এরকম কিছু করতে গেলেই আমার মায়ের সেই করুন মুখটি সামনে আসতো।
💕মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নামে শুরু করছি 💕
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।
সর্বপ্রথম প্রশংসা সেই মহান রবের প্রতি যিনি আমাদেরকে করোনা মহামারী থেকে সুস্থ রেখেছেন ।আলহামদুলিল্লাহ। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এ যুগের একজন কিংবদন্তি যার অক্লান্ত পরিশ্রম অক্লান্ত সাধনায় তৈরি হয়েছে হাজারো যুবকের স্বপ্নের রাজ্য নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব Iqbal Bahar Jahid স্যার এর প্রতি।
এই ফাউন্ডেশন থেকে প্রতিনিয়ত কত জিনিস শিখেছি সেটা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।প্রত্যেক মানুষের একটা গল্প থাকে ।সেটা দুঃখের ও হতে পারে আবার সুখের ও হতে পারে
💞আজ আমি আমার জীবনের গল্প আপনাদের শোনাবো।💞
আমার জন্ম
সবুজে ঘেরা পাখির কলককলিতে মুখরিত বগুড়া জেলার এক নিভৃত পল্লীতে মায়ের মুখের প্রথম হাসি হয়ে আমার জন্ম।যৌথ পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে সবার কৌতূহলের সীমা ছিল না।পারিবারিক রীতি অনুযায়ী নানা বাড়িতে আমার জন্ম ।বড় হয়ে শুনেছি প্রথম সন্তান ছেলে বলে খুশিতে আটখান আমার প্রিয় দাদাজান মিষ্টি নিয়ে সবার আগে তিন কিলোমিটার দূরে আমার নানা বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন।জানিনা এই রীতির সূত্রপাত কোথা থেকে।
আমার পারিবারিক অবস্থা
গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবার যাকে বলে। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অনেক গুলো সদস্য একসাথে গাদাগাদি করে থাকা।কেউ পড়াশুনা করছে কেউ সংসারের হাল ধরতে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে।আমার বাবার কথাই ধরুন।অভাব অনটনের সংসারে নিজের চেষ্টায় খেয়ে না খেয়ে মেট্রিক পাশ করে শহরের এক কলেজে ভর্তি হন।তারপর লজিং মাস্টার হয়ে শেষ করেছেন বি এ ।এরপর সংসার নামক টানাটানি তাকে আবার গ্রামে ফিরতে বাধ্য করে।গ্রামে এসে একটা মুদির দোকান দেন আর ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়া যেন ঠিকঠাক চলতে পারে সেদিকে মনোযোগ দেন।
আমার বেড়ে ওঠা
আমি ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করেছি আর বাবার কপালে ভাঁজ যেন তীব্র হতে শুরু করেছে।ছেলে বড় হচ্ছে তাকে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে,কিভাবে মানুষ করা যাবে এ নিয়ে হাজারো চিন্তা।আমার জন্মের ঠিক দেড় বছর পর আমার ছোট ভাই এর জন্ম।দুই সন্তান নিয়ে যৌথ পরিবারের কেমন টানাপোড়ন চলেছিল সেটা আমার বাবা মার চাইতে আর কেউ ভালো বলতে পারে না ।
একটা ভালো জামা কিনে দিতে গেলে আমার চাচারা তিনভাই সহ বাকী সদস্যরা কে কি বলবে সেই চিন্তায় থাকতে হতো সারাক্ষণ।আমার বুদ্ধি হবার পর আমার আম্মার মুখের করুন চাহনী আমাকে কষ্ট দিত ।😨 আম্মা আমাদের দুভাই এর দিকে তাকিয়ে শুধু আফসোস করতেন।পাড়া প্রতিবেশী তাদের সন্তানদের নিত্য নতুন জামা কিনে দিতেন যেটা দেখে আম্মার হৃদয় যেন বিদীর্ণ হয়ে যেত।😰
