দেখো আগামী রমজানেই আমার কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
আমার জীবনের গল্প
আস্সালামু আলাইকুম। আমারও একটি গল্প আছে।
প্রিয় ‘ইকবাল বাহার স্যার’ এর জন্য উৎসর্গ করলাম।
আমার ছেলেবেলা ঃ
আমি যখন ছোট মাত্র ক্লাস ৭ম শ্রেণিতে পড়ি, আমি দেখেছি আমার বাবা অনেক কষ্ট করে গ্রামের কিছু জমি বিক্রি করে ঢাকায় একটি বাড়ী করে। ছোট একটি চাকুরীর ইনকামে চলছিল আমাদের সংসার। টিনশেটের একটি বাড়ী করে যখন বাঁচার স্বপ্ন দেখছিল আমার বাবা, তার কিছু দিন পরই বাবার চাকরীকৃত অফিস বন্ধ হয়ে যায়। 🌹কষ্টের জীবন : বাবার চাকুরী চলে যাওয়ার পর শুরু হয় ঋণের বোঝার জ্বালা। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা ঋণ করার পর আমার ফুপাতো ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে বাবা। আর নতুন একটি চাকুরী অল্প বেতনে শুরু করেন। খুব কষ্টে চলছিল আমাদের সংসার। সেই সাথে মাঝে মধ্যেই ফুপাতো ভাই টাকার জন্য শুধুই চাপ দিচ্ছিল। অথচ সে আমার বাবার মাধ্যমেই একসময় বিদেশ গিয়ে আজ টাকার মালিক। তার পরেও টাকার চাপ দিতেই থাকলো। একসময় ওনারা বাবাকে বুঝিয়ে আমাদের বাড়ীতে এসে উঠলো। আর সেই ওঠাই আমাদের জন্য কাল হয়ে দাড়ালো। প্রতিদিন সামনা সামনি টাকার চাপ খুব কষ্ট হচ্ছিল। এখন বলতে শুরু করলো বাড়ীটা আমাকে দিয়ে দাও। আমার মা বলেন টাকা পান টাকা দিয়ে দিবো। আর আমার ছেলে বড় হলেই টাকা পরিশোধ করে দিবো, বাড়ী দিব কেন। আমরা কিছুই বলতে পারছিলাম না, কারণ আমরা তো কিছু করি না। মা শুধু বলতেন আমার সন্তানরা বড় হলে তোমার টাকা দিয়ে দিবে।
বাবা মায়ের মৃত্যু :
বাবা স্ট্রোক করলেন। হাসপাতালে আমাদের নিয়ে মা যখন বিভিন্ন যায়গায় টাকার জন্য দৌড়াচ্ছিলেন সে সময় আমার ফুপাতো ভাই, এলাকার কিছু লোক সাথে নিয়ে বাবার কাছ থেকে টাকা দিবে বলে স্বাক্ষর নেয়। এর পরই সবাইকে বলতে থাকে আমার বাবা নাকি বাড়ী দিয়ে দিয়েছেন। আমাদেরও টাকার প্রয়োজন ছিল তখন তাই আর কিছু করতে পারি নাই আমরা। মা আগের পাওনা টাকা আর তখনকার টাকা সহ বাড়ী অর্ধেক দিতে রাজি হয়। বাড়ীর অর্ধেক ছিল এক তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং তারা ঐ বিল্ডিং এর অংশ নিয়ে নেয়। আর আমরা টিনের তৈরী অর্ধেক দুটো রুমে থাকি। আমাদের জায়গা ছিল (সারেতিন) কাঠা এরপর বাবা একটু সুস্থ হওয়ার পর আবার বলতে লাগলেন বাকী জায়গাটাও দিয়ে দেওয়ার জন্যে। বাবা এবার রাজি হচ্ছিলেন না। এমন সময় আমার মেঝ কাকাকে দিয়ে বাবাকে অনেক মেন্টালি প্রেসার দিতে থাকলো আমার ফুপাতো ভাই একপ্রকার জোর করেই পুরো বাড়িটি নিয়ে নিলো। আমরা অসহায় হয়ে পড়লাম ভাড়া থাকতে হলো অন্য এলাকায়। বিভিন্ন টেনশনে মা মারা গেলেন। এর ঠিক অল্প কিছুদিন পর আবার বাবাও মারা যান।
