আমি সব সময়ই কাজ করতে পছন্দ করতাম। তাই মেয়েকেও সেভাবেই গড়েছি
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন।
আমার জীবনের গল্পঃ
শুক্রিয়া যানাচ্ছি মহান আল্লাহর প্রতি যিনি আমাকে সুন্দর এই পৃথিবীতে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। দুরুদ ও সালাম পেশ করছি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব আমাদের প্রিয় নবী করিম সঃ এর উপর। ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর, সময়ের শ্রেষ্ঠ ভালমানুষ, উদ্যেক্তা গড়ার কারিগর এবং লক্ষ্য লক্ষ্য তরুণ তরুণী এবং বেকারদের আইডল আমাদের প্রিয় স্যার #জনাব_ইকবাল_বাহার_জাহিদ স্যারের প্রতি।
আমি আজ লিখবো আমার জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া সংক্ষিপ্ত কিছু ঘটনাঃ
জীবন টা তো অনেক বড় পুরো ঘটনা টা হয়তো লেখা সম্ভব না কিন্তু আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে কে কার গল্প এতো সময় নিয়ে পরে? তাই সংক্ষিপ্ত করে লিখলাম। দীর্ঘ এ জীবনে এমন কোনো হাসির ঘটনা নেই যা বলে কাউকে হাসাতে পারবো। জন্মের আগের কিছু ঘটনা নানা,নানির মুখে শোনা। আমার বাবা ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। ঢাকা কোর্ট কাচারিতে ছিলেন, চাকরির সুবাদে তিনি ওই এলাকাতেই বাসা নিয়ে থাকতেন।
আমার মায়ের সাথে বিয়ের ১৬ বছর পযন্ত তারা নিঃসন্তান দম্পতি ছিলেন। গ্রামের বাড়িতে মানুষ বন্ধ্যা মহিলাদের ভালো চোখে দেখেন না। তাই আমার বাবা আমার মাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। আসার সময় গ্রাম থেকে একটা মেয়ে বাচ্চা দত্তক নিয়ে আসে যেন নিজের মাতৃত্ব টা ঘুচাতে পারেন। এভাবেই চলে যায় কয়েক বছর।
তারপর আমার জন্ম হয়। জন্মটা হয়েছিল সোনার চামচ মুখে নিয়েই। আমার বাবার সেই ১৬ বছরে অনেক সম্পদের মালিক হন। ইসলামপুরে কাপড়ের দোকান, কাওরানবাজারে আরত,কোট কাচারির পাশে মটর পারসের দোকান, এবং গ্রামের বাড়িতে অনেক জায়গা জমির মালিক হন। সেই সময় গ্রামের বাড়িতে সামান্য কিছু শিক্ষিত লোক ছিলেন তার মধ্যে আমার বাবা একজন। যেমন ভাল মানুষ তেমন শিক্ষিত, ভাল চাকরি, এবং বেশ ধনি। তো বুঝাই যায় কতটা সম্মানি লোক ছিলেন।
এর মধ্যে আমার দুই ভাইয়ের জন্ম হয়। অনেক হাসি খুশিতে চলছিলো আমাদের জীবন। আমার নানির কথা অনুযায়ী আমি যখন একটু হাটতে শিখেছি তখন আমার বাবা পুলিশের পোশাক পরে বাসায় এলে আমি নাকি খুব ভয় পেতাম। এবং আব্বা কোলে নিতে চাইলে যেতাম না। তাই আমার বাবা চাকরি রিজাইন দেন। একমাত্র আদরের সন্তান বাবার কোলে আসে না তাই চাকরি থেকে রিজাইন দেন।
শিক্ষা জীবনঃ
