বেড়ায় যখন ধান খায়!!
কথাটি শুনলে আশ্চর্য হওয়ার কথা বেড়া আবার ধান খায় কীভাবে?
আমরা সাধারন যখন কোন জমি চাষ করি তখন গরু-ছাগলে সেই ধান যাতে খেতে না পারে সে জন্য চারপাশে বেড়া দেয়া হয়। ঠিক তেমনি একটা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যখন করা হয় তখন এ-ই প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বা বাঁচানোর জন্য মেনেজমেন্ট বা নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। আর এ-ই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কমিটির হলো প্রতিষ্ঠানের বেড়া।
আশা করি আপনারা সবাই বেড়ার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। চলুন এবার মুল গল্পে যাওয়া যাক। এ-ই গল্পটা আমার বাস্তব জীবনের একটা গল্প।
সালটা ছিল ২০০৭ আমি তখন অনার্সের স্টুডেন্ট। তবে সব সময় আমার কেন জানি লেন্ড ব্যবসার প্রতি একটা আর্কষন ছিল এখনও আছে এবং কয়েকটার সাথে জড়িতও আছি। জীবনে চলতে গিয়ে এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। উনি আবার অনেক বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্টানের সাথে জড়িত, উনার পারসনাল কাপড়ের ব্যবসাও আছে। তবে একটি কথা না বললেই নয় উনি অনেক চমৎকার সাদা মনের মানুষ ছিলেন।সারা জীবন আমার মনে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকবেন।একদিন কথায় প্রসঙ্গে বললেন আমরা ১৫-২০ জন মিলে একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি করতে চাই,এখানে ২০-জন ডাইরেক্ট থাকবো আর আমরা আরো ৩০-৫০জন শেয়ার হোল্ডার নিব। ডাইরেক্টরশীপের জন্য ৫- লক্ষ টাকা আর শেয়ার হোল্ডারের জন্য ৫০০০০/= হাজার টাকা। আমি স্টুডেন্ট মানুষ এতো টাকা পাব কোথায় তারপরও অনেক কষ্ট করে বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে ও জমানো টিউশনির টাকা দিয়ে আমি শেয়ার হোল্ডার হয়ে গেলাম। আমার নামে ৫০টি শেয়ার বরাদ্দের করা হলো।
শেয়ার হোল্ডার হওয়ার শর্তছিলঃ
১.টাকার আনুপাতিক হারে সমপরিমাণ লাভ্যাংশ পাব (ঠিক পরিচালকদের মতো)
২.শেয়ার হোল্ডাররা কেবল মাত্র এ.জি.এমন উপস্হিত থাকতে পারবেন।
আমাদের কোম্পানিটি একদম অফিসিয়ালী জয়েন্ট স্টকে রেজিষ্ট্রেশন করে সব ধরনের পেপারস রেডি করে ৫-মাস পর প্রজেক্ট শুরু হয়।
আলহামদুলিল্লাহ আমাদের জায়গা ক্রয়-বিক্রয় করে অনেক লাভ হয়েছিল। বছর শেষে শেয়ারের ভ্যালু দাড়াড়- ৯৭ হাজার। আর প্রতি ঈদে বোনাস হিসাবে ৩০০০টাকা ও এজিএমে ৫০০০টাকা দেয়া হতো।
এভাবেই চলছিল প্রায় ২০১১ সাল পর্যন্ত।
২০১৩ সালে ৫-তলা বিল্ডিংয়ের করার নতুন প্রজেক্ট শুরু হয় তখন আমার শেয়ারের ভ্যালু ছিল প্রায় ৬-লক্ষ টাকা। তখন টাকার প্রয়োজনে আরো ৫০-জন শেয়ার হোল্ডার নেয়া হয়।
বিল্ডিংয়ের কাজ চলাকালীন সময়ে কোন মুনাফা দেয়া হয় নাই। এমনকী প্রায় ৩- বছর কোন এজিএমে শেয়ার হোল্ডারদের জানানো হয় নাই। কিনতু একসময় বিল্ডিংয়ের কাজ প্রায় শেষ । এমন অবস্থায় যখন ২০১৬ সালে এজিএমে কল করা হয় তখন দেখা যায় শেয়ারের ভ্যালু ৩-লাখ টাকা। আমার মতো অনেক পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডারদের প্রশ্ন ছিল যেহেতু বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ তখন সম্পদের পরিমান বাড়ার কথা তবে শেয়ারের ভ্যালু কমে গেল কেন?
