জীবন থেকে নেওয়া গল্প
"""""জীবন থেকে নেয়া গল্প''''''
# বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আমি সর্বপ্রথম প্রশংসা করছি মহান রাব্বুল আলামিনের নামে। যিনি আমাকে দিয়েছেন সুস্থ একটি জীবন, দিয়েছেন ধৈর্য শক্তি , রক্ষা করে যাচ্ছেন এই মহামারীর থেকে। আলহামদুলিল্লাহ। আমি ধন্যবাদ জানাই আমার বাবা- মা এবং আমাদের আইডল, ভালোবাসার ফেরিওয়ালা, আমার মতো লাখো মানুষের শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে। বাবা- মা এর পরেই যিনি নিঃস্বার্থ ভাবে আমার মতো সাধারণ মানুষকে নতুন করে বাচঁতে শিখিয়ে যাচ্ছেন, সুন্দর স্বপ্ন দেখতে নয় শুধু, সেই স্বপ্ন সফল করতে সাহায্য করে যাচ্ছেন। বাবা- মা একটা পরিবার দিয়েছেন, প্রিয় স্যার এতো বড় একটা সুন্দর পরিবার তৈরি করে দিয়েছেন আমাদের যেখানে বিন্দু মাত্র হিংসা বা ঝগড়া নেই কেবল সবাই এক সাথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা আছে, আছে ভালো কাজ করার সুযোগ।
#আজ আমি আমাকে নিয়ে লিখবো, আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করবো আমার জীবনের কথা। আমার জীবনটা কেমন যেনো গল্প বা উপন্যাসের মতো। হয়তো প্রচুর বই পড়তে ভালোবাসি বলেই এমন। মাঝে মাঝে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই। কিডন্যাপ,বাল্যবিয়ে, অল্প বয়সে মা হওয়া, যৌতুকের জন্যে নির্যাতন, ডিভোর্স কি ঘটেনি আমার জীবনে!!! তার পরেও কেবল আমার জেদ, সবার ভালোবাসা আর পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে এখনো হাসি মুখে বলতে পারি আমি ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
#আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, বিয়ের প্রস্তাব আসে। আব্বা রাজি না হওয়ায়, আমাকে প্রাইভেটে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়, এবং বিয়ে করে পরদিন বাড়ি নিয়ে আসে, আমাদের থানার একজন নতুন পুলিশ অফিসার। মানসম্মানের ভয়ে আমার পরিবার মেনে নেয়, এবং যিনি আমাকে বিয়ে করেন, তিনি ১৫ দিনের মধ্যে পোস্টিং নিয়ে আমাকে সহ চলে যান শরীয়তপুরে। ওখানে প্রায় ২ বছর, এর মধ্যে আমার মেয়ের জন্ম আর স্বামীর পরকিয়া শুরু হয়। সাথে যৌতুকের জন্যে অত্যাচার। আমি বাড়িতে কিছুই জানাই নি, কারণ সবাই কষ্ট পাবে এবং আমাকে ফেরত নিয়ে যাবে। একটা সময় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আব্বাকে ফোন করি, আব্বা বলেন, তুমি যেভাবে ভালো থাকবে বলে মনে করো, সেই সিদ্ধান্ত ই নিবা, আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। আমি অনেক কষ্টে মেয়েকে নিয়ে এক কাপড়ে আরেক পুলিশ অফিসারের হেল্প নিয়ে ঢাকায় আমার মেঝো খালার বাড়ি চলে আসি। আমার খালামণি, আমাকে কিচ্ছু জিগ্যেস করেন নি। আমাকে একটা পার্লারে ভর্তি করেদেন, কাজ শেখার জন্যে। তখন আমার মেয়ের বয়স ১১ মাস। আমি তিন মাস কাজ শিখি,বাড়ি চলে আসি এবং একটা পার্লার দেই।
