শুরু হল আমার উদ্যেক্তা লাইফের একক পথচলা
💦 আমার জীবনের গল্প 💦
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার যিনি আমাকে এই মহামারীর সময়েও সুস্থ রেখেছেন এবং সেই সাথে অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি আমাদের এত সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছেন যার অনুপেরনায় আমি আমার জীবনের কিছু কথা লেখার সুযোগ পেয়েছি।
আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার নিজের জীবন সম্পর্কে কিছু কথা তুলে ধরতে চাই। আমি কে, কি করি, কিভাবে আমি একজন উদ্যোক্তা হতে পেরেছি সে সম্পর্কে আজ আমি তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।
🗨️আমার পরিবার ও শিক্ষা জীবন:
আমি আকরাম হোসাইন পাটোয়ারী। আমার জন্মস্থান চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানায়। ছয় ভাইয়ের মাঝে আমি পঞ্চম। আমার বাবা সরকারি জব করতেন ( বাংলাদেশ রেলওয়ে হসপিটালে) আর আমার মা একটা সম্ভান্ত বড় ঘরের মেয়ে ছিলেন কিন্তু আমাদের সংসারে ছিলেন গৃহিণী । আমার বাবা-মা দুজনই আমাদের সবাইকে রেখে মহান রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন যখন আমি ইন্টারে পড়ি। ।
যাইহোক, ছোট বেলা থেকেই আমি খুব জেদি প্রকৃতির ছেলে ছিলাম। আবার সবার সাথে এক নিমিষেই মিশে যেতে পারি, ভালোবেসে সবাইকে আপন করে নিতে পারি। আমার ছোট বেলায় খুব খেলাধুলার নেশা ছিল যার কারনে ঠিকমত লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারতাম না। যার কারনে ফ্যামেলি থেকে আমাকে কচুয়া পৌরসভায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় লেখাপরার জন্য। তখন শুরু হয় আমার জীবনের নতুন অধ্যায়।
আমার বয়স তখন অনেক কম। আমি ওখানে পঞ্চম শ্রেনীতে ক্লাশ শুরু করলাম।আমি থাকা শুরু করলাম লজিং মাষ্টার হিসাবে ,আমার স্টুডেন্ট ছিল ২ জন। এই বয়সে ফ্যামেলি ছেরে থাকাটা আমার জন্য অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল।চলতেছে আমার জীবন গাড়ি। সকালে বের হতাম বিকালে যখন বাসার আসতাম তখন মাঝে মাঝে খাওয়া থাকতনা, তখনকার অনুভুতিটা বুঝানো যাবে না কত কষ্টের ছিল।পড়াশোনার ক্ষেত্রে পড়া কখনো মুখস্থ করিনি কারণ পড়ার চেয়ে লিখতে আমি ভালোবাসি। আমি এস এস সি ও এইচ এস সি দিয়েছি সদরের স্কুল থেকে ও কলেজে পড়াশোনা করেছি। সেখান থেকে ভালো রেজাল্টও করেছিলাম। এর পর বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দেই কিন্তু ভালো কোথাও চান্স না পাওয়ার ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে এম এ শেষ করি। পড়াশোনাটা সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় করেছি। তারপর এম এস সি করি বিজিএমই থেকে। এরপর সেফ কোচ করি বাংলাদেশ পযটম করপোরেশন থেকে। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সবার দোয়া আছে তাই করতে পেরেছি আল্লাহর রহমতে।
আমি সব সময়ই আমার মত করে চলতে ভালোবাসি। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সন্তান। যদিও চলার পথে কখনো কোন বাঁধা আসেনি তবুও পরিবারের অদৃশ্য ছায়া সব সময়ই আামাকে চোখে চোখে রাখতো। ফ্যামেলি থেকে দূরে থাকার কারনে আমি বাবা মায়ের ভালোবাসা একটু কমই পেয়েছি। তবে যে আমাকে সবচেয়ে বেশি ছোট বেলা থেকে ভালোবেসে এত বড় করেছে সে হচ্ছে আমার বড় ভাই।
বাবা মা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই সংসারের হাল ধরেন। আমার চাওয়া পাওয়া আমার শিক্ষা সবকিছুই আমার বড় ভাইয়ের হাত ধরে। একে একে চার ভাইকে দেশের বাহিরে পাঠান। সবাই দোয়া করবেন আমার বড় ভাইয়ের জন্য। সংসারের সুখের জন্য কিছু জায়গা জমি বিক্রি করা হয়েছিল। যদিও বাবা থাকা অবস্থায় চার ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর শুরু হল নতুন অধ্যায়, বউদের মাঝে শুরু হল প্রতিহিংসা, ওনার জামাই বেশী টাকা দেয় সংসারে তাই ওনি কম কাজ করবেন, এরকম হাজারো মামলা।
