জীবন যুদ্ধে ঠিকে থাকতে হলে লড়াই করতে হবে🌺🌺🌺
আসসালামু আলাইকুম,
শুরু করিলাম মহান প্রভুর নামে,যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন, আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।
মহান প্রভুর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া তিনি আমাদেরকে এখনো সুস্থ ও নিরাপদ রেখেছেন। দরুদ ও সালাম প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর রওজা মোবারকে।
শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা, আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। স্যারের মা বাবা সত্যি গর্বিত, একজন আদর্শ সৎ, দেশপ্রেমিক, মানবপ্রেমিক, বহু গুণে গুনান্তিত স্যারকে আমাদের জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছেন। স্যার নিয়ে লেখা শুরু হবে, কিন্তু শেষ হওয়ার নয়। আমি যখন থেকেই যুক্ত হয়েছি, এখনো পর্যন্ত লেগে আছি। স্যারের প্রতিটি কথা আমার অন্তরের অন্তস্তলে স্থান করে নিয়েছে। স্যারের প্রতিটি চিন্তাভাবনা, কাজ কর্ম, উঠা-বসা, চলাফেরা আমাদেরকে নিয়ে তিনি যে শুধু দেশ নয় প্রবাসে পর্যন্ত ভালোবাসার সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করে নিয়েছেন।
বিশ্বের ৫০ টি দেশ এবং বাংলাদেশের ৬৪ জেলার আজীবন সদস্য এই গ্রুপে যুক্ত আছেন। সকলের প্রতি লাল গোলাপের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন🌹🌺🌹
[আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা, ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ রইলো, আশা করি অনেক কিছু শিখতে পারবেন।]
আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুলে ধরলাম, হয়তো কারু জীবন পাল্টে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যেকোনো বিপদাপদে ধৈর্য ধরার ফল। স্যার বলেছিলেন, স্বপ্ন দেখুন, শুরু করুন,লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই।
আলহামদুলিল্লাহ আমিও তাই করেছি।
#শিশু_কাল✍️
আমার শিশুকাল শুরু হয় নূরানি মাদ্রাসায়। নূরানি মাদ্রাসায় পড়ার সুবাধে আমার কোরআন শরিফ পড়া শুদ্ধ ভাবে সম্পন্ন হয়। হাতের লেখা সুন্দর হওয়ায় কলমও উপহার পেয়েছি যা আমার ছোট জীবনে প্রথম অর্জন। ১ম হতে ৩য় শ্রেণীতে মাদ্রাসায় শেষ করার পর আবার কেজি স্কুলে ভর্তি হয় আঙ্কেলের মাধ্যমে। আঙ্কেল আমার পড়া,হাতের লেখা দেখে বাবাকে বলে কেজি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। কেজি স্কুলের পাশাপাশি আমাকে আবার প্রাইমারিতে ভর্তি হতে হয়, কারণ সে সময় পরীক্ষায় পাশ করলে সার্টিফিকেট দেওয়া হতো প্রাইমারি স্কুল থেকে। অর্থাৎ আমি একাধারে প্রাইমারী+কেজি স্কুলে এক সাথে লেখাপড়া চালিয়ে যায়।
