আমার জীবনের গল্প
✍️✍️আমার জীবনের গল্প ✍️✍️
🌼বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম🌼
🌺আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ 🌺
👉আমার জীবনের গল্প একটু সময় করে পড়ার অনুরোধ রইল
🤲 প্রথমেই শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান রব। আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালার দরবারে যিনি এই করোণা মহামারীর মধ্যেও আমাকে সুস্থ রেখেছেন। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) উপর। আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক আমার পিতামাতার উপর উনারা আমাকে লালন পালন করে বড় করেছেন।
👉 যার শিক্ষার অনুপ্রেরণায় আজ আমি লিখতে বসেছি আমার জীবনের গল্প। সে আর কেউ নয় তিনি হলেন আমাদের সবার প্রিয় "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিয় মেন্টর জনাব ""ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার"" যার অক্লান্ত পরিশ্রমে হাজার হাজার বেকার যুবক কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছেন। স্যারের শিক্ষা নিয়ে ৮০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে তারা নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং অন্য লোকের কর্মসংস্থান করেছেন।
🙍 আমার পরিচয়✍️
আমি জুলফিকার আলী মন্ডল । জেলা রাজবাড়ী। উপজেলা বালিয়াকান্দি । বহরপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম বংকুর আমার জন্মস্থান।
আমার বাবা একজন কৃষক ছিলেন মা ছিলেন গৃহিণী। আমরা 4 ভাই 6 বোন 10 ভাই বোন।মা-বাবাসহ 12 সদস্যের বিশাল এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী লোক ছিলেন আমার বাবা ।
আপনারা জানেন রাজবাড়ী জেলা পদ্মার পাড়ে অবস্থিত একটি জেলা। রাজবাড়ী জেলার দুই পাশেই পদ্মা নদী অবস্থিত । পূর্ব পাশে নদী ওপারে মানিকগঞ্জ জেলা। উত্তর পাশে নদী পার হলেই পাবনা জেলা। আগে প্রতিবছর বন্যার পানিতে ফসল নষ্ট হয়ে যেত । বাপ দাদার জায়গা জমি থাকার পরেও ফসল না হওয়ার কারণে আর্থিক অভাব অনাটন লেগে থাকতো প্রতিটি পরিবারের। আমাদের পরিবারও ছিল একই অবস্থা।
আমি শুনেছি এমত অবস্থায় আমার বড় ভাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে পরিবারের হাল ধরেন এবং বাবাকে সাহায্য করেন। ভাই বোনদের লেখাপড়া তাদের খাদ্য ও বস্ত্র সুব্যবস্থা এবং বোনদের বিয়ে-শাদী প্রধান দায়িত্ব পরে বড় ভাইয়ের কাঁধে ।
👪 পারিবারিক অবস্থা🌺
জায়গা জমি থাকার পরেও ফসল নষ্টের কারণে অভাব-অনটন লেগেই থাকত পরিবারে। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের পরিবার। বড় বোনের বিয়ের পরেই চাচারা আমাদের পৃথক করে দেন কারণ আমরা অনেক ভাই-বোন আমাদের খরচ অনেক বেশি।
অতপর বড় ভাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে ভাইবোনদের লেখাপড়া ও বোনদের বিয়ের দায়িত্ব বহন করতে থাকেন। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের পরিবার সদস্যদের জীবন।
✍️ আমার শিক্ষা জীবন🌺
আমি বংকুর প্রাইমারি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ হয়ে বহরপুর হাই স্কুলে ভর্তি হই। 1999 সালে এসএসসি পাস করি এবং ওই বছরই বালিয়াকান্দি ডিগ্রী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হই। বালিয়াকান্দি কলেজে লেখাপড়া অবস্থায় ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ার কারণে লেখাপড়ার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হই ।
2001 সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করি। এরপর থেকেই পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমাকে। আমি অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ি। আবার লেখাপড়া শুরু করি এবং এইচএসসি পাস করি। বালিয়াকান্দি কলেজ থেকে সোনাপুর মীর মশাররফ হোসেন কলেজে ডিগ্রীতে ভর্তি হই। প্রথম ইয়ার শেষ দ্বিতীয় ইয়ারে ভর্তি হওয়ার পরই শুরু হয় আমার জীবনের অন্য একটা অধ্যায়। লেখাপড়া শেষ করার সৌভাগ্য হয় না আমার জীবনে।
