সফলতা চলমান তেমনি আমিও সাহস করে নেমেছি
🌺 বিসমিল্লাহি রহমানির রহিম 🌺
🌹আসসালামু আলাইকুম 🌹
♦️প্রথমে শুকরিয়া জানাই সৃষ্টির্কতা মহান আল্লাহর, যিনি আমাদের রিযিক দান করেছেন লালন- পালন করছেন এবং আমাদের সুস্থতা দান করেছেন, যার রহমতে এখনও আমি চলা ফেরা করতে পারতেছি,
♦️সালাম ও দুরুদ পাঠ করি আল্লাহর রসুল আমাদের
দয়ার নবী মায়ার নবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজামোবারক
🌺🌺 আবারও হাজার সালাম ওভালোবাসা জানাই আমার প্রিও বাবা ও মার পদতলে 🌺
♦️নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি মনের গহিন থেকে অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে শুরু করছি আমার জীবনের কিছু না বলা কথা।
♦️জীবন গল্প
আসসালামু আলাইকুম, আমি সাবিনা ইয়াসমীন আজ আমি আমার জীবনের গল্প লিখছি। টাংগাইলর জেলার নাগরপুর উপজেলার আগদিঘুলিয়া গ্রামে একটি সাধারণ পরিবারে আমার জন্ম।আমারা মা-বাবার চার ছেলে মেয়ের মধ্যে আমি তৃতীয়। আমরা তিন বোন এক ভাই প্রথমে আমার বড় বোন এরপর আমার বড়ভাই এরপর আমি সবশেষে আমার ছোট বোন।আমার শৈশবের ২য় শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামে কেটেছে। ছোটবেলায় গ্রামের ছেলেমেয়েরা যেভাবে আনন্দ-উল্লাসে হেঁসে - খেলে যেভাবে দিন কাটায় আমি তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। তবে ছোট বেলা থেকেই আমি পড়াশোনাতে খুব ভালো ছিলাম।আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার পরিবার ঢাকায় চলে আসে এবং শুরু হয় আমার শহুরে জীবন।
আমার শিক্ষা জীবনঃ
আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয় আগদিঘুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে আমি প্রথম শ্রণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির ১ম সাময়িক পর্যন্ত পড়ি তারপর আমার পরিবার ঢাকা চল আসলে আমার বড় বোন আমাকে ভর্তি করিয়ে দেয় খিলগাঁও হোসেনইন মোহাম্মদ এরশাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেখানে আমি দ্বিতীয় শ্রেণির ২য় সাময়িক পরীক্ষা পর্যন্ত পড়ালেখা করি।আমরা তখন খিলগাঁও ছিলাম। আমার ছোট ফুপুর পরিবার,আমার ছোট কাকা এবং আমাদের গ্রামের অনেক মানুষ তখন ঢাকার দনিয়াতে থাকত।তারপর আমারা পরিবারহ ঢাকার দনিয়াতে চলে আসি। আমাকে ভর্তি কারানো হয় দনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে আমি তৃতীয় চতুর্থ পর্যন্ত সেখানেই পড়ি।২০০২ সালে আমার বড় বোন আমাকে উদয়ন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আবারও চতুর্থ শ্রেনিতে ভতি করায় কারণ বারবার স্কুল পরিবর্তন করার আমার পড়ালেখায় একটু মনযোগ কমে গিয়েছিল। আমি পঞ্চম শ্রেণি শেষে ২০০৪ সালে ঢাকার সুনামধণ্য এ. কে হাইস্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেই এবং আমি ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়ে যাই।২০০৯ সালে আমি বাণিজ্য বিভাগ থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় ৪.