এই ফাউন্ডেশন থেকে আমি আমার নতুন জীবন শুরু করেছি
🌹 আসসালামু আলাইকুম 🌹
🌺প্রথমেই আমি ধন্যবাদ জানাই আল্লাহর দরবারে যিনি আমাকে আজ আপনাদের সামনে আমার জীবনের গল্প প্রকাশ করার তৌফিক দান করেছেন এবং সেইসাথে চারিদিকের এত কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও আমাকে এবং আমার পরিবারকে সুস্থ রেখেছেন
🌺দরুদ ও সালাম পেশ করছি মানবতার দূত নূরের আলো আলোকিত করেছেন।
🌹হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম🌹
🌹আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার জন্মদাতা পিতা মাতারপ্রতি। যারা আদর যত্নে লালন পালন করেছে।আমি আমার বাবা মা কে অনেক ভালোবাসি।আর সবার বাবা মার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল।
💓আমি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি আমার প্রাণপ্রিয় মেন্টর আমাদের আইডল, সকলের শিক্ষক এবং লাখো তরুণ তরুনীর নয়নের মনি
সেই মহান ব্যক্তির নিকট যার অবদান অনস্বীকার্য
তিনি আর কেউ নন আমাদের সকলের ভালোবাসার মানুষ, প্রিয় পাত্র
শ্রদ্ধার 💞ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার 💕 Iqbal Bahar Jahid Sir 😍😍😍
🙏আমার জীবনের গল্প🙏
জীবনের এই প্রান্তে এসে জীবনের গল্প লিখতে বসলাম।
আমার বাল্যকাল
১৯৮২ সালে আমার জন্ম।বাবা-মার প্রথম সন্তান । আমি আসার আগে আমার দাদা মারা যায়। আমার দাদী খুব অল্প বয়সে বিধবা । অনেক কষ্ট করে বাবা চাচা ও ফুফুদের মানুষ করেন। সংসার দেখার মত কেউ ছিলনা তাই আমার বাবা আর ফুফুকে নানা বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতে হয়েছে। আমার বাবাকে এইচএসসি পাশ করার পর সংসারের হাল ধরতে হয়।। অনেকগুলো ভাই বোন একার উপার্জন দিয়ে সংসার চলতো না। তাই ছোট ভাইয়ের হাতে সংসার দিয়ে নওগাঁ চলে আসে এবং রেজিস্ট্রি অফিস চাকুরি করে। বেশ কিছুদিন পর বাবাকে বিয়ে দিয়ে দেয়।এর পর তাদের কোল জুড়ে আমি পৃথিবীতে আমি আসি। আমাকে পেয়ে সবাই খুব । বাবা-মা আদরের সন্তান । কিছুদিন পরপর আমার দুই ভাই পৃথিবীতে আসে। খুব হাসিখুশি ছিল মা বাবার সংসার।
শৈশব কাল
আমার বয়য় যখন ৬ বছর তখন বাবা আমাদের কে শহরে নিয়ে রাখতো। আমাকে শহরের একটি স্কুলে ভর্তীকরে দেয়। আমার দাদী আমেকে না দেখলে থাকতে পারতো না ।তাই প্রতি সপ্তাহে আমাকে দেখার জন্য শহরে চলে আসতো। আদরে আদরে মানুষ হয়েছি। একটু বড় হয়ে উঠতেয় বিভিন্ন যায়গায় থেকে বিয়ে আসতে থাকে।তাই ssc পরিক্ষার আগেই বিয়ে দিয়ে দায়।
মানুষের জীবন বড় বৈচিত্র্যময় সুখ,দুঃখ ,হাসি,কান্না নিয়ে জীবন। আমি এতটাই অসহায় যে জীবনে চেষ্টা করে ও এতটুকু সুখ চোখে দেখতে পেলাম না।
😭বিবাহিত জীবন 😭
১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়৷
শুরু হলো সংসার জীবন।বিয়ের একবছর পর আমার কোলে আলো করে এলো আমার পুএ সন্তান৷ আমার পুএ সন্তান হওয়ায় পরিবারের সবাই খুবই আনন্দে মেতে ছিলো৷ বিয়ের পর চারটি বছর ভালোই গেল৷ মেয়ে ৪ মাসের পেটে হটাৎ আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পরে। তার পর আমি জানতে পারি যে আমার স্বামী ড্রাগনেই নেশাই আসক্ত হয়ে গেছে। শুরু হলো জীবনের যুদ্ধ।শোনার পর মাথাই আকাশ ভেঙ্গে পরলো।এখোন আমি কি করবো।তিন বছরের ছেলে৷ পেটে আরেক সন্তান অনেক কথাই মনে আসে সন্তানদের দেখে মনের ভিতর ভাবতে থাকি।
মহান আল্লাহতালার হুকুমে সব কিছু হয় ,তিনি চাইলে হয়তো বা সবঠিক হয়ে যাবে।আমার সন্তানরা এই পৃথিবীতে ভালো ভাবে বাঁচতে পারবে।