মাদ্রাসা থেকে আসা ছেলেটা আবার যে কেজি স্কুলে হাতের লেখার জন্য পুরষ্কৃত হবে যা সবাইকে অবাক করেছে। সে সময় হাতের লেখার জন্য জ্যামিতি বক্স উপহার পেয়েছি, যা এখনো স্মৃতির পাথায় লিপিবদ্ধ আছে। আরো একটা বিষয় লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও ছিলাম পারদর্শী। ৫ম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় প্রায় ৭টা লাক্স সাবান পুরষ্কৃত হয়েছি, মজার ব্যাপার হলো আমি প্রতিটি ইভেন্টে ২য় স্থান অধিকার করেছি। সে সময় লাক্স সাবানের মূল্য ছিলো ১২টাকা।
প্রাইমারী থেকে সমাপনী পরীক্ষায় "এ" গ্রেড পেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। নূরানি থেকে আসা সে সময় "এ" গ্রেড পাওয়া ৫জনের মধ্যে একজন ছিলাম আমি। যদিও সে সময় 'এ' গ্রেডের মান 'এ+' সমপর্যায়ে। অথচ কেজি স্কুলে আমার আগে থাকা অনেকে আমার পিছনে পড়ে যায়। একটা মজার বিষয় হলো, সে সময় প্রাইমারী থেকে সনদ নিয়ে বাটি(ছোট) প্যান্ট পড়ে হাইস্কুলে চলে যায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য। আমার জানা ছিলো না সাথে অভিভাবক নিয়ে আসতে হয় ভর্তির জন্য। বলতে গেলে সে সময় খুশিতে সব ভুলে যায়। পরে তা বুঝতে পারি।
#হাইস্কুল_জীবন✍️
৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া আমি আর আমার ভাইয়া আমার রোল ৩৪ ভাইয়ার ৩৫। স্কুলের ১ম দিন গুলো ভালোই যাচ্ছিলো। যখন স্কুলের ক্রীড়াসপ্তাহ শুরু হয় তখন আমি জুনিয়রদের সাথে ফ্যাক্টিস করি। ভালোই একটা প্রস্তুতি ছিলো। যখন ফাইনাল রাউন্ড শুরু হয় তখন বাঁধে বিপত্তি। আমি জুনিয়রদের সাথে অংশ গ্রহণ করতে পারবো না, সিনিয়রদের সাথে দিতে হবে। তখন একটু কষ্ট পেলাম তারপরও হাল ছাড়িনি, সিনিয়রদের সাথে সে জুনিয়র আমি দৌড়াদৌড়িতে ২য় স্থান অধিকার করি। খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে সিনিয়রদের সাথে আমি ৪টা পুরষ্কার অর্জন করতে সক্ষম হয়। বলে রাখি আমার বয়স কম কিন্তু দেখতে লম্বা হওয়ায় আমাকে সিনিয়রদের সাথে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হলো। এভাবে ক্রীড়া অনুষ্ঠান শেষে ফাইনাল পরীক্ষা হয়, তাতে আমি ভালো রেজাল্ট করে পাশ করি। এরপরের বছর প্রতিযোগিতার প্রায় ইভেন্টে ২য় স্থান অধিকার করি। তারপর ৭ম থেকে ৮ম শ্রেণীতে রোল আটে পাশ করি। সে বছর বাবা খুশী হয়ে, সে সময়কার আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান জনাব তালেব আঙ্কেলের চট্টগ্রাম শহর অস্থ বাসায় বেড়াতে নিয়ে যান। বলতে গেলে বাবা আমাকে বলেছিলেন ১-১০ মধ্যে থাকতে আলহামদুলিল্লাহ আমি আটের মধ্যে ছিলাম। এভাবে ৮ম হতে ৯ম, এবং ৯ম হতে ১০ম শ্রেণিতে সফলভাবে পাশ করে উত্তীর্ণ হয়। ১০ম শ্রেণীতে আমার আগে রোল একজন ছেলের ছিলো তারপরও স্যার আমাকে ক্যাপ্টেন বানিয়ে দেন। ১০ম শ্রেণীতে থাকা
অবস্থায় Pepsodent Company Ltd. এর পক্ষ থেকে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আমি তাদের কুইজ প্রতিযোগিতায় ৩টা প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি, বিনিময়ে তারা আমাকে ৩টা পেপসোডেন্ট পুরস্কৃত করেন। সেখানে বন্ধুরা বলে দেওয়ায় ২টা পেপসোডেন্ট নিয়ে নেয়☺️
কারণ তাদের শর্ত ছিলো না কি একটার বেশী কাউকে পুরষ্কার দেওয়া হবে না।