৫৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।আমি বরাবরই মেধাবী ছাত্রী ছিলাম কিন্তু কখনোই A+ প্লাস এর চিন্তা ভাবনা নিয়ে পড়ালেখা করিনি।আমার টার্গেট ছিল আমি শিখব শেখার মতই শিখব।এরপর কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা থেকে এইচ. এস.সি পরীক্ষা দেই।২০১১ সালে ইন্টার পরীক্ষার পর আমি নবজাগরণ আদর্শ বিদ্যাপীঠ (ন্যাব) এ শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেই।এটা কিন্ডারগার্টেন স্কুল হলেও এটা অষ্টম শ্রেণির পর্যন্ত ছিল।পাশাপাশি পাঁচজন এস.এস.সি পরীক্ষার্থীকে গনিত বিষয় পড়াতাম এর মধ্যেই আমি আমি দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.বি.এ অনার্স( ব্যবস্থাপনা) বিষয়ে ভর্তি হই।এটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়লেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এর মত খরচ । অপরদিকে ভালো পড়াই বলে আমার বাসায় প্রচুর স্টুডেন্ট ছিল।তখনকার আমার রুটিন ছিল
সকালে
৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এক ব্যাচ স্টুডেন্ট পড়াতাম।
৮টা থেকে১০টা পর্যন্ত স্কুলে জব করতাম ( পি.এস.সি এবং জে.এস.সি)ইংরেজি ও গণিত মোট চারটা ক্লাস করাতাম।
দুপুর ১২টা ১২টা ৪৫ আমি নিজে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম
দুপুর ১টা পনেরো থেকে ৪ টা ৩০ পর্যন্ত ভার্সিটি তে ক্লাস করতাম এরপর বিকাল ৫ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত সপ্তাহে ৩ দিন করে ২টা কোচিং সেন্টারে জব করতাম তারপর বাসায় এসে সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ থেকে ৯টা ৩০ পর্যন্ত বাসায় ব্যাচ পড়াতাম। তারপর নিজের পড়াশোনা করতাম।এত পরিশ্রমের একটাই কারণ ছিল আমি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নিজের খরচে পড়ালেখা করতাম।
আর সবকিছুই আমার দনিয়া এলাকাতে হওয়ার কারণে সম্ভব ছিল।
বিয়ে ও পড়ালেখার ইতি টানা
২০১৪ আমার বাবা - মা গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করে। আমি ও আমার ছোট বোন তখন ভাই ভাবির সাথেই থাকি
এতদিনে আমার বড় বোন একজন (আমার চেয়ে ১০ বছরের বড়) হোমিওপ্যাথিক ডি.এইচ এম. এস পাশ করে একজন হোমিও চিকিৎসক পেশায় নিয়োজি হন। আমার বড় ভাই( আমার চেয়ে ৭ বছরের বড়) একজন টেইলার্স এবং কাপড় ব্যবসায়ি। আমার বড় বোন সবসময় বলত আমরা চার ভাই বোনের পেশা ভিন্ন ভিন্ন থাকবে আমাকে নিয়ে ফ্যামিলির সবাই খুব বড় স্বপ্ন দেখত।সবাই চাইত আমি ভবিষ্যতে কোন ব্যংকার অথবা কোন প্রফেসর হবো।