#একদিন ব্র্যাক এর এক আপা এসে বললো, ব্র্যাকের একটা ট্রেনিং আছে ঢাকায়, যাবেন? আমি হ্যা বললাম এবং চলে গেলাম ,প্রথমে ১৫ দিনের বেসিক ট্রেনিং তারপর ৭ দিনের এ্যাডভান্স ট্রেনিং নিলাম। তারপর কাজ ভালো হওয়ায় আমাকে কো- ট্রেইনার হিসাবে নেয়া হলো। ট্রেনিং করানোর পাশাপাশি আমি মিডিয়ায় মেকাপ করা এবং হেয়ার কাট এর উপর ট্রেনিং নিলাম,এক বছর মিডিয়ায় সহকারী মেকাপ আর্টিস্ট এর কাজ করেছি ,পাশাপাশি বিভিন্ন বিয়ে,পার্টি,জন্মদিনে ফ্রিল্যান্সিং মেকাপ করাতাম ।বেশ কিছু টাকা জমিয়ে ঢাকায় একটা পার্লার নিলাম সাথে মেয়েদের জিম এবং টেইলার্স।
#এর মধ্যে আব্বা মারা গেলেন ক্যান্সারে আর বিপদ শুরু হলো আমার। আব্বা যেদিন মারা গেলেন আব্বার লাশ নিয়ে আর আমাদের বাড়ি ঢুকতে পারি নি। আমার আম্মা আর মেয়েকে নিয়ে নানা বাড়ি উঠি।যেহেতু আমার কোন ভাই নেই তাই আমার বাবার সব সম্পত্তি থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হলো। ওদিকে পার্লার নিয়েছিলাম যে বাড়িটা মালিক মহিলা মারা গেলেন,উনার মেয়ে ভাড়া বাড়ালেন,তাই পার্লার বিক্রি করে বাড়ি চলে গেলাম ,ততোদিনে আমার মেয়ে জান্নতুল সাইহান পিইসি পরীক্ষা দিয়েছে । মেয়েকে আর আম্মাকে ময়মনসিংহে নিয়ে এসেছি ভাড়া বাসায় । আমার মেয়ে ট্যালন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে ময়মনসিংহের একটা ভালো স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায় ।আগের স্কুল থেকে পেপার্স নিয়ে ময়মনসিংহে ফেরার সময় গাড়ি এ্যাক্সিডেন্ট হয় ,আমার পাশের দুইজন স্পটে মারা গেলেন,আমি বেচে গেলেও পা হাটু থেকে জয়েন সরে যায় ।
#প্রায় এক বছর পর ক্র্যাচ দিয়ে দাড়ালাম কিন্তু হাটতে পারছিলাম না,অনেক কষ্টে নতন করে হাটতে শিখি এবং ক্র্যাচ নিয়েই উত্তরায় একটা রেস্টুরেন্ট দিলাম , যেখানে সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২/৩ টা পর্যন্ত বিভিন্ন নাটক, বিজ্ঞাপনের শূটিং হতো ,যেহেতু আগে কাজ করার সুবাধে মিডিয়ায় পরিচয় ছিলো তাই সেটা কাজে লাগাই ,৩টার পর রেস্টুরেন্ট এর বিক্রি শুরু হতো রাত ১২/১ টা পর্যন্ত চলতো। আমার রেস্টুরেন্ট টা নিয়েছিলাম এক চায়নিজের থেকে তারা বাড়িটা নিয়েছে ১০ বছরের জন্যে তার মধ্যে ৫ বছরের জন্যে আমাকে ভাড়া দেয়া হয়, তবে তাদের শর্ত থাকে তারা ভাড়ার টাকাটা প্রতিদিনের টা প্রতিদিন নেবে, আর আমি তিনমাস ভাড়া দিতে ব্যার্থ হলে আমি রেস্টুরেন্ট ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকবো। রেস্টুরেন্ট চালু হওয়ার ৭ মাস পর চায়নিজ আমার কাছে রেস্টুরেন্টের শেয়ার দাবী করে, আমি দিতে রাজি না হওয়ায় সে ভাড়া নেয়া বন্ধ করে দেয়, এমন কি আমি তার অফিসে গিয়ে ও ভাড়া দিতে পারি নি, বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে তিনমাস পার করে এবং উকিল নোটিশ পাঠায়। আমি সেই নোটিশ নিয়ে অফিসে যাই এবং প্রচুর ঝগড়া হয়, চাইনিজরা আমার নামে চাঁদাবাজীর মামলা করে, আবার চায়নিজ রা মূল গেটে তালা লাগিয়ে অন্য জায়গায় চলে যায় । আমি প্রায় খালি হাতে বাসায় আসি। আমি নতুন করে শুরু করবো এমন টাকা ছিলো না।
