হাল ছাড়িনি করোনার তান্ডবে বন্ধ হয়ে গেলো মাদ্রাসা এবং টিউশনি গুলাও।
😪জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে হলে অনেক সময় ছোট কাট চাওয়া গুলো বিসর্জন দিতে হয়।
🥰আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় ফাউন্ডেশনের সকল ভাই বোন আশা করি অনেক ভাল ও সুস্থ আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি আপনাদের দোয়াই।
💠প্রথমে শোকরিয়া জ্ঞাপন করতেছি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে যিনি আমি এবং আমার প্রিয় ভাই বোনদের সুস্থ রেখেছেন,
💘ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যার অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন, আজ এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে লাকো তরুন তরুনি।
আজ আমি শেয়ার করবো শৈশব জীবন থেকে কত সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছি।
💠শৈশব জীবন
ছোট বেলা থেকে ভাবতাম অনেক বিলাসিতা দিয়ে যাবে আমার জীবনটা, কিন্তু সেটা হয়ে উঠেনি আমার কারন আমি নিম্ম মাধ্যবিত্ত পরিবারের একজন ছেলে। কোন কিছু চাওয়ার থাকলে বাবা যদি দিতে না পারত অনেক রাগারাগি করতাম কিন্তু বুঝতাম না বাবা কেন দিচ্ছেনা, আসলে বাবার দেওয়ার মত তেমন কোন সামার্থ ছিলনা একজন বাবার কাধে আমাদের ৮ সদস্যের সংসার। বাবা একাই সামলাতে অনেক কষ্ট হতো নুন আনতে পান্তা ফুরাইত।
আমরা ৬ ভাই বোনের মধ্যে আমি আর আপু একসাথে স্কুলে যেতাম আপু আমার থেকে দুই ক্লাস সিনিয়র ছিল আপু খুব ভালবাসত আমায় প্রতিদিন স্কুলে এক সঙ্গে আসা যাওয়া করতাম। আজ আপুকে খুব মিস করছি ভাল থাকিস বোন পরপারে।
💠বাবার কাছে খাতা পেন্সিল এগুলো প্রায় সময় চাইতাম আপুর ক্লাস সিক্স আমি ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত কোন কলম ব্যবহার করিনি কারন বাবা শুধুই কোন রকম পেন্সিল কিনে দিতে পারত কলম কিনে দিতে পারেনি কোনদিন এই ৫/৬ বছর লেখাপড়া জীবনে।
হাফ প্যান্ট পড়ে ক্লাস করেছি ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করেছি, ক্লাস ফাইভে যখন উঠেছি লেখাপড়ার খরচ অনেক বেড়ে গেলো বাবার কাছে এটা ওটা চাওয়াতে একদিন বাবা আমার সব বই ছিঁড়ে ফেললো টাকা পয়সা নেই তাই হয়ত একটু রাগ করছে কোন ব্যাপার না স্কুলে গিয়ে স্যারকে বলে আবার বই নিয়ে ফাইভের বার্ষিক পরিক্ষা টা দিলাম। তারপর ও কিন্তু হাল ছাড়িনি
😪হাফেজ খানার জীবন
ক্লাস ফাইভ শেষ করে তারপর ভর্তি হলাম হেফজ খানায়, হেফজ খানায় লেখাপড়া করলাম টানা ৫ বছর। ছোট বেলা থেকে কোন বিবাহ বা অন্য কোন অনুষ্টানে যেতে পারতাম না কারন ভাল একটা প্যান্ট ছিলনা ২টা লুঙ্গি আর দুইটা পাঞ্জাবি পড়েই কাটিয়ে দিয়েছি টানা ৫ টি বছর মানে একটা ছিঁড়ে গেলে যুক্ত করতাম আরেকটা লুঙ্গি এবং পাঞ্জাবি, এভাবেই কাটিয়ে দিলাম ৫ টি বছর, হাফেজ খানায় বিকালে সবাই যেত খেলার মাঠে আর আমি যেতাম টিউশনিতে কারণ পুরো মাসের পকেট খরচ নিজের থেকে চালাতে হতো।
💠হাফেজি কমপ্লিট করে ভর্তি হলাম ক্লাস সেভেনে সেই হাফেজ খানা থেকে শুরু হলো নিজের খরচ নিজে জোগাড় করা পার্ট টাইম টিউশনি করে করে,তারপর ৮ম ৯ম এস এস সি ইন্টার, তারপর অনার্স ১ম/২য়/৩য়/৪র্থ বর্ষ এই পর্যন্ত আসছি। তখন থেকে বাবার থেকে না নিতে নিতে এখন নিজেই পরিবারের কিছু ভুমিকা পালন করছি, এখন পরিশ্রম করাটা আমার জন্য একটা দায়িত্ত্বের মত হয়ে গেলো। নিজেই যখন ইনকাম করছি এখন পাওয়া না পাওয়া হিসাব গুলো আর করতে পারিনা।
💠চাকরি খুজতে গিয়ে যখন ক্লান্ত।
