আমি নিজেই একটা প্রোডাক্ট উৎপন্ন করি ও আমি হয়ে উঠি উদ্যোক্তা
🥀জীবনের গল্প 🥀
আসসালামু আলাইকুম
🙏 সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মহান রাব্বুল আল-আমীনের প্রতি, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। এই মহামারির মধ্যে আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে সুস্থ রেখেছেন তার জন্য লাখো-কোটি শুকরিয়া।
🙏তারপর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মা-বাবা, ভাই-বোনদের প্রতি যারা আমাকে তাদের আদর্শে বড় করেছেন, এইজন্য তাদের কাছে আমি চিরো কৃতজ্ঞ।
🙏সর্বোপরি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সবার প্রিয় মেন্টর জনাব " ইকবাল বাহার জাহিদ" স্যারের প্রতি যিনি এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন। যা আমাকে পরিবর্তন হতে সাহায্য করছে। সেই সাথে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগাচ্ছে।
🍁🍁আজ আমি তোমার জীবন থেকে নেওয়া কিছু গল্প আপনাদের শোনাবো।
👉 মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। বাবা ইঞ্জিনিয়ার ও মা গৃহিনী। প্রচুর ভালোবাসার মাঝে বেড়ে উঠেছি। কোনো দুঃখ স্পর্শ করতে পারেনি স্কুল কলেজ জীবনে। মুখফুটে কখনো চাইতাম না কিছু। যা পেতাম তাতেই সন্তুষ্ট হতাম। ক্লাস সেভেনে যখন পড়ি তখন বাবা রিটায়ার্ড করেন।
বোন ও ভাইয়ারা সবসময় আগলে রাখতো আমাকে, তাই কখনো মানুষের স্বার্থপরতা, লোভ লালসা বা হিংসা বুঝতে পারিনি। জীবন যে সহজ -সরল নয়, বাস্তবতার নিষ্ঠুরতা বুঝতে পারলাম পথ চলে গেয়ে।
👉 লেখাপড়ার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি পড়ে ছিলাম আমি। চাকরি করতে ইচ্ছে করেনা, পরে হোমিওপ্যাথি পেশাকেই প্রধান বলে মেনে নিয়েছিলাম এবং খুব স্বাচ্ছন্দেই বিভিন্ন সেমিনার ও কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করতে থাকি। চেম্বার দেই ২০১১ সালে। ভালোই চলছিল, হঠাৎ পাশের দোকানটি বড় করবে বলে, দোকান মালিক ওদের থেকে অনেক এডভান্স পাবে বলে আমাকে দোকান ছাড়তে বাধ্য করে। এমনকি আমার চেম্বার এর সমস্ত মালামাল বাসায় পৌঁছে দেয় কোনো টাকা ছাড়াই। আর এদিকে আমার এডভান্স এর অর্ধেক টাকা দিয়ে মাপ চেয়ে নেয় ( উনি দুর্সম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন )। কারণ - আমি মেয়ে, দুর্বল, আমি একটু চুপচাপ শান্ত স্বভাবের।
মন ভেঙে যায়, হতাশ হই, আর একটা চেম্বার এর জায়গা খুঁজতে থাকি। ভাই-বোন প্রচন্ড ভালোবাসে আর আমাকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দেয় সবসময়। কিছুদিনের মধ্যেই ছিন্নমূল শপিং কমপ্লেক্সে একটা ভালো দোকান পেয়ে যায়। খুব সুন্দর ডেকোরেট করা একটা দোকান, ডেকোরেশন সহ কিনে নিয়েছিলাম। এখানে বলে রাখি - দোকান মালিক ছিল খুবই ভালো মানুষ। খুব সুন্দর সাজানো-গোছানো একটা চেম্বার করি। যে দেখেছে, সে ই খুব প্রশংসা করেছে এবং অবাকও হয়েছে এত সুন্দর একটা চেম্বার করতে পেরেছি বলে। থাইগ্লাস, এসি, সম্পূর্ণ ডেকোরেশন করা অনেক সুন্দর ছিল চেম্বারটা।
