বাবার মৃত্যু ও করোনা কে উপেক্ষা করেও নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
আসসালামুয়ালাইকুম
জুম্মা মোবারক
কেমন আছেন সবাই? ইনশাআল্লাহ আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সবাই ভালো আছি।
এই করনা মহামারী সম্পূর্ণ বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেছে। করেছে মানব জীবনকে দুর্বিসহ। ঠিক এরই মাঝে অনেক চাকরিজীবী চাকুরী ছেড়ে হয়ে উঠেছেন উদ্যোগতা, জীবিকার তাগিদে অনেকে নিজেই নিজের আত্মকর্মস্থান করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রদ্ধেয় মেন্টর #ইকবাল_বাহার_জাহিদ স্যারের হাত ধরে আমাদের এই ভালোবাসার ফাউন্ডেশন এর জন্ম।
🌊🌊লাখো কোটি শুকরিয়া মহান আল্লাহর দরবারে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত ভালো রেখেছেন সুস্থ রেখেছেন।
কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা মহান প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর প্রতি, যিনি এই মানব জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
🌊🌊 কৃতজ্ঞতা ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা সেই পিতা মাতার প্রতি যিনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন, লালন পালন করছেন শিক্ষিত করেছেন সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হওয়ার জন্য সারাটা জীবন চেষ্টা করে গেছেন। এবং আমার প্রতিটি ভাল কাজের অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহ যুগিয়েছেন।
🌊🌊 সীমাহীন ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা আমার জীবন সঙ্গীর প্রতি যিনি আমাকে আমার প্রতিটি ভালো কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন সাহায্য করা যাচ্ছেন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে। আমার সকল প্রকার আবদার মিটিয়ে এবং আমার রাগ জিদ কে ভালোবাসা পরিণত করে নিজের ভালোবাসা দিয়ে আমাকে আগলে রেখেছেন।
🌊🌊🌊 কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধা সেই মহান ব্যক্তির প্রতি যিনি এত এত ভাল মানুষ তৈরি করার কারিগর, সম্মানিত ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।যিনি এমন একটা প্লাটফর্ম প্লাটফ্রম তৈরি করেছেন সবাই আজীবন সদস্য হিসেবে বিবেচিত প্লাটফর্মে রয়েছে সদস্যদের নির্বিঘ্নে নিজের সুখ-দুঃখের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করার স্বাধীনতা।
আর সেই সূত্র ধরে আজ আমি সবার সাথে আমার জীবনের গল্প শেয়ার করতে চলে এসেছি।
🌊🌊বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে সবচাইতে আদরের একমাত্র ছোট মেয়ে আমি। বলা যায় বাবার আদরের রাজকন্যা। বড় দুই ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন।এতটাই আদরের যে আমাকে একজন শাসন করতে আসলে অন্যজন তার উপরে ঝাপিয়ে পড়তো। অর্থাৎ একটা টু-শব্দ পর্যন্ত কেউ আমার সাথে করুক এটা আমার ভাই এরা কখনোই সহ্য করতে পারেনি। আলহামদুলিল্লাহ ভাইদের ভালোবাসা আজো অটুট আছে।
🌊🌊আমাদের এই তিন ভাইবোনের ভালোবাসাকে অনেকেই হিংসা করত আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তাদের সেই হিংসার আগুনে পানি ঢেলে দিয়ে উপর ওয়াআলা আজও আমাদেরকে সেই একই ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন। সকলের জীবনে ভাইবোনদের মধ্যে অনেক চড়াই-উতরাই হয়। নিজেও দেখেছি বিভিন্ন কারণে ভাই ভাই,ভাই বোনে অনেক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় যা আলহামদুলিল্লাহ আজ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে হয়নি এবং ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও হবে না।
