১৫বছর থেকে সংসারের পুরো দায়িত্ব নিয়েও আজ সফল ব্যবসায়ী
আসসালামু আলাইকুম
মহান আল্লাহ তাআলার নিকট সীমাহীন শুকরিয়া আদায় করছি, যে মহান করুণাময় আজ ও আমাদের কে তাঁর এই সুন্দর ধরণীতে সুস্থ রেখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ|
দুরুদ ও সালাম সাইয়েদুল আম্বিয়া খাতামুননাবীঈন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর।
গভীর শ্রদ্ধা ভক্তি সালাম ও ভালোবাসা- প্রিয় মেন্টর, প্রিয় শিক্ষক- লক্ষ তরুণ-তরুণীর আইডল ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যার প্রচেষ্টায় আমরা এমন একটা প্লাটফর্ম পেয়েছি। যেখানে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা ভালো মানুষ, একটি সুশীল উদ্যোক্তা সমাজ ও পরিবেশ।স্যারের সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি।
স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হবো……..
আমি খুব ভালো ক্রিকেট খেলতাম। বাংলাদেশের কত জায়গায় গিয়ে ক্রিকেট খেলেছি হিসাব নেই। ক্রিকেট খেলাটা আমার কাছে ছিলো জল খেয়ে তৃষ্ণনা মেটানোর মত। অনেক নাম করেছিলাম এবং ফাষ্ট ডিভিশনে পর পর ৩ বার ডাক পাই। ক্রিকেটার হব এটা ছিল আমার সপ্ন। কিন্তু পরিবারের নিষেধ থাকার কারনে, পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমার সপ্ন থেকে সরে আসতে হয়।
১৫বছর থেকে সংসারের পুরো দায়িত্ব……
মা,বাবা, বড় দুই বোন আর ছোট এক ভাই মিলে আমার পরিবার।
বাবার কথা বলতে গেলে সে আরো বড় কষ্টের অধ্যায়।
যা কল্প-কাহিনি কেও হার মানাবে। আমার বাবা ছিল রাজার ছেলে। ৬ মাস বয়সে মাকে হারিয়ে নিজের পরিবারে প্রজার মতো জীবন জাপন করতে করতে মানষিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাবা থাকা সত্ত্বে ও আমাদের পরিবার পরিচালনা কারার তেমন মানুষিক সুস্থ্যতা ছিলনা।
আমার বয়স যখন ১৫ বছর। তখন থেকে আমাদের সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পরে আমার কাদে । যখন আমার খেলাদুলার বয়স। ১০ম শ্রেণী পড়ি।১৯৯৯ সালে আমি SSC পাশ করি।
২০০১ সনে পরিবার আমাকে প্রথম পুজি দেয় যেহেতু আমার ব্যাবসার তেমন কোন অভিজ্ঞতা ছিলনা তাই সব টাকা ইনভেস্ট করি শেয়ার মাকেটে, আর ভালোই করছিলাম তাই
আরো ইনভেস্ট করি ২০০৮ এসে সেই টাকার পরিমাপ বেড়ে দাড়াল প্রায় শাড়ে তিন কোটি। আর এর মধ্যে বড় দুই বোনের বিয়ে শেষ করলাম, ছোট ভাইকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়াশুনা করালাম। পরিবার কে নিয়ে খুব বিলাশ বহুল জীবন জাপন করতাম তখন আপনজন আর বন্ধুদের অভাব ছিলনা, তাদের দেখলে মনে হত একেক জন আমার জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারে।
অর্থের সুদিনে বন্ধুর অভাব হয় না…….
