যে জিতবে সে বার বার পড়বে এবং ঠিক আবার ঘুরে দাড়িয়ে সফলতা ছিনেয়ে আনবে।
#🕋বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম#🕋
💢আমার জীবনের গল্প💢
*আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আমি সর্বপ্রথম শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে,যিনি এই বিশ্ব জগতের মালিক,যিনি মহান করুনাময় ও দয়াময়, রিযিকদাতা,জীবন মরনের মালিক, যিনি খালিক।যিনি আমাকে আমার পরিবারের সকলকে ভালো রেখেছেন,সুস্থ রেখেছেন।আলহামদুলিল্লাহ।
🔶দরুদ সালাম প্রেরণ করছি মানবতার দূত। নূরের আলোয় আলোকিত করেছে দিশেহারা পথকে,সেই হযরত মোহাম্মদ (স:) এর প্রতি।
♥আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমার জন্মদাতা পিতা মাতার প্রতি।যারা আদর যত্ন,ভালোবাসা দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাকে লালন পালন করেছেন।আমি আমার বাবা মাকে ভালোবাসি, আমি তাদের জন্য দোয়া করি।শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে, আমার বাবা মা এখনো জীবিত আছেন।আল্লাহ আমার মা বাবার হায়াত বাড়িয়ে দিক।সবাই আমার মা বাবার জন্য দোয়া করবেন।
♥আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের প্রিয় শিক্ষক,মেন্টর লাখো তরুন তরুনীর স্বপ্নদ্রষ্টা। জাগ্রত দিশেহারা মানুষের পদ প্রদর্শক হতাশাগ্রস্থ মানুষের আশার আলো জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।এই প্লাটফর্ম শেখায় সততা,নমনীয়তা, লেগে থাকা এবং ধৈর্যশীল হওয়া।আরো শেখায় উদ্যোক্তা,বিনয়ী,মানবিক ও ভালো মানুষ হতে।
♦আমার পরিচয় :💥
আমি মোহাং এনামুল হক রাশেল।আমার জন্ম ১২ই এপ্রিল ১৯৯৫সালে।গ্রাম পূর্ব বরৈয়া,থানা- আনোয়ারা,জেলা-চট্টগ্রাম। আমার পরিবারের সাথে গ্রামেই জন্মের পর হতে বসবাস এবং গ্রামের আলো বাতাসেই আমার বেড়ে ওঠা।আমি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির সন্তান।আমরা দুই ভাই,এক বোন।আমি সবার বড়।ভাই আমার ছোট এবং বোন সবার ছোট।আমার আব্বা ২০১০সাল হতে এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের ওমান এর আল সুইকে কর্মরত আছেন।মা একজন গৃহিণী।আমার আম্মা অনেক ধার্মিক।আমি আমার বাবা মাকে নিয়ে অনেক গর্বিত।
🔶♪♪♪শৈশব ও কৈশোর জীবন:🔶
গ্রামেই যেহেতু আমার বসবাস তাই গ্রামের পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা।আমার যতটুকু মনে আছে।সকালে ঘুম থেকে ওঠে এলাকার মক্তবে যেতে হতো এবং হুজুরের বেতের বারি খেতে হতো, যেতে দেরি হলে কিংবা পড়া দিতে না পারলে।এভাবেই শৈশব জীবন থেকেই বিদ্যা শিক্ষার উদ্দেশ্যে ঘর হতে বাহিরে গমন।শুরু হতে আম্মার অনেক বেশি চেষ্টা ছিল আমাকে পড়ানোর প্রতি।গ্রামের অন্যান্য সমবয়সী ছেলেদের চেয়ে আচার ব্যবহার আমার যথেষ্ট ভাল ছিল বলে সবাই অনেক ভালোবাসত।আমাকে ২০০০সালে তিন গ্রাম দূরে বটতলী গ্রামে সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করানো হয়।২০০০সালে আমাদের গ্রামে কিন্ডারগার্টেনে পড়া মানে অনেক বিলাসিতা। আব্বা তখন ফার্ণিসারের কাজ করতেন এবং গ্রামের বাজারে আব্বার ফার্ণিসারের দোকান ছিল।আব্বার কাজের যথেষ্ট সুনাম ছিল।