স্কুলে পড়ার বয়স হলো,আমাদের দুই বোনকে স্কুলে ভর্তি করা হলো। আপা লেখা পড়ায় তেমন ভালো ছিলো না। আমি ছোট বেলা থেকেই লেখা পড়ায় ভালো ছিলাম। গান গাইতে পছন্দ করতাম। তাই আব্বা গানের টিচার রেখে বাসায় গান শিখিয়েছেন। আব্বা নিজেও গান খুব পছন্দ করতেন। বাসায় হুজুর রেখেছে মাস্টার রেখেছেন। মোট কথা আমার বাবা মায়ের ঘরে আকাশের চাঁদ এসেছে। প্রাইমারি শেষ করি রাজার দেউরি স্কুলে। তারপর বাংলা বাজার হাইস্কুলে ভর্তি করা হয়। আমার বাবার যখন অফিস থেকে বের হতেন তখন অনেক মহিলা ওকিল দেখতেন গাউন পরে বের হচ্ছে। সেই থেকে আব্বার স্বপ্ন আমার মেয়ে বাংলাদেশের কোনো এক বিচারকের আসনে বসবে। আমার ভাই গুলো তখনো ছোট স্কুলে পড়ার বয়স হয়নি। ছোট ভাইটা তখনো মায়ের দুধ খায়। হটাৎ একদিন আমার মায়ের প্রেসার বেরে যায়। আব্বা তখনও অফিসে। বাসার কাজের লোক ছিলো এবং আমার মামাতো ভাই আব্বাকে খবর দিলে সাথে সাথে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ভতি করা হয়। সেই রাতেই আমাদের জীবনের সুখের গল্পটা শেষ হয়ে যায়। আমার বাবা আমার মাকে হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে যায়। চারটি ছেলে মেয়ে। এতো আদরের সন্তান। ছোট বাচ্চাটা তখনো দুধ খায়। কিছু বুঝার আগেই আমাদের জীবনে মেনে আসে অমাবস্যার অন্ধকার। এর কিছু দিন পর,আমার মামাতো ভাই আমার মায়ের বেশ কিছু অলংকার প্রায় ৫০/৬০ ভরি অলংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত টেনসানের কারনে দিন দিন আব্বা অসুস্থ হয়ে পরে। অনেকে বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে বাচ্চরা সৎ মার কাছে ভাল থাকবেনা বলে ফিরিয়ে দেন।
এভাবেই দিনের পর দিন আব্বার অসুস্থতা বেরে যায়, বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজ দেখাতে থাকে। একা মানুষ চারটি ছেলে মেয়ে তাছাড়া মামার বাড়ির লোক জন আসেনা। এরমধ্যে আমার চাচার ফ্যামিলি ততদিনে আব্বাকে বসে এনে ফেলেছে। আমার বাপ চাচারা দুই ভাই।আব্বার বিয়ের অনেক আগেই কাকা বিয়ে করেন। ওনার ৫ জন ছেলে মেয়ে হওয়ার পরে আমার বাবা বিয়ে করেন। তাই আমার চাচাত ভাই বোন গুলো আমার থেকে অনেক বড়। আব্বা বিয়ে করার আগে তার ইনকামের সব টাকা কাকার সংসারে দিতো। সে তার ছেলে মেয়ে কে লেখা পড়া করিয়েছে সংসার চালিয়েছে। আমার আম্মা আসার পরে আব্বা নিজের সংসার নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেলে চাচাকে তেমন টাকা দিতে পারেননি। সেই থেকেই আমার মায়ের উপর ওনাদের রাগ। তারপর যখন ছেলে মেয়ে হতো না তখন ওনারা অনেক খুশিতে ছিলো কারন উওরশুরী না থাকলেতো সব সম্পদ তাদের। আল্লাহ তাদের আশা পুরন করেছেন অন্যভাবে। আব্বার অসুস্থতা বেরে গেলে আমাদের সংসার টা তাদের হাতে চলে যায়। তারপর ও আব্বা চাইতেন না আমরা তাদের আন্ডারে থাকি কারন ওরা সবাই অনেক খারাপ মেন্টালিটির ছিল।
