আমি খুব অল্পতেই রেগে যেতাম। কিন্তু এখন আর আমি রেগে যাই না
** 🌹 আমার জীবনের গল্প 🌹**
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম
🍊 🍊 🍊🍊🍊🍊🍊
🌞 সকল প্রসংশা সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আলামিনের প্রতি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন ও সুস্থ রেখেছেন।আলহামদুলিল্লাহ
🌹 শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি- আমার বাবা ও মাকে। তাদের অবদানের জন্য সুন্দর এই পৃথিবীর আলো দেখতে পারছি। তাদের ঋন কখনো শোধ হবার নয়।
🌻 আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid স্যারের প্রতি। যার অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময় আমরা পেয়েছি এই ভালবাসার প্লাটফর্ম । যিনি এ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক। আমার প্রিয় মেন্টর/ শিক্ষক, মোটিভেশনাল স্পিকার, লক্ষ তরুণ-তরণীর হৃদয়ের স্পন্দন। পথহারা বেকারদের পথের দিশারি। যার জন্য চমৎকার প্রিয় একটি প্লাটফর্মে যুক্ত হতে পেরেছি এবং পেয়েছি একটা ভালো মানুষের পরিবার।
🍎 আশাকরি প্লাটফর্মের সকল ভাই ও আপুরা ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন।
🍊আমার শৈশব: আমরা ৪ ভাইবোন। অর্থাৎ ৩ ভাই ১ বোন। ভাইয়ের মধ্যে আমিই বড়। এরমধ্যে ৩ ভাইবোন প্রায় পিঠে- পিঠি বা কাছাকাছি বয়সের ছিলাম। তাই মাঝে মাঝে দুষ্টুমি আর ঝগড়া-ঝাটি প্রায় প্রায়ই হত। এটা আসলে আমরা সবাই দুষ্টুমি আর মজা করতাম। কিন্তু আমরা এলাকার কারো সাথে কোন খারাপ বাবহার বা ঝগড়ায় লিপ্ত ছিলাম না।
আমার শৈশব কালটা খুব আনন্দ মুহূর্তেই কেটেছে। আমার বাবা তখন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। আমাকে শাসন করার তখন কেউ ছিলনা।
আমার মা একটু সহজ -সরল স্বভাবের মানুষ। তাই সেও আমাকে খুব শাসন করত না। আমি যা দাবি করতাম তাহাই আমার মা আমাকে আমার দাবি রক্ষা করার চেষ্টা করত।
কিন্তু আমি ছোটবেলায় খুব শান্ত স্বভাবের ছিলাম। এবং সবাই আমাকে বলতো ছেলেটি খুব ভালো। এবং আমি কথা খুব কম বলতাম। এজন্য কেউ কেউ বলত ছেলেটার খুব অহংকার। কারো সাথে কথা বলে না। কিন্তু আমিতো জানি আমি কোন ধরনের মানুষ। আমি কোন স্বভাবের লোক। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেকেই জানে তার নিজের সম্পর্কে সে ভালো না খারাপ মানুষ।
আমার জীবনে আমি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি এবং কখনো কারো ক্ষতিও করিনি। বরং উপকার করেছি। এটা আমার বড় একটা গুণ ধরতে পারেন।
🏫 স্কুল জীবন: আমি ক্লাস ওয়ান থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আমার গ্রামের স্কুল থেকেই শেষ করি।
এরপর ভর্তি হই-- ভারড়া উমেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে--। সেখানে লেখাপড়া করি ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত। এরপর ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হই --বনোগ্রাম শহীদ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে--। ভর্তি হই কমার্স নিয়ে। সেখানে ২০০৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। দুর্ভাগ্যবশত আমি ইংরেজি ও হিসাব বিজ্ঞানে ফেল করি। তখন আমি খুব ভেঙে পড়ি। তখন আমার বাবাকে বলি আমি আর পরীক্ষা দিব না। তখন বাবা বললেন আরে বোকা তুমি কেন পরীক্ষা দিবেনা। মানুষ একবার ব্যর্থ হলে কি হাল ছেড়ে দেয়? যাহোক আমার বাবার উৎসাহে আমি আবার এস এসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি ২০০৬ সালে। কিন্তু আমি আবার ফেল করি। হিসাববিজ্ঞানে সর্বোচ্চ মার্ক নিয়ে পাস করি কিন্তু ইংরেজিতে ফেল আসে। তখন থেকে আমার জীবনের ট্রাজেডি শুরু হলো। পরিবার ও আশেপাশের লোক আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা তিরস্কার করতে লাগলো। আমাকে ইগনোর করতে লাগলো।