২০১৬ সালে এইচ এস সি দেওয়ার পর ভাবলাম লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট কোন একটা চাকরি করবো তাই প্রথম চাকরি ইন্টারভিউ দিলাম সেনাবাহিনীতে ২০১৭ সালে কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখলাম চাকরির চাইতে পরিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ওখানে আর চান্স পেলাম না। তারপর আবার দিলাম নৌবাহিনীতে সেখানেও একি অবস্তা ফিডনেস দিয়ে সব কিছু ঠিক ছিলাম কিন্তু আমার ত মামা খালু নেই কে আমায় চাকরি দিবে? ১৭/১৮ সালের কথা এগুলো। ২০২০ সালে এসে আবার আবেদন করলাম জুনিয়ার মওলবি হিসেবে তার কিছুদিন পর থেকে বন্ধ হয়ে গেলো সরকারি সব কার্যক্রম সেটাও আর হলোনা। তখন থেকে আবার ভাবতে লাগলাম জীবনে কিছু একটা করতে হবে কি করব বাবার সাথে প্রায় পরামর্শ করতাম কি করবো না করবো কোন পথ খুজে পাচ্ছিলাম না বাবাও বলতেছে আমার যদি লাক খানিক টাকা থাকত তুকে দিয়ে বলতাম যা কোন একটা ব্যবসা কর কিন্তু সেই সামার্থ ও ত তেমন আমার নেই। তারপর ও হতাশ না হয়ে পার্ট টাইম কাজ করতে লাগলাম টিউশনি এবং অন্যান্য কাজ গুলো চালিয়ে যাচ্ছি দেখি সামনে কি হয়। এরকম লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম কয়েকটা টিউশনি আর ছোট একটা মাদ্রাসার চাকরি করে আসছিলাম এভাবে কাটিয়ে দিলাম আরো একটি বছর ২০১৯ সাল।
💘 উদ্দোক্তা হওয়ার গল্প
২০১৯ সাল শেষ হয়ে চলে আসে ২০২০ সাল মার্চ পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। তারপরেই নেমে আসল জীবনে হতাশা। কিন্তু হাল ছাড়িনি করোনার তান্ডবে বন্ধ হয়ে গেলো মাদ্রাসা এবং টিউশনি গুলাও। এই হতাশা নিয়ে কোথায় যাব কোন ইনকামের পথ আর দেখতেছিনা সামনের জীবন সব কিছুই যেন অন্ধকার হয়ে আসতেছে। তার কিছুদিন পর আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে সন্ধান পেলাম নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের,রেজিস্ট্রেশন করলাম ১১ তম ব্যাচে টানা ৯০ দিন ক্লাস করার পর কাজ শুরু করলাম টি-শার্ট নিয়ে মাত্র ২৭০০ টাকা দিয়ে। টানা আড়াই মাস লেগেছে টি-শার্ট গুলো সেল করতে।তারপর ও হতাশ হয়নি যখনিই একটু হতাশা আসত তখনিই গিয়ে দেখে আসতাম স্যারের পোস্ট এবং ভিডিও সেশন গুলো। স্যারের প্রতিটা কথা আমাকে সাহস জাগিয়েছে, স্যার একটা কথা বারবার বলেন লেগে থাকুন সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ। ঠিক স্যারের শিক্ষা বুকে ধারণ করে লেগে আছিলাম ধৈর্য ধরে তাই আজ আমি সফলতার পথেই হাটতেছি।প্রথম দিকে এক মাসে যা সেল হতো এখন তা এক সপ্তাহে হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। এখন গড়ে সেল ২৫ থেকে ৩০ হাজার প্রতিমাসে আলহামদুলিল্লাহ,আমারো একদিন লাক টাকা সেল হবে ইনশাআল্লাহ।
💘চাকরি করবো না চাকরি দেবো।
এখন আপাতত বাসা থেকেই সেল করছি, আমার একটাই স্বপ্ন আগামিতে আমার একটা শোরুম হবে ইনশাআল্লাহ। সকলে দোয়া করবেন আমার জন্য আমি যেন আমার স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে পারি জীবনে অন্তত একজন পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে পারি। এতক্ষন ধৈর্য নিয়ে আমার গল্পটা পড়ার জন্য কৃতজ্ঞ সকলের প্রতি।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -৭৫১
তারিখ- ২২-০২-২০২২
💠মুঃনেওয়াজ উদ্দিন
💠ব্যাচঃ-১১ রেজিঃ-২৯৯৪৮
💠চট্রগ্রাম ফটিকছড়ি
💠উদ্যোগ,আবিদ ফ্যাশন গ্যালারি
💐কাজ করছি পাঞ্জাবি পায়জামা টি-শার্ট & ছেলেদের বিভিন্ন পোশাক নিয়ে