার চাপ দেখে একদিন গভীর রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বলে আগামীকাল সকাল ৮ টায় ফ্লাইট আমি যেন তার আগে ঢাকায় পৌঁছি। কিন্তু সময়টা অনেক রাতে তাই রাত্রে রওনা দিলাম না। পরদিন সকালে রওনা দিলাম। বিকেলে গিয়ে উনি থাকে ঢাকা চকবাজার হাজীবাল্লু রোড সেখানে দেখা করি। আমার প্রতি খুব বিরক্ত হয়। বলে আমার কারণে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফ্লাইট ক্যানসেল করতে বাধ্য হয়েছে ।আমি উনাকে বললাম যে এত গভীর রাত্রে ফোন দিয়েছেন তাই আসা সম্ভব হয়নি। আপনি আগে ফোন দিলে আমি অবশ্যই আসতাম।
.
এর পর এক সপ্তাহ ঢাকায় পড়ে রইলাম। কোন গতি না দেখে গ্রামে ফিরলাম। কারো সাথে আলোচনা করি নাই আমি যে সাউথ আফ্রিকা যাব। ঢাকা থেকে যাওয়ার পরে বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায়। এখন একেক জন একেক কথা বলতে লাগলো। কেউ বলে সাউথ আফ্রিকার যেতে অনেক কষ্ট, ওখানে গেলে আফ্রিকান মেয়ে বিয়ে করতে হয় , ওখানের আফ্রিকানরা বাঙ্গালিদের খুন করে ফেলে, গাছে মানুষ খায়। তখন আবার না যাওয়ার চিন্তা মাথায় ঢুকলো।
.
এই কথা গুলো শোনার পর ভয় পেয়ে গেলাম ,কালাম ভাইকে ফোন দিয়ে বলতে লাগলাম আমি কোনভাবেই যাবনা।কিন্তু টাকা হাতে যাওয়ার পরে উনি এত শক্ত হয়েছে টাকা পাসপোর্ট ফেরত দিতে রাজি না। কয়দিন যাওয়ার পরে ২০০৮ এর ১ লা এপ্রিল রাত্রে ফোন দিয়ে বলে আমি যেন সকালে ঢাকা যাই আমার ফ্লাইট নিশ্চিত। তার কথার স্টাইলে বুঝতে পারলাম এবার ফ্লাইট মোটামুটি নিশ্চিত।
.
দোসরা এপ্রিল ২০০৮ সকাল আটটায় নোয়াখালী থেকে বের হলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে । গন্তব্য অজানা সাউথ আফ্রিকা ।
গাড়িতে বসে ভাবনায় একাকার হয়ে গেলাম অর্থনৈতিক মুক্তির উদ্দেশ্যে নিজের আপন দেশ জন্মভূমি ছেড়ে অন্য আরেকটা দেশে যাচ্ছি।
.
ঢাকায় পৌঁছার পর কালাম ভাইয়ের সাথে দেখা করি,
উনি বললো - ফ্লাইট দেওয়ার চেষ্টা করতেছে।
৪ঠা এপ্রিল, শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে কালাম ভাই আমাকে একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে নিয়ে যায় ।
এজেন্সি তে ঢুকে এজেন্সির রিসেপশনে বসা লোকটির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়।সে আমাকে আরো কয়েকজন লোক দেখিয়ে তাদের সাথে বসতে বলে।যাদের সাথে বসলাম তারাও আমার মত সাউথ আফ্রিকায় যাওয়ার জন্য এখানে এসেছে । এবার বুঝলাম যে কালাম ভাই আসলে একজন স্থানিয় দালাল ।
.
আমরা বসে আছি অনেকক্ষন , এর মধ্যে একজন ভদ্রলোক এজেন্সিতে প্রবেশ করল। উনার প্রবেশ ধরন দেখেই বুঝতে পারলাম উনি এখানকার বড় কর্মকর্তা। প্রায় দশ মিনিট পর উনি আমাদের কাছে এসে দেখা করলেন। বললেন আমার নাম গোলাম সারওয়ার। আমি সাউথ আফ্রিকার সিটিজেন , সাত দিন হলো বাড়ি এসেছি। বাড়ি এসেই এক্সিডেন্ট করে হাত ভেঙ্গে ফেলেছি। তোমাদের সবাইকে আমি আমার সাথে করে নিয়ে যাব।
.
