বিয়ের এক মাস দশ দিন পরে আমার স্বামী চলে যান কুয়েতে
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ৷
আসসালামু আলাইকুম, সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’য়ালার যিনি আমাকে এই সুন্দর পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন এবং এই মহামারীতে আমাকে এখন পর্যন্ত সুস্থ রেখেছেন। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার প্রিয় মা বাবাকে যারা আমাকে এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন।কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি আমাদের এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরী করে দিয়েছেন । যার অনুপ্রেরনায় আমার জীবনের কিছু কথা লেখার সুযোগ পেয়েছি। ♣️♣️
আমার জীবনের গল্পঃ
আমার নিজ জেলা মানিকগঞ্জ, আমি বর্তমানে পুরান ঢাকা আরমানীটোলা থাকি। আমার বাবা একজন ব্যাবসায়ী মা গৃহিণী।
আমরা তিন ভাই তিন বোন আমি বড় সন্তান। আমার শৈশব কেটেছে ঢাকা। আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমরা গ্রামে চলে যাই, আমার বাবা একজন কাগজের এবং প্রোডাক্স ব্যবসায়ী ছিলেন। রাইটিং প্যাড ছিল আমার নাম ও ছবি দিয়ে।
বাংলাদেশের একজন বড় ব্যবসায়ী - আজাদ প্রোডাক্স। তিনি আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। আমার বাবার নাম ছিলেন মাসুম প্রোডাক্স। বাবুবাজার, জিন্দাবাহার, নয়াবাজার সকল ব্যবসায়ী তাকে চিনতেন। মানুষ পিছনে লাগলে যা হয়। নিজের ও ভূল ছিল । আমার আপন ছোট চাচা আমার বাবার ব্যবসায়ীতে রেখেছিলেন। আমার বাবা ছিলেন সুখিন মানুষ। দেশ-বিদেশে গুড়ে-বেড়াতেন। এই সুযোগে আমার বাবার সব ব্যবসা আত্ত্বসাত করেন। ব্যবসায়ে ঋণ দেখায় এভাবে শুরু হলো আমাদের দুঃখের দিন। সব ব্যবস্যা আমার চাচা নিয়ে গেলো। তারপর আমরা দেশে চলে গেলাম।
আমার নিজের চোখে আমার বাবার পতন দেখেছি। সেটা ছিল অনেক কষ্ট ও দুঃখের। আমার মা একজন সহজ সরল মানুষ। ছোট - ছোট ভাইবোন নিয়ে আমার আম্মু তখন দিশেহারা। তারপর আমার বাবা চলে গেলেন মালোয়েসিয়াতে। সেখানে গেলেও তেমন কিছু করতে পারেনি। অসুস্থ্য হয়ে আবার বাড়িতে ফিরে আসলেন। আমি SSC পাশ করার পর কলেজে যখন পড়ি আমার লেখাপড়া চালাতে হয়েছে টিউশনি করে।
বিবাহিত জীবন :🧚
HSC রেজাল্ট এর এক সাপ্তাহ আগে বাবা আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে প্রবাসী ছেলের কাছে বিবাহ দিলো। HSC পাস করলাম আমি আরো লেখাপড়া করতে চেয়েছিলাম এবং নিজের পায়ে দাড়াতে চেয়েছিলাম । কিন্তু তা আর হলোনা। আমার খালু শ্বশুড় ও আমার বাবা ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু । সে সূত্রে বিয়েটা হলো। মুরুব্বিরা মিলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিয়েটা দিয়ে দিলো।
বিয়ের এক মাস দশ দিন পরে আমার স্বামী চলে যান কুয়েতে । তিনি আগে থেকেই কুয়েতে থাকতেন। এখন আবার আর এক সংগ্রামের জীবন শুরু হলো। স্বামী ছাড়া শ্বশুড় বাড়ি বুঝেনই তো। মানসিক টরচার ও অনেক কথা শুনতে হতো। তাদের কাছে মনে হতো একজন কাজের মেয়ে নিয়ে আসছে। সারাদিন মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিনরাত কাটতো । প্রবাসি জীবন হলো অনেক কষ্টের । আমার স্বামীর প্রথম সাত আট বছরের ইনকাম ওর মামারা নিয়ে যায়। এরা বিপদে পরলে কেউ পাশে দাড়ায় না। যতক্ষণ আত্বীয়স্বজন কে দিতে পারবে ততক্ষণ ভালো থাকে। এই হল প্রবাস জীবন।
এর মধ্যে আমার ছোট ভাইকে আমার স্বামী কুয়েতে নিলেন।
তারপর আমার মেঝো ভাইকে নিয়ে ঢাকাতে একটা ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করলাম। আমার ভাই গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ শিখতে লাগলো। আমার ফ্যামিলির সব দায়িত্ব আমার চাপলো। দুই-বোনকে বিয়ে দিলাম।
এখন বাবা-মা ভাই-বোন সবাই ভালো আছেন। আমাকে তাদের এখন আর প্রয়োজন হয়না আমাকে আর চিনেনা। সংসারে আমার সব অবদান তারা এখন ভূলে গেছে।