এস.এস.সি পরীক্ষার পরের সময় টা পরীক্ষার্থীদের জন্য একেবারে ফ্রি সময়। এক একজন এক এক কাজে ব্যস্ত থাকে। কেউ খেলাধুলা, কেউ কম্পিউটার শেখা, কেউ চাকরি খোঁজা ইত্যাদি। সে সময় আমি পরিবারের পরামর্শে দাওয়াত ও তাবলীগে ৪০ দিনের জন্য বের হয়ে পড়ি। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে গাড়ী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, যা আমার জীবনে ১ম ঢাকা ভ্রমণ। ঢাকার কাকরাইলে পৌঁছাতে পোঁছাতে ফজরের নামাজের আগ হয়ে যায়, একটু রেষ্ট নিয়ে সবাই ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে নি। ২০১২ সালের সে সময় আমি আলহামদুলিল্লাহ ৪০ দিন নামাজ জামাতে একাধারে পড়তে পেরেছি। আমার জীবনে আর কখনো সম্ভব হয় কি না উপরওয়ালা ভালো জানেন। সে সময় আমার ১দিনে প্রায় ২১ বার ডায়রিয়া হয়, কিন্তু আল্লাহর কি মেহেরবানী দয়া আমার জামাতে নামাজ ছুটে যায় নি। আমার ৪০ দিন সময় ময়মনসিংহে কাঁটে খুব ভালো ভাবে। জীবনের সেরা মুহূর্তের মধ্যে একটি। মানুষের ধারে ধারে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া রবের সান্নিধ্যে যাওয়ার উত্তম মাধ্যম। এভাবে আমার ৪০ দিন কেঁটে যায় খুব ভালো ভাবে। তাবলীগ থেকে আসার কিছুদিনের মধ্যে এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, আমি মেধার সাথে পাশ হয়ে উত্তীর্ণ হয়। বাবা আমার রেজাল্টে খুশী হয়ে একটা ল্যাপটপ এবং মোবাইল গিফট করেন। যা আমার জীবনে আরো একটি অর্জন। এর ফাঁকে আমি বন্ধ সময় গুলোতে কম্পিউটারও শিখেনি।
#কলেজ_জীবন✍️
মানুষের প্রতিটি জীবনে হাজারো স্মৃতি থাকতে পারে, থাকতে পারে হরক রকমের গল্প। তেমন আমার কলেজ জীবনে ছিলো ভিন্ন কিছু গল্প। কলেজে ছিলাম আমি রেগুলার স্টুডেন্ট। কখনো ক্লাস মিস দিতাম না। যার সুবাদে অনেক নতুন নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। যাদের সাথে হয়তো এর আগে কখনো দেখা বা কথা হয়নি। এমন গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠে যা বলে প্রকাশ করার মতো নয়। একদিন আমার এক বান্ধবী আমার কাছে স্যারের বাড়ির কাজের লেখা গুলো চাই অর্থাৎ সে বাড়ি থেকে খাতায় লিখে আনার জন্য আমার খাতা নিতে চাই, আমি রাজি হয়ে তাকে দিয়ে দি। কয়েকদিন পরে সে খাতা ফেরত দেয়। এর কিছু দিন পরে আমি পারিবারিক ব্যস্ততার কারণে ক্লাস মিস দিয়ে বসি। তারপর বান্ধবীকে বলি তার খাতাটা আমাকে দেওয়ার জন্য কিন্তু সে দেয়নি, আমি রাগ করে তার সাথে কথা বন্ধ করে দি। আমার রাগ দেখে সে বাড়ির কাজ গুলো আমার জন্য নতুন করে নিজের খাতায় লিখে নিয়ে আসে৷ যা সত্যি আমাকে মুগ্ধ করেছে। পরে সে আমাকে তার খাতার নিচে লিখে দেয় "Sorry Capsule". যা এখনো আমার স্মৃতিতে ভাসে। এভাবে কলেজ জীবন চলতে থাকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি একটা ঔষধের দোকানে ছিলাম প্রায় ৫মাস।