😥এক স্বপ্ন ভাঙ্গা উদ্যোগ🌺
আমাদের একটি কাপড়ের দোকান ছিল বহরপুর বাজারে আমি অষ্টম শ্রেণি পড়া অবস্থা থেকেই ঐ দোকানে সময় দিতাম এবং আমাদের কিছু কর্মচারী কাজ করতো এ কাপড়ের দোকানে উনাদের সাথে আমি মিশে কিছু কাজ শিখতাম এবং কিছু কাপড়চোপড় সেলাই করতাম ওখান থেকে আমার কিছু বাড়তি ইনকাম আসতো অষ্টম শ্রেণি থেকে ডিগ্রী সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত সম্পূর্ণ
লেখাপড়ার খরচ আমি নিজেই চালাতাম। কারণ আমার বাবা বৃদ্ধ মানুষ ছিল ভাইয়েরা সবাই তাদের নিয়ে ব্যস্ত ।তাই আমি আমার নিজের লেখা পড়ার যাবতীয় খরচ নিজেই ইনকাম করতে বাধ্য হই।
🤽খেলাধুলা জীবন🌺
আমি সবার ছোট সন্তান হিসেবে বাবা মা ভাই বোন
এবং গ্রামের মানুষ সবাই আমাকে অনেক আদর করত । আমি গ্রামের সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন খেলাধুলায় ব্যাস্ত থাকতাম। এবং টিম ওয়ার্ক ও লেডারর্শিপ শিশুকাল ও শিক্ষাজীবন থেকেই পেয়েছি।
✈️প্রবাসী জীবন🌺
2004 সালে আমি ডিগ্রী সেকেন্ড ইয়ারেপড়া অবস্থায় পারিবারিক অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে, পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ ও অনুরোধে বাধ্য হয়ে বেঁচে নেই প্রবাসী জীবন। পবিত্র ভূমি সৌদি
আরবে চলে আসি। শুরু হয় আমার জীবনের এক নতুন সংগ্রামী অধ্যায়। একজন প্রবাসী ছাড়া কেউ বোঝে না প্রবাসী জীবনের সংগ্রামের কথা😥 হেলপারের চাকরি দিয়ে শুরু হয় আমার প্রবাসী জীবন। অনেক দিন কাজ করার পরে অপারেটর থেকে লিডম্যান হয়ে 20জন লোকের দায়িত্ব আসে আমার কাঁধে । অনেক ঘাত প্রতিঘাত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কাটে প্রতিটি প্রবাস জীবনের প্রতিটা দিন । আমিও তেমনি একজন প্রবাসী।
আসলে টিমওয়ার্ক ও লেডারর্শিপ শিশুকাল ও ছাত্রজীবন থেকেই শুরু। আলহামদুলিল্লাহ আজ প্রবাস জীবন আমি টিম ওয়ার্ক ও লিডার্শিপ করার সুযোগ পেয়েছি । 20 জনের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সের এবং সবার জুনিয়ার আমি কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমার হাতেই লিডার্শিপ এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ
👷১৮ বছর চলছে বিরতিহীন এই প্রবাসী জীবন।🌺
জীবনে লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি এটা আমাকে অনেক অনেক কাঁদায় । মাঝেমধ্যে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে চিন্তাভাবনা করতে করতে আর ঘুম আসে না। এই ঘুমহীন অবস্থায় ডিউটি করতে হয় কারণ এটা পরের দেশ পরের চাকরী😥😥
প্রবাস জীবন মানেই লম্বা ডিউটি । রান্না করা কাপড় ধোয়া সবই নিজেকেই করতে হয়। এখানে সবাই ব্যস্ত কারো দিকে তাকানোর সময় নেই।
👷প্রবাস জীবনের দুঃখ কষ্ট🌺
আমার বাবা ৭ বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। 9 ভাই-বোন তাকে দেখতে পেলেও আমি প্রবাসে থাকার কারণে আমার বাবাকে দেখতে পারিনি। তার কবরে একটু মাটি দিতে পারিনি। আমার মায়ের 90+বয়স মাকে সেবা যত্ন করতে পারি না । আমার একটি সন্তান আব্দুল্লাহ 7বছর বসয় দূরে থাকার কারণে স্কুলে নিয়ে যেতে পারিনা তাকে আদর করতে পারিনা । তার সঙ্গ দিতে পারিনা।এটা যে কতটা কষ্টের তা শুধু একজন প্রবাসীই জানে অন্যেরা বুঝতে পারবে না😥😥
২০১৯ আমিতো এখন ছুটি কাটাতে বাড়িতে এসেছি। আমার সন্তান আব্দুল্লাহ বাবাকে পেয়ে অনেক খুশি। দেখতে দেখতে আমার ছুটি শেষ । প্রতিদিনের ন্যায় বাবার হাত ধরে ফজরের নামাজ পড়তে যেত আব্দুল্লাহ। আমার ছেলেকে নিয়ে ফজরের নামাজে যাচ্ছি হঠাৎ আব্দুল্লাহ বলে বাবা তুমি আজ চলে যাবে বিদেশে। আগামীকাল কার হাত ধরে আমি নামাজে আসবো ? সেই কথা মনে হলে এখনো চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা । হায়রে প্রবাস জীবন 😥😥
