একান্নবর্তী পরিবারের জীবনের গল্প
👩👩👧👦 একান্নবর্তী পরিবারের জীবনের গল্প 👩👩👧👧
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 🕌
🕌আসসালামু আলাইকুম 🕌
🌷🎉🎉 শুরুতেই আমি শুকরিয়া আদায় করছি মহান সৃষ্টি কর্তার নিকট,যিনি আমাকে এতো সুন্দর করে সৃষ্টি করছেন । লাখো-কোটি দুরুদ ও সালাম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর প্রতি,যাকে সৃষ্টি না করলে এই পৃথিবীর কোন কিছুই সৃষ্টি করা হতো না।
🌹🎉🎉 তারপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের লাখো লাখো মানুষের প্রান প্রিয় মেন্টর ও বর্তমান তরুণ তরুণীদের পথ প্রর্দশক জনাব # Iqbal_ Bahar_ Zahid # স্যারের প্রতি।
🌹যিনি এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পথপ্রদর্শক শিক্ষক মোটিভেশনাল স্পিকার,হাজারো পথহারা বেকারদের পথের দিশারী।
🌹যার অক্লান্ত পরিশ্রমে মাধ্যমে আমরা এত সুন্দর একটা প্ল্যাটফম ও আন্তরিক আন্তরিক ভাই বোনদেরকে পেয়েছি।
🌹নিজেকে অনেক বেশি ধন্য মনে করছি এই প্ল্যাটর্ফমের একজন কর্মী ও আজীবন সদস্য হিসেবে যুক্ত হতে পেরে।
🌷🌷🥀 এরপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার মা ও বাবাকে যাদের না হলে আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে আসতে পারতাম না এবং অনেক স্নেহ, আদর ও ভালোবাসা দিয়ে আমাকে লালন পালন করেছে। যেভাবে কুমার মাটি দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করে।
🌹🌾কাছে দুরে যে যেখান থেকে আমার লেখাটি পড়ছেন সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
🏅🏅সকলের কাছে আমার অনুরোধ রইলো সবাই আমার জীবনের গল্প লেখাটি পড়বেন এবং পড়ে আপনাদের মনের অনুভূতি শেয়ার করবেন।
🌺🌺🌺 আমার জন্ম একটি একান্নবর্তী পরিবারে।
আমরা আট ভাই বোন আমার বড় দুই বোন এরপর আমি তারপর চার বোন এবং সবার ছোট ভাই।
🌹 শৈশবকাল🌹
বাল্যকাল আমার ভালো ভাবে কেটেছে তখন তো আর সব কিছু বুঝতে পারতাম না, দুঃখ কষ্ট কি।
🌳🌻 আমার বয়স যখন ৬-৭ তখন সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে দেন।আমার বড় দুই বোন তখন স্কুলে আসতো তাদের সাথে স্কুলে আসা যাওয়া করতাম।
🌷স্কুলের সামনে আমার বাবার ছোট একটা দোকান ছিল। মুদি দোকান ও পাশাপাশি মাছের ব্যবসা ছিল। জেলেরা মাছ ধরতো বাবা কিনে নিয়ে আড়ৎ এ নিয়ে বিক্রি করতো।
🌹আমি যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকে বাবাকে সাহায্য করতাম।বাবা যখন মাছ নিয়ে আড়ৎ এ যেতেন তখন আমি দোকানে বসতাম।তখন তো আমি ভালো বুঝতাম না, যে যা চাইতো দিয়ে দিতাম।টাকা না দিলেও কিছু বলতাম না। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মাছ কিনে আনতে হইতো।অনেকেই মাছের ব্যবসা করতো, যে আগে গিয়ে আনতে বা বেশি দামে কিনতে পারে তার কাছে জেলেরা মাছ বিক্রি করতো। তাই আমিও অনেক সময় মাছ কিনে আনতে যেতাম।
