সেটা মেনে নিতে হবে কেননা সবসময়ই ভালো কিছু হয় না।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম
আমরা নারী আমরাই পারি
এই কথার মধ্যে আলাদা একটা জোর আছে।
আর আজকে নারী দিবসে সকল নারীদের জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
সেই সাথে কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয় মেন্টরের প্রতি এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম উপহার দেবার জন্য। যার জন্য আজ আমার নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠা।
আমি খুবই সাধারণ একটা মেয়ে। আপনার স্বপ্ন ছিল সাধারণ হয়েও কিভাবে অসাধারণ হওয়া যায়।
তাই সবসময় চিন্তা ভাবনা ছিল ইউনিক কিছু করবো।আর সেই চিন্তা ভাবনা অনুযায়ী পড়াশোনা পাশাপাশি হাতের কাজ শিখি,ব্লক বাটিকের, হ্যান্ড পেইন্টের, কুশি কাটার যাবতীয় কাজ।
যেন নিজের ইচ্ছেমত নিত্য নতুন ডিজাইন দিয়ে কাপড় তৈরি কিংবা গহনা তৈরি করে নিজের চাহিদা অনুযায়ী পড়তে পারি।
তো হঠাৎ একদিন আমাদের পরিচিত একজনের বাবা মারা গেছেন। তো সেখানে দেখতে যাই। তখন সেখানে ঐ মৃত ব্যক্তির একটি বিবাহিত মেয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে কান্না করছিল আর বলছিল তার নিজের মাকে, "আমি আমার বাবার জন্য কিছু করতে পারিনি মা" সেই কথা শুনে আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম।তারপর জিজ্ঞেস করলাম কেনো সে এইরকম কথা বলছে।
তখন বললো মেয়েটি বললো অর্নাস কমপ্লিট করেও সে বেকার। আমি প্রশ্ন করলাম তোমার তো স্বামী আছে।তখন মেয়েটি বললো স্বামী তো ভাত, কাপড়, চিকিৎসা বাবদ খরচ বহন করে যাচ্ছেন।এর বাহিরে তো কিছু নেই। স্বামীর যা কিছু অর্জন সেটা তো সন্তানের ভবিষ্যতে জন্য।
আমার কাছে কোন বাড়তি অর্থ ছিল না যেটা দিয়ে আমি আমার বাবাকে ভালো _মন্দ কিছু কিনে খাওয়াতে পারতাম বা বাবার চিকিৎসার জন্য টাকা দিতে পারতাম।
তখন আমার দুচোখ ভরে চোখের জল পড়তে থাকে।
তখন নিজের মনের ভেতর আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করে। নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি।
নিজেকে ঐ মেয়ের জায়গায় দাড় করালাম আর ভাবলাম আজ এই মেয়েটা যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক সেই একই পরিস্থিতি যদি আমি দাঁড়ায় তখন আমি কি করবো?
বাসায় এসে ভাবছি । তারপর সেই ভাবনা থেকে শুরু হলো আমি কিছু করবো। কিন্তু ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করবো। ইউটিউবে ডুকলাম একটা হাজের কাজের ভিডিও দেখার জন্য। তখন দেখলাম ঘরে বসেই লাখ টাকা আয় করছে এক প্রতিবন্ধী নারী শিরোনাম দেখে ভিডিও টা দেখলাম।
এবং আমার চিন্তা ভাবনায় চলে আসলো আমিও করবো। কিন্তু কিভাবে করবো কোথায় করবো তা ভেবে পাচ্ছি না। তখন শুধু ভিডিও দেখে যাচ্ছি।
অনেক কিছু শিখলাম কয়েকটি হাতের কাজ করেছি।
তখন প্রায় সময় মোবাইল নিয়ে বিজি থাকতাম সেই জন্য অনেক বকা খেতে হয়।তারপর ও পরে থাকতাম।
একদিন ভিডিও দেখতে দেখতে স্যারের ভিডিও সামনে চলে আসে।
নামটা দেখে খুব কৌতুহল জাগে দেখি, নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন, সেটা আবার কি?
