মাকে আমি কি করে বলি মা প্রবাস জীবন অনেক কষ্টের মা, কখনো কখনো খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করতে হয়
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
আমার জীবনের গল্প
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি মহান রব্বুল আলামীনের যিনি আমাদেরকে এই অসুস্থ পৃথিবীতে সুস্থ রেখেছেন এবং আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।
ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার মাতা-পিতার প্রতি যারা আমাকে এ পৃথিবীতে আলো দেখিয়েছেন এবং অক্রান্ত পরিশ্রম করে আজ এখনো আমার সুখের জন্য নিজের সুখ ত্যাগ করেছে। সম্মানিত সে দুজন পিতা-মাতার জন্য দোয়া করি যেন আল্লাহ তাদের সুস্থ রাখেন এবং নেক হায়াত দান করেন।
শত শত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি লাখো লাখো তরুন তরুনীর অনুপ্রেরণা বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের কান্ডারী পথ হারা ও আমি পারবো না এমন চিন্তা কে যিনি না করে দিয়ে আশার আলো জ্বালিয়ে স্বপ্নপূরণের দিকনির্দেশনা দিয়ে সারা বিশ্বে কিংবদন্তি সৃষ্টি করেছেন যিনি আমার প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।
আমার পরিচয়।
আমার মা-বাবা ভালোবেসে নাম রাখেছেন তৌহিদুল ইসলাম ফাহিম আমরা তিন ভাইবোন বড় বোনের নাম আইরিন আক্তার, তারপর আমি দ্বিতীয় আমার ছোট বোন রাবিয়া বসরী তন্নী - 11/11/1999 সালে ঐতিয্য বাহি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নবীনগর থানা রসুল্লাবাদ ইউনিয়ন রসুল্লাবাদ গ্রামের আমার জন্ম।
আমার শৈশব কাল,,,,
আমি গ্রামের ছেলে, জন্ম থেকেই আমার গ্রামে বেড়ে ওঠা। আমাদের পরিবারে প্রথমে আমার বড় বোন। তার পর আমি আমি আমার বাবার একমাএ ছেলে -- মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম
আমার বাবা একজন কৃষক, নিজস্ব জমি চাষাবাদ করে থাকেন বিভিন্ন ধরনের ফলন উৎপাদন করেন যেমন জমিতে ধান চাষ করেন বিভিন্ন আইটেমের সবজি চাষ করেন। সেই সবজী বিক্রি করে যেই টাকা উপার্জন করতেন সেই টাকা দিয়ে আল্লাহর রহমতে আমাদের সংসার চলে যেত। আমরা সবাই তাতেই হেপী ছিলাম।
আমার স্কুল জীবন ,,,,
আমার যখন 6 বছর বয়স তখন আমি ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হই -- রসুল্লাবাদ পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।।।
তারপর আমি ক্লাস থ্রি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর আমার মা আমাকে ভর্তি করিয়ে দে হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। মায়ে চেয়েছিলেন তার ছেলে একজন কোরআনে হাফেজ হবে, মায়ের মনের আশা পূরুন করার লক্ষ্যে আমি সেই মাদ্রাসায় নজরানা শেষ করে আমি উঠি হিফজ খানাই। ইচ্ছে ছিলো কোরআনে হাফেজ হবো মায়ের মনের আশা পূরুন করবো।
কিন্তু আমার নাচিবে ছিলো না কোরআনে হাফেজ হওয়া - আমি 6 পারা মুখস্ত করে তারপর আমি আর পড়তে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা ও বলে পারেন। সবার ধারা সব কিছু হয় না।
যে স্যারের একটা বই আছে বইয়ের নামটা ছিলো এমন যে -- বৃষ্টি সবার জন্যই পরে ---- তবে ভিজে কেউ কেউ।
কোরআনে হাফেজ হওয়ার জন্য অনেকেই হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়, যত যন ভর্তি হয় ততজন কিন্তু কোরআনে হাফেজ হতে পারে না। কিছু ছাএ মাঝ পথেই ঝড়ে যায় - আমার মতো।
যাই হোক - আমি লজ্জিত এই জন্য যে, মায়ের স্বপ্ন আমি পূরন করতে পারিনি। - তারপর আমাকে আমার মা ভর্তি করিয়ে দেন হাই স্কুলে ক্লাস সিক্সে, সেই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর লেখা পড়া চলছে কন্টিনিউ - ঐ স্কুলে আমি আর আমার ছোট বোন, একসাথে লেখাপড়া করি ক্লাস টেন পর্যন্ত।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ক্লাস টেন পর্যন্ত লেখা পড়া করার পর যখন সামনে এস এস সি পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন মা বাবা সিদ্ধান্ত নিলো আমাকে দেশের বাহিরে পাঠাবে। সেই কারনে আমার আর পরিক্ষা দেওয়া হয়নি।
