তবে অনেক কিছু চেনার জন্য,জানার জন্য,বোঝার জন্য হেরে যাওয়াটা খুব জরুরী ছিলো!
হেরে যাওয়ার গল্প।
জীবনের কঠিন বাঁধা গুলো পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা খুব কঠিন।
আর এই এগিয়ে,লক্ষে পৌঁছানোটা হয়ত সফলতা,তবে সফলতার সংজ্ঞা অনেক।একেক জনের কাছে সফলতার সংজ্ঞা একেক রকম।
তবে এখন মনে হয় সফলতা হলো নিজে কিছু একটা করে হাসিমুখে বেঁচে থাকাটাই একটা বিরাট সফলতা।
তবে সবাই সফলতার গল্প বলতে ভালোবাসে,কারন একটা সফল গল্পের পিছে অনেক গল্প থাকে,থাকে ত্যাগ- তীতিক্ষা,ধৈর্য -পরীক্ষা আর রোমাঞ্চ এক এডভেঞ্চারের কৌতুহল।
আমরা শ্রোতারাও সেই সফলতার গল্প শুনতে পছন্দ করি।কারন সফলতার গল্পগুলো একজন তরুন কে স্বপ্ন দেখায়, তার মতো হতে সংকল্প করে,তাকে অনুকরন- অনুসরণ করে।
কিন্তু হেরে যাওয়া কিংবা ব্যার্থতার গল্প গুলো কেউ শোনে না,যে হেরে যায়,সেও কখনো হেরে যাওয়ার গল্প শোনায় না,কারন হেরে যাওয়া মানুষ টা থেকে যায় অন্তচক্ষুর আড়ালে।কারন হেরে যাওয়া মানুষ গুলো সমাজের বুকে যেন অপরাধী,
পরিবারের কাছে অপদার্থ,প্রিয় জনের কাছে বোঝা,বন্ধু মহলের কাছে বিদ্রুপ,প্রতিযোগীর কাছে ঠাট্টার পাত্র।
কিন্তু সমাজ কখনো মানতে চাই না যে, বারবার হেরে যাওয়া মাঝির নৌকা উত্তাল ঢেউয়ে খুব নিরাপদ।
হেরে যাওয়া কিংবা ব্যার্থতার গল্প শোনানো খুব কঠিন এবং অনেক সাহসের প্রয়োজন।
আজ আমি আপনাদের ব্যার্থতার গল্প শোনাব।
জীবনের বাঁকে বাঁকে অনেক প্রতিকূলতা দেখেছি,অনেক মানুষ দেখেছি সুসময়ে।দূর সময়েও দেখছি নতুন করে,এটাতো জীবনের বাস্তবতা,মনিষীদের হাজার বছর আগের জ্ঞানগর্ভ।
ভালোবাসাটা,সে কয়দিনই ভালোবাসা থাকে,যে কয়দিন আমার কাছে ভালোবাসা থাকবে।নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সে খুব বিরল,
বাকী সবটুকু শুধু মরীচিকা।
বারবার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে আমার স্বত্বা সায় দেয়নি।কারন এখনো হয়ত অনেক কিছু দেখার বাকী আছে কিংবা এখনো সবটুকু শেষ হয়ে যায়নি।
আমি একজন সফল ব্যাবসায়ি ছিলাম ব্যাবসার হাতটা আমার বেশ পাকা কিন্তু উদ্যোক্তা হিসেবে আমি সফল কি-না,পরখ করে দেখার সুযোগটা আমার আর হয়তো হলো না।সুতরাং বলতে হবে আমি ব্যার্থ।
ব্যার্থ মানুষগুলো আবার উঠে দাঁড়ায় যদি উদ্যোম আর সাহস থাকে।কিন্তু আমি আর হয়ত পারব না। কত মানুষকে সাহস দিয়েছি,সোর্সিং দিয়েছি,কস্টিং শিখিয়েছি।মার্কেটিং শিখিয়েছি কিন্তু আজ আমি নিজেই বাকরুদ্ধ।
এই লেখাটা যখন লিখছি তখন সবকিছু যেন অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কারন হেরে যাওয়া মানুষগুলোর পৃথিবীটা খুব ছোট হয়ে যায়।
তিন বছরের উদ্যেক্তার প্রথম চারমাস খুব খারাপ সময় গেছে নতুনদের প্রথমটা খারাপ যাবে এটাই স্বাভাবিক।বাকি দেরটা বছর খুব ভালো সময় গেছে।নতুন নতুন মার্কেট,নতুন পার্টি ,পন্যের রিভিও,
পাঁচটা জেলায় পৌঁছে গিয়েছিলো আমার উদ্যোগ।প্রতিমাসে একটা ভালো অবস্থানের দিকেই এগিয়ে যাওয়ার পথে হাঁটছিলাম।১৪ +২১ জন কর্মী আর ১৬ জন ডিলার সহ মোট ৫১ জনের কর্মসংস্থানের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে ছিলাম একটি ভালো গল্প তৈরি করব বলে।
কিন্তু প্রকৃতির বৈরীতা,পৃথিবীর অনুশাসন,এলিটদের সিন্ডিকেটে আমার মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ধূলোর মতো হারিয়ে যায় কালের গর্ভে,কেউ খোঁজ রাখে না।। একাশি টাকার ভৈজ্যতেল আর চৌদ্দশত টাকার ডাউল দিয়ে শুরু করা কাঁচামাল আজ ১৮০ ও ২৫০০ টাকা।
কেউ কেউ হয়ত বলবে, তোমরাও পন্যের মূল্য বাড়াও, হ্যাঁ আমরাও বাড়িয়েছি,তবে সেটা ৪০℅ পযন্ত সম্ভব হয়েছে, সেটাও ধাপে ধাপে এই পযন্ত।
এই ৪০℅ য়েই ভোক্তার চাহিদা কমেছে ৭০%।তবুও ধরে ছিলাম হয়তো মূল্যস্ফিতি স্বাভাবিক হবে,কিন্তু না আর সম্ভব হলো না।
আরও বিস্তর লিখলে অনেক হয়ে যাবে,বড় লেখা কেউ পড়ে না,তার পর আবার ব্যার্থতার গল্প!