👉 আস্তে আস্তে পরিচিত হতে থাকে, মোটামুটি ভালই চলছিল। ছোটখাটো গ্রুপপড়াশোনাও করতাম আমার চেম্বারে। অনেক রোগীরা চিনে গিয়েছিল, আমার চেম্বারটায় আশে-পাশের মানুষরাও আসা-যাওয়া করতে শুরু করলো, তাই চেম্বারটাও ভালো চলছিল। দেড় বছর পর হঠাৎ বাধসাধলো পাশের দোকান গুলো। তাদের দোকানগুলো ছিল সব জুতার দোকান, তাই তারা চাইতে লাগলো জুতার দোকানই থাকতে হবে, তারা দোকান মালিক সমিতিতে জানায় এবং সমিতি থেকে আমার দোকান মালিক আমার পক্ষে কথা বলে। এভাবে ছয়টা মাস দোকান মালিক এবং আমিও যুদ্ধ করেছি চেম্বার টা টিকিয়ে রাখার জন্য। অনেক মন ভেঙে যাওয়ার পরও আমি রেগুলার যাতায়াত করতাম আমার চেম্বারে। আর পাশের দোকানে নানা রকমভাবে বলতেই থাকতো দোকানটা থাকবে না, এই দোকান টা থাকবে না এমন বলতো। কারন - তারা যেভাবেই হোক আমার এই চেম্বার টা উঠিয়ে দিয়ে জুতার দোকান করতে চাইতো । এখানে বলে রাখি, দোকান মালিককে অনেক প্রলোভন দেখিয়েছে অ্যাডভান্স বেশি দিবে নানারকম বলে কিন্তু আমার দোকান মালিক রাজি হয়নি কখনোই।তার ছয় মাস পর আমি দোকানটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। এখানেও বলে রাখি - কারণ আমি ছিলাম মেয়ে, কোন পুরুষ মানুষ ছিল না আমার সাথে লড়াই করার। দোকান মালিক একা কিছু করে উঠতে পারেননি।
🙏 এতটাই মন ভেঙে যায় - যেদিন আমি সাজানো গোছানা চেম্বারটির সমস্ত কিছু নিয়ে চলে আসি, গ্লাস গুলো খুলে নিয়ে আসি বাসায়, আমার আর কোন সেমিনারে যেতে ইচ্ছে করেনি। একদম নিঃশব্দ হয়ে যাই এবং আস্তে আস্তে যতই দিন যেতে থাকে আমি চুপচাপ হতে থাকি। তারপর ২০১৪ সালে আমার আপুর "এভারগ্রীন বেবি এন্ড মম সপ " এর দায়িত্ব আমি নেই। নানারকম প্যাকিং এবং নানারকম কাজকর্ম সাথে জড়িত হয়ে আস্তে আস্তে স্বাভাবিকতায় ফিরে আসি। হোমিওপ্যাথ যেনো না ছাড়ি তাই বাসার মানুষ এবং আত্মীয়রা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার কাছ থেকেই ঔষধ নেওয়ার জন্য আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেয় ফলে আমার মাঝে মাঝে পড়াশোনাটাও কিছুটা করতেই হয় আবার অনলাইন পেইজটাও দেখাশোনা করি আস্তে আস্তে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে আমি সুন্দরভাবে বিজনেসের জড়িত হয়ে এবং ভালোভাবে কাজ করতে থাকি। এই দুই বছর ভালোই ছিল তারপরে হঠাৎ আমার লাইফে একটা বিপর্যয় ঘটে যায়। আমি সম্পুর্ন ভাবে ভেঙ্গে পড়ি সমস্ত সামাজিক জায়গা থেকে দূরে সরে যাই এবং আমার পড়াশোনা বা সমস্ত আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে আমি সবার থেকে দূরে সরে যাই। খুবই চুপচাপ হয়ে যাই যা বলার বাইরে। মাঝে মাঝে এমনও মনে হতো - বেঁচে থেকে কি লাভ? কিন্তু আমার মায়ের কারনে জীবন থেকে মুক্তি নিতে পারিনা, তার বয়স ৭৫ প্লাস । মনে মনে ডিসিশন-ই নিই - আমার মা না থাকলে আমি নিরুদ্দেশ হয়ে যাবো।