🌹 আমি যখন চতুর্থ শ্রেনিতে পড়ি তখন আমাদের দোকান চুরি হয় একবছরে তিন চার বার। তখন সংসারে অভাব দেখা শুরু করে আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। বাবাকে বললাম আমি রাতে দোকানে ঘুমাবো, বাবা বললো একা একা পারবি , হা পারবো।
🌹কিছু টাকা ঋণকরে তারপর বাবার সাথে ব্যবসা করা শুরু করলাম খাওয়া ঘুম লেখা পড়া সব কিছু দোকানে, আমার বড় বোন ভাত এনে খাওয়াতো।
🌷আমাদের বাড়ি থেকে দোকান ২ কি. মি.,মাটির রাস্তা বর্ষা মৌসুমে কাদামাটি হয়ে যেতে।সকালে ঘুম উঠে আমি দোকান খুলে পড়তে বসতাম, ও ফাঁকে ফাঁকে কাস্টমার আসলে তাদের সেবা দিতাম। সপ্তাহে চার পাঁচ দিন আমি মাছ বিক্রি করে বরফ নিয়ে আসতাম, তারপর স্কুলে যেতাম।
🌷 মাছ নিয়ে বিক্রি করতে যেতে আসতে ৩-৪ ঘন্টা লাগতো তাই আমি মাছ নিয়ে বিক্রি করতে যেতাম বাবা গ্রামে গিয়ে মাছ কিনে আনতো। আমার দাদা কিছু জমি বিক্রি করবে বাবা বললো নিজেদের জমি ক্রয় করে রাখি। টাকা কোথায় পাবে আমাদের তিনটা গরু ছিল সে গুলো বিক্রি করলো,আরও ঋণ করে জমির টাকা দেয় তারপর আর জমির দলিল দেয় না, কালকে দিব আগামী মাসে দিব এই বলে ওয়াদা দিতেই থাকে বলতে বলতে একবছর চলে গেছে,পরে বলে তার অনেক টাকা ঋণ আছে সেগুলো দেওয়ার জন্য টাকা নিছে, কিসের দলিল দিবে। তখন আমরা কি করবো আমাদের সব সম্বল শেষ। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কি করবে বাবা কোন উপায় দেখলো না।ব্যবসা করার মতো মুলধন ছিল না, তাই আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।
🌹তারপর বাবা চট্টগ্রাম চলে আসে আমিও পঞ্চম শ্রেণি থেকে পাশ করে হাইস্কুলে ভর্তি হই। এক বছর পর বাবাকে চট্টগ্রাম থেকে চলে আসতে বলি,বাবাও চলে আসে । পটুয়াখালী যেহেতু নদী মাতৃক তাই রাতে নদী ও খালে মাছ ধরতে শুরু করলাম। বাজারে গিয়ে মাছ বিক্রি করে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে সংসার চলে। মাঝে মধ্যে আমি মাছ বিক্রি করতে যেতাম এবং বিক্রি করে এসে স্কুলে যেতাম। এরই মধ্যে শীত চলে আসলো বাবা খেজুর গাছ কাটা শুরু করলো রাতে মাছ ধরি সকালে একজন খেজুর গাছ থেকে রস নামিয়ে বাড়ি নিয়ে আসতাম অন্যজন মাছ বিক্রি করতে বাজারে যেতাম।পুরো শীত কাল এভাবে চলে গেল।
🌹🥀🌹২০০৪ সালে আবার ১,৫০০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি,শুধু মাছের ব্যবসা।পাশাপাশি আমাদের কোন জমি ছিলনা অন্যের জমি বর্গা চাষী হিসেবে চাষ করি। স্কুল ছুটির পরে দোকানে বই খাতা রেখে জমিতে কাছ করতে চলে যেতাম বিকালে দোকানে বসতামও সন্ধ্যা হলে পড়তে বসতাম।নদী ও খালে জোয়ার- ভাটা ছিল, ভাটার সময় জেলেরা জাল দিয়ে মাছ ধরত ও যখন জোয়ার হত তখন মাছ নিয়ে বাড়ি আসতো।তখন মাছ আনতে যেতে হত।তাই বাবা একদিকে যেত আমি অন্যদিকে গিয়ে মাছ কিনে আনতাম।অনেক সময় রাত ১ টা ও ২টা বেজে যেত জোয়ার হতে তখন গিয়ে মাছ কিনে আনতাম।গ্রামের এলাকা রাতে রাস্তায় কোন লোকজন থাকতো না একা একা যেতে হত অনেক ভয় করতো তরপরও বুকে সাহস নিয়ে যেতাম।