এমনিতেই বাবা মাটির সাথে যুদ্ধ করতে করতে আর পেরে উঠছিলো না, আমরা বড় হয়েছি দুইটা বোন বড় হয়েছে সেই দিক বিবেচনা করে মা-বাবার এই সিদ্ধান্ত । মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি যুদ্ধে যাওয়ার।
বাবার হেটেলে বসে বসে খাওয়ার দুন মনে হয় শেষ হয়ে এলো। আমার চলে যেতে হবে জীবিকার তাগিদে দেশের বাহিরে ।
মা আমাকে বলে যে, বাবা তোমাকে তো পাসপোর্ট করতে হবে ইমার্জেন্সি। কি আর করার মায়ের কথা মতো - পাসপোর্ট করতে যা যাবতীয় লাগে সব সাথে নিয়ে চলে যাই পাসপোর্ট অফিসে। পসপোর্ট করার জন্য।
পাসপোর্ট অফিসের বাহিরে আমাদের দেশে অনেক দালাল থাকে তারা আমাকে দেখে টানা হেছরা শুরু করলো, বললো ভাই পাসপোর্ট করবেন ? এদিকে আসেন, এতো টাকা লাগবে ইমার্জেন্সি করবেন না নরমালি করবেন আরো কতো কি । যাই হোক সকল দাললদের থেকে পাশ কাটিয়ে আমার পরিচিত একজন মামার সহযোগিতায় পাসপোর্ট করলাম।
পাসপোর্ট আসার পরে,,,,ভিসা প্রসেসিং করে দেড় থেকে ২ মাসের ভিতরে আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় আরব রাষ্ট্র ওমানে ।
ওমান যাওয়ার পর আমাকে দেওয়া হলো একটি সাপ্লাই কোম্পানিতে। ঐ কোম্পানিতে আমার স্যালারি ছিল মাএ ওমানের 100 রিয়াল। যা বাংলাদেশের টাকায় হচ্ছে 20,000 হাজার টাকা। এই টাকার মধ্যে আমার খাওয়া-দাওয়া এভ্রিথিং ছিল।
প্রতিমাসে আমি দেশে পাঠাইতে পারতাম বাংলাদেশের টাকায় মাএ 12000 হাজার টাকা।
মনে মনে ভাবলাম আর নিজেকে প্রশ্ন করলাম এই ১২ হাজার টাকা তো আমি চেষ্টা করলে মা বাবা পরিবারের সাথে থেকে দেশে বসেই ইনকাম করতে পারতাম। তাহলে এতোটাকা খরচ করে আমি কেন বিদেশে আসলাম ? এই প্রশ্নের কোন এন্সার খুজে পেলাম না।
পরক্ষণেই ভাবলাম যেহেতু চলেই এসেছি সেটা নিয়ে ভেবে চিন্তে কোন লাভ নেই।
কাজ করতে থাকি যেই টাকা খরচ করে এসেছি সেই টাকাটা আগে তুলতে হবে । আমি ঐ কোম্পানিতে দুই বছর কাজ করার পর আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
তখন আমার কোম্পানির মোদির আমাকে জিজ্ঞেস করছে যে তুমি কি আর ভিসা লাগাইবা নাকি এক্সিটে দেশে চলে যাবা?
তার জবাবে আমি বলি- না আমি আর এইখানে কাজ করবো না আমাকে কাজ চেঞ্জ করে দিলে আমি ভিসা লাগাইবো আর না হয় দেশে চলে যাব।
আমার কথা শুনে সেই মোদির তখন বললো - ওকে ঠিক আছে তাহলে তুমি দেশে চলে যাও - তোমাকে টিকেট দিয়ে দেওয়া হবে।
আমি বললাম ওকে সমস্যা নাই, আমাকে টিকেট দিয়ে দাও আমি দেশে চলে যাবো।
2019 সালের নভেম্বরের 2 তারিখ আমার ফ্লাইট হয় বাংলাদেশ টাইম তিনটায় আমি বাংলাদেশে চলে আসলাম। সকাল এগারোটায় বিমান লেন্ড করলো, এয়ারপোর্ট থেকে আমার মা আমাকে রিসিভ করেবাড়িতে নিয়ে গেলো। দুই বছর পর এয়ারপোর্টে মাকে দেখে বুক ফেটে কান্না আসছে। মা আমাকে বুকে ঝরিয়ে নিলেন।
আমার মা আমাকে দেখে কান্না করে বলতেছে বাবা তোমার শরীলটা শুকিয়ে গেছে কেন ? মায়ের সেই প্রশ্নের কোন জবাব আমার কাছে ছিলো না। মাকে আমি কি করে বলি মা প্রবাস জীবন অনেক কষ্টের মা, কখনো কখনো খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করতে হয় মা। শুধু মাএ দেশে ২টা টাকা বেশি পাঠানোর জন্য। যাক এই কথা বললে মা আরো কষ্ট পাবে তাই কিছুই না বলে চুপ করে মাকে জড়িয়ে ধরে উঠে গেলাম গাড়িতে।
বাড়ির উদ্দেশ্যে রোয়ানা দিলাম। গাড়ির ভিতর মা অনেক প্রশ্ন করলো কি কাজ করছো? খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করেনাই । অনেক কষ্ট করছো মনে হয় বাবা ? আরো কত কি । গল্প করতে করতে একটা সময় চলে আসলাম আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায়।
বাড়িতে আসার পর সন্বার সাথে দেখা সাক্ষাৎ ঘুরাফেরা করতে করতেই একমাস চলে যায়। যত দিন যায় ততো মাথায় টেনশন কাজ করছে , এই ভাবে আর কতো দিন ? বেকার থাকতে ভালো কাগছিলো না। এখন আমি কি করব ?