আমার কষ্টের জীবন :
আমি কোন রকম এসএসসি পাশ করে কাজ শুরু করলাম। নিজে কিছু করি আর আমার ভাই ও পড়ালেখা চালিয়ে যায়। আমার স্বপ্ন সেখানেই থেমে যায়, কিন্তু ছোট ভাই তার স্বপ্ন ঠিকই চালিয়ে যায়। আমি যা রোজগার করতাম তা মায়ের হাতে দিতাম। মা সবসময় বলেছে তুই কোন চিন্তা করিস না তোর ছোট ভাই বড় হলে ভালো কিছু করলে তোর কষ্ট থাকবে না। তাই আমি কখনও টাকা জমাইনি। ছোট ভাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হলো। সংসারের টানা টানিতে মায়ের কথায় আমাকে বিয়েও করতে হয়েছে খুব তাড়াতাড়ি, কারণ মা বিভিন্ন টেনশনে থাকেন তাই সংসার দেখার একজন মেয়ে লাগে। আমার শ্বশুর বাড়ী থেকে আমাদের সমস্যা দেখে তারা কিছু টাকা দেয় আমাকে সেই টাকাও ঋণ শোধ করতে মাকে দিয়ে দেই আমি। এভাবে আমার ছোট ভাই এখন বর্তমানে ৭0 থেকে ৮০ হাজার টাকা মাসে ইনকাম করতেছে আর আমি শুণ্য হাতে বসে আছি চোখের পানি নিয়ে।
লকডাউনে চাকুরী হারালাম :
যেই চাকুরীটা ছিল সেই চাকুরীটা লকডাউনের সময় চলে যায়। বাসা ভাড়া জমে গেছে প্রায় 70 হাজার এমন অন্য সবদিকে ঋণ সহ এখন বর্তমানে 1.5 থেকে 2 লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আমি বসে আছি। কোন রকম একটা সন্তানকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছি।
নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশনে আশা :
কষ্টে যখন প্রতিদিন এলোমেলো সময় কাটাচ্ছি এমন সময় হঠাৎ ইন্টারনেট ঘাটতে ঘাটতেই ‘নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশন’ লেখাটি চোখে পড়ে। কয়েকটি ভিডিও একনাগারে কয়েকদিন দেখেছি, সাক্ষাৎকার দেখে আমার ছেলেকে বলেছিলাম বাবা আর কষ্ট থাকবে না। আমি এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হবো। দেখো আগামী রমজানেই আমার কষ্ট দূর হয়ে যাবে। কিন্তু ক্লাশ করতে করতে রমজান চলে এসেছে, জানিনা ছেলেকে কি বলবো। এখন।
আমার প্রিয় ‘ইকবাল বাহার স্যার’ যদি আমার এই গল্পটুকু পড়েন নিজের মনকে একটু হালকা মনে করবো। যাই হোক একজনের কাছে আমার মেসেজটি পৌছাতে পেরেছি। আজ আমার ছোট ভাই ২ বছর হয় মোবাইলেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকের মতো আমাকেও অনেকে বলতে শুরু করেছে আমি আর কিছুই করতে পারবো না। আমি নাকি সব ভুল পথে চলি। তাই ছোট ভাই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এতো ধৈর্য্য সহকারে আমার জীবনের গল্প পড়ার জন্য। সকলে দোয়া করবেন।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে - ৭৭৬
তারিখ- ০১/০৪/২০২২
মোঃ সানাউল্লাহ
বর্তমান ঠিকানা: মুরাদপুর, হামিদা পাম্প সংলগ্ন
জুরাইন, শ্যামপুর, ঢাকা।
ব্যাচ নং -17
রেজি নং-87737
আছি ওয়ারী জোন, ঢাকা