নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যারা যুক্ত হয়েছে, এবং নিয়মিত স্যারের সেশনগুলো পড়তেছে তারা না চাইলেও পরিবর্তন হয়ে যাবে।
ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের লাস্টের দিকে,
অনেকগুলো স্বপ্নের মৃত্যু ঘটার পর ঠিক করলাম গাড়ী চালানো শিখব,
যেই ভাবা সেই কাজ, বাবাকে বললাম গাড়ি চালানো শিখব, বাবা-মা কোন মতেই রাজি না, উনাদের মতে গাড়ি চালালে আমি এক্সিডেন্ট করব, তো অনেক চেষ্টার পর বোঝাতে পারলাম গাড়ি চালানো জানলে অনেক লাভ আছে,
আমার একটা কর্ম জানা থাকলো, কখনো কোনো কাজ না থাকলে অন্তত গাড়ি চালাতে তো পারব,
গাড়ি চালানো শিখার উদ্দেশ্যে এই প্রথম সিলেট যাওয়া, যদিও আগে অনেকবার গিয়েছি ঘুরতে কিন্তু থাকার জন্য যায়নি, পরিচিত অনেকেই ছিল কিন্তু কারো কাছেই যেতে ইচ্ছে হয়নি,
আমাদের গ্রামের আমার এক ফ্রেন্ড এমসি কলেজে মাস্টার্স করে, যার জন্য সে ঠিলাঘরে একটা মেসে থাকত, তার সাথে কথা বলে তার মেসে উঠে গেলাম, একটা ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম,
যারা কথা দিয়েছিল আমাকে এক মাসের ভিতরে ড্রাইভিং শিখিয়ে দেবে,
সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস ওই তিন দিন এক ঘন্টা মাত্র শিখাবে, এক ঘন্টায় আবার চারজন, তো একঘন্টায় চারজনের যে জায়গায় গাড়ি ড্রাইভ শিখাবে সেখানে পৌঁছেতে লাগে 10 মিনিট,
তারা শুধু ফ্রী নেয় গাড়ির ড্রাইভিং শেখায় না, সেটা নামমাত্র ট্রেনিং স্কুল যেটায় ড্রাইভ শিখানো হয় না,
স্টাটিং ধরতে গেলেই বলে গাড়ি খারাপ হতে পারে ড্রাইভার স্টারিং ধরে রাখে,
তো সে দিকে না যাই, মূল গল্পে চলে যাই,
সাপ্তাহে তিনদিন ড্রাইভিং ক্লাস তাও আবার শুধু মাত্র এক ঘণ্টা,
বাকিটা সময় কিভাবে কাটাবো, যে ফ্রেন্ড এর মেসে ছিলাম তার ছোট্ট একটা দোকান ছিল গান ডাউনলোড করার মেমোরি ফুল করা, তার দোকানে হেঁটে যেতে প্রায় 30 মিনিট সময় লাগতো, গাড়িতে গেলে 5 বা 10 মিনিটে যাওয়া যেত, যেহেতু আমার প্রচুর সময় আছে, তাই আমি প্রতিদিন হেঁটেই যেতাম, প্রথম দিন যখন তার দোকানে যাচ্ছিলাম দেখলাম একটা পাঁচ থেকে সাত বছরের মেয়ে রাস্তার পাশে এক হাতে ফুলের ঝুড়ি আর এক হাতে বোতলের মধ্যে পানি নিয়ে কিছু একটা করছে, কাছে গিয়ে
দেখলাম একটা ছোট্ট চারাগাছে বোতল দিয়ে পানি ঢালতেছে,
দ্বিতীয় দিনে ও একই অবস্থা দেখলাম,
তৃতীয়ত তিনিও একই কাজ করতেছে মেয়েটি,
একটু কৌতূহল হল মেয়েটার কাছে গেলাম,
দেখলাম মেয়েটি পানি ঢালছে আর বিড়বিড় করে ছোট্ট চারা গাছটির সাথে কথা বলতেছে,
পানি ঢালা শেষে মেয়েটা যখন আমাকে দেখল তখন সে বুঝতে পারলো আমি তাকে ফলো করতেছি, আমি থাকে সুন্দর করে বললাম ছোট আপু আপনি কি করতেছেন, সে ফিক করে হেসে দিয়ে আমার কথার জবাব না দিয়ে সে বলে আমি এত ছোট বাচ্চা আমাকে আপু ডাকেন,
তখন মেয়েটিকে বললাম কি ডাকবো আপনাকে,
সে হেসে উত্তর দিলো সবাই আমাকে আবাদি ডাকে, আপনিও ডাকতে পারেন, আবাদি হচ্ছে সিলেটের একটা কথা যেটাকে গালি বলা যায়, যেটা সিলেটের বাহিরের সবাইকে বলা হয়, আমি তার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললাম তোমার নাম কি,
সে উত্তর দিল, আমার নাম পুষ্প,
সে আমার পেছনে কাউকে লক্ষ করতেছিল, আমার সাথে আর কথা না বলেই বলল আমি যাই,
মা জানলে আমাকে মারবে,
সেই দিন সেই বাচ্চা মেয়েটির কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমই আসলোনা, চিন্তা করতে লাগলাম মেয়েটার মা মেয়েটাকে মারবে কেন?