🗨️আমার প্রবাস জীবন:
আমি গ্রেজুয়েশান কমপ্লিট করে দুবাই চলে যাই। মোটামোটি একটা ভাল ছেলারি ছিল আমার। সেখানেও এক চরম শিক্ষার ব্যাপার ছিল। ফরেন লাইফ যে এমন হয় আমার তা জানা ছিল না, যদি যানতাম তাহলে আমি কখনও হয়ত যাওয়া হত না আর বাস্তব অভিজ্ঞতাও হত না। একটু না বললেই নয়। আমি এয়ারপোট থেকে যখন ক্যাম্পে যাই, আমার সাথে আমার একজন ক্লাশমেট ফ্রেন্ডও ছিল,আমরা এক সাথে ভিসা করি। ক্যাম্পে যাওয়ার পরে যখন আমাদের রুম দেওয়া হল,আমার ছিট পরল তিন জনের মাথার উপর, মানে মাচা আকারের। এটা দেখার পরে আমি কান্নায় ভেঙ্গে পরি এবং সিদান্ত নেই যে আমাকে দিয়ে হবে না।
পরের দিন আম্মুকে ফোন দিয়ে সব বল্লাম। তিনি আমাকে খুব ভাল করে মোটিভেশান দিলেন, যে মোটিভেশান আমাকে দুবাই থাকতে বাধ্য করেছিল,কারণ আমার মাকে অনেক ভালবাসি। হঠাৎ আমার আম্মু অসুস্থ হয়ে যান। ফরেন লাইফ আমার জীবনের শিক্ষার সবচেয়ে বড় সাবজেক্ট ছিল, আমি যা গেইন করেছি,আমার জীবনে তার শূন্যতা ছিল।আমি মনে করি দেশের প্রতিটি ব্যাক্তিকে যদি সরকারী খরচে বিদেশ পাঠানো যেত তাহলে দেশের চেহারা বদলে যেত। টাকার প্রতি,দেশের প্রতি, সমাজের প্রতি, ফ্যামেলির প্রতি মায়া মমতা আরো অনেকগুন বৃদ্ধি পেত। টাকা যে কত কষ্ট করে কামাতে হয় তা বিদেশিদের থেকে ভাল অভিজ্ঞতা মনে হয় অন্যদের নাই।
🗨️প্রিয় প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়া:
আমি কখনও কল্পনা করিনি এমন একটি প্লাটফর্মে নিজেকে যুক্ত করতে পারব। আমার একজন কলিগ আছে যিনি এখন আমাদের এই ফ্লাটফ্রমের মডারেটর, ওনার পোষ্ট দেখতাম, প্রিয় সারের ভিডিও দেখতাম, কিছু অনুপ্রেরণামূলক পোস্ট দেখতাম এবং সেগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তাম। সেই থেকে আমি প্রিয় পরিবারের সাথে আছি। কিন্তু কখনো কোনো পোস্ট দেয়া হয়নি বা রেজিস্ট্রেশন করিনি, রেজিষ্ট্রেশন করতে হয় সেটা আমার জানা ছিল না। আমি মনে করতাম উদ্যেক্তা হবার জন্য যা জানা প্রয়োজন আমি তা শিখতেছি বুঝতেছি। কিন্তু হঠাৎ একজন বড় ভাই আমাকে নক দিয়ে বললেন আমি লিংক পাঠাচ্ছি আপনি রেজিস্ট্রেশন করুন। আর তখন থেকে হলাম 16 তম ব্যাচের সদস্য।
তারপরে একটা পরিচিতি পোস্ট করতে বলেন তার কিছুদিন পর একটা পরিচিতি পোস্ট করি। এ সবকিছুতেই আমাকে সাহায্য করেন ভাইয়া ও আপুরা । তারা আমাকে প্রথমে অনেক সাহায্য করেছেন। কিভাবে মেসেঞ্জার গ্রুপে এড হতে হয় সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ সেই ভাইয়া ও আপু কে।
🗨️উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
আমি দুবাই থেকে চলে আসি ২০১৪ তে, তারপর আমি সম্পন্ন বেকার, এর মাঝে আমি কিছু সট কোচ করি। কারন পড়ালেখার প্রতি আমার টান বরাবর ছিল। কোথায়ও আমার জব হচ্ছিল না তার মধ্যে ফ্যামেলি আমাকে অনেকটা জোর করে বিয়ে করিয়ে দিল, টাকা পয়সা যা ছিল একেবারে শেষ।
বিয়ের মাস ছয়েক পরে আমি যৌথভাবে একটা ব্যাবসা শুরু করি। ভাল চলতেছিল আমাদের ব্যাবসা। একসময় মালিকানা নিয়ে ওনার সাথে আমার মতানৈক্য হয়। আমি ওনার কম্পানী থেকে চলে আসি জিরো ব্যালেন্সে। তারপর রাগের মাথায় একদিনে আমি ট্রেড লাইসেন্স করে ফেলি।আমার এক ছোট ভাই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জব করে তার মাধ্যমে।অনলাইনে TIN করে ফেলি। শুরু হল আমার উদ্যেক্তা লাইফের একক পথচলা। আগের পরিচিতির কারনে সবাই আমাকে টুকটাক বাকীতে র-মেটারিয়ালস দিত। সময় মত আমি পরিশোধ করে দিতাম। শুরুতে আমি ৪০,০০০ টাকা দিয়ে ব্যাবসা শুরু করি।