বেশি মাছ হয়ে গেলে বাবা একা বিক্রি করতে নিয়ে যেতে পারতো না তখন আমিও যেতাম। আমার থাকা খাওয়া পড়ালেখা সবকিছু দোকানে বসে চালিয়ে যেতাম।আমি বাড়ি ঘুমাতাম না সব সময় দোকানে ঘুমাতাম। বাবা মায়ের কাছে ঘুমানোর যে একটা সুখ বা শান্তি আমি সেটা কখনো পাইনি। এভাবেই ২০০৮ সালে এস এস সি পরীক্ষায় A গ্রেড পেয়ে পাশ করলাম।যেদিন আমার পরীক্ষার রেজাল্ট আউট হয় সেদিন এক বড় ভাই মিষ্টি খাইয়েছিল আর সবাই খেতে চাইছে।
🌹🌹তারপর আমি কলেজে ভর্তি হই। কলেজ জীবন ও আমার এভাবেই চলতে থাকে।প্রতি দিন কলেজে যেতে পারতাম না কারন কলেজ অনেক দুরে ছিলো। একদিন বাবা বলে এভাবে চলতে থাকলে তো তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হবে।তাই আমাদের এক পরিচিত আত্মীয় বাসায় মাসে ২০ কেজি চাল দিত আর আমি তার ছেলেকে পড়াতাম।
আমি যখন এইচএসসি পরীক্ষা দিবে তার কিছুদিন আগে দাদার আরও কিছু লোন ছিলো ও তার জমাজমি নিয়ে বাবা ও চাচাদের মধ্যে ঝামেলা হয়।পরীক্ষা শুরুর দুইদিন আগে আমার চাচা মামলা করেন বাবা ও আমাকে আসামি করে এবং পরীক্ষার একদিন আগে বাবাকে পুলিশ দিয়ে আটক করার।পুলিশ বাবাকে থানায় নিয়ে আসে তখন আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। তখন কলেজের শিক্ষক ও একবড় ভাইয়ের সাহায্যে বাবাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি এবং একটা সমাধান করি।২০১০ সালে আমি এইচএসসি পরীক্ষাও A- পেয়ে পাশ করি।
🌹🌹২০১০ সালে আমি চট্টগ্রাম আসি আমার বড় বোনের কাছে।এর মধ্যে আমার বড় দুই ও আমার ছোট বোনের বিয়ে হয়ে যায়। এখানে চট্টগ্রাম সিটি কলেজে বি এ ভর্তি হই এবং দুইটা টিউশনি করি।এরপর ২০১২ সালে বাবা গাছ থেকে পড়ে তার পা ও মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায়,আমার খুব কষ্ট লাগছিলো সেই সময় আমি আমার বাবাকে একবারের জন্যও দেখতে যেতে পারি নি কারন টাকা ছিলো না।চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগবে। তখন আমি আবুল খায়েব টোব্যাকো গুরুপে এক ডিলারের অধিনে চাকুরী নেই ৩০০০ হাজার টাকা বেতনে ও পাশাপাশি টিউশন করতাম। বাবা দুই মাসের উপরে খুলনা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি ছিল। আবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক টাকা ঋণ হয়ে যাই।বড়বোন তার শশুর বাড়ি চলে যায়।আমি একা হয়ে যাই।
🌹এরই মাঝে বেতন কম হওয়ার কারনে আগের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চট্টগ্রাম ই পি জেড ইয়ং ওয়ান কোম্পানিতে চাকরি নেই।চাকরি করা অবস্থায় আমি অনেক দিন রাতে ও সকালে না খেয়ে কাটিয়েছি।কোন দিন রাতে আবার কোন দিন সকালে।চাকরি করে আস্তে আস্তে ঋণ পরিশোধ করিএবং পুরো সংসারের দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেই। চাকরির পাশাপাশি আমি Second division নিয়ে বি এ পাশ করি ও চিটাগং কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হই। এরই মাঝে ডাক্তারের চিকিৎসায় স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে তখন ২০১৬ সাল।