শেয়ারের ভ্যালু কমে যাওয়ায় বিগত দিন গুলোর নির্বাহী কমিটি ছাড়া সকল পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডার দের নিয়ে নতুন করে শুরু হল ইন্টারনাল অডিট কার্যক্রম দেখা গেল বেড়ায় সব ধান খেয়ে ফেলেছে।
* দায়িত্বশীলরা সকল মালামাল কমিশন খেয়ে ক্রয় করেছে বেশী দামে।
* জায়গা বিক্রয় করেছেন বেশী দামে কিনতু দেখানো হয়েছে কম দামে।
* ফ্লাট বিক্রির কিস্তির টাকা আদায় করার পরও দেখানো হয়েছে বকেয়া আর সেই আদায়কৃত টাকা দায়িত্বশীলদের পকেটে।
এ গুলো জানার পর সৃষ্টি হলো নতুন সমস্যা। দায়িত্বশীলরা মিটিং করে নোটিশ দেয়া হলো যারা সময় দিতে পারবেনা মানে যে সকল পরিচালক বিদেশী থাকেন উনাদের মুনাফার হার আরো কমানো হবে। আর যারা শেয়ার হোল্ডার উনারা নতুন করে ১০- লক্ষ টাকা দিয়ে ডাইরেক্টর হতে পারবেন অন্যথায় শেয়ার তাদের কাছে বিক্রি করে দিতে হবে এর অর্থই হলো শেয়ার হোল্ডার রাখবে না কারন তাদের প্রজেক্টের কাজ শেষ হয়ে গেছে শেয়ার হোল্ডারদেরও প্রয়োজনও শেষ,কারো কারো নিজস্ব ফ্লাট হয়ে গেছে অথচ ১৫০-জন শেয়ার হোল্ডার ও বিদেশী ৫-জন পরিচালকদের টাকা দিয়েই এ-ই প্রতিষ্টান দাড়িয়েছিল। আর বিদেশীরা প্রায় ৬০℅ ফ্লাট সেইল করেছিল।
অনেকেই গেলেন শেয়ার বিক্রি করতে তাদের কাছ চলে আসলো অন্য হিসাব তখন কোম্পানীর প্রজেক্ট লস,ব্যাংক লোন আর অন্যান্য জিনিস দিয়ে শেয়ারের ভ্যালু আরো কমানো হল। দেয়া হল ১৫০০০০/= হাজার টাকা। তার আবার এ-ই ১৫০০০০ হাজার টাকা দেয়া হবে ২০০০০-টাকা করে চেকে প্রতি ২-মাস পরপর। এমন অবস্থায় যাদের অবস্থা ভাল ডাইরেক্টর হয়ে যাচ্ছেন আবার যাদের এতো টাকা নাই উনারা কোম্পানিকে বিদায় জানাতে বাধ্য হয়েছেন। আমি ২০১৮ সালে ঐ ব্যবসা থেকে বিদায় নিয়েছি কারন আমার কোন উপায় ছিল না। কারন আমি ছিলাম শেয়ার হোল্ডার।
আমাদের প্রিয় Iqbal Bahar Zahid স্যার বার বার আমাদের সর্তক করে বলেন এমন ব্যবসায় জড়িত হোন যেখানে আপনার একটিভিটি থাকে। আপনার কাজের অবদান থাকে। এটা স্যার এমনি বলেন না বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বলেন। শুধু মাত্র টাকা দিয়ে ব্যবসায় জড়িত না হওয়াই ভাল। বিশেষ করে আমি বলবো শেয়ার হোল্ডার না হওয়াই ভাল।
কেন শেয়ার হোল্ডার নয়?
১.আমরা অনেকেই জানি না যে শেয়ার হোল্ডারের নাম কোন জয়েনস্টকে থাকে না।
২. কোম্পানির নির্বাহী কমিটিতে থাকতে পারবেন না।
৩.বোর্ড মিটিংয়ে থাকতে পারবেন না।
৪. কোন মতামত বা সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না।
আপনার কষ্টের টাকা অধিকারহীন কারো হাতে তুলে দেয়ার চেয়ে নিজ থেকে ছোট আকারে কিছু করা অনেক ভাল আবার ১০-১৩ জন মিলে কিছু করা যেতে পারে।
এখন মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যদি আমাদের প্রিয় ফাউন্ডেশনকে আরো আগে পেতাম তাহলে স্যারের পরামর্শ পেতাম,বড় ভাইদের পরামর্শ পেতাম। আমাকে দীর্ঘ ১০ বছর পর মাত্র ১৫০০০০-টাকা নিয়ে ফিরতে হতো না। অনেক সময় অনেকেই এরকম ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে উদ্যেক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেন কিনতু না স্বপ্ন দেখা চলমান রাখাই উত্তম।
তাই আপনারা যারা নতুন বেশ কয়েকজন মিলে কিছু করতে চান স্যারের শরণাপন্ন হয়ে স্যারের পরামর্শ নিয়ে শুরু করবেন। আমাদের নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন অনেক বড় একটা উদ্যেক্তা ফাউন্ডেশন। এখানে প্রতিদিন বিভিন্ন অফার আসে ব্যবসা করার। ভালো কথা অবশ্যই ব্যবসা করবো তবে বুঝে না বুঝলে স্যারের সাথে একটু পরামর্শ নিয়ে করবেন অনেক ভাল হবে।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও ভালবাসা লিখাটি পড়ার জন্য।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬০৪
Date:- ২৩/০৮/২০২১
মোঃ বাবুল মিয়া
২য় ব্যাচ,রেজি নং-২০১৯
মর্ডারেটর ও ডিস্ট্রিক্ট এম্বাসেডর সিলেট জেলা।
পরিচালকঃ জিনান টি।
আমার ব্যবসায়িক পেইজঃ
https://www.facebook.com/Zinanteasylhet/