আমাদের পরিবারের এমন ও দিন গেছে বাজারের টাকা নেই বলে সকাল সন্ধায় শুধু পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে পান্তা খেতে হয়েছে।😢
আমার পড়াশুনা
ছোটবেলা থেকেই কিছুটা মেধাবী ছিলাম।বাবা মার হাজার কষ্টের মাঝে যেন সেটা মরুভূমিতে বৃষ্টিপাতের মত।ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত ক্লাসের দ্বিতীয় বয় ছিলাম সব সময়।মাঝখানে এক বছর মাদ্রাসায় পড়েছি পবিত্র কুরআন সহী শুদ্ধভাবে শিখার জন্য।
এরপরে ভর্তি হই গ্রাম থেকে একটু দূরে হাইস্কুলে।আমার খুব মনে আছে ক্লাস সিক্সে ৪০ টাকা দামের একটা প্যান্ট আর ১৫০ টাকা দামের একটা স্কুল শার্ট কিনে দিয়েছিলেন আমার আব্বাজান।এস এস সি অবদি এটাই ছিল আমার একমাত্র স্কুল ড্রেস।🙁
পারিবারিক অভাব অনটন যেন আমাকে গ্রাস না করে সেজন্য নানা বাড়িতে রেখে পড়াশুনা করানো হয়েছিল। যাই হোক আলহামদুলিল্লাহ কৃতিত্বের সাথে এস এস সি পাশ করি।জীবনের প্রথম রেজাল্ট দিয়ে আমার বাবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছিলাম।❤️
কলেজ জীবন ও লজিং মাস্টার জীবন
আর্থিক টানাপোড়নের দরুন মেসে থাকতে পারিনি।শহরের পাশে একটা গ্রামে লজিং মাস্টার থেকে শুরু হল সংগ্রামী জীবন।গর্দভ দুইটা স্টুডেন্ট পড়াতে কি যে কষ্ট হয়েছিল আমার।আর থাকার ঘরটা এমন যেখানে গরু মহিষ ও রাখা কষ্টকর।কোন জানালা নেই তার উপর পাশেই রান্নার চুলা।সারাদিন ধোঁয়ায় রুম অন্ধকার হয়ে থাকতো।আমার পড়ার টাইম গোল্লায়।এভাবে চলতে থাকলে আমার ভবিষ্যত অন্ধকার জেনে বাবাকে জানাই।বাবা তার সেই কলেজ লাইফের লজিং মাস্টার থাকা বাড়িতেই রাখার বন্দোবস্ত করলেন।পূর্ব পরিচিত তাই এবার একটু ভালো লাগলো।কিন্তু খাইতে গেলে কেমন জানি ছোট ছোট লাগতো।বাসায় ছাত্র ছাত্রী দুজন।একজন গাধা টাইপের ছাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে।ছাত্রী ক্লাস টুতে পড়ে।সাথে ছিল জাকিয়া নামের পিচ্ছি মেয়ে।ওকে কোলে নিয়েই আমার পড়তে হত।মাঝে মাঝে কোলে প্রস্রাব করে দিত।😀মেজাজ খারাপ করে গোসল দিয়ে আসতাম।এখানে যে কাজ করতে হতো না তাও না।যখন ফসল থেকে শিম তোলার সময় হয় তখন সিম তোলা,বেগুন তোলা। ধান মাড়াই হয়ে গেলে বস্তা করা, খর শুকানো এসব করতেই হতো।
জীবনে না ভুলার মত বাজে ঘটনা
যেদিন আমার এইচ এস সি ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে তার আগের দিন।আগামীকাল পরীক্ষা দিতে যাব তাই কলেজ ড্রেসটা ভাবলাম একটু নিজে নিজে ইস্ত্রি করি।বাসায় যেহেতু ইস্ত্রি ছিল তাই ইস্ত্রি করে ইস্ত্রিটা ঘরের রাখা ট্রাংক এর উপর রাখি উপর করে।মুটামুটি ঠাণ্ডা হয়েছিল।কিন্তু এর জের ধরে দাদীজান (আব্বার পূর্ব পরিচিত সূত্র ধরে) আমাকে এত বাজে ভাষায় বকাবকি করেন যে আমি হতভম্ব হয়ে যাই।পড়ার রুমে গিয়ে সেদিন অঝোরে কেঁদেছিলাম😭😭আব্বাকে বলার সাহস পাইনি কারণ আব্বা অনেক কষ্ট পেতেন এটা শুনলে।