শুরু হলো নির্যাতিতো জীবন।
দুঃখ কষ্ট,অপমান, অবোহেলা আর নির্যাতন। নির্যাতনের শেষ নাই। বাবা-মা আত্মীয় সজন কারো কাছে বলতে পারিনি।শুধু
আরালে চোখের পানি মুছি।যদি বাবা- মাকে বলি তো বলবে ছেরে চলে আসো।তখন আমার সন্তানদের কি হবে। দুঃখ কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে এভাবে কয়েকটি বছর কাটিয়ে দিলাম৷ ছেলের বয়স যখন ৮ বছর তখন বাবা মা যানতে পারলো।বাবা আমাকে যতটা পারে স্যাহায করে আর বলে মা দুই টা সন্তান কে মানুষ কর।
হঠাৎ করে আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পরে৷😭😭 ডাক্তার দেখালাম৷ ডাক্তার বললো আমার বাবা ক্যান্সার রোগে ভুগছেন।
আস্তে আস্তে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে।
আজ বিবাহিত জীবন ২৪ বছর হয়ে গেছে ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে।কিন্তু তাদের কে নিয়ে পথ চলা কঠিন হয়ে গেছে। কষ্ট করতে করতে আমি ক্লান্ত ।
আত্মহত্যার চেষ্টা ও করেছি কিন্তুু আমার ছেলে আমাকে বাঁচিয়ে নেই। ছেলে আমার দুই পা ধরে কাঁধে আর বলে মা তুমি ছাড়া আমাদের পৃথিবীরটা অন্ধকার আমরা অসহায় হয়ে যাবে। ছেলে মেয়ের কান্না দেখে আমি ভেবেছি আর এই কাজ কোনো দিন করবো না। আমি তাদের কে নিয়ে এই পৃথিবীতে বাঁচতে চাই।
আমি আবার শুরু করলাম ছেলে মেয়ে কে নিয়ে আমার নতুন জীবন৷
ছেলে মেয়ে যখন ছোট খাবারের কষ্ট কাওকে বলতে পারিনা৷ মা বাবা যানেনা মেয়েকে কোলে নিয়ে ছেলের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে মায়ের বাড়ি যাই। মা কে না বলে হাঁসকে খাওয়াবো বলে চালের ক্ষুদ নিয়ে আসতাম আর নিজে হাতে মেয়েদের থ্রি পিচ সেলাই করতাম।এই দিয়ে বেস কিছু দিন ভালই যায়। ছেলে মেয়েকে স্কুলে দেওয়ার সময় হলো।শাশুড়ি কে বুঝিয়ে বলি ছেলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করে দেন।দিনে ৪ থেকে ৬ বার হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাওয়া আসা করি।মেয়ের বয়স ৪ বছর মেয়েটা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যায় নওগাঁ অনেক ডাক্তার দেখালাম কিছুই হয়না। শশুরের সংসারে সারাদিন পরিশ্রমের পর জোটে আধাপেটা খাবার। শাশুড়ি কে বলি মেয়েতো দিনদিন বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
শাশুড়ি আমাকে বলে বাবা মার কাছে থেকে টাকা নিয়ে চিকিৎসা করাও।মেয়ের দিকে দেখে উপায় না পেয়ে বাবার বাড়ি চলে যাই।মা কে সব খুলে বললাম তারা আমার সন্তান কে দেখে হাতে টাকা দিয়ে বললো এখনি রাজশাহী নিয়ে যাও। টাকা আমার হাতে দেখলে আমার স্বামী কেরে নিয়ে নিবে।তাই এক ভাবির মাধ্যমে রাজশাহীতে নিয়ে চিকিৎসা করাই।আমি এতটাই একা হয়ে পরি যে শুধু অন্ধকার দেখি। অভাগি যেদিকে তাকাই সাগর শুখিয়ে যায।ভিবতে থাকি এভাবে আর জীবন যুদ্ধে কতদিন এগিয়ে যাবো।আল্লাহ পাক চাইলে তো সবই হয়।শশুড়, শাশুড়ি ও ভাশুরদের বুঝতে লাগলাম।
আমি বলার পর তারা আমার স্বামীর চিকিৎসা করতে শুরু করে। আস্তে আস্তে ভালো হয়ে উঠলো।
৫ থেকে ৬ বছর ভালোই কাটলো। হঠাৎ করে আমার শাশুড়ি মারা যায়৷ এর পর থেকেই নেমে আসে অশান্তি।শুরু হয় ভাই ভাই গন্ডগল।এর পর থেকে আবার আমার স্বামী চলে গেল নিশার জগতে।শুরু হলো আবার সেই ভয়াবহতা। তবে তার মাথাই অনেক সমস্যা দেখাদিয়েছে হয়তো আর কখনো বা ভালো হবে না।যানি না এই দিন কবে শেষ হবে। ছেলেটা ছোট থেকেই পড়াশোনাই ভালো