🧑🍼 আমার মা বলেন আমি জম্ম গ্রহণের পরে ।আমার মা অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন । সবাই বলতেন উনি বাচবেন না । শুধু ডক্টরস দেখাতেন তাই আমাকে ঠিকমতো শিশুকালে দুধ খাওয়াতে পারেনি বলে এখনো কান্না করেন আমার মা জননী। প্রবাসে থাকার কারণে সেই স্নেহময়ী মাকে আমি সেবা করতে পারছিনা😥
🤲বাবা-মা এবং আব্দুল্লাহর জন্য দোয়া করবেন সবাই🤲
💐নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন এর সন্ধান💐
ফেসবুক ও ইউটিউবে ভিডিও দেখতে দেখতে একদিন চোখে পরে আমাদের প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের ভিডিও ।
👷স্যার বলছেন চাকরি করবো না চাকরি দেবো👷
এই ভিডিও দেখেই বারবার নিজেকে প্রশ্ন করি এটা কি সম্ভব। সেই থেকেই নিজের সাথে প্রশ্ন করাশুরু করি শুরু হয় নিজের সাথে কথা বলা।
💐 প্রিয় স্যারের আরেকটি স্লোগান
স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুন
শুরু করুন
লেগে থাকুন
সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ💪
💐প্রিয় স্যারের মোটিভেশনাল কথা ও ভিডিও দেখে দেখে স্যারের প্রেমে পড়ে যায় প্রেমে পড়ে যায় নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের
এভাবেই 12 তম ব্যাচ থেকে শুধু ফলো করি আর দেখতেই থাকি ।কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করব বুঝতে পারিনা । এক ভাইয়ের সাহায্য 16 তম ব্যাচ থেকে রেজিস্টেশন করি ।নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনে লেগে থাকতে চাই।
একজন ভালো মানুষ ,পজেটিভ মানুষ ও মানবিক মানুষ এবং একজন ভলেন্টিয়ার ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
👷নিজের জন্য পরিবার ও দেশের জন্য মানুষের জন্য কাজ করতে চাই👈
আমাদের প্রিয় স্যার বলেন প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অক্সিজেন। স্যার আরো বলেন আমি প্রবাসীদেরকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই ।
💐 আমিও স্বপ্ন দেখছি সাহস করছি শুরু করছি এবং লেগে থাকবো ইনশাল্লাহ সফল হতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।
প্রিয় প্ল্যাটফর্মের ভাইয়া ও আপুরা সবাই জানেন। আমরা প্রবাসীরা সময় পাইনা তারপরেও কিছু সময় বের করে লিখলাম সবাই পড়বেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি একজন ভালো মানুষ ও একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাদের মাঝে হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারি।
👷স্বপ্নবাজ কৃষি উদ্যোক্তা 💐
আলহামদুলিল্লাহ ইতিমধ্যেই আমি কৃষি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি । একজন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নিরাপদ খাদ্য সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই । আমি এগ্রো ফোরামের সদস্য হয়েছি। এবার একটা ভিশন ও মিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি ।আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন । ইনশাআল্লাহ দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রবাস জীবন শেষ করে বাংলাদেশে এসে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে পারি । একজন
ভালো মানুষ ও সফল উদ্যোক্তা হয়ে মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য কিছু করতে পারি।
পরিশেষে সবার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই।প্রিয় স্যারের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি । আমার জীবনের সংক্ষিপ্ত গল্প শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে আল্লাহ হাফেজ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৪৮
Date:- ১৮-১৯/০২/২০২২ইং
জুলফিকার আলী মন্ডল
ব্যাচ 16
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার 78470
সদস্য এগ্রো ফোরাম
সদস্য কুরআন শিখি
একজন স্বপ্নবাজ কৃষি উদ্যোক্তা
জেলা রাজবাড়ী
বর্তমান সৌদি আরব রিয়াদ