সবাই বলতো একে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তখন আমার মনে একটু একটু জিদ আসতে লাগলো। আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিলাম।বাবা বললেন তুমি চাকরি করো। আমার পক্ষে আর সম্ভব না তোমাকে লেখাপড়া করানো।
যাহোক বাবার ইচ্ছায় একটা চাকরি নিলাম প্রিন্টিং কারখানায়। কিন্তু সেখানে দিনরাত ২৪ ঘন্টা কাজ করতে হয়। এদিকে মানুষের লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য হচ্ছে না। কি করি এখন? ২ দুই বছর চাকরি করার পর আমি আবার বাড়িতে আসলাম ২০০৮ সালে।
বাড়িতে এসে বাবাকে বললাম। বাবা আমি চাকরি করব না, আমি আবার পড়াশোনা করতে চাই। দুই দুইবার ফেল করে তুমি আবারও পড়তে চাও। পড়াশোনা আর হবে না। আমার জীবনে হতাশা নেমে আসলো।
তো যেভাবেই হোক বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাবাকে রাজি করালাম। আমি আবার ভর্তি হলাম নবম শ্রেণীতে বিএম শাখায় যদুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে।
ভর্তি হওয়ার পর নিজের পড়ার রুমকে জেলখানা বানিয়ে ফেললাম। খাওয়া-দাওয়া আর পড়াশোনা খাওয়া-দাওয়া আর পড়াশোনা। এরপর ২০১১সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম। বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার্ক নিয়ে পাস করলাম।
এরপর ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হলাম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কলেজে।
কলেজে ভর্তি হয়ে চাকরি নিলাম ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানিতে। চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনাও করতে লাগলাম। এবং ছয়দিনের ছুটি নিয়ে এয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা দিলাম।
এরপর টেস্ট পরীক্ষা শুরু হলো। সেখান থেকে কোনো ছুটি পাওয়া গেল না। চাকরি থেকে রিজাইন দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম ২০১৩ সালে। এবং খুব সফলভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম ।
এটাই আমার শিক্ষা জীবনের অধ্যায়।
💐 চাকুরী জীবন: ২০১৪ সালে ডিগ্রিতে ভর্তি হলাম সেই কলেজেই। সেখানে ভর্তি রত অবস্থায় চাকরি নিলাম গাজীপুরের এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কোয়ালিটি কণ্ট্রোল বিভাগে। সেখানে চাকরি করা অবস্থায় এক বছরের মধ্যে বিয়ে করলাম ফ্যামিলির সমর্থনে। বিয়ে করার পরে আমার পড়াশোনায় ভাটা পড়ে গেল। আমি আর ডিগ্রী পরীক্ষা অংশগ্রহণ করতে পারলাম না।
বিয়ের এক বছর পর ২০১৬ বউকে নিয়ে আসলাম গাজীপুরে। কিন্তু সেখানেও বেশিদিন আর চাকরি করা হলো না। আর্থিক সমস্যার কারণে।
🌞এরপর পরিবারের ইচ্ছায় পাড়ি দিলাম প্রবাসে ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে। এবং মালয়েশিয়াতে আসাও আমার জন্য সহজ ছিল না।
মালয়েশিয়াতে আসার ৩-৪ মাস আগে আমি বেকার জীবন পার করছিলাম। এদিকে চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি বাড়ি। হাতে যে টাকা ছিল সে টাকাও তো শেষ করে ফেলেছি। এদিকে মালয়েশিয়াতে লোক নেওয়াও বন্ধ করে দিল। এদিকে চাকরিও নাই। আমি আরো দিশেহারা হয়ে পরলাম। এদিকে চাকরি নাই এদিকে বিদেশ যেতে পারছিনা ভিসার জটিলতার কারণে। এরপরে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আবার চাকরি করব।
এরপর একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। সেখানকার ম্যানেজমেন্ট বলল আজকে ইন্টারভিউ হবে না আগামী সপ্তাহে আসতে হবে।যাহোক অসহায়ের মতো আবার ফিরে আসলাম বাড়ি।
দুইদিন পর খবর আসলো আমার ভিসা কাগজপত্র সব রেডি। তো সব কিছু কেনাকাটা শেষ করে আমি প্রস্তুত হলাম মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য।
২৫ মার্চ ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে ২৬ মার্চ ২০১৮ তে সুদূর প্রবাস মালয়েশিয়াতে এসে পৌঁছলাম।
🤣 প্রবাস জীবন:
২৫ মার্চ ২০১৮ সালে পারি দেই সুদূর প্রবাস মালয়েশিয়ায়। কিন্তু কোম্পানির আর্থিক বা কাজের পরিবেশ ভালো না থাকায় প্রায় ২ বছর লেগে যায় ঋণ পরিশোধ করতে।
