আমার কাছে নিজের বলার মত গল্পকে পাওয়া মানে কি জানেন? এক অসম্ভব তৃষ্ণার্ত মানুষের শীতল পানির ফোয়ারা খুঁজে পাওয়া!
নিজের বলার মতো গল্পকে ঘিরে আমার গল্পঃ
সবাই নিজের জীবনের গল্প বলে, আর আমি বলব নিজের বলার মতো গল্প গ্রুপকে ঘিরে আমার গল্প।
আমি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে ৭ বছর কোর্টে কাজ করার পর বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টে জয়েন করি ২০১৬র শেষ দিকে। যখনই আমি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর কালচারের সাথে মোটামুটি যখন মানিয়ে নিয়েছি, ঠিক তখনই প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের একটা উক্তি আমার ফেসবুক টাইমলাইনের মাধ্যমে আমার চোখে পড়ে:"শুধুমাত্র ৯টা-৫টা কাজ করার জন্য আপনার জন্ম হয়নি"। ব্যাস সবার মত আমিও আটকে গেলাম। ভাবতে শুরু করলাম লোকটা কে?
স্যারকে ঘিরে আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে। স্যারের লেখা বইটার কভার যখন গুগল আমাকে সাজেস্ট করল তখন আমি কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে তাকিয়েছিলাম, কারণ আমি আমার লাইফ চেঞ্জ করে দেয়া প্রথম কথাটা পড়লাম : "বৃষ্টি সকলের জন্য পড়ে, কিন্তু ভিজে কেউ কেউ।" ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় মানুষটাকে গুরু মেনে রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম “নিজের বলার মতো গল্প” গ্ৰুপে। পেলাম নতুন আরেক পরিচয় :
নাম: শাকুর বিন শহীদ, আজীবন সদস্য,
ব্যাচ: ১২, রেজিস্ট্রেশন নং: ৩৪০৪২,
নিজ জেলা: চুয়াডাঙ্গা, বর্তমান অবস্থান: লালবাগ জোন, ঢাকা
শুরু হল আমার নতুন যাত্রা। সবার মত আমিও নিজের বলার মতো গল্পের ওয়েবসাইট থেকে স্যারের ৯০ দিনের সেশন গুলো এক নিঃস্বাসে পড়ে ফেললাম এবং সেই সাথে গ্ৰুপের ফেসবুক পেজের রেগুলার লাইভ সেশন গুলো ফলো করতে শুরু করলাম। আর ইউটিভি লাইভের জীবনকে বদলে দেয়া স্টোরি গুলোর প্রতি এমনভাবে আকৃষ্ট হয়ে গেলাম যে, কখন যে দিনের শুরু হয় আর কখন রাত হয় সেটা আমি আর ধরতে পারছিলাম না।
আমার এই অবস্থা দেখে একদিন বৌ বলল-দেখতে দেখতে মোবাইলের মধ্যে ঢুকে যেওনা আবার; যাই হোক ভাবলাম এবার বৌ এর মুখ বন্ধ করা দরকার। কিন্তু কিভাবে? জি ঠিক ধরেছেন, বৌ এর মুখ বন্ধ করতে গেলে তাকেও প্রিয় গ্ৰুপে রেজিস্ট্রেশন করানো দরকার। যেই ভাবনা সেই কাজ, ১৩তম ব্যাচে আমার বৌকেও রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিয়ে এবার দুইজন মিলে ইউটিভি লাইভ আর রেগুলার সেশন গুলো ফলো করতে থাকলাম। আমার বৌ বরাবরের মত আমার থেকেও এক ধাপ এগিয়ে, সে আমার জন্য চুয়াডাঙ্গার ম্যাসেঞ্জার গ্ৰুপ খুঁজে বের করল এবং আমাকে অ্যাড করল।
নিজ জেলার ম্যাসেঞ্জার গ্ৰুপের প্রিয় মানুষদের সাথে শুরু হলো প্রতিদিনের সেশন চর্চা ক্লাস করা। এবং এক পর্যায়ে আমি এত সিরিয়াস হয়ে গেলাম যে, কখনই সেশন চর্চা ক্লাসে আসতে ১ মিনিটও লেট করতামনা; অর্থাৎ, রাত আটটার ক্লাস, আটটাতেই জয়েন করতাম without any excuse। একদিন এক সেশনে শুনছিলাম, "উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সেই কাজটাই করুন, যেটা করতে আপনি ভালোবাসেন"
আমি ভাবতে শুরু করলাম, কোন কাজটা করতে আমি ভালোবাসি, কোন কাজটা করতে আমি রাতের পর রাত জগতে পারি, কোন কাজটা নিয়ে আমি সারাদিন ভাবতে পারি? কোন কাজ?