যাই হোক,আমি ছোট বেলা থেকেই অনেক লাজুক ছিলাম।মানুষের সাথে তেমন মিশতাম না।বন্ধু বান্ধবের সংখ্যাও কম ছিল।এভাবেই আমার বেড়ে ওঠা।আমাদের গ্রামে আমাদের কয়েকজনের একটা গ্রুপ ছিল।ডাংগুলি,ক্রিকেট,ফুটবল,মার্বেল,তাস,লাটিম খেলা এসবের মধ্যে বিভুর থাকতাম অধিকাংশ সময়।টিভি দেখা এটাতো অন্য রকম একটা নেশা ছিল।
♦প্রাইমারি শিক্ষা:🔶
২০০০সালে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়ার পর ২০০৩সালে এসে গ্রামের প্রাইমারি তে ভর্তি হয় ক্লাস থ্রি তে।২০০৫সালে ফাইভ পাশ করি।কিন্তু লেখাপড়ায় বেশি ভাল ছিলাম না।শুধু খেলা নিয়ে চিন্তা ভাবনা।
হাইস্কুল জীবন :
২০০৬সালে ষষ্ট শ্রেণিতে ভর্তি হয়।কিন্তু পড়ালেখার প্রতি অনীহা দিন দিন বেড়েই চলছিল।২০০৯সালে নবম শ্রেণী তে ওঠে কমার্স নিই।এর পর থেকে আরো অনীহা চলে আসল।এসএসসির টেস্ট পরীক্ষায় প্রস্তুতি ছাড়া অংশ গ্রহন এবং রেজাল্ট খারাপ হয়।ঐ বছর আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।এরপর ২০১১সালে জুনিয়র ব্যাচের সাথে পরীক্ষা দিলাম।সেইবারেও টেস্ট পরীক্ষাই ফেইল।পরীক্ষা দিতে না পেরে রাগে ক্রুধে শহরে চলে গেলাম মামার বাসায়।সেখান থেকে একটি চাকরি করলাম ৩-৪ মাস।আবার পূণরায় পড়ালেখার উদ্দেশ্যে বাড়িতে চলে আসা।নিজের উদ্যোগে একটি লজিং ঠিক করে সেই লজিং বাড়ি থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম এবং ২০১৩সালে ২বছরের জুনিয়র দের সাথে ৩.৪৪ পয়েন্ট নিয়ে এসএসসি পাশ করলাম।
কলেজ জীবন:
২০১৩ সালে স্থানীয় একটি কলেজে ভর্তি হয়ে পড়তে শুরু করলাম।কিন্তু পড়ালেখায় অমনুযোগী।কলেজের টেস্ট পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হল।অনেক কষ্টে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলাম এবং ২.৫৮ পয়েন্ট নিয়ে এইচএসসি পাশ করলাম।
এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন একটি বেসরকারী কলেজে অনার্সে সুযোগ পেলাম।প্রথম বর্ষে অনেক আগ্রহ নিয়ে ক্লাস করা শুরু করলেও ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারিনি পরবর্তীতে প্রথম বর্ষের ফাইনালে ১বিষয় ছাড়া বাকি সব বিষয় ফেইল আসল।এর পর পড়ালেখা আর হয়নি।
♪কর্মজীবন:🔶
২০১৬ সালে গ্রামের একটি কিন্ডারগার্টেনে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলাম।সেই প্রতিষ্টানে ২০২০সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করি।এরপর অন্য একটা প্রতিষ্টানে পার্টনার হিসেবে কিন্ডারগার্টেন করি।কয়েকমাস করার পর মার্চ মাসে করুনার মহামারীর কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বেকার হয়ে যায়।
এরপর ২০২০সালে নিজের সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাজারে একটি ফার্মেসী চালু করি।পাশাপাশি একটি কুচিং সেন্টার ও খুলি।কিন্তু নতুন হওয়াতে এবং পরিকল্পনার অভাবে দোকানে ইনকাম বাড়াতে সক্ষম হয়নি।দিন দিন কাষ্টমার কমতে শুরু করে।এক পর্যায়ে আর্থিক সংকটে পড়ে যায় এবং মূলধনের অভাবে মালামাল আনতে ব্যর্থ হয়।এভাবেই দিন যাচ্ছে আর দিন দিন ব্যবসায় লস হতে থাকে। আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি।
ঠিক সেই খারাপ পরিস্থিতিতে দুইজন পরিচিত স্যার একটি কিন্ডারগার্টেন চালু করার জন্য বলল।আমি প্রথমে না করার পরও ওনাদের রিকুয়েস্টে ৩জন পার্টনারে কিন্ডারগার্টেন খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম।অনেক প্রচারনা চালানোর পরেও চলতি মাসের মার্চ মাস পর্যন্ত আশানুরূপ ছাত্র পেলাম না।সব জায়গায় ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা। এই দিকে বাবা মা খুবই হতাশ।শুধু মাত্র আমি পরিবারের একমাত্র সমস্যাই পরিণত হলাম।
