শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়া স্বত্বেও উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম-
(আমার জীবনের গল্প)
আমি মোহাম্মদ ফয়সাল মীর,
একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি,আমার জন্ম ১৯৯১,জন্মের সময় forceps delivery করার সময় মাথায় আঘাত পাই,এ-ই কারণে "Cerebral palsy" প্রতিবন্ধী তালিকায় আওতাভুক্ত,যাহোক আমি আমার জীবন এর বেড়ে ওটার গল্প বলি,ছোট কালে যখন আমাকে বাবা-মা দেখতে পেলো যে অন্য অন্য স্বাভাবিক বাচ্চাদের মত বেড়ে উটছি ন,তখনই উনারা ডাঃ দেখানো শুরু করলো,এক পর্যায়ে ডাঃ এম আর খান সাহেব আমাকে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন (কল্যাণীতে) রেফার করেন আর এদিকে আমরা মা আমাকে নিয়ে দুর্বিষহ কষ্ট করেন,কারণ শুধু কান্না করতাম নাকি,আমার নানুও প্রচুর কষ্ট করেন,এমনকি তিনি তখনন এমন কোনো কবিরাজ বাকি রাখেন নাই যে আমাকে দেখানোর,ততকালীন সময়ের মানুষের চিন্তা ধারার কথা উল্লেখ করলাম আর কি।প্রথমে দুর্বতি কার্যকর্মে ভর্তি হয় কল্যাণীতৈ,আর আবার সরকারি কর্মকর্তা,তখন উনার পোস্টিং ছিলো ঢাকার বহিরে,আর যখন তিনি ঢাকার আসলেন তখন কল্যাণীতেই মা ও শিশু ক্লাস এ ভর্তি হয়,তখন কামরুন নাহার আপা আমাদের ক্লাস করতেন,তিনি তখন শুধু ব্যায়ামই করাতেন,আর যখন একটু বড় হলাম তখন আমি,দিশারী ক্লাসে ভর্তি হয়,আমি নতুন শিক্ষিকা পেলাম,উনার নাম রায়না মাকসুদ,উনাকে আমারা রায়না আপা বলেই ডাকতাম,উনি প্রথমে আমাকে ব্যায়ামই করাতেন,তিনি যখন দেখলেন আমার অন্য স্বাভাবিক বাচ্চাদের মত আই-কিউ স্বাভাবিক তখন তিনি পড়ানোর দায়িত্ব নিলেন,একবারে ক্লাস ওয়ান থেকে পড়ানো শুরু করলেন,একটানা ক্লাস নাইন পর্যন্ত,বলে রাখা ভালো যে আমি একাই ছিলাম ছাত্র কারণ তখনও আমার সাথে পড়ার মত কেউ ছিলো না,মুক্তি আপাও মাঝে মধ্যে কিছু সাবজেক্ট পড়াতেন,আর মাকসুদা বেগম আপা আমাকে বাংলা পড়াতেন,অনেক সময় মন খারাপ থাকলে,উনার কাছে চলে যেতাম,উনি বিভিন্ন ভাবে সান্ত্বনা ও সাহস দিতেন,এখনও আপা আমাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন প্রতি নিয়ত,আমাদের কল্যাণী স্কুলে আর্টের শিক্ষক ছিলেন জাহাঙ্গীর স্যার,বর্তমানে তিনি উক্ত স্কুলের প্রিন্সিপাল!তিনি মুখ দিয়ে ছবি আঁকার পরামর্শ দিয়েছেন,তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী মুখ দিয়ে ছবি এঁকে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছি,এখানে আর একটি কথা বলে রাখা ভালো উক্ত স্কুলের প্রতি টা স্যার ও ম্যডামের সুসম্পর্ক ছিলো এবং সবাই আমার প্রসংশা করতো,তারপর রায়না আপা নবম শ্রেণির পর্যন্ত পড়ানোর পর,আপা পরামর্শ দেন যেকোনো একটা নরমাল স্কুলে ভর্তি হয়ে এস,এস সি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য!আপা কথার অনুযায়ী আম্মু বিভিন্ন স্কুলে যান আমার ভর্তির জন্য কিন্তু কোনো স্কুলই আমাকে নিতে চাই নাই,তখন সেই সব স্কুলের শিক্ষক রা বলে ছিলো এমন বাচ্চা কিভাবে পড়বে?অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতেও পারবে না।পরিশেষে আম্মু ও আপারা হতাশ হয়ে যান!তারপর এক আন্টি আমাকে উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বলেন,আমিও হয়ে গেলাম।প্রথম প্রথম কিছু শিক্ষক ভালো চোখে দেখেন নাই আমাকে,পরে যখন দেখলেন যে আমার আই কিউ অন্য সব স্বাভাবিক ছাত্র ছাত্রীদের থেকে কোনো অংশে কম না,তখন সব শিক্ষক ই আমাকে ভালোবাসা শুরু করলো।