আব্বা যখন ডাক্তারের কাছে শুনতে পান ওনার লিভার নস্ট হয়ে গেছে তখন একজন উকিল ডেকে কাউকে না যানিয়ে সমস্ত সম্পদ আমাদের চার ভাই বোনের নামে লিখে দেন। আব্বার পেনসানের টাকা এবং বাড়িতে কিছু লোকের কাছে ক্যাশ টাকা ছিলো সেগুলো ব্যাংকে ছিলো। আমার চাচাত ভাইদের কানে যখন এই কথা গেলো তারা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। কিন্তু তখন কিছু বলতে পারেনি কারণ আব্বা তখনও স্বজ্ঞানে আছে। যখন একেবারে বিছানায় পরে গেলো তখন আব্বাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেলো। আমার বাবা অনেক বার বলেছেন যে আমি মারা গেলে ওদের মায়ের পাশে আমাকে মাটি দিও। কিন্তু তারা শুনতে চায় নি। তাদের রাগ আব্বা কেন সব কিছু ছেলে মেয়ের নামে দিলো। আমার অসুস্থ বাবা। যাকে সামনে পেতো তাকে ধরেই বলতো আমার বাচ্চা গুলো কে দেখবেন। পরিচিত, বন্ধু, আত্বীয় স্বজন এমন কেউ নেই যাকে ধরে আমার বাবা কাদেনি। শুধু একটা ই কথা ছিলো আমার বাচ্চা গুলো কে দেখবেন। আল্লাহ ইচ্ছার উপর কারো হাত নেই। আমার বাবা বেচে থাকতেই দেখে গেছেন তার আদরের সন্তানদের উপর তার ভাইয়ের ছেলে মেয়েরা কি অত্যাচার করেছে। আমার বাবা এসব দেখে আরো বেশি ভেঙে পরে। এদিকে আমার চাচাতো ভাইরা চিন্তা করতে থাকে যে যদি আমার বাবা মারা যায় ক্যাশ টাকা গুলো তোলা কষ্ট হয়ে যাবে। কারণ আমাদের বয়স ১৮ না হলে এই টাকা তুলতে পারবে না। তাই তারা প্রানপনে চেষ্টা করে টাকা গুলো তোলার জন্য। আব্বাকে প্রেসার দেন এবং বলে আপনার চিকিৎসার জন্য তো টাকা লাগবে। এসব বলে চেক বইতে আব্বার সই নিতে গেলে সই এলোমেলো হয়ে যায়। পরে ব্যাংক থেকে রুগি দেখতে চায়। সেই মুহুর্তে আব্বা মুমূর্ষু অবস্থা। তাই মৃত লাশের খাটের ওপর শুইয়ে ব্যাংকের কাছে আনলে ব্যাংক ম্যানেজার দেখে টাকা দিতে রাজি হয়। আব্বাকে ঢাকা আনার সময় আমি খুব কান্না করি তারপর আমাকে সাথে নিয়ে আসে। আমার দুই ভাই গ্রামের বাড়িতে শত্রুদের কবলে আর আমার বড় বোনকে তার আপন বাবার কাছে তুলে দেয়।
আমার বোন যে আমাদের আপন বোন না সেটা এই তখনই প্রথম আমরা বুঝতে পারি। তাও আমার বাবার মৃত্যু সময়। আপা যেতে চায়নি খুব কান্না করে। চেনা নেই যানা নেই যাকে সারা জীবন বাবা বলে ডেকেছে সেও চলে যাচ্ছে। ছোট ছোট দুটো ভাই। মানে কি লিখবো কি লিখলে আমি মানুষকে বুঝাতে পারবো আমাদের সেই সময়ের কথা তা আমার জানা নেই। তারপর সেই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে আনে বিকেলে। আমার চাচাত ভাইরা আনন্দে পাগল।