২৬-০৩-২০০৮ আমি বিয়ে করলাম।
তখনও আমার ভিতরে কোন সিরিয়াস নেস কাজ করতো না।
২০০৯ সালে শেয়ার মার্কেট কমতে শুরু করে আর ১ বছরের ব্যবধানে আমি হয়ে গেলাম নিস্ব ………….লভ্যাংশের টাকা ব্যবসা থেকে বের না করা ছিল আমার চরম ভুল।
আমার পরিবার মা,বাবা, ছোট ভাই আর বউকে নিয়ে আর পেড়ে উঠছিনা, হাতে কোন ক্যাশ ছিলনা তাই বিক্রি করেদিলাম আমার শখের প্রাইভেট কার। দিন দিন জিবন যাপন আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমি একা হয়ে গেলাম আমার পরিবার ছাড়া সব বন্ধু আর আপনজনেরা আধারে মিলিয়ে গেল।
এর মধ্যে আমার ঘর আলো করে এলো আমার প্রথম ছেলে সন্তান, তখনও ভাগ্য আমার সহায় হচ্ছে না। এভাবে চলতে চলতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি ব্যবসার তেমন কোন জ্ঞান ছিলনা , আমার তাই গেলাম আমার এক বন্ধুর কাছে তার দোকানে চাকরির মত থেকে ব্যবসা শিখার জন্য সেখানেও আমি ঠকে গেলাম,ব্যবসা বুজার পড় পুজি দরকার কিনতু আমার তা নেই।
দুর্ভাগ্য স্যার কে জীবনে আগে পেলাম না।
আমার জায়গা আছে কিনতু ব্যবসার কাগজ নেই তাই ব্যাংক আমাকে লোন দিবেনা। কিনতু আমার সে বন্ধুর ব্যবসায়িক কাগজ আছে। তাই তাকে বিশ্বাস করে তার নামে জায়গা দেই সে লোন পাশ করায়। আমার জায়গা বন্ধুর ব্যবসায়িক কাগজ। মিলে পার্টনার।কিনতু আমাকে আর পার্টনার নেয় না।
তার পিছন পিছন গুড়তে গুড়তে ভেঙে ভেঙে আমাকে ৪০ লক্ষথেকে মাএ ৮ লক্ষটাকা দেয় যেটা আমি কোন কাজেই লাগাতে পাড়িনি ভেঙে ভেঙে দেওয়ার কারনে সেই টাকা সংসারে খরচ হয়ে যায়।
এক সময় সে আমাকে জানায় লোনের টাকা ভেড়ে আমার জায়গা নিলাম হওয়ার পথে, সে বেইমানি করল আমার সাথে।কিনতু সে বলে ছিল আমার জায়গায় কোন আচ লাগতে দিবেনা। আমি তাকে বিশাস করে ঠকে গেলাম। ২০১৩থেকে ১৫ সনের সময় এর গঠনা।
আমার বিশ্বাস আমার সরলতা আমাকে ঠকিয়ে দিল।
জীবন যাপন আরো কঠিন হয়ে গেল, ঋনের বোজা বাড়তে থাকল।
দুচোখে আর কিছুই যেন দেখতে পারছিনা। মায়ের বয়স আর বাবার বয়স বাড়তে থাকল, তারা প্রায় সময় অসুস্থ থাকে, পরিবারকে একটু ভালো রাখার জন্য ছোট ছোট অনেক কাজ করেছি যা হয়তবা মুখ ফুটে বলতেও পাড়বনা।
মায়ের দুনিয়া ত্যাগ……….
