জীবনের গল্প : আমার মা
আমার মায়ের নাম ছিল মুর্শেদা বেগম। আমার নানা নানুর ১ম সন্তান মারা যাবার পর তাদের প্রায় তিন বছর কোন সন্তান হচ্ছিল না। এরপর আমার বড় মামার জন্ম হয়।তারও তিন বছর পর আমার মায়ের জন্ম। তাই আমার মায়ের প্রতিটি বিষয়ই তাদের ভালোবাসা পূর্ন ছিল।
আমার মা যত আদরেই মানুষ হোক না কেন সেসময়ের মেয়েদের ওপর করা মানসিক অত্যাচার থেকে রেহাই পাননি। আমার মায়ের যখন ১৩ বছর বয়স তখন ৭১ এর যুদ্ধ শুরু হয়। আমার নানা নানু আমার মা খালাদের একেক সময় একেক আত্মিয়ের বাসায় রেখে তাদের যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে দূরে রাখেন। ভয়ে ভয়ে যুদ্ধ পার করলেও যুদ্ধের পরবর্তি ভয়াবহতা আরো বেশী ছিল। নানা যুদ্ধের সময় যাদের কে বাচিয়েছিল যুদ্ধ পরবর্তিতে তারাই নানা নানুর বাড়িতে ডাকাতি করে। এমনকি নানুর সোনাদানা ছাড়াও শিলপাটা, কলসি, ঘরের দরজা সব খুলে নিয়ে যায়। বড়মামা তখনও জেলে। নানু একা কোন মোকাবেলা করতে পারেনা। নানা সেই গুলির ঘটনার পর পুরান ঢাকা চলে আসেন।
নানা ও আমার মা খালা বাড়ি ফিরে আসলেও বড়মামা তখনও জেলে। তাকে পাকিস্থানিরা রাষ্ট্রোদ্রোহীতার মামলা দেয়া হয়। মামা, যেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তন করেন সেদিন মামা জেল থেকে ছাড়া পায়। ডাকাতিতে যে ক্ষতি হয়েছিল তাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন নানার চাকরি ছিল না। যুদ্ধ পরবর্তিতে ভীষন অভাবে পরে গিয়েছিলেন যে তা কাটিয়ে উঠতে অনেক বছর লেগে যায়। আমার মা অভাবের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও মন পড়াশোনার দিকে পরে ছিল। অভাবের সময় মা টিউশনি করে টাকা জমিয়ে একটি সেলাই মেশিন কিনেন। নিজের সহ আশেপাশের সবার জামা কাপড় সেলাই করে দিতেন। এভাবেই তিনি তার পড়াশোনার খরচ নিজেই যোগাড় করে নিতেন। কিন্তু তার এই পড়াশোনায় বাধ সাধলেন সমাজ ব্যবস্থা। নানা কে নানা রকম কথা বলতে লাগলেন। নানা এবং বড়মামা মিলে মার ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলেন। মা পরের বছর লুকিয়ে মাধ্যমিকে অংশগ্রহন করেন এবং যুদ্ধের সময় যে আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তার বাসার নাম করে ছোটমামাকে সাথে নিয়ে সেই অজপাড়াগায়ে গিয়ে মা পরীক্ষা দিয়ে আসেন নানুকে বলে।
বাসার সবাই রেজাল্ট হবার পর জানতে পারে মার পাশের খবর। এবং আরো রেগে যান। তারা মাকে আরও ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেন। মা নানুকে সাথে নিয়ে প্রাইভেটে ইন্টারের জন্য আবেদন করেন। সাথে শর্টহ্যান্ড শিখেন ও পাশাপাশি টাইপিং। এসময় পুরো সাহায্য করেন আমার নানু । নানু যেন তার ইচ্ছাগুলো মার মাধ্যমে পুরোন করতেন। নানাকে বলতেন সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যাচ্ছেন এই বলে মাকে নিয়ে এই ক্লাস গুলো করতেন। এর মধ্যে মার জন্য বিয়ের প্রোপোজাল আসা শুরু করে। নানা গ্রামে বিয়ে দিবেন না বলে অনেক ভাল ভাল প্রপোজাল ফিরিয়ে দেন। এর ভেতরে আমার মায়ের খালাত ভাইয়ের কাছ থেকেও প্রপোজাল আসে। কিন্তু মায়ের খালাত ভাই আমার মেজ খালা কে পছন্দ করেন এবং প্রেম করেন তারা। মায়ের বিয়ের আগে আমার খালা ও খালুর বিয়ে হয়ে যায় খালার জিদের কারণে আমার নানার অমতে আমাদের এক কাছের আত্মীয়ের বাসায়। একটু বলে রাখি আমার খালু তখন রেলওয়ের সরকারী কর্মচারি ছিলেন।
