নিজেকে পরিবর্তন করার গল্প
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু
নিজেকে পরিবর্তন
আমার জীবনের গল্প
শুরু করিতেছি পরম করুনাময় আল্লাহ্ তায়ালার নামে। শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান সৃষ্টি কর্তার প্রতি। যিনি আমাদের কে সুস্থ ভাবে বাছিয়ে রেখেছেন এই করোনা মহামারীর মাঝে। আশা নয় বিশ্বাস করি প্রিয় প্লাটফর্মের সকল ভালোবাসার ভাই বোনেরা ভালো আছেন । আপনাদের দোয়ার বরকতে আমি ও ভালো আছি ।
দূরুদ ও সালাম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা) এর প্রতি। যিনি পৃথিবীতে এসেছেন সমস্ত মানবজাতির মুক্তি ও কল্যাণ এর দূত হিসাবে।
শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি আমার প্রিয় মা বাবা কে যাদের উছিলায় এই সুন্দর পৃথিবীর আলো বাতাশ দেখতে পারছি। বড় হয়েছি তাদের অফুরন্ত ভালোবাসায়। মা বাবার ঋণ কখনো সুধ হবার নয়। ভালোবাসা অবিরাম প্রিয় মা বাবা।
প্রথমে কৃতজ্ঞ জানাই আপনার আমার সু পরিচিত এমন একজন মাহামানব যিনি আমাদের মাঝে আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছেন যার জন্ম না হলে আমরা পেতাম না এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম যিনি লাক্ষ মানুষের হৃদয়ের স্পন্ধন। হাজারো উদ্যোগ তার নয়নের মণি। যার নাম স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে টেকনাফ থাকে তেতুলিয়া রুপসা থাকে পাতুরিয়া তিনি আর কেউনা তিনি আমাদের ভালোবাসার প্রিয় ম্যান্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।
আমার পরিবার
আমার দাদা ছিলেন এক বাবার এক ছেলে। আমার বাবা চাচারা ছিলেন চার জন।ফুফু ছিলেন দূই জন। আমার দাদার অনেক সম্পত্তি ছিল। আমার বাবা ছিল সবার বড়। আমার বাবা পড়া লেখা করতে পারে নাই।দাদা বলতেন এতো ধন সম্পদ আছে এইসব দিয়ে চলতে পারবে।সংসার ভালোই চলছে। আমার দাদা ছিলেন এক বাবার এক ছেলে। জমি জমা পতন দিয়ে দিত।যেটুকু ফসল বাগে পেতো তা দিয়ে সংসার চলতো। কিছু বছর যাবার পর তারা ফসল দেয়া বন্দ করে দেয়। কথায় আছে জুর জার মরলোক তার। ওদের গুষ্টি অনেক বড় ছিল। দাদা যখন ফসল দেবার কথা ওদের বলে তখন ফসল ও জমি দেবেনা বলে। দাদাকে মেরে পেলার হুমকি দিতো। ওরা গুষ্টির পাওয়ার দেখায়তো। এদের ভয়ে দাদা কিছু বলতো না দাদা ছিল একা। দাদা সমাজের লোকদের বলার পর ওদের কিছু বলতো না ওরা ছিল পাওয়ারি গুষ্টির পাওয়ার দেখায়। জমি জমা হারিয়ে কষ্টের দিন শুরু হলো দাদার।
এতো দিনে দাদা বুঝতে পারলো বড় ছেলে আমার বাবা কে লেখাপড়া না করিয়ে চরম ভুল করছে। শুধু ধন সম্পদ থাকলে চলবে না। লেখাপড়া ও করতে হবে ধন সম্পদ টিকিয়ে রাখতে হলে। দাদা চোখে অন্দকার কি ভাবে ছেলে মেয়ের খাবারে ব্যবস্তা করবে। সারাদিনে এক বেলা খেতো। একদিন আটার জাউ অন্য দিন চালের সাথে আলু খেটে দিয়ে ভাত রান্না করে খেয়ে না খেয়ে কষ্টে দিন কাটতো। অবশেষে উপায় না পেয়ে দাদ। আামার বাবাকে মানুষের বাড়িতে এক বছরের জন্য ২০০টাকায় চুক্তি করে। কাজে দেয়। অনেক কষ্টে দিন কাটতেছে।কষ্টের মধ্যে কষ্ট দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল, যুদ্ধের কথা সবারই জানা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়েছে, এরকম ও দিন গেছে দুই দিনে এক বেলা খাবে, এইসময় গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়, খাবার রেখে কোনরকমে প্রাণে বাঁচে, কষ্টের কথা বলতে গেলে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি।