এরপর আসলো মহামারী করোনা কভিড-১৯। লকডাউন আর লকডাউন। কর্মহীন হয়ে পরলাম প্রায় ৭-৮ থেকে আট মাস।
💐 এরইমধ্যে এক পর্যায়ে অবসর সময়ে বিভিন্ন মোটিভেশনাল ভিডিও দেখতে ছিলাম। এরমধ্যে আমাদের সবার প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের একটি মোটিভেশনাল ভিডিও এসে চোখে পড়ে। তখন ভিডিওটি দেখতে দেখতে স্যারের একটা লাইন আমার হৃদয়কে নাড়া দিলো। ""চাকরি করব না চাকরি দেব""এই স্লোগানটির প্রেমে পড়ে গেলাম।
✋এরপর স্যারের প্রত্যেকটা সেশন এবং ভিডিওগুলো আমি দেখতে থাকি। এবং স্যারের ফেইসবুক গ্রুপ পেইজটাতে লাইক দিয়ে রাখি। এবং তখন থেকেই স্যারের ভিডিও এবং সেশনগুলো ফলো করতে থাকি।
⛅এক পর্যায়ে আমি আমার প্রিয় চাচা-- মোহাম্মদ এম আলীর-- মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে ফেলি।
তিনিও প্রিয় প্ল্যাটফর্মের একজন গর্বিত আজীবন সদস্য, কমিউনিটি ভলান্টিয়ার। সে বর্তমান সৌদি আরব প্রবাসী। আমি তার জীবনের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি।
🌻 যাহোক এরপর থেকে আমার জীবনের লাইভ স্টাইল গুলো পরিবর্তন হতে থাকে।
💐 স্যারের ভিডিও ও সেশন গুলো দেখার আগে আমি একজন নেগেটিভ পারসন ছিলাম। আমি সব সময় নেগেটিভ চিন্তা করতাম।
🌹 আমি খুব অল্পতেই রেগে যেতাম। কিন্তু এখন আর আমি রেগে যাই না। স্যার বলেছেন---রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন--- পজিটিভিটি কি জিনিস সেটাও জানতাম না। সেটা জানলাম স্যারের ভিডিও এবং প্রত্যেকটা সেশন ফলো করে।
🌞 মাঝখানে একটা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বিজনেস এ যুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু করণা মহামারীর কারণে সেই নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বিজনেসও বন্ধ করে দিতে হয়। কারণ সে সময়ে বাহিরেও যাওয়া যেত না। আর বাইরে সময় দিতে না পারলে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ ভালো করা যায় না।
কিন্তু স্যারের সেশনগুলো সব সময় ফলো করি। লাইক করি কমেন্ট করি।
🌹এরই মাঝে আমার স্ত্রী---মিলি আক্তার --কে রেজিষ্টেশন করে দিয়ে আমাদের প্রিয় স্যারের প্লাটফর্মে যুক্ত করি। এরপর থেকেই উদ্যোক্তা জীবন শুরু। এখন আমরা ২জনেই যুক্ত আছি আমাদের প্রিয় প্ল্যাটফর্ম নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশনে।
🍊উদ্যোক্তা জীবন: আমি ও আমার স্ত্রী --মিলি আক্তার-- দুজনে মিলেই ব্যবসা পরিচালনা করছি। প্রিয় স্যারের দিক- নির্দেশনা মোতাবেক। প্রিয় স্যারের আরেকটি স্লোগান আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছে---
🌹 স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন এবং লেগে থাকুন।
সফলতা আসবেই-- 🌻
স্যারের এই প্রিয় শ্লোগানটি সামনে রেখেই আমার এই উদ্যোক্তা জীবনের পদার্পণ।
🍊 আমি/আমরা বর্তমানে কাজ করছি টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি এবং বিভিন্ন ডিজাইনের থ্রি পিস নিয়ে।
🍏এবং ফুড আইটেমের মধ্যে: রসমালাই, চকলেট, আইসক্রিম, টক দই, এবং টাঙ্গাইলের বিখ্যাত খাবার চমচম নিয়ে।
আমরা এখন মোটামুটি সফল উদ্যোক্তা বলা যায়।
❣️এটা একমাত্র অবদান আমাদের প্রিয় স্যার জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের। স্যারের কৃতজ্ঞতা বলে শেষ করা যাবে না।
💝 আজকে এটাই আমার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।
আমার লেখা বা উপস্থাপনায় যদি কোন ভুল ত্রুটি থাকে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।
❣️সবার প্রতি শুভকামনা ও অভিনন্দন জানিয়ে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি-----প্রিয় প্ল্যাটফর্মের সবাইকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
🍎 আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -৭৬১
তারিখ-০৯/০৩/২০২২
🌻কামাল হোসেন
😍 ব্যাচ: নং - ১২
🍎 রেজি নং -৩৭৯৯৬
🍊 জেলা: টাঙ্গাইল
🌹 উপজেলা:নাগরপুর