পরীক্ষার সময় যখন আসলো,আমিতো লিখতে পারি না,আমার রাইটারের প্রয়োজন হয়,এই রাইটার এর অনুমতি নিতে অনেক কষ্ট হয়ে ছিলো।পরীক্ষার একদিন আগে এই অনুমতি টা পেয়ে ছিলাম,আর আমার গৃহ শিক্ষক মোঃ আবদুল খালেদ স্যার আমাকে বাসায় পড়ানোর পাশাপাশি তিনি আমার পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেন।পরিশেষে পরীক্ষা দিলাম তাও একদিন আগে এবং আমাদের স্কুল থেকে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে এস,এস,সি পাস করলাম আর এমন করে আমি এইচএসসিও পাস করলাম সাফল্যর সাথে!তারপর ডিগ্রি করলাম T & T College থেকে।এখন আমি মাস্টার্স করছি আবু যর গিফফারী কলেজ থেকে! তারপরও আমি আজ হতাশায় নিমজ্জিত কারণ এখনও চাকরি বাকরির কোনোই খোঁজ খবর নেই,ভবিষ্যতে ভালো কোনো জব পাবো কিনা?এর কোনো নিশ্চয়তা নেই!সব মা বাবার আশা থাকে যে আমার ছেলে মেয়ে থেকে বুড়োকালে সহোযোগিতা পাবার,এই বিষয়ে আমি এখনও সম্পূর্ণ অক্ষম!আর আমি আমার ম্যাডাম জন্যও কিছুই করতে পারছি না!সবার জীবনে একটা স্বপ্ন থাকে যে একটি সুন্দর সংসার করার,বেকারত্বের কারণে ঔটা এখনও হয়ে ওটে নি,তারপর আমার একটা স্বপ্ন ছিলো অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করা,এখন দেখছি নিজেই বড় অসহায়!তবে এতোগুলো হতাশার মাঝেও আমি এখনও নিরাশ হয়ে যায় নি!আমি প্রতি দিন হুইল চেয়ারে করে মসজিদে যায়,এলাকার ছোট থেকে বড় সবার সঙ্গেই মিশতে চেষ্টা করি,সবাই আমাকে ভালো জানে আলহামদুলিল্লাহ!এখন অনলাইনে ব্যবসা করার চেষ্টা করছি,ভালোই সাড়া পাচ্ছি,এইক্ষেত্রেও আমার সাথী ভাই রা বিভিন্ন ভাবে সহোযোগিতা করেই যাচ্ছে!আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন বেকারত্বের অভিশাপ থেকে কিছু টা হলেও মুক্ত,সরকার যদি আমাদের মত বেকার প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য কিছু কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করে তাহলে কোনো মানুষ ই হতাশায় নিমজ্জিত হবে না,অন্যদিকে পারিবারিক আমাদের কে পরকালের তাদের মুক্তির কারণ মনে করতো,তাহলে আমাদের জন্য কোনোদিনও পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হতো না!--
আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি "নিজের বলার মতো একটা গল্প' প্লাটফর্মের গর্বিত সদস্য ও কমিউনিটি ভলান্টিয়ার।এখন আমার শিক্ষক হচ্ছেন প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার,স্যার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শিখচ্ছি নতুন নতুন আইডিয়া,যা একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া জন্য প্রয়োজন!আর আছেন আমার অসংখ্য ভাই বোন,যারা আমার খোঁজ খবর রাখছেন প্রতিনিয়ত!
আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি খুব ভালো আছি,স্বপ্ন দেখছি,স্বপ্ন দেখাচ্ছি মানুষকে---
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৪৩
Date:- ১৪/০২/২০২২ইং
মোহাম্মদ ফয়সাল মীর
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
ব্যাচঃ ১২,রেজিঃ ৪৩১৮
ফাউন্ডার - Foysal Organic shop
মোবাইল-০১৫৩১৩৯২৭৩৬
মোবাইল-০১৬৪২৫৪০৯৫২ বিকাশ ও নগদ
Whatsapp ০১৫৩১৩৯২৭৩৬
ইমেইল-md.mir.faisal16@gmail.com
পেজ লিংক https://www.facebook.com/foysalorganicshop/
গুলশান নতুন বাজার,ভাটারা ঢাকা ১২১২-রোড নং ২১,
বাড়ি নং ৩১, ছোলমাইদ হাই স্কুলের সম্মুখে।