যেদিন আমার কেমিস্ট্রি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা তার আগেরদিন রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মুরগির খামার খালি করার দায়িত্ব পড়লো।যেখানে হাজার হাজার বিক্রিয়া পড়া বাকী সেখানে আমি খামারে কাজ করি 🙁🙁 কোন রকম গোসল দিয়ে পড়া শুরু করলাম কিন্তু মাথা ব্যাথায় পড়তে পারলাম না।আল্লাহর নাম নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি ।সকালে উঠে যতটুকু পাড়া যায় রিভিশন দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসি।একই ঘটনা ম্যাথ পরীক্ষার আগেও।
যাই হোক সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচ এস সি পাশ করি কৃতিত্বের সাথেই।
আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন
ভালো কলেজে পড়ার সুবাদে কাছের সব বন্ধু যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হচ্ছিল তখন নিজেকে অসহায় লাগছিল।আমাকেও হতেই হবে এই পন করি।দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় চান্স পেয়ে যাই হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,দিনাজপুর এ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ।😊
গ্রামের এক সহজ সরল যুবকের যেন নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান।স্কুল কলেজে লাইফের মত কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই।সবাই স্বাধীন।কি করি আজ ভেবে না পাই পথ হারিয়ে কোন বনে যাই।গণ রুমের বন্ধুদের সাথে আড্ডা ক্লাস এসব করে দিন কাটছিল ভালই।
💕প্রেম একবার এসেছিল নীরবে
প্রথম বর্ষে নবীনরা ভর্তি হবার পর বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রোগ্রামের আয়োজন করে। আমিও অংশ হয়েছিলাম একটাতে।আর সেখানেই এক বালিকা হৃদয়ে দোলা দিয়েছিল।যেহেতু আমরা একই প্রোগ্রামে ছিলাম আমি সব সময় সুযোগ খুঁজতাম কিভাবে তার সাথে কথা বলা যায়।প্রতিদিন টুকটাক হাই হ্যালো হত।একদিন সাহস করে তার নাম্বারটা চেয়ে বসি। সেও কোন প্রশ্ন না করে দিয়ে দেয়। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। প্রতিদিন তার সাথে কথা হতো কিন্তু কখনও ভালোবাসার কথাটি বলা হয়নি। তিন থেকে চার মাস পর আমি বলে দিই। সে প্রথমে অপ্রস্তুত থাকলেও না করেনি।
হয়ে গেল😀
প্রেম ভালো কিছু যেমন নিয়ে আসে তেমন খারাপ কিছুও রেখে যায়। আমি ধীরে ধীরে তার প্রতি বেশি দুর্বল হয়ে যাই যেটা আমার পরবর্তী জীবন অনেক কঠিন করে দিয়েছিল ।তার সাথে কথা না বললে এক দিন যেন এক হাজার দিন মনে হতো।আমার পড়াশুনায় ব্যাঘাত হয়েছিল ব্যাপক।জানিনা সেও কেন একই কাজ করতো।🙁
আমি যখন তৃতীয় বর্ষে তখন থেকেই ঝামেলা শুরু।সে প্রায় বলতো বাসায় ছেলে দেখছে তুমি এখনি কিছু একটা করো।কিন্তু একজন ছাত্রের পড়াশুনা শেষ না হতেই কি আর করা সম্ভব।😰😰
এখন ভাবি ইশ সেই সময় যদি নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন থাকতো!!🙁
যাই হোক, পরবর্তী ফলাফল যা হবার তাই হয়েছিল।তার পরিবার এক প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকার এর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।😥😥সেও বেশ সহজভাবেই মেনে নেয়।আমার মেনে নিতে কয়েক মাস লেগেছিল।প্রথম মাস খেতে পারিনি ঠিক মত।অনেক হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আত্মহত্যার মতো জঘন্য চিন্তাও কাজ করেছিল🙁