আমাদের পুরাতন দোকানে আমি আবার ২০০০০ টাকা দিয়ে বাবাকে ব্যবসাটা চালু করে দেই। আলহামদুলিল্লাহ বাবা ব্যবসা করে আর আমি ও চাকরি করে মুলধন বাড়াতে থাকি।আমি একটা ডিপিএস করি সেখানে প্রতি মাসে কিছু টাকা সঞ্চয় করি।খুব ভালো দিন কাটছে আমাদের এরমধ্যে আমার চতুর্থ বোনের বিয়ে কার্যক্রর্ম শেষ করি।আমার ডিপিএস ভেঙ্গে আমার বোনের বিয়ে দেই। আবার ও একটা ডিপিএস করি। ছোট ভাই ও কুরআনের হাফেজ হয়ে বের হয়। বর্তমানে বরিশাল লেখা পড়া করে।এক বছর যেতে না যেতে পঞ্চম তম বোনের বিবাহ দিতে সক্ষম হই, তখন আমি আমার এই ডিপিএস টা ভেঙ্গে ফেলি।২০১৯ সাল আমিও Second class পেয়ে মাস্টার্স পাশ করি।চলে আসে ২০২০ সাল আমার ছোট বোনটির এসএসসি পরীক্ষা শুরু চারদিক তাকালে মনে হচ্ছে আলো জ্বলজ্বল করছে,নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল।
🌹তখনই দেখা মিললো নিজের একটি মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন গুরুপের। গুরুপে তখন ১১ তম ব্যচ চলছিল,আমি কিছু দিন ঘাটাঘাটি করতেই১২ তম ব্যাচে চলে আসে,তখন আমি ১২ রেজিষ্ট্রেশন করে, আজীবন সদস্য হয়ে যাই। চাকরির পাশাপাশি উদ্যোগ নেই শীতের পোশাক নিয়ে ব্যবসা শুরু করার ।আমার অফিস ছুটির পরে আমি স্যাম্পল নিয়ে মার্কেট ঘুরে অর্ডার কালেক্ট করতাম ও ডেলিভারি দিতাম।প্রতি দিন এগারোটা পর্যন্ত মার্কেটে থাকতাম তারপর বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে যেতাম। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যেতাম।আমি কিন্তু করোনার কারনে প্রথমে আমার ২০ হাজার টাকা লোকসান হয়,এবং কিছু দিন বন্ধ রাখি।
🌹প্রিয় স্যারের সেশন পড়ে অনুপ্রানিত হই এবং মনে সাহস নিয়ে নতুন করে আরও কিছু পন্য নিয়ে শুরু করি। প্রিয় স্যারের কথা গুলো মনে গেঁথে যায়, তাই আর বসে থাকতে পারিনি।বর্তমানে শীতের পোশাক, টি-শার্টএবংশার্ট নিয়ে কাজ করি।পাশাপাশি বাড়িতে একটি হাসের খামার করেছি, প্রথমে ৩০০ হাস দিয়ে শুরু করছি তিন মাস হল।আলহামদুলিল্লাহ পরিবারের সবাই নিয়ে ভালোই আছি।আমার এবং আমার উদ্যোগের জন্য দোয়া করবেন।আমি যেন সর্বোচ্ছ পরিশ্রম করে সততার সাথে এগিয়ে যেতে পারি।
🌹আমার ভবিষৎ পরিকল্পনা 🌹
বর্তমানে আমি ও আমার দুইজন পার্টনার নিয়ে ৪ টি গার্মেন্টস মেশিন ক্রয় কররেছি এবং প্রথমে পঞ্জাবি তৈরি শুরু করে দিয়েছি। আমার সকাল ৭ঃ৩০ থেকে ৬ঃ৩০ পর্যন্ত অফিস শেষে ওখানে সময় দেই।আস্তে আস্তে আরও বড় করার ইচ্ছা আছে।পাশাপাশি আমার হাস মুরগী ও গরু ছাগলের খামার করার চিন্তা ভাবনা আছে।তাই প্রথমে হাসের খামার দিয়ে শুরু করছি।
👏আমার লেখার ভুল ত্রুটি হলে সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।সবাই ভালো থাকবেন, সকলের সুস্থতা কামনা করে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।