আগ্রহ নিয়ে দেখতে থাকি ভালো লাগে।তারপর আরেকটা ভিডিও দেখি। এইভাবেই দেখতে দেখতে আমার একটা আলাদা পরিবর্তন চলে আসে সাহসটা বেড়ে যায়।
তখন মোবাইলের প্রতি আরো মনোযোগী হয়ে পড়ি
সেই নিয়ে পরিবারের সাথে অনেক অশান্তির সৃষ্টি হয়। সারাদিন মোবাইলে কি করি সবার একটাই প্রশ্ন ছিল ছোট থেকে বড় সবার? কেউ কেউ বলছে তুই অল্প বয়সে কানা হয়ে যাবি? আবার কেউ বলছে অল্প বয়সে চুল পেকে যাবে।
তখন আমার একটা বিশ্বাস ছিল আল্লাহ ভরসা। আল্লাহ তো আছেন। কারো কথার কোন জবাব দেই নি।চুপ করে ছিলাম।
তারপর গুগল চার্চ করে প্লাটফর্ম ডুকে সবার পোস্ট পড়তে থাকি। তারপর রেজিষ্ট্রেশন করে সদস্য পদ লাভ করি।তখন মনে হয়েছিল আমি পুরো পৃথিবী পেয়ে গেছি।কিন্তু তারপর বুঝতে পারলাম এতোটাও সহজ নয়।তার জন্য অনেক পরিশ্রম ও মেধা কাজে লাগাতে হবে।
রীতিমতো পরিবারের সাথে যুদ্ধ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। কেননা সবাই বলছে ভাইয়ারা আছেন বাবা-মা আছেন তাহলে কেন আমি বিজনেস করবো? লোকে খারাপ বলবে। বলবে বাবা-মা কিংবা ভাইয়ারা খাওয়াতে পড়াতে পারছেনা।তাই বিজনেস করতে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি হাল ছাড়েনি। আমি ঘরে বসেই করবো।
আমাকে একটু সময় দাও। একটু চেষ্টা করার সুযোগ দাও আমি নিজের পরিচয় তৈরী করতে পারি কিনা।
যদি না পারি আমি নিজ থেকে সরে দাঁড়াবো।তখন কিছুটা অনুমতি পেলাম।কিন্তু খুব সহজেও নয়।
তাও পুরোপুরি পাইনি।যাই হোক আমার পথ চলা শুরু হল। এবং স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজেকে তৈরি করার জন্য চেষ্টা শুরু করলাম।
আর শুরু হলো আমার স্বপ্ন দেখা।সেই স্বপ্ন দেখি যাচ্ছি আর ধৈর্য্য সহকারে এগিয়ে যাচ্ছি।তবে এতোটা সফলতা এখনো আসেনি।
তার কারণ সংসারের সব কাজ সামাল দিয়ে পুরোপুরি সময় দিয়ে উঠতে পারেনি। তবে স্বপ্ন দেখি একদিন সফল হবো ইনশাআল্লাহ।কারণ আল্লাহর উপর ভরসা আছে।আর আল্লাহর উপর ভরসা করলে সেটা কখন কিভাবে হয়ে যায় সেটা বুঝা যায় না।
কেননা সবকিছু ভাগ্য লেখা থাকেনা। কিছু নিজের চেষ্টায় ও পরিশ্রমের বিনিময়ে ভাগ্য আরো কিছু সৌভাগ্য যোগ করা যায়। তার জন্য সততার সাথে সাহসের সাথে লেগে থেকে কাজ করে যেতে হবে। সব কাজের ফলাফল ভালো নাও আসতে পারে।
তাতে হতাশ হবার কিছুই নেই। সেটা মেনে নিতে হবে কেননা সবসময়ই ভালো কিছু হয় না। মাঝে মাঝে অভিজ্ঞতার ও প্রয়োজন পড়ে। আর অভিজ্ঞতা এমনি এমনি কেউ অর্জন করতে পারে না।তার জন্য খারাপ পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে হয়।সেটা কিছুটা হতাশা তৈরি করে দেয় তবে তার পেছনে লুকিয়ে থাকে বিরাট একটা অভিজ্ঞতা।
সেই হতাশা কাটিয়ে যদি কিংবা সেই খারাপ লাগার থেকে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি। যেটা ভবিষ্যতে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে অনেক উপকারে আসবে।
তাছাড়া আগে মনে হতো স্বপ্ন কখনো সত্যি হয়ে ফিরে আসে না। স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যায়। কিন্তু এই প্লাটফর্ম যুক্ত হতে পেরে বুঝতে পারছি স্বপ্নও সত্যি হয়ে ফিরে আসে তবে সেটা কাজের মাধ্যমে পরিশ্রম বিনিময়ে।
পৃথিবীতে কোন কিছুই এমনি এমনি আসেনা।সেটাকে বাস্তবায়ন করতে করতে হয় নিজেকে নিজের সুন্দর পরিকল্পনা, সুন্দর উপস্থাপনা আর সেই সাথে সুন্দর ব্যবহার আর নিখুঁতভাবে কাজ করে সততার সাথে। যা এই প্লাটফর্ম এসে শিখে নিয়েছি।
তারপর সামান্য কিছু মুলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। সেই টাকা টা কেউ দেই নি।কারণ পরিবার চায় না ব্যবসা করি। তখন কি করলাম। ঈদ আসছে তো আমাকে সব ভাইয়ারা টাকা দিচ্ছে সাথে আব্বু দিলেন কাপড় কেনার জন্য। তো সেখান থেকে ২০০০ টাকা রেখে দেই।
কেননা চাহিদা জিনিস টা আমার খুবই কম সেটা খাওয়া, পড়া,বেড়ানো কোন কিছুইতেই নেই। তাই আমি নিজের জন্য কিনে প্রতি ঈদে অন্যদের কার কি লাগবে সেটা নিয়ে আসি। তো এইবার নিজের জন্য কিছু না কিনে সেই টাকা টা রেখে দেই। আর এটা দেই শুরু করি প্রথম বিজনেস। প্রথমে কিছু ড্রেস ছিল এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেক আইটেম এড করতে পেরেছি এবং ভবিষ্যতে আরো বড় করার ইচ্ছে আছে।
আমি কাজ করছি মেয়েদের ড্রেস এবং মনিপুরী শাড়ী, ছেলেদের পাঞ্জাবি সেই সাথে হাতের কাজের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে। সেই সাথে ব্লক বাটিক ও হ্যান্ড পেইন্টের কাজ।
সাথে কুশিকাটা ও বিভিন্ন আইটেম নিয়ে কাজ করছি।
আমার একটা পেইজ আছে হাতের কাজের শপ নামে। আর এটা হচ্ছে আমার পেইজ লিংক।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -৭৬১
তারিখ- ০৯/০৩/২০২২
রুনু বেগম
Promotion team member
সোশ্যাল মিডিয়া ফিডব্যাক টিম
রেজিষ্ট্রেশন টিম মেম্বার
ব্যাচ ১২ তম
রেজিষ্ট্রেশন ৪৪৪৮২
জেলা - মৌলভীবাজার