৫ ম ৮ ম ও SSC তে ট্যালেন্ট ফুলে বৃক্তি পেয়েছে। আমার বাবার সাহায্যে এখনো পড়শুনা করছে।তার প্রয়োজন গুলো আমি মেটাতে পারিনা অনেক কষ্ট করে পড়া শুনা করছে।আমার বাবা অসুস্থ সংসারে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে । দুশ্চিন্তাই পরে গেছি৷ ছেলে বড় হয়ে গেছে কলেজে পড়ছে মেয়ে পড়াশোনা করছে।তাদেরকে নিয়ে এই জীবনে চলা কষ্ট সাধ্য হয়ে পরেছে। যে নারীকে স্বামী মূলায়ন করে না তখন সে নারী কে সবাই পাশ কাটিয়ে চলে যায়।আর ঐ নারী কে দিয়ে যায় একের পরএক অপমান আর অবোহেলা। আমার স্বামী যখন আমার হাতটা চেপে ধরে তার যে অত্যাচার শুরু করে তখন মনে হয় আজকেই বুঝি আমার শেষ দিন।আর বুঝি কালের সকালটা দেখতে পারবো না।
এমন সময় মেয়ে আমাকে বলে মা তূমি কিছু করো। আমি মেয়ে কে বলি এই বয়সে আমি কি করবো।মেয়ে আমাকে ইউটিওবে স্যারের ভিডিও দিয়ে বলে তুমি দেখ। সেখানে স্যার বলে বয়স কিছু না মনে ইচ্ছা শক্তি বড়।সময়দিন সময় নিন লেগে থাকুন সফলতা আসবে। এক এক করে স্যারের ভিডিও দেখতে থাকি আর ভাবি যদি নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনে যদি যুক্ত হতে পারতাম।
তারপর এই ফাউন্ডেশনে আসাঃ
আমি যখন ফেসবুকে সানজিদা সানজি আপুর একটা পোস্ট দেখি
তখন আমি তাকে নক করি৷ তারপর সানজিদা সানজি (উপজেলা এম্বাসাডর, নঁওগা) আপুর হাত ধরে আমার আশা৷ আপু প্রতি অনেক অনেক ভালবাসা জ্ঞাপন করছি৷
এই ফাউন্ডেশন থেকে আমার শিক্ষাঃ
এই ফাউন্ডেশন থেকে আমি আমার নতুন জীবন শুরু করেছি৷ স্যারের প্রতি দিনের সেশন অনুযায়ী আমার জীবনকে আমি সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷এই ফাউন্ডেশন যুক্ত না হলে বুঝতেই পারতাম না যে কিভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায়৷ স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটা ফাউন্ডেশন তৈরি করে দেওয়ার জন্য৷
🌹নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন থেকে যা শিখেছি
👉ভালো মানুষির চর্চা করা।
👉মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা।
👉জীবনে সংগ্রাম করে বেচে থাকা।
👉সময়কে মূল্যায়ন করা।
👉অসৎ কাজ বা ব্যবসা না করা।
👉ধর্য্যশীল হওয়া।
👉কথা দিয়ে কথা রাখা এবং কাওকে না ঠকানো।
👉মা বাবাকে সেবা যত্ন করা।
👉অসহায় মানুষের পাশে থাকা।
👉সফল না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকা।
👉নিজেকে ভালোবাসতে শিখা।
স্যার মেয়েদের জন্য এই ফাউন্ডেশনে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছেন। প্রতিটি মেয়েই নিরাপদে কাজ করতে পারে।আমাদের ভাইয়ারাও ভীষন সাপোর্টেট।সবার মাঝেই ভাই বোনের সম্পর্ক।সবাই সবাইকে সাহায্য করে এক সাথে এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।কাজী নজরুল ইসলামের সেই কবিতার দুই লাইন মনে পরে গেলো
🧑সাম্যের গান গাই
আমার চোখে পুরুষ রমনী কোন বেদাবেদ নাই
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর👧
🌿আমার এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন৷ সকলের জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং শুভকামনা রইল৷
প্রিয় ভাই ও বোনেরা এতক্ষন যারা কষ্ট করে আমার জীবনের গল্প পড়েছেন সবাইকে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আশাকরি সকলেই একটা লাইক কমেন্ট করে আমার পাশে থাকবেন৷ ধন্যবাদ সবাইকে৷
আমার লেখায় যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -৭৭১
তারিখ-২৪/০৩/২০২২
🌹আমার নামঃআমেনা বেগম
🌹ব্যাচঃ ১৭
🌹রেজিষ্ট্রেশনঃ ৮৮৭৫৩
🌹জেলাঃ নওগাঁ
🌹থানাঃ নওগাঁ
🌹বর্তমান অবস্থানঃ নওগাঁ
🌹পেশাঃ গৃহিণী