এজেন্সির কর্মকর্তারা আমাদের আট জনের একটা গ্রুপ তৈরি করে প্রায় এক ঘন্টা যাওয়ার বিষয়ে ব্রিফিং দেয়। কোথায় কি করতে হবে , কিভাবে কোন বিষয় মেনটেন করতে হবে। সাথে মোজাম্বিকের একটি ভিসা দেয়। সবকিছু দেখে বুঝতে পারলাম বৈধভাবে সাউথ আফ্রিকা যাচ্ছি না।
.
আমাদের আটজনকে ঢাকা তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিয়ে গেল এবং বলে দিল কোথায় কোন কাউন্টারে যাব এবং অবশ্যই সবাই একসাথে না থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করতে হবে । উনাদের এয়ারপোর্টের সব জায়গায় লোক সেট করা আছে।
.
যেভাবে যেতে বললো সেভাবে আরব ইমারতের কাউন্টারে গিয়ে বোর্ডিং পাস নিলাম তারপর ইমিগ্রেশন করলাম। সর্বশেষ বোর্ডিং কনফার্ম করতে গিয়ে আমরা এক এক করে সবাই প্লেনের এনএসআই কর্মকর্তার নিকট আটকে গেলাম। আমরা আমাদের আটকে যাওয়ার নিউজ এজেন্সির লোকদের জানালাম।ওরা আমাদের আশ্বস্ত করল কোন সমস্যা নেই তারা ফ্লাইট করাবে।
খুবই শেষ মুহূর্তে এন এস আইর কাছে কেউ একজন একটা ফোন দিলো এবং তারা আমাদের প্লেনে প্রবেশের অনুমতি দিলো।
.
রাত ৮ টা,আমার সিট খুঁজে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম একটু স্বস্তি আসলো , দুপুর দুটো থেকে এখন পর্যন্ত অন্যরকম বিরম্বনা পোহালাম , খাওয়ার কথাটাও মনে ছিল না। সিটে বসে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । সবাইকে ফোন দিয়ে জানালাম আমি সাউথ আফ্রিকা চলে যাচ্ছি।
.
প্রায় সড়ে চার ঘণ্টা পর দুবাই এয়ারপোর্ট পৌঁছলাম। বিমানের ভিতরে গোলাম সারওয়ারের সাথে দেখা হয়েছিল। দুবাই এয়ারপোর্টে ১০ ঘন্টা ট্রানজিটে ছিলাম। দুবাই সময় দুপুর ১২ টায় তানজিনিয়ার দারুসসালামের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম , প্রায় ৬ ঘন্টা পর দারুসসালাম পৌঁছলাম। দারুসসালামে বেশিক্ষণ ছিলাম না। কিছুক্ষণ পরেই দারুসসালাম থেকে মোজাম্বিকের পেম্বার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। প্লেনের ভিতর যখন আমরা মোজাম্বিকের পেম্বার কাছাকাছি পৌঁছলাম , তখন গোপনে এজেন্সি হতে দেয়া মোজাম্বিকের ভিসাটা পাসপোর্টে লাগালাম। এ বিষয়টি এজেন্সির লোকেরা আমাদের বলে দিয়েছিলো ।
.
পেম্বা ল্যান্ড করার পর ইমিগ্রেশন করতে গেলাম।গোলাম সরোয়ার ভাইকে ছেড়ে দিল। আমরা আটজন আটকে গেলাম। আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে এক পাশে আমাদের কে বসিয়ে রাখল। বেশ কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলাম দূর থেকে একটি কৃষ্ণাঙ্গ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছিল ।আমরা মনোযোগ সহকারে যখন তার দিকে তাকালাম তখন তার হাতে কিছু একটা দেখা যাচ্ছিল। পরে বুঝতে পারলাম বাংলাদেশের একটি দশ টাকার নোট। বুঝতে পারলাম নিশ্চয়ই উনি আমাদের বিষয়ে অবগত আছেন। উনার ডাকে সাড়া দিয়ে উনার কাছে যেতেই আমাদের আটজনকে উনাকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিল। আমরা ওনাকে অনুসরণ করে ওনার পেছনে এয়ারপোর্ট হতে বেরিয়ে আসলাম। কেউ আমাদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করল না।কোন পুলিশ ও আমাদেরকে কোন ভাবে হয়রানি করল না।বাইরে এসে উনার গাড়িতে প্রবেশ করলাম ।উনি দীর্ঘ তিন ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে একটি প্রত্যন্ত গ্রামে নিয়ে যায় এবং সেখানে একটি বাড়িতে ঢুকে। বাড়িতে ঢোকার পরে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। কক্ষে প্রবেশ করে আমরা তো হতভম্ব হয়ে গেলাম। ছোট্ট একটি কক্ষ। তারমধ্যে ঠাসাঠাসি করে ৭০ থেকে ৮০ জন বাঙালি বসে আছে।
.