আর এতে করে আমার মায়ের বিয়ে আটকে গেল। কারন বড়বোনের আগে ছোটবোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তার ওপর আমার মা ছিলেন তখনকার সময়ে ইন্টারপাশ। সাথে শর্টহ্যান্ড, টাইপিং, এবং সেলাই জানা । তখনকার মেয়েরা এতকিছু জানার চেষ্টা ছিল না। বিয়ে সংসার এটাই ছিল মুল। তাই মাকে নিতে হয় শারিরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষেধ। এর মধ্যে মা বাড়ি থেকে বের হন রুপালী ব্যাংকে টাইপিস্ট পদে চাকরির এপ্লাই করার জন্য। এর জন্য মাকে মামা নানা এবং নানার শ্যালক ধরে বাশ দিয়ে পিটায় যতক্ষন না মা অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে রাতে মা পালিয়ে খালার বাসা চট্টগ্রাম চলে আসে আমার খালার শ^াশুড়ির সাথে।
এর কিছুদিন পরই মার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে যার কিনা সদ্য বউ মারা গেছে এবং দুই ছেলেকে তাদের ফুফুরা নিয়ে নিয়েছে কারন তাদের বয়স মাত্র ৫বছর ও ৩ বছর।আমার মায় সামনে যেতে চান না। কিন্তু আমার খালার শ^শুড় শ^াশুড়ির জোরে তা আর হয়ে ওঠে না । আমার মাকে সামনে যেতেই হয়। তাদের মেয়ে পছন্দ হয়ে গেছে বলে তারা তখনই কাজি এনে বিয়ে পরাবে পরে পরিবার নিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। নানা অপবাদের হাত থেকে বাচাতে আমার মা এক দোজবুড়াকে বিয়ে করে নেন। মানে আমার মায়ের বয়স ছিল তখন ২৮ আর আমার বাবার বয়স ছিল ৫৮ সাথে দুই বাচ্চার বাবা । তার পর দিন আমার নানা আমার মাকে জানান তার রুপালী ব্যাংকের চাকরিটা হয়ে গেছে সে যেন ময়মনসিংহ চলে আসেন কাজে যোগদানের আনুষ্ঠানিকতার জন্য। আমার মা সে সপ্তাহেই ময়মনসিংহ চলে আসেন।
এখানে উল্লেখ্য যে আমার বাবার দেশের বাড়িতে কেউ খোজ নেয় না। শুধুমাত্র তার মুখের কথা বিশ^াস করে আমার মায়ের বিয়ে দেয়া হয়। এর ঠিক তিন মাস পর আমার বাবা আমার মাকে তুলে নিতে আসে তিন বাস ভর্তি লোকজন ও পরিবার পরিজন নিয়ে। তাদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে জানা যায় তার বউ জীবিত কিন্তু ডিভোর্সড আর দুই সন্তান আমার বাবার কাছেই থাকবে। ছেলেদের বড় ছেলে মাধ্যমিক দেবে আর ছোট জন ক্লাস সেভেনে পরে। এটা শুনে আমার নানা ও নানু কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।
আমার মা কাদতে কাদতে শ^শুড় বাড়ি রওনা দেন। এবং নানা নানুকে শক্ত হতে বলেন। আমার মা শ^শুর বাড়ি যখন পৌছান তখন রাত কত তা বলার উপায় ছিল না কেননা সেখানে বিদ্যুৎ পৌছায়নি ঘড়ি কাকে বলে তারা জানে না। কাক ডাকা ভোরে মা উঠে ব্রাস করতে গেলে মাকে বিদেশীনি বলে তাচ্ছিল করা হয়। আর হাতে মুখ ধোবার জন্য কয়লা আর গোবর দিয়ে বলা হয় ঘর লেপার জন্য। আমার মা ঘর লেপতে পারতেন কিন্তু কোনদিন গোবর দিয়ে ঘর লেপেন নি। আর গোরব দিয়ে ঘর লেপলে তা নাপাক হয়ে যাবে তাতে নামাজ পড়া যাবে না এটা বললে সবাই আমার মাকে শিক্ষীতা বিদেশিনি আরো নানান কথা বলে মজা করতে থাকে। আমার মা নিরবে সব সহ্য করতে থাকেন। আস্তে আস্তে শুরু হয় অত্যাচার। আমার বাবা যেহুতু মাকে রেখে তার কর্মস্থলে চলে গিয়েছিলেন তাই তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। এর মধ্যে মা জানতে পারেন আমার মাকে বিয়ে করে এসে আমার বাবা তার আগের বৌকে ডির্ভোস দেন। এবং আমার বাবার পরিবার সবাই বিশ^াস করে যে আমার মা আমার বাবাকে জোর করে বিয়ে করেছেন। তাই তিনি পরে এসে তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন আমার মায়ের কথায়। এবং এ কারণে আমার দাদি ও আমার ফুফুরা আমার মাকে ও আমাদের মেনে নিতে পারেননি আজীবন।
আমার মায়ের চোখের পানি ছাড়া আর কিছু ছিল না আর আল্লাহর কাছে মোনাজাত।
মায়ের চাকরি হয় আর এর পর থেকে শুরু হলো অত্যাচার। আমার বাবা আমার মায়ের বেতন নিয়ে নিতেন সংসার পরিচালনা করার জন্য। তার পেনশনের টাকা তার মাকে দিয়ে দিতেন। আমার ফুফুদের বিয়ে ও পরিবারের নানান প্রয়োজন মেটাতে। আমার বাবার বড় সন্তান আমার মার কাছে চলে আসল পড়াশোনার জন্য মাধ্যমিক পার করে। আমার মা তাকে সন্তানের মতোই ভালোবাসতেন এবং তাকে মাস্টার্স ডিগ্রি পাশ করান একাউন্টিং এ। সাথে গ্রামের আত্মীয় স্বজন তো আছেই। আমার মায়ের স্বল্প বেতনে সব করতেন সহায় ছিল বাবার রেশন। কারন ৫জনের রেশনের কারণে ভাত ডাল তেল নুন আটা ইত্যাদি কোন কিছুর অভাব হতো না। বরঞ্চ এগুলো থেকে বাচায়ে আমার মা আমার নানুকেও সাহায্য করতেন। যেহেতু টাকা আমার বাবা নিয়ে নিতেন তাই আমার মা বেচে যাওয়া রেশন বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে গহনা ঘরের জিনিসপত্র এগুলো করতেন।
এতে করে আমার দাদী ও ফুফুদের ধারনা হয় যে মা বোধহয় অনেক টাকা ইনকাম করে। তাই তারা আমার বাবা কে নানা ধরনের কথা বলতে থাকে একপর্যায়ে যৌতুকের জন্য আমার বাবা আমার মায়ের গায়ে হাত তুলে দা দিয়ে হাতে কোপ দেন। কারন তখন বাবার চাকরি নেই। আমার মা স্কুলে আসা লোকজনের সাথে কথা বলে আমার বাবাকে তখনকার দিনের র্যাংকস কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে দেন। আস্তে আস্তে আমার বাবার অত্যাচার কমে আসে।
এখানে বলে রাখি আমার বাবা ছিলেন ডিফেন্স সিভিল ইঞ্জিনিয়র। যারা এ পেশায় আছেন তারা ভাল করেই যানবেন সে সময় ডিফেন্স থেকে অনেক ধরনের ট্রেনিং দেয়া হতো বা এখনো দেয়া হয়। আমার বাবার কাজ দেখে র্যাংকসের সৌদিশাখায় তাকে চাকরি দেয়া হয়। আমার মা তার সব গহনা বন্দক রেখে আমার বাবাকে বিদেশে পাঠান। আমার বাবা চলে যান সৌদি রিয়াদ। আল্লাহর রহমতে দিন ভালই চলছিল। আমার মা আমার বাবার পাঠান টাকা থেকে বাচিয়ে ঢাকাতে ১ কাঠা জায়গাও কিনেন।
দীর্ঘ ৭ বছর আমার বাবা বিদেশে থাকেন। আমার বাবা বিদেশ যাবার আগে র্যাংকস কোম্পানিতে চাকরি করার সময় আমার ভাইয়ের জন্ম। ভাইয়ের বয়স যখন ৬ মাস তখন আমার বাবা বিদেশ পারি দেন। সেখান থেকে ফুফার মাধ্যমে আমার দাদিকে টাকা পাঠিয়ে গ্রামে বাড়ি করেন। এর মধ্যে আমার ফুফারা অনেক টাকা মেরেও দেন যা আমার মা জানতেন না। পেনশনের টাকাও আমার দাদির নামে করা ছিল। আমার মা তার বেতনের টাকা রেশন ও আমার বাবা যখন যেটা পাঠাতেন তাই নিয়ে থাকতেন। কোন অভিযোগ ছিল না তার।‘ মাকে দিচ্ছে দেক আমাকেও দিচ্ছে। আর আমার নিজস্ব বেতন আছে। আর দরকার কি?’ এই ছিল আমার মায়ের ধারনা।
