স্বপ্ন দেখি একজন আর্দশ উদ্যোক্তা হবো
আসসালামু আলাইকুম /আদাব,
আপনারা কেমন আছেন?
আশা রাখছি,
সবাই স্ব শরীরে সুস্থ আছেন
জন্ম
কাঞ্চনা গ্রামের এক দরিদ্র জেলে পরিবারে।
বাবার পেশা মাছ ধরা।
মাছ বিক্রি করা।
পেশা
ইলেকট্রিক্যাল ইজ্ঞিনিয়ার
এখন স্বপ্ন দেখি একজন আর্দশ উদ্যোক্তা হবো
চার ভাই-বোনের মধ্যেই
আমি মা- বাবার তৃতীয় সন্তান।
যখন আমি মাতৃগর্ভে আসি তখন বাবা-মার সুমধুর সম্পর্কটি বিষে পরিণত হলো।
বাবা আরেকটি বিয়ে করেই নিল।সৎ মাকে নিয়ে বাবা আমাদের ঘরের ঠিক সামনেই আরেকটি ঘর করেই আরামছে দিনযাপন করতেছে।উভয় মায়ের ঘরের দরজা সামনা সামনি।
বাবা মাছ বিক্রি করে বিধায় প্রায় সময় সৎ মা মাছের তরকারি রান্না করত।
সৎ মা যখন বাবাকে রাতে ভাত দিতো।
বাবা সুতোলীর বস্তার চট নিয়েই আমাদের ঘরের দিকে পিঠ দিয়েই ঘরের মেঝেতে বসেই পড়ত অর্থাৎ আমাদের পিছ দিয়েই বাবা আরামছে ভাত খাচ্ছে চার সৎ ভাই-বোনকে নিয়েই।
সৎ মা যেদিন মুরগি রান্না করবে সেইদিন বাবাকে ভাত দিতো একটু রাত করেই।কারণ আমার ছোট বোন মুরগির তরকারি খোঁজতে আসবে বাবার কাছে।
তাই আমরা ঘুমিয়ে পড়লে উনারা খেতে বসতো।
বাধ্য হয়ে মা আমাদের ভরণপোষণের জন্য ঘরের বাহিরে পা বাড়ালো।
একটু দূরেই হিন্দু পরিবার গুলোতে (বৈদ্য বাড়ি,ঘোষ বাড়ি,নতুন বৈদ্য বাড়ি-উনারা সবাই উচ্চ শিক্ষিত)
গৃহস্থালির কাজকর্ম করেই আমাদের সংসার চালাত মা।অন্য তিন ভাই-বোন প্রাইমারি পড়েই লেখাপড়া ইতি টানলো।
আমি মোটামুটি স্কুলে যেতে পছন্দ করতাম কারণ স্যাররাও আদর করত।
মা আমাকে তুলনামূলক বেশি আদর করতো।প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে হাই স্কুলে পা বাড়ালাম।কারও বাড়িতে বিকালে কাজকর্ম করলে উনারা মাকে চা খেতে দিতো।মা শুধু চা খেয়ে নাস্তাগুলো শাড়ির কোনায় বেঁধে আমার জন্য নিয়ে আসতো।বাড়িতে এসে মা দেখতেছে আমি পড়ায় ব্যস্ত।আর মায়ের শাড়ির কোনার মুটি খুলে নাস্তা গুলো আমাকে দিতো।আর আমি তৃপ্তি সহকারে নাস্তা খাচ্ছি। আর মা দেখতেছে।এক ফাঁকে মা আমাকে এক গ্লাস পানি এনেই দিতো। ষষ্ঠ শ্রেণী পেরিয়ে সপ্তম শ্রেণীতে।সপ্তম শ্রেণীর শেষের দিকে অর্থাৎ বার্ষিক পরীক্ষার পূর্বে পটিয়ার এক শিক্ষক আমাদের স্কুলে যোগদান করলো।আমাদের গণিত পড়াবে নতুন স্যার। উনি আমাকে অষ্টম শ্রেণীতে ফ্রি প্রাইভেট পড়ানোর প্রস্তাব জানালো মাকে।মা আমাকে উনার কাছে প্রাইভেট পড়তে দিবে না।তবুও মাকে কোন রকম বুঝিয়ে উনার কাছে প্রাইভেট পড়তেই যাচ্ছি।উনার কাছে প্রাইভেট পড়ার কিছুদিন পর-
উনি আমাকে বলতেছে,"বাবু-আমার পরিচিত পিএইচডি করা এক লোক বলতেছে কাউকে ফ্রি পড়ানো ভালো না!অন্ততপক্ষে শিক্ষককে দক্ষিণা হলেও দিতে হবে"আমি কথাটি মাকে জানালাম।মা আমার কথা শুনেই অবাক!মা আমাকে বলল-স্যার তোর প্রাইভেটের টাকা দিতে বললো আরকি!মা এক ডাক্তারের বাড়িতে গৃহস্থালির কাজগুলো করে দিত।মাষ্টার মশাই ডাক্তারের ছেলেকে পড়ানোর সুবাদে ডাক্তারের বাড়িতে লজিং থাকত।একদিন মাষ্টার মশাই মাকে বললো উনার আন্ডার ওয়্যার ধুয়ে দিতে।মা বাসায় এসে মন খারাপ করেই আমাকে বলতেছে। কথাটি শুনে আমারও খুব খারাপ লাগছে।কিন্তু দিন দিন আমার লেখাপড়া খুবই খারাপের দিকেই যাচ্ছে।২০০৪ সালে কোন রকম নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়।নবম শ্রেণীতে স্যার আমাদের সাধারণ বিজ্ঞান পড়াত।একদিন পড়া মুখস্থ দিতে পারিনি।চার বার পিঠাইছে।সব বন্ধুরা স্যারের এমন মাইর দেখে আমার জন্য কান্না করবে এমন অবস্থা!!!ক্লাস শেষে সবাই আমাকে দেখতেছে এবং প্রধান শিক্ষকের কাছে নালিশ করতে বলতেছে।আমি না করেই দিলাম।কারণ এগুলো আমার কপালের লিখন।ছাত্র হিসেবে তেমন ভালো ছিলাম না।ভাবতাম এসএসসি পড়েই ডিপ্লোমা ইজ্ঞিনিয়ারিং এ ভর্তি হবো।