👉তারপর আবার আস্তে আস্তে আপার বিজনেস এর সাথে জড়িত হয়ে পড়ি নিজের অজান্তেই এবং উদ্ভট ভূত মাথা থেকে দূর হয়ে যায় ধীরে ধীরে । এরই মাঝে করোনা শুরু হয়, তারপর মা অসুস্থ হন, রাত জেগে থাকি দুইটা তিনটা পর্যন্ত। আপু বিভিন্ন গ্রুপের লিংক পাঠায় এবং আমাকে জয়েন করতে বলে এবং আমাকে লেগে থাকতে বলে, আমার ভালো লাগেনা তবুও আমি মাঝে মাঝে একটু একটু দেখে কিন্তু আমার ভাল লাগেনা কন্টিনিউ করতে। তারপর একদিন আমাকে আমাদের প্রিয় "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" এ ইনভাইট করে এবং বলে যে এটাতে যুক্ত হও এবং দেখো, কোন জোর করে না। আমি এটা দেখতে গিয়ে দেখি ভালোই লাগে এর মধ্যে দেখি যে - রেজিস্ট্রেশন রেজিস্ট্রেশন কথাটা পাই, তারপর আমি কমেন্ট এ জিজ্ঞেস করি কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করব, তখন চলছে দশম ব্যাচ এর ৫০ কি ৫২ সেশন আমি ১১ তম ব্যাচ করে রেজিস্ট্রেশন করে যুক্ত হয়ে যায় রাত দেড়টায়। সকালে আপুকে বলি রেজিস্ট্রেশন করেছি আপু জানতে চাই কিভাবে, তাকে বলে দেই, তিনিও যুক্ত হয়ে যান । দশম ব্যাচ এর আপু ভাইয়াদের বিভিন্ন ভিডিও দেখতে থাকি। পোস্ট দেখতে ভালো লাগে, কথা বলার জড়তা কাটানোর ভিডিও গুলো দেখি, ছোট ছোট কমেন্ট করতে থাকি, তারপর আসে ১১ তম ব্যাচের সেশন। প্রত্যেকটা সেশন প্রত্যেকটা কুইজে আমিও অংশগ্রহণ করেছিলাম কিন্তু কমেন্ট করতে করতাম না তেমন। ভালই লাগতে থাকে ওইগুলো, কুইজ এ অংশগ্রহণ করতে আমি খুবই আনন্দবোধ করতাম। ১২তম ব্যাচ শুরু হয়ে যায়, ২৫/১২/২০২০ইং থেকে হঠাৎ আমার আম্মা প্রচন্ডরকম অসুস্থ হওয়ায় আমি আস্তে আস্তে আর কোনভাবেই অনলাইন হইনি টানা তিন মাস। এই যে দূরে সরে গেলাম আর সেভাবে আমার পোষ্ট দেখা বা আমার কোন কুইজে অংশগ্রহণ করা অথবা আমি যে লেগে থাকব সেটার কিছু করছিলাম না। তারপর হঠাৎ করে পেয়ে যাই হোমিওপ্যাথির একটা গ্রুপ আছে যেখানে সারা এশিয়ার বাঙালিরা আলোচনা, পর্যালোচনা এবং ক্লাস করা শুরু করে প্রতিদিন ক্লাস হয়। ঠিক তার এক সপ্তাহের মধ্যেই পেয়ে যায় ১৫তম ব্যাচের স্টেশন চর্চা করা কুষ্টিয়া জেলার এবং তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে ঢাকা মিরপুর জোনের ক্লাস পেয়ে যাই। দুটো ক্লাস একসাথে করতে শুরু করি এবং দুই জায়গা থেকে আমি এত অনুপ্রেরণা পায় যে আমার মধ্যে আশা জেগে ওঠে, বিশেষ করে স্যারের প্রতি সেশন চর্চা এবং বিশ্লেষণ চলে এত সুন্দর করে মিরপুর জোনের আপু এবং কুষ্টিয়া জেলার আপু বর্ণনা করেন - যে মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকি। স্যারের কথা - "স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন, লেগে থাকুন। নিশ্চয় সফলতা আসবেই "।