আমার বাবা চলে যায়। রাত ২ টায় বাবার পাশেই ঘুমিয়ে ছিলাম। আম্মা মারা যাবার পরে এক রাত আব্বাকে ছাড়া ঘুমাইনি। বাবাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতাম। জীবনের শেষ সময় টা ও সেই রাতে বাবার বুকে ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার চাচাত ভাই কোরান পড়ছিলো। হটাৎ কাকা চিৎকার দিয়ে উঠে বলে আমার ভাই তো আর নেই। কাকার চিতকার শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বাবার মাথার কাছে বসে থাকি। কিন্তু কি হয়েছে বুঝতে পারসি না। কেন জানিনা একটুও চোখে পানি আসেনি সেদিন। সেই থেকে আজও নিরবে কাঁদি। জোরে শব্দ করে কাঁদতে পারিনা। আমার ভাই দুটো কে না দেখিয়ে মাটি দেওয়া হয় আমার মায়ের পাশে আজিমপুর কবরস্থানে।
আমাদের মামা ছিল একজন কিন্তু বিচার বুদ্ধিতে ছিল কাঁচা। পরিবারে তেমন স্বচ্ছতা ছিলো না,তাই ছোট ভাইটাকে খালা নিয়ে যায় সিলেটে তার বাড়িতে। সেখানে খালুর বেডিং এর দোকান ছিলো। আমার ভাইটাকে দোকানে বসিয়ে নামাজ পড়তে গেলে আমার ভাই কান্না করতে করতে কোথায় চলে যায় আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। আল্লাহ অশেষ মেহের বানিতে প্রায় ৫/৬ বছর পরে ফিরে পাই। সেটা ও আরেক কাহিনি। এসব ঘটনা গুলো ডাইরীতে লিপিবদ্ধ করতে করতে একদিন সেলাই মেশিনে কাজ করা অবস্থায় আমার খিচুনি উঠে। সাথে সাথে একটা ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখানে ১৫ দিন থাকার পর ডাক্তার বলে আমাকে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যেতে। সেখানে নিলে ধরা পরে আমার (হিস্টেরিয়া) মানষিক সমস্যা হয়ে গেছে। তিন মাস মানষিক হাসপাতালের বিছানায় থেকে কোনো ভাবে সুস্থ হয়ে ফিরে আসি। কিন্তু সারাজীবন এই রোগ ভালো হবে না।
উদ্যাক্তা জীবনঃ
উদ্যাক্তা জীবনে কখনো পা দিয়েছি সেটা মনে নেই। তবে এই টুকু মনে আছে যখন আমার চাচাত বোন বা চাচি তাদের পুরনো কাপড় গুলো আমাকে পরতে দিতো গায়ে ফিটিং না হলে সেগুলো বটি দিয়ে কেটে হাতের সুই সুতো দিয়ে সেলাই করে ফিটিং করে নিতাম। তারপর থেকেই আস্তে আস্তে পেটের দায়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতাম৷ এভাবেই উদ্যাক্তা জীবনে পা রাখা। ছোট ভাইকে হারিয়ে শুধু একটা ভাইকে নিয়ে আবার চলে আসি ঢাকায়। গাউছিয়া মার্কের একটা দোকানে তিন বেলা খাওয়ার বিনিময়ে চাকরিতে দেই ভাইকে। আমি মামাত ভাইয়ের বাসায় থেকে একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি নিয়ে চলতে থাকি। রাতে বাসায় ফিরে সেলাই মেশিনে কাজ করি। এর মধ্যে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ছোট ভাইকে ফিরে পাই। তাকে নীলক্ষেত হাই স্কুলে ভর্তি করে দেই। দুটো ভাই ই দিনের বেলায় চাকরি আর রাতে নাইট স্কুলে পড়েছে। আলহামদুলিল্লাহ দিন গুলো ভালই চলছিলাম।