আমাদের স্কুলের ১৯৭৩ সালের ব্যাচ
গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্রিতে পাঠ্যবই দান করল।আমাকেও বিজ্ঞান বিভাগের পাঠ্যবই দান করলো।
আমার ফ্রি প্রাইভেটের শিক্ষক বিএসসি,বিএড। উনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজেই পড়াশোনা করেছিল।
উনি বিজ্ঞানের শিক্ষক।অথচ আমাকে কর্মাস পড়তে বলতেছে।আর এক কর্মাসের শিক্ষকও কর্মাস পড়তে বলতেছে।কিন্তু স্কুলের অন্যন্যা স্যাররা আমাকে বিজ্ঞান পড়ার জন্য খুবই অনুরোধ করলো।ফ্রি প্রাইভেটের অাশায় কর্মাস পড়তেছি।কর্মাসের স্যারটি(উদ্যোগ,পরিচিতি,হিসাব বিজ্ঞান)পাঠ্যবই দেখে হুবহু পড়া মুখস্ত নিতো।আমার মুখস্থ হত না।তাই স্কুলে তেমন যেতাম না।পড়া শিখে গেলেও স্কুলে পড়া মুখস্ত দিতে পারতাম না।স্যার প্রচুর পিঠাতো।মনে হচ্ছে স্কুলে গরু দিয়ে হালচাষ করাচ্ছে।দশম শ্রেণীতে মনে হয় দশদিনও ক্লাস করিনি।ব্যবসায় উদ্যোগ এ এসএসসি তে এ+ পেয়েছি।কিন্তু Entrepreneurs এর অর্থ জানতাম না।এমন কি ভয়েও শব্দটির বানানের দিকে তাকাতাম না।তখন ব্যবসা বলতে বুঝতাম আলু,চাল,ডাল, বেগুন,সবজি ইত্যাদি বিক্রি করা।
ছাত্রদের ক্লাসে গরুর মত পিঠাতো!!! আর তোঁতা পাখির মত পড়া মুখস্থ নিত!!!
কত ছেলে মাইর খেয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে!!!
কত ছেলে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে!!!
কত মেয়ে পিচ্চি বয়সে বিয়ে বসে গেছে!কারণ স্যারের মাইরের ভয়ে মেয়েরা স্কুল ছেড়ে দিয়েছে।বাবা মা রা বাধ্য হয়ে বিয়ে দিয়ে দিল।অনেকে পিচ্চি বয়সে ডিভোর্স এর খাতায় নামও তুলে নিল!!!
২০০৬ সালে কর্মাস থেকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ হয়।বড় ভাইয়ের বাসায় থাকতাম।দু মাস ক্লাস করার পর ভাই আমাকে যাতায়াত খরচ দিতে অনিহা প্রকাশ করছে।ভাই বাসায় এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো প্রায় সময়।পলিটেকনিক এ মেকানিকাল ড্রয়িং হোম ওয়ার্ক না নিলে স্যার ড্রয়িং স্কেল দিয়ে ছাত্রদের পিঠাতো।স্যারের মাইর দেখে মেকানিকাল পড়া বাদ।ভাইয়ের বাসা থেকে চলে গেলাম।আবার ২০০৭ ইলেকট্রিক্যালে ভর্তি হয়।কি টাকার অভাব সহ্য করবো নাকি পড়ার প্রেসার???পর্দাথ, রসায়ন কিছুই জানি না।টাকার জন্য প্রাইভেটও পড়তে পারবো না।সবমিলে জটিল কঠিন অবস্থা।২০১২ তে ডিপ্লোমা শেষ করেই ২০১৪ তে জবে প্রবেশ করলাম।২০১৪-২০২২ প্রায় ৮ বছর চাকরি করে কিছুই করতে পারিনি।এমন কি বিয়েটাও হল না।শুধু খেয়েছি,ঘুমিয়েছি,চাকরি করছি।কোনো প্রকার জমাজাতিও নেই বললে চলে!!!
শুধু ভাবি কিছু একটা করবো...আজ Entrepreneurs এর অর্থ কিছুটা বুঝি!
মন্তব্য:
ছোটবেলা থেকেই আমাদের আশেপাশের বাচ্চাগুলোকে যখন দেখি,তখন তাদের পছন্দ অপছন্দ ইচ্ছা অনিচ্ছা সবি খুব সহজেই আমরা লক্ষ্য করতে পারি!!!তাদের পছন্দের কাজটির দিকে তাদেরকে আমরা ফোকাস করতে পারি,কাজটির সুবিধা, অসুবিধা,ভবিষ্যৎ ইত্যাদি সম্পর্কে তাদেরকে ধারণা দিতেই পারি।
তাহলেই তারা তাদের স্বপ্নে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যেতে সক্ষম হবেই।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৪৩
Date:- ১৪/০২/২০২২ইং
বাবু দাশ
দ্বাদশ ব্যাচ
রেজি ৩৮৬৯৮
উপজেলা
সাতকানিয়া
জেলা
চট্টগ্রাম