আজকে আমার মুলধন ৫০,০০০০ লাখ টাকা। এটা শুধু আমার একটা ব্যান্ড এর কথা বললাম,বাকীগুলা না হয় নাই বললাম। আমার ব্যাবসা দাঁড় করাতে গিয়ে আমাকে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে।আমার জীবনে ৯-৫ টা কোন শব্দ ছিল না। কখন সকাল হত আর কখন রাত টের পেতাম না। কখন কাজ কম্প্লিট হবে আর ট্রান্সপোর্টে মাল ডেলিভারি করব এই থাকত আমার চিন্তায়। করোনাকালীন সময়ে হাজারো মানুষকে যে শিক্ষা পেতে হয়েছে আমিও তাদের চেয়ে ব্যতিক্রম নই। এর ফলে আমাকে বসে বসে দিন পার করতে হয়। আমি একেবারেই বেকার হয়ে যাই।আমার সেই সময় কিছুতেই যাচ্ছিলো না। কি করবো কি করবো এইসব ভেবে ভেবে চিন্তায় অস্থির ছিলাম। এর পর সাহস নিয়ে আজকে অবদি আমার পথ চলা।
🗨️আমাদের দেশে দুইভাবে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়ে থাকে। প্রথমত ছোট থেকে ব্যবসা শুরু করে ক্রমে কর্পোরেট গ্রুপে রূপ লাভ করা। দ্বিতীয়ত উদ্যোক্তাদের উত্তরসুরী হিসেবে কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া। এ পর্যায়ে যারা পারিবারিক সূত্রে বড় বিজনেসের দায়িত্ব ভার পান তারা মেধা এবং কৌশলের উপর নির্ভর করে সেটি বড় হতে এবং পরিচালনা করতে থাকেন। পক্ষান্তরে যারা শূন্য থেকে শুরু করে ক্রমে বিশাল উদ্যোক্তায় পরিণত হন তাদের থাকে কর্মজীবনে বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতা।
🗨️আমি অনলাইন জগতে এসে দেখলাম মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পণ্য নিয়ে নানা ভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। তখন একটা কথা মাথায় আসলো সেটা হলোঃ আল্লাহ্ ব্যবসাকে করেছেন হালাল আর সুধকে করেছেন হারাম ।
— সূরা আল বাকারাহ, আয়াতঃ ২৭৫
ক্বিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসাবে উত্থাপিত হবে । তবে যারা আল্লাহ্কে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত ।
— আল হাদিস (তিরমিযী ১২১০; ইবনু মাজাহ ২১৪৬)
🗨️আমার স্বপ্ন একদিন আমার ব্রান্ড সারা পৃথিবীতে ছরিয়ে পরবে, হাজারো মানুষের রিজিকের জরিয়া হবে আমার এই স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। একজন ভাল মানুষ হিসাবে সমাজে আমাকে জানবে,সমাজের,আত্তীয় স্বজনের,প্রতিবেশীদের কিছু করতে পারবো এবং আমার ইচ্ছে পুরন হবে সেদিন, যেদিন আমার নিজের বলার মত গল্প থাকবে।আমার মৃতুর পর মানুষের কোন থেকে টুপ করে একফোঁটা অশ্রু পড়বে।তখন ওপারে আমি শান্তি পাব। আপনারা সবাই পাশে থাকলে ইনশাআল্লাহ একদিন আমার আশা পূর্ণ করতে পারবো।
🗨️আলহামদুলিল্লাহ এই পরিবার থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। পেয়েছি অনেক ভালো ও গুনী ভাই বোনকে। আমি ধৈর্য ধরে লেগে আছি ইনশাআল্লাহ একদিন সফল হবোই। এই পরিবারে আসার পর বুঝতে পেরেছি পরিবার আসলে কেমন হয়। যেকোন প্রয়োজনে সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
🗨️অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে শেষ করছি প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি টানা ৯০দিন বিনা পয়সায় শুধু আমাদের মত হাজারো মানুষের কথা ভেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। মহান আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুন। আমীন।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৩৬
Date:- ০৩/০২/২০২২ইং
নাম : আকরাম হোসাইন পাটোয়ারী
ব্লাড ডোনেশন টিম মেম্বার
প্রতিষ্ঠান : এশিয়ান টেকনো বিডি লিঃ
ব্যাচ নং ১৬
রেজিষ্ট্রেশন নং ৭৭৯৬২
জেলা : চাঁদপুর
আমার বিজনেস পেইজঃ https://www.facebook.com/neutronixbd/
https://www.facebook.com/AsiaGasStove/