👉আমি মনেপ্রাণে এখন বিশ্বাস করি আমি পারবো, আমার দ্বারা সম্ভব। আমি নিজেই একটা প্রোডাক্ট উৎপন্ন করি ও আমি হয়ে উঠি উদ্যোক্তা। প্রচন্ড রকম ভালো লাগে আমার নিজের প্রোডাক্ট তৈরি করা এবং প্রশংসা পেয়ে। সবার উৎসাহে আরো আমি এগিয়ে যাই, স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। " স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন,শুরু করুন, লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই " স্যার এর এই উক্তি টি আরও অনুপ্রেরণা যোগায়।
👉যে আমি একা অনেক কথা বলতে পারি কিন্তু ৫ জন মানুষের সামনে কথা বলতে সংকোচ বোধ করতাম আজ আমি ৫০ জনের মাঝে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করিনা, এটা সম্ভব হয়েছে সেশন চর্চা ক্লাস এর মাধ্যমে। কারণ - কিছু বলতে না চাইলেও আপুরা কথা বলতে বাধ্য করে ও সাহস দেন। আর বলেন - " ভুল হতে হতেই আমার শিখবো, "সবাই আমরা শিখতে এসেছি এখানে "। অনেক সুন্দর গাইড লাইন দিয়েছেন স্যার আমাদের।
🌹 এখন সত্যিই আমার সাহস ও উৎসাহ বেড়েছে। এখন আমি সেশন ক্লাসের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হই, ইনশাল্লাহ আমার ভয়-ভীতি গেছে অনেকটা কমে। আমিও ১০ জনকে সাহায্য করতে পারি, আমার দ্বারাও সম্ভব, আমি পারবো এবং পারছি আগের মতো মানুষের সেবা করতে ।
🌹স্যারের প্রতিটি অনুপ্রেরণা মূলক কথাগুলো পর্যালোচনা প্রতিদিন হয়। স্যার এর প্রতিটি কথা যেন দিন দিন গেঁথে যাচ্ছে মনের মাঝে। এগুলো শুনে আগে আমি কোন কাজে লাগায়নি কিন্তু ১৫ তম ব্যাচ ও ১৬তম ব্যাচের সেশন ক্লাস এর মাধ্যমে আজ আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।
🌹 আমি বলতে চাই এই ফাউন্ডেশন আমার জীবনটাকে যেন পাল্টে দিয়েছে। নতুন করে শুরু করার স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমি আবার শুরু করতে চলেছি অনলাইনে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা।
যখন আমি চেম্বার করে সকলের সেবা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলাম, আমি এখন ভেবে নিয়েছি অনলাইনে চিকিৎসা করে সারা বাংলাদেশে আমার চিকিৎসা ছড়িয়ে দিব। এতটা সাহস পেয়েছি এই ফাউন্ডেশনে আসার জন্য, আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি আমাদের প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি, যার শিক্ষায় আমি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর মনের বল ফিরে পেয়েছি।
🌹 আমি সকলের আশীর্বাদ প্রার্থনা করছি। আমি যেন আমরা স্বপ্নকে আমার পরিশ্রমের দ্বারা লেগে থাকার মাধ্যমে বাস্তবায়িত করতে পারি।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -৭৪৯
Date: ২০-০২-২০২২
↔️ওয়াসিকা বিনতে ওয়ালী
↔️ব্যাচ নং ১১
↔️রেজিস্ট্রেশন নং ১৯২৯১
↔️ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া
↔️ বর্তমান অবস্হান ঢাকা মিরপুর ( রূপনগর থানা ) মিরপুর জোন।