তখন আমাদের বাসায় টিভি ফ্রিজ সোফা সেগুন কাঠের ফার্নিচার ছিল। আমার মা এই টাকাতেই করেছিলেন সব। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতেন। কিন্তু আমার মায়ের সেই সুখের সংসারে নজর লাগে। আমার দাদি অসুস্থ শুনে আমার বাবা বিদেশ থেকে ফিরে আসে চাকরি ছেড়ে দিয়ে। আমার মাকে না জানিয়ে। এসে গ্রামে র্গামেন্টস দিবে। ফুফার সাথে সব কথা হয়েছে। তাদের পরিকল্পনার কথা মা জানতে পারে গার্মেন্টস ব্যবসায় লস খাবার পর। আস্তে আস্তে আমার বাবা সব বলতে শুরু করে বিদেশ থেকে কত টাকা পাঠিয়েছে যার বেশির ভাগই আমার ফুফুরা মেরে খেয়েছে। ব্যবসার নাম করে।
দেশে আসার পর থেকে আমার বাবা একটার পর একটা ব্যবসায় লস খেতে থাকেন। এক পর্যায়ে দেওলিয়া হয়ে যান। এদিকে আর্থিকভাবে বির্পযস্ত অন্যদিকে আমার দাদি মৃত্যু শয্যায়। একদম অন্তিম শয্যায় আমার দাদি আমার মায়ের সামনে আমার বাবাকে তার আগের স্ত্রীকে আবার ফিরিয়ে নিতে বলেন তার হাতে হাত রেখে। আমার বাবা তার মৃতপ্রায় মাকে না বলতে পারেন না।
শুরু হয় আমার মায়ের উপর মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন তার আগের স্ত্রী কে মেনে নেবার জন্য যা আমার মা মেনে নিতে পারেন না। এবং ১৯৯৭ সালের জানুয়ারী মাসে আমার বাবাকে ডির্ভোস দেন। এবং আমাদের নিয়ে আলাদা হয়ে যান। আমার বাবা এই ডির্ভোস মেনে নিতে পারেননি। তিনি আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে নানান পত্রিকায় লেখালেখি করেন এবং আমার মায়ের প্রতিটা আত্মীয় স্বজনদের বাসায় পৌছে দেন। এমন কি আমার মায়ের কেনা জমিতে গুন্ডা পাঠান দখল করার জন্য। ভয়ে আমার মা জমি বিক্রি করে দেন।
২০০১ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আমাদের নিয়ে ময়মনসিংহ চলে আসেন আমার নিরাপত্তার কথা ভেবে। ঢাকা শহরে আমরা মা মেয়ে একা। কখন কি হয়ে যায়। নানুবাড়িতে শুরু হয় আমাদের নতুন জীবন। মা টিউশনি করে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালান। আমি তখন অর্নাসে ভর্তি হই। সেই সাথে মেজ মামার কিনে দেয়া অষ্ট্রেলিয়ান গরু পালি। এই গরুর গল্প অন্যদিন করব। এভাবেই চলতে থাকে।
২০০৯ এর অগাষ্ট এর দিকে আমার মায়ের ক্যান্সার ধরা পরে লাস্ট স্টেজ। ২০১০এর ১৯ শে মার্চ তিনি আমাদের এতিম করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে যান। শেষ হয়ে যায় এক লড়াকু হার না মানা নারীর গল্প। হেরে গেলেন ক্যান্সার নামক এক অসুখের কাছে। আমার মাথার উপরের বটবৃক্ষের ছায়া হারিয়ে যায়। আমি এই পৃথিবীতে অনাথ এক চাড়া হয়ে পরে রই এই রুক্ষ মরুভুমিসম পৃথিবীতে একা।।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬২১
Date:- ১৫/০৯/২০২১
তানজিদা তারান্নুম
ব্যাচ ১১ রেজি ৩৬৬৯০
নিজ জেলা ময়মনসিংহ
বর্তমানে আছি হবিগঞ্জ
পেজ পরিচিতি
মাটির সাতকাহন