ইয়েস! কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, স্টোরি টেলিং, ভিডিও এডিটিং এগুলো করতে আমি ভালোবাসি। কিন্তু এসবের কি মার্কেট আছে? আরে কে বলল নাই? এই গ্ৰুপের ভাই-বোনরা যে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে কাজ করছে তা তাদের কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দিতে পারে একটা পারফেক্ট এডভার্টাইজমেন্ট বা ভিডিও কন্টেন্ট। ব্যাস, নিজের নাম অর্থাৎ “Shakur Ben Shahid” নাম দিয়ে একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেললাম, আর রাত-দিন এক করে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের কাজ করা শুরু করলাম।
এরপর কোন একদিন গ্ৰুপের একটা পোস্ট দেখলাম যে আগামী মহাসম্মেলন উপলক্ষে, গ্ৰুপের কার্যক্রম নিয়ে ভিডিও তৈরির আহবান জানান হয়েছে। সাথে সাথে আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসে গেল যে, সেশন চর্চা ক্লাস নিয়ে একটা কন্টেন্ট তৈরী করবো যেটা দেখে যেন সেশন চর্চা ক্লাসের প্রতি সবার ডেডিকেশন বেড়ে যায়। যে ভিডিওটা হবে একদম ডিফারেন্ট টাইপের ভলান্টারিং কাজ। এই ভিডিওটা দেখে যদি একজনও সেশন চর্চা ক্লাসের ব্যাপারে আগ্রহী হয়, তবে সেটাই হবে আমার এচিভমেন্ট।
ব্যাস করে ফেললাম প্ল্যান, লিখে ফেললাম স্ক্রিপ্ট, ইউটিভি লাইভ থেকে ফুটেজ নিয়ে তৈরী করে ফেললাম ভালোবাসার গ্ৰুপকে নিয়ে আমার তৈরী প্রথম কন্টেন্ট। গ্ৰুপের ফেসবুক পেজে ভিডিওটা পোস্ট করার পর খুব টেনশন হচ্ছিল যে, পোস্টটা এপ্রুভ হবে ত? স্যার দেখবেত? মাত্র ১৯ মিনিটের মাথায় আমি দেখলাম যে স্যারের নিজের ফেসবুক পেজেও ইউটিভি লাইভে আমার ভিডিওটা পোস্ট হয় এবং তা যথাক্রমে ৩,০০০+ ও ৫,০০০+ ভিউ পায়। আলহামদুলিল্লাহ। আমার উৎসাহ বেড়ে গেল কয়েক গুন।
তারপর একদিন চুয়াডাঙ্গা জেলা টিমের দায়িত্বশীলরা ১৫০তম সেশন চর্চা ক্লাস উপলক্ষে মেগা মিট আপের ঘোষণা দিল যেখানে আমার গুরু শ্রদ্ধেয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার হবেন প্রধান অতিথী। শুরু হয়েগেল চিন্তা - ভাবনা। এমন একটা কিছু করতে হবে যা কেউ করেনি এবং যা সবাই কপি করবে। মেগা মিটাপের সকল শ্রোতাকে দর্শক বানাতে হবে। কেউ যেন অনুষ্ঠানের সময় হেড ফোন কানে দিয়ে, মোবাইল লক করে পকেটে রাখতেনা পারে। সবাই মোবাইল হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকতে যেন বাধ্য হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা যেন সবার চোখের সামনে থাকে।
ব্যাস শুরু করলাম প্লানিং। সবাইকে নিয়ে শুরু করলাম কাজ, ঢেলে দিলাম নিজের কন্টেন্ট ক্রিয়েশন ও প্রেজেন্টেশনের ১০০% স্কিল। সব সদস্যদের সাথে নিয়ে তৈরী করে ফেললাম মোট ৯১টা স্লাইড নিয়ে এক মেগা প্রেজেন্টেশন।
গত ২০ই জানুয়ারী এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমাদের পরিশ্রম বৃথা যায়নি। প্রিয় স্যার সহ উপস্থিত সকল শ্রদ্ধেয় কোর ভলান্টিয়ার, মডারেটর ও দায়িত্তশীলরা আমাদের সাধুবাদ জানিয়েছিলেন এমন ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের জন্য। সুবহানাল্লাহ।
এই গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আগে আমার প্রতিটা দিন ছিল Just ৯ থেকে ৫ টার ছকে বাধা। আর এখন আমি সাহস করে নিজের ভাললাগার কাজ শুরু করে দিয়েছি। এবং আমৃত্যু লেগেও থাকব, দেখি সফলতা কিভাবে না এসে পারে? এমন একটা পরিবারের সাথে আছি, যেখানে আছে অসীম ভালোবাসা আর অকল্পনীয় উৎসাহ।
আমার কাছে নিজের বলার মত গল্পকে পাওয়া মানে কি জানেন? এক অসম্ভব তৃষ্ণার্ত মানুষের শীতল পানির ফোয়ারা খুঁজে পাওয়া!
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭২৮
Date:- ২৩/০১/২০২২ইং
শাকুর বিন শহীদ,
আজীবন সদস্য,
ব্যাচ: ১২,
রেজিস্ট্রেশন নং: ৩৪০৪২,
নিজ জেলা: চুয়াডাঙ্গা, বর্তমান অবস্থান: লালবাগ জোন, ঢাকা
পেশায় আইন জীবী, চাকরিজীবী ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
পোর্টফোলিয় লিংক: https://www.youtube.com/channel/UC5C63tdI0QqmlRNnfUKT8mA