আমার স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শেষ করে আমি একটা প্রতিষ্ঠান করবো। আমার গ্রামের বেকারদেরকে চাকুরী দিয়ে উপকার করবো।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
"আমার জীবনের গল্প"💘
প্রথমে শুরু করছি মহান সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহর নামে যার অপার কৃপায় এই পৃথিবীতে এসেছি। সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য। লাখো কোটি দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) এর প্রতি ।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার মা ও বাবার প্রতি, যারা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, লালন পালন করেছেন এবং শিক্ষিত করে পৃথিবীর বুকে বড় করে তুলেছেন।
সেই সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই শতাব্দীর অন্যতম সেরা মানুষ, লাখো তরুণ তরুণীর আইডল প্রিয় মেন্টর, প্রিয় শিক্ষক জনাব ঈকবাল বাহার যাহিদ স্যারের প্রতি, যার অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে "নিজের বলার মতো একটা গল্প" ফাউন্ডেশনের মতো একটা সুবিশাল প্লাটফর্ম ।
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
আমার জীবনের তেমন কোন গল্প নায় তার পরও যেটুকু পারি আাপনাদের মাঝে শেয়ার করছি আশা রাখি সাথে থাকবেন।
ছেলেবেলাঃ
আমার জন্ম খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার ধামরাইল গ্রামে। আমার ছেলে বেলা কেটেছে গ্রামের অন্যছেলেদেরমত ঘুড়ী উড়িয়ে
পুকুরে সাতরিয়ে,ফুটবল খেলে। আমরা তিন বোন ও তিন ভাই আমি সবার ছোট ছিলাম। আমার বাবার মাছের ঘের ও সুন্দর বনের কাঠের ব্যাবসা ছিল। জায়গা জমি যা ছিল মাশাল্লাহ। আমাদের ছিল সুখী পরিবার ।আমার বাবার হাতধরেই আমার জীবনের সর্বপ্রথম স্কুলে যায়।
শিক্ষা জীবন ঃ
পাইকগাছা থানার ৩৯নং ধামরাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আমার প্রাইমারী জীবনের হাতেখড়ী।
ধামরাইল প্রাইমারী স্কুল থেকে ক্লাস ফাইভ শেষ করি। হাই স্কুল বাড়ী থেকে অনেক দুরে থাকাতে বাড়ীর পাসে আলীয়া মাদ্রাসায় আমার বাবা আমাকে ভর্তি করে দয়।
মাদ্রাসার নাম ছিল ডি এফ নাকসা কামিল (এম এ)দ্রাসায় । সেখানেই এইচ এস সি পাস করি।তার পর অনার্স ভর্তি হই খুলনা বি এল কলেজে । আমার মেঝ ভাই আর আমি একই সাথে থাকতাম সে লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকুরী করতো আর আমিতার কাছে থেকে পড়াশুনা করতাম। আমার ভাই ছিল খুব ভাল মানুষ এবং সবসমায় আমাকে বাস্তবতায় শিক্ষা দিত। সে আমাকে সব সময় আদর ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখতো। শত অপরাধের মধ্যে ও সে হাসতো। কখন ও তাকে রাগ করতে দেখিনি। এক সমায়৷ আমার বাবার মৎস খামারে অনেক টাকা লচ হয়েছিল। যার কারনে আামার পরিবার তখন একটা বিপদের মধ্যে ছিলো আমার পড়াশোনা করার মতো অর্থ বহন করতে পারছিলো না, তখন আমার মেঝো ভাই আমার লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাদের পরিবারের দায়িত্ব নেন, আমার ভাই ঐ সময় এ দায়িত্ব না নিলে আমি কোনদিনই লেখাপড়া শেষ করতে পারতাম না।তাইতো ভাই আমার জীবনে বাবার দায়িত্ব পালন করছেন, আমি তার কাছে চির ঋনী, আনার্স ফাইনাল ইয়ারে যখন আমার পরীক্ষা তখন ভাই এর সেটেলমেন্ট এ চকুরী হয় সে ঢাকাতে চলে যাই। আমি একা হয়ে গেলাম। আনার্স পরীক্ষা দিয়েই যশোর চলে আসি আপা দুলাভাই এর কাছে । এ সুজকে কম্পিউটার কোর্সে ভর্তী হই। অনার্স এর রেজাল্ট পেয়ে এম এ ভর্তী হই যশোর এম এম কলেজে। এম এম কলেজ থেকে এম এ পাস করি ২০০৬ সালে।
চাকুরী জীবনঃ
আমার জীবনের প্রথম চাকুরী করি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে সল্প বেতনে আমি নিজে শিখতাম ও শিখাতাম টাকাটা আমার কাছে ফ্যাক্ট ছিল না আমার ইচ্ছা ছিল ভাল করে শিখার। কয়েক মাসের ভিতরে আর একটা চাকুরিতে জয়েন্ট করি সেটা ছিল রিসিপশনে ডেক্স এক্সিকিউটিভ পদে। সেখানে ৬টা মেয়ের সাথে আমি একা ছেলে ছিলাম। আমরা কয়জনে খুব মজা করতাম আমাদের ডিউটি টাইম ছিল সকাল ৮টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত। আমি সবার সিনিয়র ছিলাম। ভাই বোনের মত সম্পর্ক ছিল আমাদের কয়জনের মধ্যে। এ ভাবেই ৫টা বছর চাকরীর জীবন পারহয়ে যাই।তারপর মনে হল আমার একটু ভালবেতনে ভাল চাকুরী করার দরকার। যোগাযোগে লুব্রিকেন্ট কোম্পানী। জয়েন্ট করলাম একাউন্টস অফিসার পদে তখন ছিল ২০১৪ সাল। চাকুরিটা খুব ভালভাবেই চলছিল চার বছর এর মাথায় আমার কোম্পানীটা বন্ধ হয়ে যাই। চারিদিকে আধার নেমে আসলো সে সময় আমার পরিবারের সদস্য ৪ জন কি করে সংসার চালাবো তার পর ঘরভাড়া দিয়ে শহরে থাকা খাওয়া অনেক খরজ।সব সময় হতাসায় ভুগতাম। আমি অন্য একটা কোম্পানিতে জয়েন্ট করলাম শোরুম ম্যানেজার পদে। মুটামুটি ভালই চলছিল সেটাও বন্ধ হয়ে যাই। তার পর একটা লুব্রিকেন্ট কোম্পানি তে মার্কেটিং পদে জয়েন্ট করি এক বছর পরে কোম্পানি আমাকে একাউন্টস অফিসার পদে দায়িত্ব দিয়েছেন আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি। পাশাপাসি একটা ডিলার শিপের বিজিনেস করছি। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছি আজাদ এন্টারপ্রাইজ ভবিষ্যতে ইম্পোর্ট করবো বলে আসা আছে।
বিবাহিত জীবনঃ
আমি একটা প্রতিষ্ঠানে রিসিপ্শনিস্ট পদে চকুরী করতাম সেখানেই। সবাই মেয়ে আমি একায় ছেলে। এক বছরের মাথায় ঐ প্রতিস্ঠানে আর ও কিছু মেয়ে নিয়োগ করে। কিছু দিন যেতে না যেতেই এক ভয়ঙ্কর উদ্যোগতার প্রেমে পড়ে যায়। সব মেয়েদের ভিতর সে ছিল একটু আলাদা। তার কাজ গুলা ছিলো গোছানো, তার কাজের প্রতি একটিভিটি ছিল, সে এক সাথে অনেক গুলো কাজ কারতে পারতো সে যেমন দক্ষতার সাথে চাকুরী করেছে তেমনি আমার পাসে বসে রক্ষনশীলতার সাথে দামিয়ে প্রেম করেছে। সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল রিসিপশনে আমরা দুই জনে ১ বছর ধরে প্রেম করছি তার পর বিয়ে ও করছিলাম কিন্তু কেউ কোনদিন বুছতে পারিনি আমরা ২ জনে স্বামী স্ত্রী।
সকাল ৮ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ডিউটি করেছি কোনদিন লেট খায় নি ও ক্লান্তবোধ করেনি। একসময় চাকরী জীবন ছেড়ে সংসার জীবনে চলে যায় আমার বউ টা । আমার পাসের চেয়ার টা খালি হয়ে গেল।সত্যি খুব মিস করছিলাম। শুরুহল টুনাটুনির সংসার জীবনের পথচলা। প্রথমে মা বাবা ভাই বোন সবায় অখুশী ছিল। পরবর্তীতে আমার বউ নিজের যোগ্যতায় আমাদের পরিবারের সবার প্রিয় বউ হিসেবে প্রাধান্য পায়। এখন সে সবার নয়নের মনি। আর একটা কথা না বল্লে নয়। সেটা হল আমি যখন তার জীবনের কষ্টের গল্প গুলো জানলাম তখন আমি সত্যি তার কষ্টের বেড়াজালে নুয়ে পড়া সপ্ন টাকে ভালবাসার রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দিয়ে সুখি করতে চেয়ে ছিলাম। আমাদের বিয়ের কথা শুনে অফিসের অনেকেই বলেছিল আমাদের বিয়ে না কি এক থেকে দুইমাস টিকবে। সৃস্টিকর্তার ইচ্ছাই ১৪ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে আজও ভালবাসা চির বহমান।।দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
উদ্যোক্তা জীবন:
আমি ছোট বেলা থেকে মনে প্রানে যে কথাটা ভাবি সেটা হচ্ছে আমি একটা কোম্পানীর মালিক হবো। সে টা আমার নামে হবে। সে খানে অনেকে চাকরী করবে। আমি চাকরীর পাশাপাশি আমার নিজের উদ্যোগে একটা কম্পিউটার কিনলাম তখন ছিল ২০০৮ সাল। যশোর জেল খানার সামনে আমি প্রথম দোকান নিয়েছিলাম সেখানে হাফবেলা বসতাম কম্পিউটারে গান ডাউনলোড সহ কম্পোস Internet এর কাজ করতাম ও চাকুরী করতাম হফবেলা। তার পর আমার মনে হল আর দুই টা কম্পিউটার হলে আমি একটা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার করতে পারতাম। কিছু দিন পর আর ২টা কম্পিউটার কিনে ফেল্লাম লিফলেট তৈরী করলাম নাম দিলাম আজাদ কম্পিউটার কর্নার। পরিচিতদের ভিতর ৩জন ভর্তী হয়ে ও গিয়েছে। ৬ মাস চলার পর কোন এক কারনে সেটা বন্ধ হয়ে যাই। মন টা খুব খারাপ হয়ে গেল রাগ করে কম্পিউটার সবগুলা বিক্রি করে দিলাম।তার পর ভাবতে থাকি চাকরির পাশাপাশি কি করা যায় কি করবো, ইজিবাইক গাড়ীটা নতুন শহরে খুব চাহিদা ছিল কিনে ফেল্লাম ১লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কিছুদিন পরে আর একটা পুরাতন গাড়ী কিনে ভাড়া৮ দিয়ে দিলাম।আল্লাহর রহমতে ভালই চলছিল। প্রতিদিনের ভাড়ার টাকা ড্রাইভার আমার বাসায় দিয়ে যেত। এই ভাবে ৫ থেকে ৬ মাস ভাল ভাবেই চলছিল। কিছুদিন পর ড্রাইভার গাড়ীটা বিক্রি করে দেওয়ার জন্য গোপালগন্জ নিয়ে যাই আমার অজান্তে আল্লার সহায় ছিল বলে গাড়ীটা ফিরে পেয়েছিলাম। তার পর নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছিল। কারন যতবার একটা বিজিনেস দার করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছি ততবার পড়ে যাচ্ছি।
আমার স্বপ্নঃ আমার স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শেষ করে আমি একটা প্রতিষ্ঠান করবো। আমার গ্রামের বেকারদেরকে চাকুরী দিয়ে উপকার করবো। আমার এলাকা কে ডেভেলব করাই ছিল মুল লক্ষ্য।
এ গ্রুপের সাথে জয়েন করি ১৬ তম ব্যাচে, আমার স্ত্রীর হাত ধরেই আমার নিজেকে বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন গ্রুপে আসা, সে গ্রুপে সেশন ক্লাস করতো, তার পাশে বসে তখন আমার মধ্যে ভালো লাগতে শুরু করলো। তারপর জয়েন করি। আসার পর থেকে আমার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো যেনো আমি ফিরে পাচ্ছি স্যারের যে কথা টা আমাকে অনুপ্রানিত করতো "সপ্ন দেখুন সাহস করুন শুরু করুন ধৈর্য ধরুন লেগে থাকুন সফলতা একদিন আসবেই ইনশাল্লাহ। যখন থেকে স্যারের একথাটা মনে প্রানে ধারন করে আমার ব্যাবসার বা বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে পথ চলতে শুরু করলাম তখন থেকে আমার আর পিছে ফিরতে হয়নি। আমি আপনাদের দোয়ায় আজাদ এন্টারপ্রাইজ করেছি। ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যাবসা করছি।একজন অফিসার ও রেখেছি মার্কটিং এ। একজন রিক্সাওয়ালা ও আছে মাল ডেলিভারির জন্য।আমার প্রোডাক্ট যশোর সহ কু্ষ্টিয়া মাগুরা সাতক্ষীরা জেলাতে যাচ্ছে আপাতত্ব। আগে যে ভয়টা পেতাম পারবো, কিনা এখন আর সেটা পায় না। আমার সকল ভাই বোনেরা আমার এক একটা উদাহরণ তারা পারলে আমিও পারবো ইনশাআল্লাহ।
অনেকক্ষন আমার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।
পরিশেষে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনারা যারা এতক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে আমার লেখাটা পড়েছেন, প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমি স্বপ্ন দেখি আমার পাশের মানুষ গুলোকে নিয়ে, যারা আমার পাশে সবসময় ছিল।
আমার জীবন চলার পথে আপনাদের দোয়া, ভালোবাসা এবং সহযোগিতা আমার ভীষণ প্রয়োজন, আশা করছি ভালোবেসে পাশে থাকবেন সবসময়, সবশেষে আপনাদের সবার সুখি ও সুন্দর জীবন কামনা করি, সুন্দর হোক আপনাদের সবার আগামী জীবনের প্রতিটি দিনের প্রতিটি ক্ষণ, শুভ কামনায় আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি, ভালোবাসা অবিরাম। সবায় আমার জন্য দোয়া করবেন। খোদা হাফেজ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৬৬
Date:- ১৮/০৩/২০২২ইং
Abul Kalam Azad
ব্যাচঃ ১৬তম
রেজিঃ নং ৮১৯৬১
জেলাঃ খুলনা
বর্তমান অবস্থানঃ যশোর সদর