♠বর্তমান অবস্থা:🔶 ফার্মেসী +কিন্ডারগার্টেন নিয়ে আছি।পাশাপাশি টিউশনি করি।আর নতুন করে দীর্ঘ ৫বছর পর ২০২০-২১ব্যাচে নিজের সিদ্ধান্তে সরকারী কমার্স কলেজে (চট্টগ্রাম) ডিগ্রী প্রাইভেট ব্যাচে ভর্তি হই।
নিজেকে সফল করে বাবা মার মনোবাসনা পূর্ণ করার ইচ্ছা খুব বেশি।বাবা মা আমাকে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত।সম্পূর্ণ পরিবার আমার বাবা আর ছোট ভাইয়ের ইনকামের ওপর নির্ভরশীল। মাঝে মধ্যে আত্নহননের মত সিদ্ধান্ত মাথায় ঘোরপাক খাই।বাবা মা,বন্ধু বান্ধব সবার কাছে আমি অবহেলিত।এমন খারাপ পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।সবার কটু কথা মুখ বুঝে সহ্য করতে হচ্ছে।এই পরিস্থিতিতে অনেক মুটিভেশনাল ভিডিও দেখি।নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে স্যারের সেশন পড়ে নিজেকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করি।কিভাবে লেগে থাকতে হয়,সাহস করতে হয়,ধৈর্য ধরতে হয় এবং ওঠে দাড়াতে হয় তার শিক্ষা পায় স্যারের সেশন থেকে।নিজ চেষ্টায় ১১তম ব্যাচে রেজিস্ট্রেসন করে এখনো পর্যন্ত ভালবেসে যুক্ত আছি প্রিয় প্লার্টফর্মের সাথে।
♣নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার সুবাদে রমজান ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়।ওনার অনুপ্রেরনায় আর স্যারের কথায় নতুন করে ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখি।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন সফল হয়ে ফ্যামিলির দায়িত্ব নিতে পারি।ভুল হলে আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ফ্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে শিখলাম
যে জিতবে সে বার বার পড়বে এবং ঠিক আবার ঘুরে দাড়িয়ে সফলতা ছিনেয়ে আনবে।
আরো যা যা শিখলাম-
[ ] একজন ভাল মানুষ হওয়া
[ ] কাজের প্রতি প্রেমে পড়া
[ ] ধৈর্যশীল হওয়া
[ ] অল্পতে ভেঙে না পড়া
[ ] মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া
[ ] নেটওয়ার্ক তৈরী করা
[ ] কমিটমেন্ট রক্ষা করা
এই ফ্লাটফর্মের মাধ্যমে আরও অনেক কিছু শিখতে পেরেছি যা সম্ভব হয়েছে স্যারের জন্য।স্যারের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা রইল।
এই ফ্লাটফর্মে এসে নিজের গল্প খুজে পেলাম। লিখতে পারলাম নিজের বলার মত একটা গল্প।এই ফ্লাটফর্মের মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতিটা কথা আমি বুকে ধারন করার চেষ্টা করছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
♥♥♥ধৈর্য সহকারে আমার এই লেখাটি যারা যারা পড়েছেন তাদের জন্য আমার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে রইল অনেক অনেক ভালোবাসা এবং সকল ভাই বোনদের সুস্থতা কামনা করছি।খুশিতে থাকেন,পজিটিভ থাকেন এবং সুখে থাকেন,ধন্যবাদ।
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৬৪
Date:- ২৭/০৩/২০২২ইং
মোহাং এনামুল হক রাশেল
ব্যাচ নং- ১১তম
রেজি নং- ২৩৪১৩
ব্লাড গ্রুপ-বি পজিটিভ
নিজ জেলা-চট্টগ্রাম
বর্তমান অবস্থান-আনোয়ারা,চট্টগ্রাম।