এরইমধ্যে পাকবাহিনী আমাদের কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়নের বরইতলা নামক স্থানে এক মিটিংয়ের ঘোষণা দেয়, বলেন কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়ন মুক্ত করে দেবে, আলোচনা হবে, আমার বাবাসহ গ্রামবাসীরা বরইতলা নামক স্থানে উপস্থিত হন। সবাইকে লাইনে বসতে বলেন আলোচনা হবে।বসার পর, পাকবাহিনী সবাইকে ঘিরে পেলে পাকবাহিনীর আসল রূপ ফুটে ওঠে।সব লাইনে অস্ত্র টেকিয়ে একসাথে গুলি করে ৩৬৫ জন কে নির্মমভাবে হত্যা করে, যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম একসাথে নির্মমভাবে হত্যা। এখন বর্তমানে একটা স্মৃতিসৌধ হয়েছে বড়ইতলা নামক স্থানে, দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই দেখতে আসে। কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে।গুলির শব্দে বাবার জ্ঞান হারিয়ে পেলেন। জ্ঞান ফিরে দেখেন বাবার উপর লাশ আর লাশ সারা সরিলে নাকে মুখে রক্তমাকা। আল্লাহর রহমতে প্রানে বেঁচে ফিরেন।দাদা বলেন যুদ্ধের পর পর্যায়ক্রমে ছেলে মেয়ে একে একে সবাইকে বিয়ে দিয়ে দেন।আমরা দুই ভাই আমি সংসারের বড় ছেলে, অভাবের সংসার লেখাপাড়া বেশি করতে পারিনাই, একদিন বাবার সাথে কাজ করছি অন্য দিন স্কুলে গেছি। এভাবে ssc পযন্ত লেকাপড়া করি।
অভাবে কারণে বাবা ঠেলাগাড়ি চালানো শুরু করে। কষ্টের কথা বললে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনাই। বাবা ঠেলাগাড়ি দিয়ে গাছ নিয়ে যেতো কিশোরগঞ্জে আমিও বাবার সাথে যেতাম কাদা মাটির রাস্তা হাটু সমান কাদা, বাবা একা ঠেলাগাড়ি নিতে পারতোনা আমি সাত আট কিলো রাস্তা ঠেলা দিয়ে কিশোরগঞ্জ বাজারে নিয়ে জেতাম, গাছ বিঞি করে রাত্র একটা,দুইটার সময় আবার বাবা সাত আট কিলো রাস্তা আমাকে ঠেলাগাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে আসতো, বাবার কষ্ট নিজ চোখে দেখেছি, বলতে গেলে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনাই। এমনো দেখেছি বাবাকে পা ফুলে গেছে। বাবাকে বলতাম বাবা তুমি ঠেলাগাড়িতে উটো আমি তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।বাবা বলতো তুমি ছোট মানুষ তোমার অনেক কষ্ট হবে আমার পা টিক হয়ে যাবে।কষ্টের কথা লিখতে গেলে লিখে শেষ করা যাবেনা। মাঝেমাঝে বাবা ঠেলাগাড়িতে গাছ নিয়ে একা বাজারে যেতো, আমার বেশি কষ্ট হবে বলে। এভাবে এক দিন ঠেলাগাড়িতে গাছ নিয়ে বাজারে যাবার সময়, আমাদের গ্রামের চিকনিরচর পুলে উঠতে গিয়ে বাবা ঠেলাগাড়ি নিয়ে নিছে পরে যায়। হাতে পায়ে কমরে অনেক বেশি ব্যাতা পাই। এখনো বাবার কমরে ব্যাতা পাই।বাবা মার জন্য সবার কাছে দূআ চাই, আল্লাহ যেনো সুস্থ রাখেন, দীর্ঘ হায়াত দান করেন।
অভাবের সংসার বাবা অসুস্থ, খেয়ে না খেয়ে দিন পারকরি। আমি সংসারের বড় ছেলে ভাবি কিছু একটা কাজ করতে হবে, তাই গ্রামের একজনের সাথে ঢাকা চলে যাই কাজের জন্য, ঢাকা গিয়ে এমব্রয়ডারি কাজ শুরু করি, ১৫০০ টাকা বেতনে। আমার থাকা-খাওয়ার খরচ বাদে। বাড়িতে দুই, তিনশ টাকা বাড়িতে পাঠায়তাম। কোনো রকমে দিন কাটতো বাবা মা ভাইয়ের। হঠাৎ একদিন ফোন আসে আমার দাদা মারা গেছেন।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।আমার দাদার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ তালা যেন বেহেস্ত নসিব করেন। বাড়িতে চলে আসি। কয়েকদিন পর ঢাকা যাই, ঢাকায় গিয়ে দেখি চাকরি চলে যায়, চোখে অন্ধকার কি করবো বুঝতে পারিনা। একজনের সহযোগিতায় সোয়েটার কোম্পানিতে নিটিং অপারেটর হিসেবে চাকরি শুরু করি। চোদ্দ পনেরো হাজার টাকা বেতন পেতাম, ভালোই চলছিল সংসার, এরইমধ্যে বাবা-মা আমাকে বিয়ে করান।আমার এক ছেলে এক মেয়ে আছে, সবার কাছে দোয়া চাই, আমি যেন ছেলে মেয়ে কে মানুষের মতো মানুষ করতে পারি আল্লাহ সেই তৌফিক দান করেন।