আমাদের যে কৃষ্ণাঙ্গ পেম্বা এয়ারপোর্টে রিসিভ করল তার নাম ছিল ভিকি , মুল নাম সুলাইমান সে একজন মুসলমান।রুমে ঢুকে আমরা দাঁড়ানোর জায়গা টা পেলাম না এমনিতে আগের বাঙালি গুলো নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা পাচ্ছে না তারপরে বাড়তি আবার আমরা প্রবেশ করলাম। পূর্ববর্তী বাঙ্গালিদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম রুমের মধ্যে কেউ কেউ ১০ দিন কেউ ১৫ দিন কেউ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতেছে।
.
বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার চক্রের বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে তারা এখানে ভিকির কাছে রিসিভ হয়েছে । মোজাম্বিকে অবস্থানরত বাংলাদেশি বিভিন্ন দালালের সাথে ভিকি দীর্ঘদিনের মানব পাচারের সম্পর্ক আছে। পূর্ববর্তী বাঙালিদের সাথে কথা বলে আমরা হতাশ হলাম। কারণ এখানে কে কতদিন থাকতে হবে সেটা নির্ধারিত হয় বাংলাদেশে আর মোজাম্বিকে অবস্থানরত মানব পাচার চক্রের মানসিকতা আর ইচ্ছার উপর।
.
এখানে খাওয়া-দাওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মাঝেমধ্যে ২৪ ঘন্টায় একবার লাল চা ও এক হাত লম্বা শক্ত রুটি দেয় কোন কোন দিন সেটাও জোটে না। বাঙালিদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভিকি আরও ৪-৫ জন কৃষ্ণাঙ্গ রেখেছেন যারা লাঠিসোটা নিয়ে সব সময় বসে থাকে , আশেপাশে ঘোরাফেরা করে ,বাংগালিরা কেউ কোন ধরনের কথাবার্তা কিংবা গোলমাল করলে তার উপর চলবে নির্মম নির্যাতন ।পাশে ছোট্ট একটা বাথরুম আছে। শোয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই বসে বসে যতক্ষণ ঘুমানো যায়। এখানে যারা অবস্থানরত আছে তারা বিভিন্ন পাচারকারী দালালদের কাছ থেকে গ্রুপ আকারে এসেছে । আমাদের দালালের পাঠানো আমরা আসার আগে এখানে পাঠিয়েছে ১৫ জন ,আমরা আমরা আটজন মোট ২৩ জন।
.
ভিকি যাদের ক্লিয়ারেন্স পায় তাদের সামনের দিকে আগানো সুযোগ করে দেয়। এর মাঝে ভিকি সকাল-বিকেল বিভিন্ন দালাদের লোকগুলোর ক্লিয়ারেন্স পেয়ে ৪ ও ৬ জন লোক নিয়ে যায় পেম্বা থেকে মাফুতুর উদ্যেশ্যে ফ্লাইট করে । আমাদের ক্লিয়ারেন্স না পেয়ে আমাদের কোন গতি হলো না। তারই মধ্যে একদিন সকালবেলা গোলাম সরোয়ার আরো দুজন লোক নিয়েএসে আমাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালালো । আমাদের সাথে ডলার, মোবাইল যা ছিল সবকিছু কেড়ে নিল । আমাদের কমপ্লিটলি অসহায় করে দিয়ে গেল । এখানে যারা রুমের মধ্যে দীর্ঘদিন বন্দী ছিল , অস্বাভাবিক জীবনের জন্য অসুস্থ হয়েছিল। ভিকি ও তার সহযোগীদের তারা বিভিন্নভাবে বলেছিল তাদের অসুস্থতার কথা ।কিন্তু তারা তাদের অসুস্থতার প্রতি কোনো কর্ণপাত করেনি। আমাদের মধ্যে হতে একদিন এক বাঙালি মারা গেল।গভীর রাত্রে কেউ কোন শব্দ করতে পারলো না।ভিকি ও তার সহযোগীরা এসে তার লাশ বাইরে নিয়ে গেল। আমরা আর জানতে পারলাম না লাশের সর্বশেষে কি পরিনতি হয়েছিল।
.