সময় পরিস্থিতি আর প্রতিকূলতা সাথে যুদ্ধ করে উদ্যোক্তার সময় টুকু পার করেছি,কখনো কোয়ালিটি নিয়ে কম্প্রোমাইজ করিনি,সব সময় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ঠিক রেখে পন্য উৎপাদন করেছি কারন এগুলোই শিখেছি প্রিয় পাঠশালার ফাউন্ডেশন থেকে।
ভোক্তার সন্তুষ্টি পেয়েছি বারবার।
রি- রিভিউ টা আমাকে প্রেরনা যুগিয়েছিলো অনেক।কিন্তু তবুও হার টাকে মেনে নিতে হলো।
কর্মীদের ছুটি দিয়ে দিয়েছি একবারে।সেদিন তাদের চোখের দিকে তাকাতে পারিনি শুরুর থেকে তারা আমার সাথে ছিলো তাদের নিজ হাতের গড়া স্বপ্ন গুলো ফেলে চলে যেতে হয়েছে,যাওয়ার সময় বারবার পিছন ফিরে দেখেছে তাদের ভালোবাসার প্রতিষ্ঠানকে। আমি নির্বাক চোখে শুধু চেয়ে দেখেছি,তাদের চাহনিগুলো।এগুলোই হয়ত আমার ক্ষনিকের জন্য সফলতা ছিলো।
কারন তাদের সুখে -অসুখে, হাসি-কান্নায়,আমি সাথে ছিলাম,মিশে ছিলাম।
তবে শেখার শেষ নেই। হয়তো আমার বেলায়ও তায়।তবে অনেক কিছু চেনার জন্য,জানার জন্য,বোঝার জন্য হেরে যাওয়াটা খুব জরুরী ছিলো!
কখনো উঠে দাঁড়াতে পারব কি-না জানিনা।কেউ হাতটা ধরে এগিয়ে এসে উঠাবে কি-না সেটাও জানিনা। কিংবা কেউ অন্য রাস্তা দেখিয়ে দেবে কিনা সেটাও জানানেই,কারন সেগুলো মিরাক্কেল!
আমি যা আজ অনুধাবন করেছি সেটা হলোঃ-
আপদকালীন কিছু সঞ্চয় থাকা খুব জরুরি।
সবটুকু সঞ্চয় কখনো বিনিয়োগ করতে নেই।
সঞ্চয়ের একটা অংশ হাতে সবসময় রাখা উচিত আপদকালীন সময়ের জন্য।
সব কিছু উদ্যোগ ছোট পরিসরে শুরু করা উচিত।
কখনো বড় করে শুরু করাটা উচিত না।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি সবসময় বিবেচনা ও পর্যালোচনা করে চলা জরুরি।
মাদার ব্যাবসা কখনো বন্ধ করা উচিত না।
সবসময় মনে রাখবেন সঞ্চয়ের মূল্য অনেক কিন্তু মূল ধনী যন্ত্রের কোন মূল্য নেই!
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন থেকে অনেক কিছু শিখেছি, এখনো শিখছি আগামীতেও অনেক কিছু শিখব।আমার সহযোদ্ধা উদ্যোক্তাদের বলব
আপনারা স্যারের সেশন গুলো পরিপূর্ণ মেনে চলবেন তবে আর কখনোই আপনি ব্যার্থ হবেন না।সফলতার জন্য এমন অনেক উদহারন আমার কাছে আছে, ব্যার্থতার উদহারনও আমি নিজেই।
এই বিষয়গুলো নিয়ে যদি কখনো সুযোগ হয় আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
হাজার প্রশ্নের উত্তরের মাঝে একটা মিথ্যে উত্তর সবসময় দিতে হয় প্রিয়জনদের আমি ভালো আছি,হাজার টেনশনের মাঝেও প্রিয়জনদের সামনে একটু হাসতে হয়,যেন কিছুই হয়নি।
সামনে হয়ত খুব কঠিন সময় পার করত হবে।কর্মপাগল মানুষ গুলো কর্মহীন হলে খুব অসহায় বোধ করে।শূন্য হাতের স্বপ্ন গুলো অসাধ্য হয়ে যায়।সবাই ভালো থাকবেন এবং আমার জন্য দোয়া রাখবেন।
আমার স্বপ্ন গুলো বিশাল এক আকাশের মতো ছিলো।যার ভোগ আমার জন্য না,সবটুকু ছিলো মানুষের জন্য।
কারন মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকাটা জীবনের স্বার্থক,জন্মের স্বার্থকতা।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৬৬
Date:- ১৮/০৩/২০২২ইং
মোঃ-ইব্রাহিম খলিল রুপক
ডিস্ট্রিক্ট এম্বাসাডর
নবম ব্যাচ
রেজিঃ-১০৫১৯
মিরপুর
কুষ্টিয়া।