আরো একটি বিষয় না বল্লে নয়, সে সময় আমি আমার একটা ভাইয়ার মাধ্যমে কলেজ স্কাউটে যুক্ত হয়। যার সুবাদে অনেক কিছু শিখতে পারি, যা আমার জন্য আরো একটা বড় অর্জন। ক্রীড়া অনুষ্ঠান, স্কাউট প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার সুবাদে একটা সার্টিফিকেট অর্জন করি। এভাবে চলতে থাকে এইচএসসি ১ম, ২য় বর্ষ।
এইচএসসি'র টেষ্ট পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেও ফাইনাল পরীক্ষায় ১বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে পড়ি। কারণ হিসেবে পরীক্ষার আগের দিন রাতে আমার রুম থেকে মোবাইল চুরি হয়ে যাওয় যা আমার পরীক্ষার উপর প্রভাব পেলে। কারণ অনেক ডকুমেন্ট মোবাইলের সংগ্রহে ছিলো।
জানা মতে, নৈবিত্তিক সব না ডাগানোর কারণে অর্থাৎ সম্পূর্ণ আন্সার না দেওয়া আরো একটা কারণ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া।
২০১৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং-এর জন্য চকবাজার ইনডেকসে ভর্তি হয়ে যায়। প্রায় ৩মাস চট্টগ্রাম শহরে ছিলাম ভাড়া বাসায়৷ ৭জনের জন্য রান্না সাথে নিজের লেখাপড়া এক সাথে ছিলো সংগ্রামের। যে ছেলে কখনো গ্রামে থাকতে নিজের হাতে কিছু করেনি সে ছেলে শহরে আসার পর নিজের হাতে সব করে খেতে হলো। গ্রামে মায়ের কতো সোহাগ, আদর, যত্নের ছিলাম। মাঝে মধ্যে মা বাবা কল দিলে কান্না করতাম, মা সবসময় আমার জন্য টেনশনে থাকতেন। বাবা আমাকে সাহস জোগাতেন। মা বাবা থেকে দূরে থাকলেও তাদের ভালোবাসা ছিলো সবসময় আমার সাথে। এইচএসসি পরীক্ষায় ১বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় আমি আমার পরিচিতো একজনের রেফারেন্সে একটা জব পেয়ে যায়, যেটি হরলিক্স কোম্পানির ছিলো। বিষয়টি মায়ের সাথে শেয়ার করি, মা বাবাকে বলেন।
বাবা আমাকে বলেন, ফয়েজ আমি এখনও বেঁচে আছি, আমার ছেলে অন্যের কাজ কেন করবে, প্রয়োজনে একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলে দেবো আমার ছেলেকে। যেই বলা সেই করা। যদিও তখন বড় ভাই এলোমেলো ভাবে জীবন যাপন করাই অর্থাৎ বেকার থাকায় বাবা বড় ভাইয়ের জন্য মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। আমি ছিলাম ভাইয়ের সহযোগী হিসেবে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চালু করার কিছু দিনের মধ্যে এক বিষয়ের রেজাল্ট দেওয়া হয় আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবে পাশ করে উত্তীর্ণ হয়৷ একটা বছর গ্যাপ গেলেও অনেক কিছু শিখেছি, অনেক বন্ধুকে নতুন ভাবে চেনার/জানার সুযোগ হয়েছিলো যা আমার জীবনে আজীবন স্মরণ থাকবে। সে সময় বাবা বলেন এইবার তুর ইচ্ছে হলে লেখাপড়া কর না হলে অন্যকিছু কর। অর্থাৎ সবকিছু আমার উপর ছেড়ে দেন। আমিও হাল ছাড়িনি। আমি বিবিএস ১ম বর্ষে ভর্তি হয়। ব্যবসায়ের ২বছরের মাঝে বড় ভাইয়া সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। আমার মাথার উপর বুঝা আরো বেড়ে গেলো, এক সাথে দু'টা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাথে নিজের লেখাপড়া। সবমিলে কঠিন একটা সময় পার করতে হয়েছে। একটা