২বছর পর পর আমার স্বামী দেশে আসতেন দুই তিন মাসের ছুটিতে। কয়েক বছর গেলো কিন্তু আমাদের কোন সন্তান হয় নাই। তারপর একে বারে তিনি দেশে চলে আসলেন। প্রায় আট বছর পর অনেক চেষ্টা করে আল্লাহ তা’য়ালার অশেষ মেহেরবানীতে আমাদের ঘরে একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান দিলেন। এতে আমরা অনেক খুশি হলাম। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তিনি আমাকে মা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
আমার স্বামী এখন কাগজের ব্যবসা শুরু করলেন দোকান দিলেন। ব্যবসা ভালোই চলছিল । হঠাৎ একজন চার লক্ষ টাকা মেরে নিয়ে যান এবং মার্কেটে অনেক বাকী পরাতে প্রায় ষোল লক্ষ টাকার মত লস হয়।
তারপর প্রিন্টিং প্রেস এর ব্যবসায় আসলো এখানে ভালোই ছিলাম করোনার কারণে ব্যবসায় ধস্ নামতে শুরু করে।
2019 সালে আমার পা স্ট্রক করে। হঠাৎ আমার জীবনে নেমে আসে ঘৌর অন্ধকার। আমার পায়ের চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তারপর ও আমি পুরোপুরি সুস্থ্য হয় নাই। এখনো আমার ট্রিটমেন্ট চলছে। অবশেষে ল্যাবএটের এক ডাক্তার আমার রোগ ধরতে পারলো। তিনি আমার পা কেটে ফেলতে বলেছিল । সেদিন ওখানে আমি আমার স্বামী আমার মেয়ে অনেক কেদেছিলাম। কিন্তু আমি সাহস হারায়নি। তারপর বাসার কাছে ক্লিনিকে ভর্তি হলাম। ওখানে সাত দিন ট্রিটমেন্ট করার পর এখন ভালো মত চলাফেরা করতে পারি। 2021 এ জানুয়ারিতে হঠাৎ করে আমার স্বামীর বাম চোখের পর্দা ছিড়ে যায়। দুদিনের মধ্যে অপারেশন করতে হয়। আবার ছয় মাস পর ওই চোখের অপারেশন করতে হয়।ডাক্তার বলছিল 50% দেখতে পারবে কিন্তু এখন 10% দেখেন । তারপর ডান চোখে ও আবার একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
আমাকে সাপোর্ট করবেন।
পাসে থাকবেন।
আমাদের প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার বলেছেন
"স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুন
লেগে থাকুন সাফল্য আসবেই।"
আমার স্বপ্ন রয়েছে স্যারের অনুপ্রেরণা পেয়ে আমি সাহস করলাম এখন লেগে আছি ইনশাল্লাহ আমারও সফলতা আসবে।
স্যারের প্রতিটি সেশনই খুব চমৎকার ভাবে অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে। স্যার এ কথাও বলে থাকে যে,
"বৃষ্টি পরে সবার জন্য কিন্তু ভিজে কেউ কেউ।"
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব, আলহামদুলিল্লাহ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সব সময় পাশে থেকেছে প্রিয় মেন্টর স্যারের তৈরি করা ফাউন্ডেশনের ভাই বোনরা।
।এই প্লাটফর্মে আমি সময় দিতে শুরু করি নিজেকে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি সেশন ক্লাসে যুক্ত হই, সেশন গুলো নিজের মধ্যে ধারণ করি, শেখার চেষ্টা করি বিষয়গুলো। এখন আমার মধ্যে সেই সাহসটা রয়েছে এগিয়ে যাওয়ার নিজেকে সামনের দিকে বাড়ানো আমি এখন বলতে পারব -"আমি একজন ভাল মানুষ "
আমি এই প্ল্যাটফর্মকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই।
এই প্লাটফর্মে শুধু শিক্ষা নয়, বাস্তবের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিটি মন্ত্র মনে হয় এখানে পাওয়া যায়।
ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে শেষ করছি প্রিয় মেন্টরের প্রতি যিনি টানা ৯০ দিন বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং আমাদের পজিটিভ ভাবে মনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছেন। এখন আমার নিজের বলার মত একটা গল্প রয়েছে।
ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি জীবনে সফল হতে পারি।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৩৯
Date:- ০৯/০২/২০২২ইং
🍁 নাম-মাকসুদা মালা🍁
ব্যাচ: 16 তম
রেজিস্ট্রেশন নম্বর: 76374
জেলা: মানিকগঞ্জ
বর্তমান অবস্থান: আরমানিটোলা, ঢাকা।
আমি কাজ করছি থ্রী-পিস, নিজ হাতের আচার ও জুতা নিয়ে ।
স্বত্বাধিকার- Sabrina's Fashion House
https://www.facebook.com/Sabrinas-Fashion-House-178215008091883