আমার আমিকে খুজে পাওয়া এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে
★ আমার আমি
নিজের পরিচয় দেবার মত তেমন কোন পরিচয় এখনো হয়নি। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আচ্ছা এবার পরিচয় পর্বে আসি। সময় থাকলে আপনারা পড়বেন আশা করি।
আমি ম্যাথম্যাটিকস এ মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। সাইন্সে পড়া বেশিরভাগ স্টুডেন্টর মত আমার আশাও ছিল মেডিকেলে পড়ার। আসলে এই স্বপ্নটা আমার বাবা আমাকে দেখাতো। আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি, বাবা মারা যায়।তখনই অনুভব করলাম জীবনের সব চাওয়া পূরণ হয়না আর আমার এই চাওয়াটা পূরণ হবেনা। তবে বাবার আশা পূরণ করতে সাইন্স নিয়েছিলাম। না হোক মেডিকেলে পড়া, সাইন্সে পড়ি অন্তত।
তবুও কেন জানি স্কুল জীবন থেকেই চাইতাম, আমি এমন কোন পেশায় জড়াতে চাই, যার আলাদা টাইটেল থাকবে, আলাদা পোশাক থাকবে। তবে সেটা কি হবে আমার জানা ছিল না। কলেজে পড়ার সময় প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে এপ্রণ পড়তে হতো, আমি মাঝে মাঝে মনের দুঃখ নিয়ে সেটা জড়িয়ে ধরতাম। এই পোশাকটা আমার প্রফেশনাল পোশাক হলো না।
ছোট বেলা থেকেই কিছু প্রয়োজন হলে চাইতে পারতাম না।কেমন জানি লাগতো। চেয়ে নিবো! কোন শখ কখনোই কাউকে বলতাম না। আর এজন্যই আমি ভাবতাম আমি একসময় কিছু করবো। তাহলে নিজের টাকায় নিজের শখ পূরণ করতে পারবো। এস এস সি পরীক্ষার পর থেকেই টিউশনি করতাম। নিজের উপার্জন অল্প হলেও মানসিক শান্তি ছিল অনেক।
রান্না ভালো লাগতো একদম ছোট বেলা থেকেই। স্কুল জীবন থেকেই মায়ের কাছে দেখে শখের বসে অনেক ধরনের রান্না করতাম। সাড়ে চার বছর আগে বেকিং এর শখ জাগে। ইউটিউব দেখে টুকটাক বেকিং করতাম। বাসার সবাই আমার কেক এর টেস্ট পছন্দ করতো, তাই আমার ও বানাতে ভালো লাগতো।
সময়টা ২০১৭। ইউটিউব দেখে প্রায়ই কেক বানাতাম। প্রথম দিন কাটাচামচ দিয়ে ডিমের ফোম করে কেক বানালাম। শুধু একটা পাউন্ড কেকের ছোট মোল্ড আছে তখন আমার। কিছুদিন পর একটা নরমাল হ্যান্ড হুইস্ক কিনি। এটা দিয়েই চলে আমার কেক বানানোর কাজ। কেকের স্বাদ মাশা আল্লাহ ভালোই হয়। বাসায় সবাই পছন্দ করে আর আমারও বারবার বানাতে ইচ্ছা হয়।
হঠাৎ একদিন মনে হলো আমি কেক ডেকোরেশন করবো। আমার তখন কিছুই নেই। হুইপড ক্রিম কোথায় পাওয়া যায় তাও জানিনা। আড়ং এর বাটার, একটা রাউন্ড মোল্ড, নজেল আর চেরি কিনলাম। বাটারক্রিম ফ্রস্টিং দিয়ে আমার প্রথম কেক ডেকোরেশন। দিনটা ছিল ২০১৭ এর অক্টোবর মাসের শেষ দিকে।
কেক খেয়ে বাসার সবাই খুব খুশি। আহা কি আনন্দ আমার!! এরপর কয়েকমাস পর ইলেকট্রিক বিটার কিনলাম। চুলায় প্লেইন কেক, ব্রেড এগুলা বানাতাম। কেক ডেকোরেশন আর করা হয়নি। ঠিক এক বছর পর আবার ও কেক ডেকোরেশন করলাম। এবার ও আড়ং এর বাটার দিয়ে। তবে এবার সুইস মেরাং বাটারক্রিম। এবার প্রশংসা আর ও বেশি যে কেক অনেক মজা। সেইদিনের পর আজ পর্যন্ত আমাদের বাসায় আর কোন কেক কেনা হয়নি।
২০১৯ এর শুরুর দিকে আমার ওভেন কেনার ইচ্ছা হলো। আমার বোন মিয়াকো ৪৫ লিটার ওভেন গিফট করলো। উল্লেখ্য, আমার ঈদ শপিং এর পরিবর্তে ওভেন গিফট নিয়েছিলাম। এরপর কয়েকমাস পর মনে হলো আমি এখন ডেকোরেশন শুরু করবো। ততদিনে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের কথা জানতে পারলাম। শুরু করলাম বেকিং এর জিনিস কেনা। ভাগ্নির জন্মদিনে দুইটা কেক বানালাম।