আমাদের জীবনে আল্লাহর রহমতে কোন কষ্ট ছিল না। তিনবেলা ডাল ভাত খেয়ে আলহামদুলিল্লাহ সব সময় ভালো ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ এখনো ভালোই আছি।
কিন্তু আমাদের পরিবারে ধস নেমে আসে ২০০১ সালে।
🌊🌊২০০১ সাল শুরু
আগের দিন ৩১ ডিসেম্বর, রোজার ঈদের তৃতীয় দিন। সন্ধ্যা রাতে আব্বা অসুস্থ হয়ে গেলে তড়িঘড়ি করে হসপিটালে পাঠানো হয়। খবর আসে কিছুক্ষণ পর, ছোট খালা বলে ভাইয়া ফোন করে বলেছে আমাকে আর আম্মুকে হসপিটাল যেতে। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? আন্টি বলল তেমন কিছুই না তোর আব্বা ভালো আছে যাওয়ার সময় তোরা খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলি তাই এখন তোদের কে দেখেছে দেখতে চায়। কিন্তু মনটা তখনি কেমন জানি করছিল যাইহোক হসপিটালে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আব্বু আমাদের ছেড়ে চলে যায় সেই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে।
সেই মুহূর্তে রাত বারোটা বেজে এক মিনিট বা তার ২/১ মিনিট বেশি। চারিদিকে আনন্দ-ফুর্তি, ফুটছে আতশবাজি, ফুটছে বোম।
আর আমরা বাবার মৃতদেহটা নিয়ে ছুটে চললাম দাদীর বাড়ি।
🌊🌊এইতো তারপর থেকে যেন নেমে এলো অন্ধকার তিন ভাইবোন তখনো পড়ালেখা করতাম। বড় ভাইয়া বাধ্য হয়ে পড়াশোনা বন্ধ করে নেমে পড়ে কম্পিউটার ব্যবসায়।একটা সময় ছোট ভাইয়াও নেমে পড়ে আব্বার ব্যবসার হাল ধরতে।চলতে থাকে আমার পড়াশোনা।
🌊🌊এইচএসসি পাশ করার পর এক রকম শাশুড়ির ইচ্ছাতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়।
(এখানে বলে রাখি আমি যখন এস এস সি পরীক্ষার্থী তখন একটা বিয়েতে আমার শাশুড়ি আমাকে দেখেন এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন। বাসা থেকে বারবার না করা সত্ত্বেও তিনি পিছ পা হননি। যাই হোক সেই গল্প না হয় অন্য একদিন লিখবো।)
কিন্তু ছোট থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে একটা সময় আমি নিজে কিছু করবো। আরে প্রেরণা হিসেবে সব সময় আমার বাবা আমাকে সাহস যুগিয়েছেন ছোটবেলায় কোন কিছু করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে তিনি আমাকে সব সময় পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। মনীষী অদম্য ইচ্ছা তাকে আজও পুষে রেখেছি।বিয়ের পর অনার্সে ভর্তি হই। গর্ভাবস্থায় অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দেই। এবং বাংলা বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি।
🌊🌊🌊🌊কিন্তু বড় পরিবার যে পরিবারে আছে শাশুড়ি ননদ দেবর এবং চাচা শশুরের পরিবার-পরিজন আর ছোট বাচ্চা সামাল দিয়ে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা টা দেয়া হয়নি।পরীক্ষার দিন যখন বের হবো ঠিক সেই মুহূর্তে ছেলে খুব কান্নাকাটি শুরু করে ছেলের কান্না দেখে আর পরীক্ষা দিতে যাওয়া হয়নি। ওই যে বলে না সবকিছুর উর্ধ্বে একজন মা সন্তানের জন্য তার সবকিছু বিসর্জন দিতে রাজি। আমার বেলায় হয়তো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি কিন্তু একটা সময় ছিল যখন করা হয় তখন ভর্তি হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উপর।
ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন টেকনোলজি নিয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা কোর্স কমপ্লিট করি।