# আমার খালামণি আমাকে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শেখানো শুরু করে। তার মধ্যে শুরু হয় করোনা, লকডাউন, আমি বাসায় বসে ইংলিশ স্পিকিং কোর্স করি। ফ্রিল্যান্সিং আমার ভালো লাগছিলো না, নতুন কিছু করতে চাইছিলাম, কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছিলাম না, একটা হতাশার মধ্যে পরে গিয়েছিলাম। একদিন আমার এক আন্টি আমাকে বলে, তুকে আমাদের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করে নিচ্ছি, আমার সাথে প্রতিদিন ৯টা থেকে ১০ টা একটা ক্লাস কর, তুর ভালো লাগবে। মুক্তাগাছার আরিফুল ইসলাম ভাই আমাকে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে দিলেন, ওই দিন ই রাতে আমি ১৬ তম ব্যাচের সবার সাথে সেশন ক্লাসে অংশগ্রহণ করি, ২/৩ দিন ক্লাস করার পর সবাই কে এতো আপন আর নিজের মনে হলো যে, আমার যে কোন বিষয়ে এখন তাদের সাথে পরামর্শ করি, কারণ জানি কেউ আমাকে ভুল কোন পরামর্শ দেবে না। সবার উৎসাহে আমি পাট পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছি। পাটের শোপিস,বিভিন্ন রকম ব্যাগ,জুতা এসব বানাই, তবে সব থেকে বেশি ভালো লাগে পাটের গয়না বানাতে, যা আমি নিজেই ডিজাইন করে বানাই৷ আমি ১০ জনের একটা টিম তৈরি করেছি, যারা পাটের কাজ জানে। বড় কোন অর্ডার আসলে সবাই মিলে কাজ করতে পারি।
#পাশাপাশি আমি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত আছি। আমার একটা সময় প্রচন্ড মানসিক বিপর্যয়ে কাটিয়েছি, তাই একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করেছি আমরা কয়েকজ মিলে, আমরা তাদেরকে মানসিক সাপোর্ট দেই যারা বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যায় ভুগছে। আমরা তাদের কথা শুনি যাদের মন খুলে কথা বলার মতো মানুষ নেই। প্রায় ৪০ জনের মতো মানুষকে আমরা ডিপ্রেশন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছি। ১৭ জন কে আত্মহত্যা করা থেকে রেসকিউ করেছি আলহামদুলিল্লাহ । আমি,উপজেলা পর্যায়ে জয়িতা নির্বাচিত হয়েছি ।সামাজিকএই কাজ গুলো করতে কোন টাকা লাগে না, কিন্তু দিন শেষে বলতে পারি, আলহামদুলিল্লাহ।বর্তমানে আমি ওপেন ইউনিভার্সিটির অনলাইন শাখায় হেল্থ এন্ড মাইন্ড কেয়ার সাবজেক্ট নিয়ে গ্র্যাজুয়েশান করার চেষ্টা করছি । স্যারের একটা কথা আমার কানে সব সময়ই বাজে, "" বৃষ্টি সবার জন্যে পড়ে,ভিজে কেউ কেউ "" আমি সেই কেউ কেউ এর একজন হতে চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি যদি কোনদিন স্যারের সামনে দাঁড়াতে পারি তবে সেদিন যেনো বলতে পারি, স্যার আমি আপনার শিক্ষায় আজ একজন ভালো মানুষ হয়েছি। স্যারকে স্যালুট জানাই। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্যে, আমার মেয়ের জন্যে, যেনো আমার মেয়ে ও একদিন মাথা উঁচু করে বলতে পারে, আমি একজন ভালো মানুষ হয়েছি, যার পেছনে একজন মানুষের অবদান রয়েছে, আর তিনি হলেন, @iqbal bahar zahid"স্যার ।।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৪৬
Date:- ১৬/০২/২০২২ইং
সিদ্দিকুন সিমলা
ব্যাচ ১৬
রেজিষ্ট্রেশন নং ৭৬৫৩৯
ময়মনসিংহ সদর কাজ করছি পাট পণ্য নিয়ে
পেইজ লিংক https://www.facebook.com/GoodLuck-109203494276431/?ref=pages_you_manage.