এত কিছুর মাঝেও আমি নিয়মিত নামাজ পড়তাম।হয়তো সে কারণে আল্লাহ আমাকে দিয়ে জঘন্য কাজটি করাননি।আর এরকম কিছু করতে গেলেই আমার মায়ের সেই করুন মুখটি সামনে আসতো।বাবার হাজার স্বপ্ন বাধা হয়ে দাঁড়াতো।ধীরে ধীরে আমার চিন্তা পরিণত হতে থাকে।জীবনকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি।বাস্তবতা বুঝতে চেষ্টা করি।তাকে মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করি।হয়তো সম্ভব হয়নি পুরোপুরি।কিন্তু পেরেছিলাম।
কর্ম জীবন
বিশ্ব বিদ্যালয় জীবন শেষ করে বগুড়ায় একটা ব্যাক্তি মালিকানা সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ শুরু করি।কিন্তু কাজের পরিবেশ বেশি দিন স্থায়ী হতে দেয়নি।এক মাসের বেতন আরেক মাসে তাও কয়েক কিস্তিতে।ভাবলাম আমাকে ভিন্ন কিছু করতে হবে।চলে আসি ঢাকায়।২০১৭ সালের শেষের দিকে।একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ শুরু করি।কিন্তু মাথায় সব সময় কাজ করতো ভিন্ন কিছু একটা করতেই হবে ।এর মাঝে আরেকটি কোম্পানিতে জয়েন করি কিছুটা ভালো সুযোগ দেখে।এসময় বিভিন্ন মোটিভেশনাল ভিডিও দেখতাম ইউটিউটবে।নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন সৃষ্টির শুরু দিকে সাধারণ একটি গ্রুপ ভেবে জয়েন করেছিলাম।
💎নিজের বলারমত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যোগদান
ভাবতেই অবাক লাগে আমি Iqbal Bahar Jahid স্যারকে চিনতাম না।স্যার কোন এক টিভির নিউজ প্রেজেন্টার এটাই জানতাম।একদিন ইউটিউবে একটা শিরোনামে আমার চোখ আটকে গেল।
" শূন্য থেকে শুরু এখন মাসে কয়েক লাখ টাকা সেল" সেদিনের অথিতি ভাই বোন কে ছিলেন ঠিক স্মরণ নেই।কিন্তু তারা বার বলছিলেন যে স্যারের ট্রেনিং পেয়ে আজকে তারা সফল উদ্যোক্তা।আমিও খুঁজতে থাকি কিভাবে করবো ট্রেনিং।ডেসক্রিপশনে গ্রুপের লিংক দেওয়া ছিল।ঢুকে দেখি এই গ্রুপে আমি ২০১৮ সাল থেকে যুক্ত।ইশ কি মিস করেছি তখন।অবশেষে ১৬ তম ব্যাচের একজন গর্বিত সদস্য হবার সুযোগ পেয়ে যাই।আলহামদুলিল্লাহ।আল্লাহ যেন আমাকে একটা নতুন দুনিয়া দান করলেন।এত এত ভালো মানুষ আর এত সুন্দর ব্যবহার আমাকে ভালোবাসায় মগ্ন করে দিল।আহা কি মধুর এক পরিবার।১৬ তম ব্যাচ এর ৯০ দিন শেষ করে এখন আমার উদ্যোক্তা জীবনে প্রবেশ করেছি।
আপনাদের দোয়ায় আমি কাজ করছি বগুড়ার বিখ্যাত পন্য বগুড়ার দই নিয়ে।আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি দুটি বড় ডেলিভারি সম্পন করেছি।পরপর দুই হাটবারেই সেল পেয়েছি।সবার দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই।সবাই পাশে থাকবেন ভালোবেসে।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -৭৫৯
তারিখ-০৪/০৩/২০২২
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের একজন আজীবন গর্বিত সদস্য
☪️ মোঃ নাসিম
☑️ ব্যাচ-১৬
☑️এগ্রো ফোরাম ভলেন্টিয়ার
☑️ রেজিস্ট্রেশন নং-৭৯১৯১
☑️ ব্লাড গ্রুপ- B+
🥞Owner of বগুড়ার দই
☑️জেলা- বগুড়া
https://www.facebook.com/bogurardoi22