চাকরি করা অবস্থায় একজন কে পছন্দ করি এবং আত্নীয় স্বজন মিলে বিয়ে দেন। আমাদের বিয়ের কয়েক মাস পর আমার স্বামীর চাকরি টা চলে যায়। উনি বেকার হয়ে যায়। এর মধ্যে আমার একমাত্র মেয়ে পৃথিবীতে আসে। সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলাম। আমার শ্বশুড় আর আমি কিছু টাকা মিলিয়ে আমার স্বামীকে বিদেশে পাঠাই। সেখানে এক বন্ধুর তালে কোম্পানির কন্টাক্ট শেষ না হতেই চলে আসে। দুজন মিলে ব্যাবসা করবে। ভালই যাচ্ছিলো। হটাৎ সেই বন্ধু সমস্ত টাকা নিয়ে জাপান চলে যায়। আমার বোকা স্বামী আরো বোকা সেজে গেলো। এদিকে মেয়ের লেখা পড়ার বয়স হচ্ছে।
পরে আবার বিদেশে গেলো। তখন আরও এক বন্ধুর বুদ্ধিতে সেখানে সিটিজেন পাওয়ার লোভ দেখিয়ে নিজের ইনকামের সব টাকা মেরে দেয়। চার বছর আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি। মেয়েকে নিয়ে অনেক কস্টে দিন কাটিয়েছি। তখন ছোট ভাইয়ের সাহায্য কয়েকটি সেলাই মেশিন কিনে একটা এমব্রয়ডারি কারখানা করি। প্রায় ৪০ টা মেশিন হয় আস্তে আস্তে। আমার কারখায় ৪০ জন এবং বাড়িতে নিয়ে কাজ করছেন আরো প্রায় ৪০/৫০ জন। এভাবে অনেক ভালো একটা বিজিনেস দার করিয়ে ছিলাম।
হঠাৎ দেশে কম্পিউটার এমব্রয়ডারি চলে আসে। আমার কাজটা বন্ধ হয়ে যায়। আবার সেই কষ্ট শুরু হয়। বাসা ভাড়া খাওয়া, মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালানো খুব কষ্ট হয়ে যায়। সেলাই মেশিন গুলো বিক্রি করে দেই। একটা মেশিন রেখে নিজে কোন ভাবে চলি। কয়েক বার স্কুলের বেতনের জন্য মেয়েকে স্কুল থেকে বের করে দেয়। তারপর ও আমি হাল ছারিনি। মেয়ের শিক্ষা জীবনে কোনো ক্ষতি হতে দেই নি। এর মধ্যে আমার ভাইরা বাবার সম্পদ আদায় করে আনে যতটুকু অক্ষত ছিলো। কিছু কিছু বিক্রি করে দিয়েছে অনেক জালিয়াতি সই করে। ক্যাশ টাকা তো কিছুই নেই।সেই গুলো বিক্রি করে আমার দুই ভাই ঢাকায় গাউছিয়া মার্কেটে দোকান নেয়। কামরাংগীর চরে একটা বাড়ি করে। আলহামদুলিল্লাহ তাদের দিন ভালই চলছে। দুই ভাইকে বিয়ে দিয়েছি নিজে দাড়িয়ে। এখন চার ভাই বোন এক এলাকাতেই আছি। শুধু আমার জীবনের কোন পরিবর্তন আসেনি। আমার বোকা স্বামী দেশে চলে আসে,সিটিজেন না হওয়ায় প্রচুর টাকা পয়সা নষ্ট হয় আর সে অনেকটা শূণ্য হাতেই চলে আসে। এর মধ্যে আমার একমাত্র ছেলে জন্ম হয়। ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলাম ৬ মাস বয়সে। গাড়ী এক্সিডেন্ট হয়ে ছেলের মাথায় আঘাত পায়। সেই থেকে অটিজম হয়ে বেচে আছে আমার একমাত্র ছেলে।
পরে আবার আমার স্বামী বিদেশে যায় তৃতীয় বারের মতো। ভাবছিলাম হয়তো আল্লাহ এবার মুখ তুলে চাইবে। তিন বছর চলে যায় এবার ও সিটিজেন নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এর মধ্যে কোম্পানির কন্টাক্ট শেষ। তাই অন্য জায়গায় চলে যায়। ৯ মাস ভালই চলছিলাম। বেশ কিছু টাকা দিয়েছিলো। অনেক ঋন ছিলো সেগুলো দিয়ে শেষ করেছিলাম। অটিজম বাচ্চাকে লেখা পড়া প্রচুর ব্যয় বহুল। ওর পিছনে অনেক টাকা চলে যায়। ৯ মাস যাওয়ার পরে হঠাৎ অবৈধ অধিবাসী হিসেবে ধরা পরে যায়। প্রায় এক সপ্তাহ কোন খোঁজ না পেয়ে ওর পাশেই এক লোকের মারফত শুনতে পাই ধরা পরে জেলে আছে। আকাশ টা ভেঙে মনে হয় আমার মাথায় পরে। জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে বল্লাম যে, হে আল্লাহ এই জীবনে আর কোনো দিন তোমার কাছে কিছু চাইবো না। আমি বাবা মা হারিয়েছি খুব ছোট বেলায়। আমার বাচ্চা গুলো কে তারদের বাবা ফিরিয়ে দাও। সেই থেকে আজও মানবেতার জীবন কাটাচ্ছি। ৬ মাস হয়ে গেছে। সবাই আমার স্বামীর জন্য দোয়া করবেন।
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের সাথে পথ চলাঃ
আমি সব সময়ই কাজ করতে পছন্দ করতাম। তাই মেয়েকেও সেভাবেই গড়েছি। অতিরিক্ত টেনশান এর কারনে পর পর দুই বার স্টোক হয়ে যায়। হাসপাতালের থেকে ফিরে বাসায় শুয়ে বসে থাকি তখন মেয়ে একটা ফেইসবুক আইডি করে দেয়। বলে এটাতে সময় কাটালে ভালো লাগবে। সেখানে দেখি অনেকে অনলাইনে বিজনেস করছে। এগুলো চোখে পরতেই আমিও একটা পেইজ করে ছোট ভাইয়ের দোকানের কিছু প্রডাক্ট পোস্ট দেই। সে রকম সারা পাইনি। তাই নিজের হাতের হেন্ডপেইন্ট করা এবং ব্লক করা পাঞ্জাবি সেলাই করে পোস্ট দেই। এর মধ্যে করোনা মহামারি চলে আসে। তাই কাপড় কেনা সেলাই করা অনেক খরচ পরে যায়। অনেক টাকার পাঞ্জাবি ঘরে আটকে যায়। খুবই বিপদে পরে যাই। মেয়ের হাতে পরে যায় সংসারের বোঝা। মা ভাইয়ের মুখে খাবার তুলে বাসা ভাড়া এসব যোগার করতে আমার মেয়ে পাগলের মতো হয়ে যায়। ইউটিউব দেখে ফ্রিল্যান্সিং শিখে। লগো বানানো বিভিন্ন ধরনের কাজ শিখে। আমি কয়েকটি গ্রুপের সাথে এড হই। কিন্তু কোন ভাবে ই কিছু করতে পারছি না। হঠাৎ আমাদের সকলের প্রিয় স্যারের একটা ভিডিও আমার চোখে পরে। সাথে সাথে স্যারের নাম লিখে সার্চ দিলে পেয়ে যাই স্যারের সব গুলো ভিডিও। মন দিয়ে দেখি আর ভাবি আরো ১০ বছর আগে যদি স্যারকে পেতাম। স্যারের এই মহা মুল্যবান কথা শুনতে পেতাম তাহলে হয়তো আমার জীবনে এতো কষ্ট হতো না। আলহামদুলিল্লাহ দেরিতে হলেও পেয়েছি এই মহা মানব। মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর প্রিয় স্যার #জনাব_ইকবাল_বাহার_জাহিদ স্যার কে। আমি আমার জীবনের শেষ সময়ের শ্রেষ্ঠ গল্পটা স্যারের সামনে শুনানোর অপেক্ষায় থাকবো ইনশাআল্লাহ। সময় নিন সময় দিন সময় বদলাবে সময়ই একদিন সব ঠিক করে দেবে।
ব্যস্ততার মধ্যে আমার জীবনের গল্পটি সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।সবশেষে আমার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছি।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -৭৬৩
তারিখ-১৬/০৩/১৭
আমি আফরোজা ইসলাম
১৭ তম ব্যাচ
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ৮৪৯১৮
নিজ জেলা চাঁদপুর
শ্বশুরবাড়ি মানিকগঞ্জ