ভালোই সংসার চলছিল। সুখ কপালে সইলো না, সোয়েটার কোম্পানিতে কাজ না থাকায় ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়, কি করব বুঝে উঠতে পারি নাই চাকরি হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়ি, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও চাকরি না পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে ছয়-সাত মাস বসে থাকি কোনো কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। প্রতিদিন চাকরির জন্য সময় কাটানোর জন্য মোবাইলে ভালো কিছু চার্জ করি। একদিন নিজের বলার মত একটা গল্প প্ল্যাটফর্ম আমার জীবনে আল্লাহর রহমত হিসেবে আসে। প্রথমে আমার মনের মধ্যে একটা ধাক্কা লাগে স্যারের একটা বাণী স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন, এবং লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই। সেই থেকে দিনরাত যখনি সময় পেতাম, মোবাইলে নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে স্যারের সেশন গুলো পড়তাম। সেই সেশন পড়ে আমার জীবনের অনেক পরিবর্তন এনেছি। সময় কিভাবে কাজে লাগাতে হয়। এই প্লাটফর্ম থেকে শিখেছি। এবং সময় পেলেই স্যারে ইউটিউবে ভিডিও দেখতাম। অনেক কিছু শিখেছি, মনে সাহস পেয়েছি, সে সাহস নিয়ে অবসর সময়ে বসে না থেকে, সার্ভেয়ার আমিনশীপ ট্রেডিং নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রথমে আমাদের যত সম্পত্তি ছিল কাগজ দলিল সংগ্রহ করি। যারা গোষ্ঠীর জোরে, শক্তির জোরে, আমাদের সম্পত্তি ছিনিয়ে নিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সহ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গ্রাম্য সালিশ করি। সালিশের মাধ্যমে ওদের কাছ থেকে, প্রায় 20 লক্ষ টাকার সম্পত্তি আমরা পাই, আলহামদুলিল্লাহ, আরো জমি ওদের নামে রেকর্ড করিয়ে নেয়, রেকর্ড ভাঙ্গার মামলা করেছি, ইনশাল্লাহ আরও 20 লক্ষ টাকার জমি পাবো আশা করি। আমার স্বপ্ন মানুষের সেবা করবো, জমি সংক্রান্ত যে কোন সমস্যা পড়লে, যে কেউ হোক, সমাধানের চেষ্টা করব, আমাদের মত যারা জমি নিয়ে সমস্যায় আছে, তাদের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ ।সর্বোপরি নিজেকে পরিবর্তন করতে পেরেছি। কিশোরগঞ্জ জেলার এবং বিভিন্ন জেলার সহ দেশের বাহিরের অনেক ভালো ভাই ও বোন পেয়েছি।এখন প্রতি দিন সেশন চর্চা ক্লাস করেও অনেক কিছু শিখতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ। এটা শুধু সম্ভব হয়েছে আমাদের মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের জন্যই। স্যার আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং শুভ কামনা রইলো। আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি স্যার, ফি আমানিল্লাহ।
নিজের বলার মত একটা গল্প, প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত থেকে, মানুষের সেবা করব, আলহামদুলিল্লাহ, আমি এখন ভালো আছি, একটা কোম্পানিতে চাকরি করতেছি, ছোট একটা ব্যবসা করতেছি, সার্ভেয়ার হিসেবে কাজ করতেছি, আমি আরো বড় করে ব্যবসা করার চিন্তা করতেছি, সবার কাছে দোয়া চাই, আমার লেখায় যদি কোন ভুল হয়ে থাকে, সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন,
প্রিয় ভাই ও বোনেরা এতক্ষন যারা কষ্ট করে আমার জীবনের গল্প পড়েছেন সবাইকে আমার অন্তর অন্তর স্থল থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আশা করি সকলেই আমার পেইজ একটা লাইক কমেন্ট করে আমার পাশে থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৪৭
Date:- ১৭/০২/২০২২ইং
মোঃআমিনুল ইসলাম
ব্যাচ নাম্বার :১৩
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার:৫৭৯২৬
নিজ জেলা : কিশোরগঞ্জ
পেজ লিংকঃhttps://www.facebook.com/excelentbuty/
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর একজন আজীবন গর্বিত সদস্য