পরেরদিন একটু আগেই আমি চলে গেলাম,
আমার কৌতূহল দূর করতে, যথারীতি মেয়েটি সময় মত আসলো বোতলে পানি ভর্তি হাতে ফুলের ঝুড়ি, যেহেতু আগের দিন কথা হয়েছে, সেজন্য মেয়েটি আমাকে দেখে চিনে ফেলল,
সে বলল আপনি আজ ও এখানে, আমি প্রশ্ন করলাম তোমার মা মারবে কেন তোমাকে,
সে উত্তর দিল, ফুল বিক্রি করে 15 দিন আগে মাকে টাকা দেয়নি একদিন, সে টাকা দিয়ে এই চারা গাছ লাগিয়েছি, মা বলছে চারা গাছ যেন ফেলে দেই,
তখন জিজ্ঞেস করলাম? তো এই ছাড়া গাছ কেন লাগালে মাকে টাকা না দিয়ে?
তখন সে বলল যেখান থেকে আমি ফুল কড়িয়ে আনি,
সেখানে ফুল কুড়াতে দেয় না আমাকে, ফুল কুড়াতে গেলে মারতে আসে, আবাদি বলে গালাগালি করে,
এই তিনটি ফুল গাছ লাগিয়েছি যাতে এই গাছগুলো বড় হলে আমার মত যারা আছে তারা যেন ফুল কুড়াতে পারে, তাদের যেন কেউ গালাগালি না করে, আমি সবাইকে ফুল কুড়াতে দেব, আমি যদি গাছ না লাগাই, আমি যে কষ্ট করেছি আমার মতো তারাও কষ্ট করবে,
আমি চাই না অন্য কেউ আমার মত কষ্ট করুক গালি শুনুক,
আমি সেই বাচ্চা মেয়েটির একথা শুনার পর কিছু টাকা দিতে চেয়েছিলাম ফুল গাছ কেনার জন্য,
সেই পাঁচ সাত বছরের মেয়ে টার উত্তর ছিল, টাকা আমি নিতে পারবো না, পরে যদি এসে আপনি বলেন এই গাছ আপনার,
আর সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, তার স্কুলের ম্যাডাম বলেছে গাছ লাগালে পরিবেশ ভালো থাকে দেশের অক্সিজেন বৃদ্ধি পায়,
দেশের পরিবেশ রক্ষায় সবাই যার যার জায়গা থেকে যেন গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষা করে,
তাই সে ও গাছ লাগিয়ে দেশের সবার সাথে দেশের পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করছে,
যদি আমি টাকা দেই তখন তো আর সে দেশের কাজে আসলো না,
আমি বললাম এই শহরে আমি আসবো না, তবুও সেই বাচ্চা মেয়েটি নিতে চাইল না বলল আমি অনেক বড় কিছু করব তখন নিজের টাকায় অনেক জমি কিনে গাছ লাগাব,
বুঝতে পারলাম সেই মেয়েটার আত্মসম্মান আমার থেকেও বেশি,
তারপর সিলেট থেকে বাড়িতে গিয়ে অনেক গাছ লাগিয়েছে, কিন্তু মেয়েটির সাথে নিজের তুলনা করলেন নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়, সে নিঃস্ব অবস্থায় থেকে ও দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কত আপ্রাণ চেষ্টা করছে, সে নিজে অনেক বড় হবে তার কতো বড় স্বপ্ন, আমার এত কিছু থাকতে ও আমার স্বপ্নটা এত ছোট কেন।
তখন আমার একটা ধারণা হয় যাদের টাকা আছে তারা নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত, দেশের কথা চিন্তা করার তাদের সময় নেই, আমার এই নেগেটিভ চিন্তা ধারা ছিল।
আমার সেই চিন্তাধারা পাল্টে দিয়েছে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার, যখন দেখলাম তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের জন্য মানুষের জন্য, উনি তো চাইলেই পারতেন দেশের বাইরে গিয়ে থাকতে, অন্যান্য দেশে ব্যাংক ব্যালান্স গাড়ি-বাড়ি করতে, কিন্তু তিনি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, আমাকে আরো অবাক করে দিলেন তিনি উনার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি কর্মসূচির মাধ্যমে, আমাদের প্রিয় স্যার সুন্দরবনেও গাছ লাগিয়েছেন, চিন্তা করা যায় কত বড় মনের মানুষ হলে এমন চিন্তা ভাবনা মাথায় আসে,
তিনি আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে কোন পর্যায় থেকে দেশের জন্য কাজ করা যায়, এবং যাদের টাকা আছে তারা যদি চায় দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাহলে দেশটা পরিবর্তন হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার, টাকা ওয়ালা সব মানুষ খারাপ নয়,
নেগেটিভ চিন্তা ধারার মানুষ সব লেভেলে আছে,
তেমনি অনেক ভালো মানুষ সব লেভেলে আছে,
প্রিয় স্যার আমার ধারনা পাল্টে দিয়েছেন।
প্রিয় স্যার আমাদেরকে পাল্টে দিচ্ছে আমরা পাল্টে যাচ্ছি, আমি বিশ্বাস করি নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যারা যুক্ত হয়েছে, এবং নিয়মিত স্যারের সেশনগুলো পড়তেছে তারা না চাইলেও পরিবর্তন হয়ে যাবে।শুভেচ্ছান্তে
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬২২
Date:- ১৬/০৯/২০২১
আনোয়ারুল ইসলাম জুয়েল
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
ব্যাচঃ 12
রেজিঃ 37168
থানাঃ মাধবপুর
জেলাঃ হবিগঞ্জ
বর্তমানে সৌদি আরব প্রবাসী।
কো ফাউন্ডার শ্রেষ্ঠ বাজার লিঃ ।
৯/১৬/২০২১