২০১৬ সাল ছিল আমার জন্য আরো কঠিন মা অসুস্থ হয়ে পড়ে, মাকে হাসপাতালে ভর্তি করি একটু সুস্থ হওয়ার পড় বাড়ি নিয়ে আসি কিন্ত পুরোপুরি ভালো হয়ে উঠছে না।
আবার মা ২০১৬ সালের জুনের ১১ তারিখ মাকে হাসপাতালে ভর্তি করি কিন্তু সেখান থেকে মাকে আর জীবিত আনতে পারিনি, ১ দিন পর আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে যায়
মা চলে যাবার ৭ দিন পর আমার বউকে হসপিটালে ভর্তি করি
জুনের ২০ তারিখ আমার প্রথম কন্যার জন্ম হয়।
আমার এই করুন অবস্থার কারনে আমার বউ এতটা মানুষিক চাপে ছিল যে সন্তানও জন্মনেয় অসুস্থ, আর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে আমার মেয়েকে ৪ দিন NICU ভিতর রাখা হয় আর আমার বউকে অবজার বেশনে রাখা হয়।আমার পায়ের নিচে মাটি নেই অর্থের অভাব।
মা কবরে শুয়ে আছে, বউ শুয়ে আছে অবজার ভেশনে আর সদ্য জন্মনেওয়া আমার শিশু কন্যা শুয়ে আছে NICU তে।
শুধু তার বুকটা টিপ টিপ করে নড়ছে, এভাবেই কেটে গেল ৫ দিন, তার পড় হসপিটাল থেকে তাদের রেখে এলাম আমার শুশুর বাড়ি আমি চলে এলাম আমার বাবার কাছে, পাগলের মত জীবন আমার কি করব কিছুই বুজতে পারছিনা, আমার বউ তার বাবার বাড়ি ৭ দিন থেকে চলে এলো প্রায় জোর করে। কারন ২ দিন পড় রোযার ঈদ আমি তাকে বললাম কিছু দিন পর আসতা- আমি একটু গুছিয়ে নিতাম। কিন্তু কি গুছাবো তা আমি নিজেও জানানি, কিন্তু সে বলল সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে আর এ সময় আমি বাবার বাড়ি থাকতে চাইনা আমি তোমার কাছে থাকতে চাই। সে চেয়েছে আমার কন্যার দিকে তাকিয়ে আমি আর আমার বাবা যেন আমার মাকে হারানোর বেদনাটা একটু ভুলতে পাড়ি।কিন্তু আমি এখন কি করব কি ভাবে চলবে আমার পরিবার। তখন আমি চিন্তা করলাম আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ট উপহার তাদের কি ভাবে কি করব।
কোভিট-19 এর থাবা আমাকে শেষ তছনছ করে…….
এমন করতে করতে দেখা হয়ে গেলে আমার এক বন্ধুর সাথে, ভালোই টাকা পয়সা কামাচ্ছে নিজের মিল আছে এখন নাকি তার পাটনার লাগবে, তার মিলের কাজ পাট থেকে চট তৈরি করা আর গার্মেন্টস কাপড় দেওয়া। পড়ে গেলাম লোভে খু্ব তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়ার সপ্ন আর তাকে বিশাস করে। করে ফেললাম আরেকটা ভুল সহযোগীতা নিলাম শুশুর বাড়ির যে টাকার পরিমান ছিল ৪২ লক্ষ টাকা,। শুরু করলাম তার সাথে ব্যবসা কোন কাগজ পএ ছাড়াই ২ টা ওডারের মাল ঠিক মত দেওয়ার পড়েও সে আমার সাথে হিসাবে বসছে না । আমার কলিজাতে কামড় সেটাই হল ২০১৭ সাল আসতে না আসতেই আমার সব কিছু তছনছ হয়ে গেলে আবার হেরে গেলাম আমি। মামলা, মোকদ্দমা করে কোন ফল পেলাম না নামে মাএ কিছু টাকা উদ্দার করেছি ১ বছর ঘুরে।না আর নয়
ছোট করে আবার শুরু করলাম সুতার ব্যবসা ২০১৮ সালে আবার বছর গুড়তে না গুড়তেই শেষ থাবাটা মারল আমাকে করোনায়,
গুডাউনে মাল রেখে, পার্টিদের নানা অজুহাত এ সময় কেউ পাওনা টাকা থেকে এক টা টাকাও দিতে পারবেনা করোনার জন্য। শুন্য পকেটে ঘরে ফিরলাম।
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন ও আমার ঘুরে দাড়ানো……..