ভাগিনা, ভাতিজা সবার জন্মদিনে কেক গিফট দিতাম প্র্যাকটিসের জন্য। এর মধ্যে এক ফ্রেন্ড বলে সে কেক নিবে, আমি সাহস পাইনা। সে আমাকে অনেক উৎসাহ দেয় খারাপ হলেও নিবে। আমার বোনের বাসায় আমার কেক খেয়ে এক আপু একদিন এসে বলে একটা কেক অর্ডার দিতে চায়। আমার কেক কেউ কিনে খাবে!! আমি অবাক এবং খুশি। পরের দিন কেক দিলাম। তারা খেয়ে অনেক পছন্দ করলো। এটা ছিল প্রথম ডেলিভারি। ০১ নভেম্বর, ২০১৯।
এরপর সেই ফ্রেন্ড কেক নিলো, তার অফিসের ম্যাডাম কেক নিলো এবং টেস্ট খুবই পছন্দ করলো। এভাবেই সাহস পাচ্ছিলাম একটু একটু করে।
আমি ২০১৯ সালের শুরু থেকে বিভিন্ন জায়গায় বেকিং এর ক্লাস করা শুরু করেছিলাম। যখন যে আপুর ক্লাস ভালো লাগতো, করতাম। ২০১৯ সালে আমি ডিপ্লোমা মিষ্টি লড়াই কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করি এবং প্রথম পর্বে টিকে যাই। সারা বাংলাদেশ থেকে ৫৯,০০০+ পার্টিসিপেন্ট এর মধ্যে ২১০ জনের মাঝে সেমিফাইনালে আমিও ছিলাম। এরপর আর যেতে পারিনি। আর এই হেরে যাওয়াই আমাকে দেখিয়েছিল নতুন একটা পথ।
এরপর ঢাকার প্রফেশনাল অনেক আপুদের কাছে বেশ কিছু সংখ্যক ক্লাস করি। তখন টুকটাক কেকের অর্ডার ও পেতাম। শেখার নেশা তীব্র হতে থাকে এবং সিদ্ধান্ত নেই এটাই আমি পেশা হিসেবে নিতে চাই। এভাবেই বেকিং জগতে ঢুকে পড়া। তারপর আমার বোনের সাপোর্ট এবং সহায়তায় বেকারি এন্ড পেস্ট্রি প্রোডাকশন কোর্স করি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (NHTTI) থেকে। প্রথমদিন শেফ কোট হাতে পাওয়ার পর আনন্দে জড়িয়ে ধরেছিলাম, সেই অনুভুতিটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মত না। এই কোর্স শেষ করেই প্রফেশনাল শেফ কোর্স (F&B production) শেষ করি ইম্পেরিয়াল হোটেল ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে। এটাতেও আমার বোনের অবদান ছিল।
এই লাইনেই আমি আমার ক্যারিয়ার গড়তে চাই। নিজে আরও শিখতে এবং পাশাপাশি অন্যদের ও শিখাতে চাই। আমার কাজের উপার্জন থেকে মানুষের সেবায় কিছুটা হলেও অবদান রাখতে চাই। যতদিন বেঁচে আছি ভালো কাজের সাথে থাকতে চাই ইনশা আল্লাহ।
আমার লাইফে কিছু মানুষ আছেন, যারা আমাকে প্রতিনিয়ত মানসিক সাপোর্ট দেয়, উৎসাহ দেয়, মনে সাহস জোগায় যে তুমি পারবেই। তারা এই গ্রুপেও আছে, কিন্তু মেনশন দিলাম না। প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমার মনের মাঝেই থাক। পরে না হয় তাদের নাম প্রকাশ করবো।
লিখাটা অনেক বড় হয়েছে। যারা কষ্ট করে পড়বেন, তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আমাদের প্রিয় মেন্টর শ্রদ্ধেয় "ইকবাল বাহার জাহিদ" স্যারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, যার জন্য আজ মনের এত কথা লিখার একটা প্লাটফর্ম পেলাম।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৪৭
Date:- ১৭/০২/২০২২ইং
শিউলী আখতার
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ ৬১৩০০
ব্যাচ নংঃ ১৩
জেলাঃ ময়মনসিংহ
বর্তমান অবস্থানঃ শ্যামপুর, ঢাকা
জোনঃ ওয়ারী, ঢাকা
ওনার অফঃ Sheuly's delight