প্রতিষ্ঠান আমি দেখবাল করতাম, অন্যটা নিয়োগকৃত ম্যানেজার দেখাশুনা করতো। সে সুবাদে সেই ম্যানেজার আমাদের ক্রয়কৃত মিনি ট্রাক, প্রায় ১৫০টি গ্যাসের সিলিন্ডার আমাদের না জানিয়ে অন্যত্ত বিক্রি করে দেয়,যা প্রায় ১০লক্ষ টাকার বড় ধাক্কা, আমার জীবনের ১ম ধাক্কা হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে। আমি মনে করেছিলাম আমি বোকা বা সহজ সরল তাই আমাকে ঠকিয়েছে, পরে জানতে পারলাম, সে আমাকে ছাড়া আরো ১২জনকে এভাবে ঠকিয়েছে বিভিন্ন পন্থায়। যাদের অনেকে অভিজ্ঞ, পুরাতন ব্যবসায়ী। রবের কাছে অনেক বেশী কৃতজ্ঞ, ধাক্কাটা হয়তো জানের উপর এসে মালের উপর গিয়েছিলো, অর্থাৎ আমার কোনো ক্ষতি হয়নি।
#আরো একটা ঘটনা যেটা সবার জন্য খুব বেশী শিক্ষনীয়🌺
সময় টা ২০১৭ সালের শেষের দিকে রমজান মাসে। সেহেরীর আগ মুহূর্তে বাবা হঠাৎ আমাকে খুব জোরে জোরে ডাকতে লাগলেন,আমি কাল বিলম্বব না করে বাবার সাথে ছুটে যায়, বাবা বলেন বাজারে আগুন লেগেছে। বাসার পাশেই আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। যখন সড়কে আসি তখন দূর থেকে আগুনের লীলা দেখতে পায়। দূর থেকে দেখে মনে হলো আমার প্রতিষ্ঠান শেষ। তারপরও মনে সাহস নিয়ে সামনের দিকে এগুতে থাকি। সামনে এসে দেখি আমার প্রতিষ্ঠানের পাশের দোকানে আগুন। খুব ভয়ে ছিলাম আমি আর বাবা, কারণ সে সময়ে প্রায় ৪০+ গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি ছিলো দোকানে। এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুসল্লি, সাধারণ জনগণের সহযোগীতায় প্রায় ৫ঘন্টার ব্যবধানে ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য নিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। পাশের দোকান গুলো পুঁড়ে ছাই, কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠান কিছু হয়নি, কারণ আমি প্রতি বছরের যাকাত প্রতিবছর যথা সময়ে আদায় করে দিতাম।
যাকাত গরীবের হক, মহান রাব্বুল আলামিন, ধনীদের সম্পদের মধ্যে গরীবের হক রেখেছেন। ধনী এবং বিত্তশালীরা যদি প্রতি বছর তাদের ধার্য্যকৃত যাকাত আদায় করে দিতো তাহলে দেশে গরীব, দুঃখী, অসহায় মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসতো।
এভাবে চলতে থাকে আমার ব্যবসায়িক জীবন, সাথে ছাত্র জীবন। ব্যবসায়ের পাশাপাশি আমি লেখাপড়া চালিয়ে যায়, বিবিএস পরীক্ষায় সফলতার সাথে কৃতকার্য হয়। ভালো রেজাল্ট করি যা অকল্পণীয়। আমার মা বাবা/পরিবার বেশী খুশী হোন। বিশেষ করে বাবা বেশী হয়েছিলেন, বাবা কল্পনাও করিনি এমন রেজাল্ট উপহার দেবো।
অর্থাৎ সারাদিন ব্যবসা করে পরের দিন পরীক্ষা দিতে চলে যায়, আবার পরীক্ষা দিয়ে এসে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বসতাম। জীবন সংগ্রামে হাল ছাড়তে নেই যেটা আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি।