আমি জিবনে বার বার ঠকে গেছি শুধু বিশ্বাস করে, আমার সরলতার জন্য। সব কিছুর শেষ করে যখন অসহায়ত্ব বরন করলাম। কোটি টাকার ব্যবসা করে ছোট করে কিছু করবো তা কল্পনা করতে পারতাম না।
ভালবাসার ফাইন্ডেশনে যুক্ত হয়ে, স্যারের শিক্ষা পেয়ে আবারও ছোট থেকে কিছু করার শিক্ষা আমাকে নতুন করে ঘুরে দাড়াতে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। সে স্বপ্ন প্রতি নিয়ত আমাকে এগিয়ে নিয়েছে।
প্রিয় ভালবাসার ফাউন্ডেশন ও স্যারের শিক্ষা আমাকে নতুন করে, ছোট থেকে শুরু করতে শিক্ষা দিয়েছে, সে শিক্ষা নিয়ে আবার শুরু করলাম জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা সুতা ও কাপড় নিয়ে।
আলহামদুলিল্লাহ আসতে আসতে আবার সফলতার মুখ দেখতে শরু করুছি। যার সব টুকু প্রিয় ফাউনে্ডশনের প্রাপ্তী। স্যারের শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন সম্ভব হয়েছে।
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার জীবন সঙ্গীনী @roni প্রতি যে আমাকে ভালবাসার ফাউন্ডে যুক্ত করে ধন্য করেছে। আজ আমার জীবনে রনীর মত স্ত্রী না হলে আমার জীবন বিষন্নতায় নিমজ্জিত থাকতে হতো।
ফাউন্ডেন থেকে আমার শিক্ষা
আমরা"দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ"করতে পারব।
প্রতি দিন আমি ফাউন্ডেশন থেকে স্যারের শিক্ষা নিচ্ছি।
আমি স্বপ্ন দেখতে শিখে গেছি।
আমি ভালো মানুষ এর চর্চা করতে শিখেছি।
আমি প্রতি দিন সেশন চর্চায় থেকে কথা বলার জড়তা কাটাতে শিখে গেছি।
আমি মানুষের সাথে মিশতে শিখেছি।
কীভাবে একজন ভালো উদ্যোক্তা হওয়া যায়।
কীভাবে অন্যের বিশ্বাস অর্জন করা যায়।
এসব কিছু আমি আমার প্রিয় স্যার থেকে শিখেছি এবং প্রতি দিন শিখছি।
আমি ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি দিন সেশন পড়ি। অনেক কিছু শিখতেছি। নিজের বিজনেসে এপ্লাই করতেছি।
বিভিন্ন স্কিল শিখছি প্রতিনিয়ত। প্ল্যাটফর্মের আজীবন সদস্য হিসেবে সবাই সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে চাই ।
সত্যি বলতে আমার চলার পথে হাজারো সমস্যা আসুক কিন্তু স্বপ্ন পূরণের যে প্ল্যাটফর্ম আমি পেয়েছি সেটা আমার চলার পথে শক্তি জোগাবে, অনুপ্রেরণা দিবে। স্যারের প্রতি চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
কৃতজ্ঞতা
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, জাগো নরসিংদী টিমের সকল ভাই বোনদের প্রতি। বিশেষ করে আমাদের প্রিয় লিডার @সাব্বির ভুইয়া@সুমন ভূইয়া @ফেরদৌস খন্দকার@ফেরদৌস আহমেদ ভূইয়া @ মোস্তাক আহমেদ মৃধা ভাইয়া @ এম কে ইসমাইল ভাইয়া @রনী আক্তার @রাসেল আহমেদ ভাই @রায়হানুর রহমান ভাই @তাজরিন চৌধুরি আপু সহ নরসিংদী জেলার নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের সকল ভাই ও আপুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা৷
প্রিয় শিক্ষাগুরু
ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি, যত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না কেন কম হবে। এই প্লাটফর্ম যুক্ত না হতে পারলে জীবনের মানে খুঁজে পেতাম না। আমি বেশি দিন হয়নি জয়েন হয়েছি তার পরও যে টুকু জানতেও শিখতে পেরেছি তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। প্রিয় স্যারের কথা শুনে আমি অনুপ্রানিত হয়েছি, নতুন করে আরো স্বপ্ন দেখতে পারছি আলহামদুলিল্লাহ।
অনেক গল্প বলে ফেলছি,ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
সবার মতো গুছিয়ে লিখতে পারিনা, তাই এলোমেলো ভাবে লেখার জন্য দুঃখিত।
যারা পড়বেন আমার জীবনের গল্প সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৪৩
Date:- ১৪/০২/২০২২ইং
মোঃ ইউনুছ চৌধুরী
ব্যাচ-১২তম
রেজি- ৩৭৮৪৬
থানাঃ মাধবদী।
জেলা-নরসিংদী।
মোবাইল -০১৭১১১৩৯৬৮৯