তারপর থেকে আর থেমে নেই চেষ্টা করছি নিজে কিছু করার। ডিপ্লোমা করার পর প্রায় দুই বছর অনেক চেষ্টা করেছি একজন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করার জন্য চাকরি করার জন্য কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় কোনো ফ্যাশন হাউসে কাজ করার সুযোগ হয়নি। এরপর সব বাদ দিয়ে নিজেই নিজের কাজ শুরু করে দেই।শুরু করে দেই নিজের উদ্যোগ আরাস্থা ফ্যাশনের কাজ।
🌿🌿গাছের প্রতি জেনেটিক্যালি একটা আলাদা ভালোবাসা কাজ করে কাপড় চোপড়ের পাশাপাশি এই গাছপালা নিয়েও কাজ করা শুরু করে দেই।
আল্লাহর রহমতে হাটি হাটি পাপা করে নিজের উদ্যোগটাকে একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
মাঝে আমার এই উদ্যোগের তেমন কোনো সফলতা না পাওয়ায় কিছুটা হতাশা পড়ে যাই।বিভিন্ন গ্রুপে নিজের পণ্য নিয়ে কাজ করি কিন্তু আশানুরূপ কোন ফল পাইনি। এরই মাঝে পরিচয় হয় উদ্যোক্তা আপুর সাথে যার মাধ্যমে ইউটিভি লাইভ এর সম্পর্কে জানতে পারি। আর সেই ইউ টিভি লাইভ থেকেই জানতে পারি আমাদের এই ভালবাসার প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে। সাথে সে আপুর উদ্যোক্তাগণ হওয়ার গল্প এবং আমাদের স্যারের অনুপ্রেরণামূলক কথাগুলো নিজেকে আবার উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। তবে আমার মধ্যে সব সময় একটা বিষয় কাজ করে সেটা হচ্ছে লেগে থাকা। দেরি না করে খোঁজা শুরু করে আমাদের এই আন্দোলনকে এ ভালবাসার প্ল্যাটফর্মকে এবং খুব দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করা করে ফেলি এই প্লাটফর্মে। হয়ে যাই আজীবন সদস্য।
আজ আমি অনেক খুশি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে এই প্লাটফর্মে পেয়েছি ভালোবাসার মানুষ।প্ল্যাটফর্ম থেকে পেয়েছি সীমাহীন ভালোবাসা শ্রদ্ধা। এবং আলহামদুলিল্লাহ অর্জন করতে পেরেছি বিশ্বাস।
এতটাই ভালোবাসা পেয়েছি যে শ্রদ্ধেয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার ভালোবেসে এবং বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছেন থানা এম্বাসেডরের।
হ্যাঁ হয়তো আমার তেমন কোনো সেল নেই, হয়তো আমার উদ্যোগটা খুব একটা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি এখনো। তবে নিজের প্রতি বিশ্বাস আছে একদিন আমার উদ্যোগ চলে যাবে সফলতার শীর্ষে এবং এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারব। যেটা আমার ইচ্ছা গুলোর মধ্যে একটি। তবে আমি অনেক খুশি এই প্ল্যাটফর্ম আমকে এতো অল্প সময়ে যে সম্মান দিয়েছে, সকলের কাছে দোয়া চাই আমি যেন সেই সম্মান সেই দায়িত্ব এবং বিশ্বাস অর্জন করে সেভাবেই চলতে পারি। সম্পূর্ণ ভাবে পরিপূর্ণভাবে নিজের দায়িত্ব গুলো পালন করতে পারি।
তবে এতটুকু বলব শত বাধা-বিপত্তি আসা সত্ত্বেও আমি কিন্তু পিছপা হয়নি আমার মনের মধ্যে একটা জিনিস আছে যে দিদি টাকে সব সময় আমি কাজে লাগে আমার উত্তরটা কে সামনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
পরিশেষে সম্মানিত এবং শ্রদ্ধেয় স্যার এর সাথে সুর মিলিয়ে এতোটুকুই বলবো
স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুন
শুরু করুন
লেগে থাকুন
আর লেগে থাকলে সফলতা একদিন আপনাকে ধরা দিবেই দিবে ইনশাআল্লাহ।
কাজ করছি মেয়েদের পোশাক এবং নিজের উদ্যোগে নিজ বাগানের গাছের কাটিং, চারা,বীজ ও কন্দ নিয়ে।
স্বত্বাধিকারী
Arastha Fashion
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৪৮
Date:- ১৮-১৯/০২/২০২২ইং
নাম : এস এম হুমায়রা ইসলাম
ব্যাচ : ১৬
রেজিস্ট্রেশন নং : ৭৮০৫৮
ব্লাড গ্রুপ : এ+
পদবী : বংশাল থানা অ্যাম্বাসেডর
জোন : লালবাগ জোন
বর্তমান অবস্থান : মালিটোলা,ঢাকা।
নিজ জেলা : ঢাকা