ওমান থেকে ফিরা ্র সময় কিছু জমানে টাকা ছিলো সেই জমানো টাকা প্রায় শেষের পথে।
ভাবছি এখন দেশে থেকে বা কি করব?
তেমন হাতের কাজও জানিনা। বিজনেস ও বুঝি না কি করবো বুঝতেছিলাম না।
দিন দিন আমার টেনশনের মাএা বাড়তে থাকলো। হঠাৎ একদিন আমি আমার মাকে বললাম মা আমার তো কিছুই ভালো লাগছেনা এই ভাবে আর কত দিন চলবো?
মা বললো কি করবি এখন?
আমি বললাম মা আমি সৌদি আরব যাবো ? আমাকে সৌদি পাঠানের ব্যবস্থা করো।
মা আমার কথা শুনে বলতেছে যে এখন সৌদি আরব যেতে টাকা লাগবে প্রায় 4 লক্ষ টাকা এখন এতো টাকা আমি কোথায় পাবো ?
সৌদিতে যাবো টাকার খুবই প্রয়োজন কোথা পাবো এতো টাকা কেউ কাউকে বর্তমানে একটাকা দিয়ে বিশ্বাস করে না। ভাবতে থাকি কি ভাবে টাকার সমস্যা সমাধান করা যায় .।
পরে ভাবলাম ব্যাংক থেকে লোন করবো, সেখানেই অনেক ঝামেলা, আর ব্যাংক থেকে টাকা নিলে ও আমাকে সুদ দিতে হবে।
আর অন্য কোন পনথ্যা আছে কি না খুজতে লাগলাম পরে একজনকে পেয়ে গেলাম।
আমার পাশের বাড়ি একজন কাকার কাছে কিছু টাকা লাভে নিয়ে এসে আমি ট্রাভল্সে আমার পাসপোর্ট জমা দেই সৌদি আরব আসার জন্য।পাসপোর্ট জমা দেওয়ার দুই মাস পর আমার ভিসা আসে প্রসেসিং করে আমি 2020 সালের ফেব্রুয়ারি মাসের 26 তারিখে সৌদি আরব চলে আসতে সক্ষম হই ।
সৌদিআরব আসার পর আমাকে কাজ দেওয়া হয় কফিশপে কিছু দিন কাজ করার পর 2020 সালের মার্চ মাসের 20 তারিখে মালিক বলতেছে যে , সৌদি আরবে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে, এখন লকডাউন দিয়ে দিবে, লকডাউনের সময় দোকান বন্ধ থাকবে। এই কথা শুনার পর আমার উপর যখন আজাশটা ভেঙ্গে পরলো। চারি দিকে শুধু করোনার খবর প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হঠাৎ সৌদি আরবে লকডাউন দিয়ে দেওয়া হলো পুরা বিশ্বে করোনার আতংক বিরাজমান ।
তখন আমি চিন্তার মধ্যে পড়ে যাই, দেশ থেকে আসার সময় এত টাকা ঋণ করে আসলাম এখন লকডাউন, কাজ নেই কফিশপ বন্ধ, এখন কি করবো বাড়িতে ও চলতে পারতেছে না।
তারপর একদিন আমি মাকে সাহস করে বলি যে আপনারা কিছু টাকা ঋণ করেন চলেন, আমার কাজ শুরু হলে আমি টাকা পাঠাবো। আমার মা কিছু টাকা চলার জন্য মানুর কাছ থেকে ঋীন নিয়ে কোন রকম সংস্যার চলচছে।
দীর্ঘ চার মাস পর লকডাউন খুলে দেওয়া হলো আমি এখান থেকে চলে যাই আমাকে যেই দালাল সৌদিতে নিয়ে এসেছে সেখানে
সে আমাকে অন্য এক কফি শপে কাজ দেয় সেখানে থেকেই এই কফিশপেই আমার চলে যায় দেড় বছর এখন পর্যন্ত আমি এইখানে কাজ করতেছি আলহামদুলিল্লাহ,
আপনাদের দোয়ায় বর্তমানে আমি অনেক ভালো আছি।
আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
এবং আমার জীবনের গল্প টি লাইক এন্ড কমেন্ট করে আমার পাশে থাকবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৬৪
Date:- ১৭/০৩/২০২২ইং
তৌহিদুল ইসলাম
জেলা,, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
ব্যাচ 17
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার,,82324
বর্তমান: ওমলুজ সৌদি আরব