এক সপ্তাহ পর ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরে একদিন দুপুর দুটোর ফ্লাইটে ভিকি পেম্বা থেকে মাফুতু ৪ জনকে ফ্লাইট করিয়ে দেয়। ডোমেস্টিক প্লেনে দুই ঘণ্টা পর আমরা মাপুতো ল্যান্ড করি। মাফুতু নামার পরে একদল কৃষ্ণাঙ্গ এসে আমাদের 8 জনকে খুব দ্রুত বেগে বের করে নিয়ে আসে এবং তাদের গাড়ির কাছে নিয়ে এসে খুব চিৎকার করে বলতে থাকে পুলিশ আসতেছে তোমাদের কে এরেস্ট করা হবে তোমাদের কাছে যা আছে সব দিয়ে দাও। আমাদের কাছে কোন টাকা পয়সা না পেয়ে রাগান্বিত হয়ে উশৃংখল আচরণ করল মারধর করলো । শেষে আমাদেরকে তারা ড্রাইভিং করে গাড়ি চালিয়ে নির্জন একটি বাড়িতে নিয়ে গেল ।
.
বাড়ি ছিল খুবই অন্ধকার , মানব শূন্য । সে বাড়িতে তারা আমাদের নামিয়ে দিয়ে চেক করা আরম্ভ করলো। চেক করে টাকা-পয়সা না পেয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করল, আমাদের কাপড়-চোপড় নিয়ে গেল , ব্যাগের ভেতরে যার যে জিনিসপত্র পেল সেটা নিয়ে গেল ।সেই বাড়িতে দুদিন দু রাত ছিলাম ।একদিন গভীর রাত্রে সেখান থেকে আমাদেরকে আবার এক ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে আরেকটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে দেখি আরো ১৭ জন মানুষ বন্দি , তার মধ্যে কিছু ভারতীয় ,পাকিস্তানী আর কিছু সোমালিয়া, ইথোপিয়ান রয়েছে ।তাদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম আর বেশিদূর নেই , আমরা মোজাম্বিক আর সাউথ আফ্রিকার বর্ডার এর কাছাকাছি চলে এসেছি।
.
সকালে ঘুম ভাঙলো সূর্যের আলো চোখে পড়াতে। চোখ খুলেই দেখি আমাদের চারপাশে ওনেকগুলো কৃষ্ণাঙ্গ ছেলে এবং মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে এবং আমাদের নিয়ে মজা নিচ্ছে। চুল নাক কান দেখে ধরে আশ্চর্য হচ্ছে। তাদের মজা নেয়া ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হচ্ছে আমরা কোন এক আজব প্রাণী ।তারা যেমন আমাদের দেখে অবাক হয়েছে আমরাও তাদের চুলের ধরন শারীরিক গঠন দেখে অবাক হয়েছি। সেই বাড়িতে ছিলাম আমরা আবার দু'দিন দু'রাত। একদিন সন্ধ্যায় একজন কৃষ্ণাঙ্গ এসে বলে যায় তোমরা তৈরি থাকবে আজকে রাতে তোমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে । গভীর রাত্রে আমাদেরকে ঘুম থেকে উঠিয়ে গাড়িতে করে রওনা দেয় ।রাস্তার দু'পাশে জঙ্গল।আধাঘন্টা গাড়ি চালিয়ে একটি জঙ্গলের কাছে নামিয়ে দেয়।দু জন কৃষ্ণাঙ্গ গাইড সহ আমরা ২৫জন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাটা আরম্ভ করি । কৃষ্ণাঙ্গ দুজন ভেড়ার পালের রাখালের মত, একজন সামনে একজন পেছনে।বাকি রাত জঙ্গলের ভিতরে হেঁটে, কখনো ভুট্টাক্ষেত কখনো আখের খেত মাড়িয়ে আমরা ছুটে ছিলাম। তারপর বিশাল এক পাহাড়ে ঢুকে পড়ি।
.
চলবে ............................
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০৪
Date:- ২৩/০৮/২০২১
গোলাম ছারোয়ার।
জেলা: নোয়াখালী।
উপজেলা: বেগমগঞ্জ।
রেজিঃ ৬৭৬৮২.
ব্যাচ:১৫.
বর্তমান ঠিকানা: মাইজদী, নোয়াখালী।