২০১৫ সালে ভাইয়ার রেখে যাওয়া ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এখনো ধরে রেখেছি। সাথে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি, বর্তমানে আমি আগ্রাবাদ সরকারী কমার্স কলেজ, ব্যবস্থাপনা বিভাগে অধ্যায়নরত আছি।
ব্যবসায়িক ধাক্কা আমাকে নতুন ভাবে বেঁচে থাকতে শিখেয়েছে। ব্যবসায়িক ধাক্কাটা মূলত বড় ভাইয়ার জন্য খেয়েছি, সে কারু সাথে পরামর্শ না করে এক্সটা ব্যবসায়ে হাত দেন। অর্থাৎ না শিখে, না জেনে, অভিজ্ঞতা না নিয়ে কারু সাথে ব্যবসা না করা এইটাই স্যারের শিক্ষা। সে শিক্ষাটা যদি আমরা যথাসময়ে পেতাম তাহলে এমন ব্যবসায়িক ক্ষতি হতো না। আমার জীবনে আজ পর্যন্ত কাউকে ঠকাইনি বা কারু সাথে দুব্যবহার করা হয়নি। কাস্টমারদের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো মধুর। যার ফলঃস্রুতে এখনো পর্যন্ত কাস্টমার তার ফিডব্যাক দিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু লগ্নে যারা আমার কাস্টমার ছিলেন, তাদের অধিকাংশ এখনো কাস্টমার হিসেবে রয়েছেন। আমার এক প্রবাসী ভাইয়া, তার বাসা আমার বাসা থেকে অনেক দূরে হওয়ার পরেও, প্রবাস থেকে আসার পর আমার থেকে ইলেকট্রনিক পণ্য ক্রয় করেন, যা আমার জন্য সত্যি আনন্দের বিষয় এবং ভাইয়া ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছেন।
২০২০ সালে আমি প্রায় ২৫জন কাস্টমারকে সেরা ক্রেতা হিসেবে পুরষ্কৃত করি। যেটা আমার ব্যবসায়ে প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে।
আমি সফল হয়নি, কিন্তু একদিন সফল হবো এই আশা রাখি,ইনশাআল্লাহ।
বলে রাখি, যে আমাকে ঠকিয়েছে সে নিজে এখন পথে বসার অবস্থা, সে নিজে পরিবার থেকে দূরে। সে নিজে নিজের ফল পাচ্ছে পাবে। কিন্তু আমি আলহামদুলিল্লাহ আমার অবস্থানে অটল। মহান প্রভু ধৈর্য ধরার বিনিময়ে আমাকে আমার পরিবার নিয়ে পবিত্র ওমরাহ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে মক্কা-মদিনায় যাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। মা বাবা, ভাই বোন নিয়ে তওয়াফ করার সৌভাগ্য সত্যি গর্বের। মহান প্রভুর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া।
#এই প্লাটফর্মে যেভাবে যুক্ত হয়ঃ
আমার এক ব্যাচ সিনিয়র Pinto Kumar Shil ভাই, আমাকে অনেক ভাবে বুঝিয়েছেন, আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে প্রায় সময় এসে "নিজের বলার মতো একটা গল্প" ফাউন্ডেশন নিয়ে কথা বলতেন। ভাইয়ের কথা আমার ভালো লাগে। তার সুবাধে আমি ১০ম ব্যাচ থেকে এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। মাঝখানে ভাই আবার প্রবাসে পাড়ি জমালেন আর আমি প্লাটফর্ম সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারিনি। ফলে সে আমি আর রেগুলার করতে পারিনি। তবে স্যারের পোস্ট, ভিডিও গুলো দেখতাম মনোযোগ দিয়ে। আর এভাবে গ্রুপের প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে আমি পুনরায় রেগুলার ভাবে গ্রুপের সেশন চর্চা সহো, প্রতিটি ইভেন্টে এক্টিভ হয়ে আছি।
স্যারের প্রতি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ, স্যারের দেখানো পথ আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে।
স্যারের প্রতিটি সেশন হয় আমার ডায়েরি আর না হয় মোবাইলের নোট বুকে লিপিবদ্ধ আছে। আবার কোনো লাইভের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলো লিখে রাখতাম। স্যার যখন প্রবাসে প্রবাসীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতেন আমি তখন রাত জেগে স্যারের অনুষ্ঠান গুলো উপভোগ করতাম। স্যারের কথার রাজ্যে আমি যেনো হারিয়ে যেতাম। যতই দেখি ততই দেখার তৃপ্তি বেড়ে যায়। আমার খুব ইচ্ছে স্যারের সাথে কোনো একদিন দেখা করবো, স্যারের প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করবো। আমি চাই আমার কাজের মাধ্যমে স্যারের সাথে সে সাক্ষাৎ টা হোক।
মনে করা হতে পারে, আমি ১০ম ব্যাচ থেকে যুক্ত হয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে। হ্যাঁ তা ঠিক, কিন্তু জীবনে শেষ বলতে কিছু নেই, আমি লেগে আছি, ধৈর্য ধরে আছি স্যারের দেখানো পথে ইনশাআল্লাহ সফল হবোই।
বাংলাদেশে অনেকে আছেন মানুষের জন্য কাজ করেন, বা করবেন! কিন্তু স্যারের মতো নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার মানুষ খুবই কম।
কোনো পদপদবী না থাকার পরোও যে মানুষ আমাদের জন্য এতো এতো ভালোবাসা দিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য অনেক বেশী দোয়া রইলো।
স্যারকে যে এতো এতো মানুষ ভালোবাসেন তার প্রমাণ পেয়েছি, স্যার যখন অসুস্থ ছিলেন। আমি নিজে কুরআন তেলোয়াত, নামাজ, ছদকা করে স্যারের প্রতি সামান্য ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করেছিলাম। যুগে যুগে এমন অনেক মানুষ আসবে আর যাবে, কিন্তু সত্যিকারের মহাপুরুষরা আজীবন অমর হয়ে থাকবেন সকলের অন্তরে।
আজ এই পর্যন্ত সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, ভালোবাসার প্রিয় মানুষ গুলো নিয়ে আমি আজীবন বেঁচে থাকতে চাই, সাথে স্যারের দেখানো পথ আমাকে সফলতার সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে দেবে,ইনশাআল্লাহ।
[বি.দ্রঃ আমার জীবনের অগুছালো গল্প পড়তে গিয়ে ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, কষ্ট করে ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞ ও ভালোবাসা।]
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৩৮
Date:- ০৭/০২/২০২২ইং
মোহাম্মদঃ ফয়েজ
ব্যাচঃ ১০ম
সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৭৩৮৭
রক্তের গ্রুপঃ "ও+"
উপজেলাঃ ফটিকছড়ি
জেলাঃ চট্টগ্রাম
পেশাঃ ছাত্র+ব্যবসায়ী
অধ্যায়নরতঃ সরকারী কমার্স কলেজ, ব্যবস্থাপনা বিভাগ,(এমবিএ) আগ্রাবাদ।
মোবাইলঃ 01855-157835
স্বত্বাধিকারীঃ M.R Enterprise
[ভালোবেসে সবাই পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকবেন।]
#সর্বশেষ একটা খুশির সংবাদ দিয়ে আজকের মতো শেষ করতে চাই, তা হলো বিগত ৬বছরে আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিক্রি ৫০ লক্ষ টাকা প্লাস।
আল্লাহ হাফেজ✍️