২০১৬ সালে আমি যখন অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি তখন আমাদের এলাকা থেকে ঘটকের মাধ্যমে একটি বিয়ের প্রস্তাব আসে ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল ছেলের পরিবার ছেলে সহ মোট ১৪ জন মানুষ আমাকে দেখতে আসে।কোন পাত্র পক্ষের সামনে পথমবারের মত আমাকে দেখানো হলো। পরবর্তীতে জানতে পারলাম তারা আমাদের পাশের বাড়ি থাকে। তারা আমাকে দেখে পছন্দ করল এবং বিয়ের পাকা কথা বলার জন্য তারিখ চাচ্ছিল। কারণ ছেলে এলাকার আমার ভাইয়ের বন্ধুর ছোট ভাইয়ের বন্ধু । ছেলে ভালো , অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে । ইন্টার পাস করার পর থেকে জব করে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এতগুলো মানুষ একসাথে দেখতে আসছ যে ভয়ে আমি ছেলের দিকে একবাও তাকিয়ে দেখিনি।ছোট ফুপুকে একথা বললাম ছোটফুপু ছেলের বায়োডাটা থেকে নাম্বার নিয়ে ছেলেকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলল।আমিও ছেলেকে ফোন দিলাম এবং একটা ফুচকা শপে গিয়ে দেখা করলাম। ছেলে কথা বার্তা ভালো লাগলো।ছেলে প্রতিদিন ফোন দিতো কথা বলতাম । এপ্রিলের ১৫ তারিখ ছেলে পক্ষ পাকা কথা বলতে আসে তখন ছেলের দুলাভাই একলক্ষ টাকা যৌতুক চেয়ে বসে আমার ফ্যামিলি তখন না করে দেয়। রাতে ছেলে আবার ফোন দিলে আমি বলে দেই আপনার ফ্যামেলি একলক্ষ টাকা যৌতুক চেয়েছে আমার পরিবার আপনাদের না করে দিয়েছে।আপনি আর ফোন দিয়েন না।সে বলল সে তো একথা জানে না।ছেলে পুণরায় তার পরিবারকে রাজি করিয়ে আমার বাসায় জানালো। সে আমার ভাইয়ের সাথে দেখা করে ডিরেক্ট বলল আমি আপনার বোন কে বিয়ে করতে চাই ভাইয়া আপনি কেন দিবেন না।আমারও কেন জানি ভালো লাগতো।পরেরদিন থেকে সে পাগলামি শুরু করে দিল আমার বাড়ির সামনে সে সকাল বেলা দাঁড়িয়ে থাকে তার একটাই কথা তার ফ্যামিলি রাজি আমি যেন আমার ফ্যামেলিকে রাজি করাই।আমার মা কে ফোন দিয়ে বলে আন্টি আমি আপনার মেয়েকে সুখে রাখব আপনি কেন রাজি হন না।আমি কল না ধরলে সে আমার ভাবির নাম্বারে কল দিত। আমি কেন জানি ছেলের সাহসের প্রেমে পড়ে গেলাম। পরীক্ষা করতে লাগলাম নানাভাবে সে কি সত্য আমাকে সুখে রাখতে পারবে।মনে হলে সে আমার জন্য সঠিক। অবশেষে ২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল বিয়ে হয়।
♦️বিয়ের পর আমার শাশুড়ী আমার স্কুল কোচিং এর চাকরি ছেড়ে দিতে বলল । আমি না করলে বলল এলাাকার মানুষ খারাপ চোখে দেখবে যদি ঘরের বউ চাকরি কর তাদের সম্মান নষ্ট হব।আমি যখন স্কুলে গিয়ে জানালাম সেখানের প্রধান শিক্ষিকা খুবই কষ্ট পেল। বিয়ের পনের দিন পর আমার অনার্স তৃতীয় বর্যের পরীক্ষার ফরম ফিলাপ শুরু হলো।কিন্তু আমার শাশুড়ী আমাকে পড়তে দিব না। কারণ তার ছেলের কাছে আমার পড়ালেখা চালানো সম্ভব না। আমার মা কে ফোন দিয়ে জানালাম আমাকে ভাইয়ের কাছে টাকা পাঠালো। আমি ভাইয়ের দোকানে গিয়ে টাকা হাতে নিয়ে গুনেও রেখে আসলাম কারণ আমি তো আমার শশুর বাড়ী থেকে অনুমতি পাইনি। আমার শ্বাশুড়ি বলেছে বাবার টাকায় পড়লে তার ছেলে অপমানিত হবে। আমার স্বামী কে বুঝালাম কিন্তু কোন লাভ হলো না কারণ তার মা বলেছে আমি যদি পরীক্ষা দেই তাহলে যেন বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি সারাজীবনের জন্য চলে যাই।আমি কোনভাবেই আমার স্বামীকে রাজি কারতে পারি নি।আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। আমি যাকে এতটা সাহসী মানুষ ভেবেছিলাম সে তার মায়ের কথা ছাড়া কিছুই বলতে পারে না। আমি গত পাঁচ বছর রাত- দিন পরিশ্রম করে যে প্রাইভেট ভার্সিটির খরচ চালিয়ে গিয়েছি তার কোন লাভ হলো না।আমি সেদিনের কষ্ট মানতে পারিনি। আমি মানতে না পেরে আমার অনার্সের রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের মেইন কপি আমার স্বামী র সামনে বসে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলি। তারপর স্বামী সংসারের কথা ভেবে কোন প্রতিবাদ করেনি।এরপর ২০১৭ সালের মে মাসের ১০ তারিখে আমার এক পুত্র সন্তান হয়।সবকিছুর মাঝে স্টুডেন্ট পড়াতাম বাসায়। সবসময় মনের ভিতর একটা স্বপ্ন থাকত কিছু একটা করব নিজের পরিচয় তৈরি করার জন্য।
🌷উদ্দোক্তা জীবন শুরুঃ
-----------------
স্যার স্বপ্ন দেখেছিলেন, দেখেছিলেন, সাহস করে লেগেছিলেন।আজ তিনি সফল। সফলতা চলমান তেমনি আমিও সাহস করে নেমেছি স্যার এর শিক্ষা বুকে ধারণ করে আমি জানি মানুষ খুব অল্প সময়ের জন্য এই পৃথিবীতে আসে কিন্তু কয় জনই বা মরে গিয়ে অন্যের মাঝে বেঁচে থাকতে পারে তাই চিন্তা করলাম এই ছোট জীবনে আমাকে এমন কিছু করতে হবে যেন আমার মৃত্যুর পরেও মানুষ আমাকে মনে রাখে। আসলে মানুষ মরে গিয়েও তার কর্মের মাধ্যমে চিরদিন বেঁচে থাকতে পারে । এক্ষেত্রে ব্যাবসা হচ্ছে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম । ব্যাবসা করলে নিজের উন্নতির পাশাপাশি কিছু গরিব ও অসহায় মানুষ কে কর্মসংস্থান এর সৃষ্টি করতে পারি তাহলে সে সকল পরিবারের সকল সদস্য আমাকে আজীবন মনে রাখবে ভালবাসবে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে ভাল মাধ্যম এর ই ধারাবাহিকতায় মাঝে মাঝে আমি গুগোল এ বিভিন্ন প্রকার ব্যবসার আইডি খুজতে থাকি হঠাৎ একদিন আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যারের ভিডিও সেশন আমার নজরে আসে এবং আমি সেই সেশন টি মনোযোগ সহকারে দেখি তারপর থেকে প্রতিনিয়ত সময় পেলেই স্যারের ভিডিও সেশন গু্লো দেখতাম আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে আমার উদ্দোক্তা জীবনের শুরু হয়েছে । আমি এখনো সফল উদ্দোক্তা হতে পারি নাই তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি, আপনাদের সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেলে ইনশাআল্লাহ আমি একদিন সফল উদ্দোক্তা হিসেবে নিজেকে সু প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। এবং অন্তত একজন মানুষের ভাগ্য বদলাতে সাহায্য করতে পারি তবেই আমার মানব জীবন সফল হয়েছে বলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি।
কষ্ট করে সময় নিয়ে আমার জীবনের গল্পটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকবেন সব সময় বিধাতার নিকট এই প্রার্থনা করছি।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -৭৭৬
তারিখ-০১/০৪/২০২২
🌷সাবিনা ইয়াসমিন
🌷 জেলাঃ টাঙ্গাইল
🌷ব্যাচ নং- ১৬
🌷 রেজি নং ৭৫৬৫৪
বর্তমান অবস্থান করছি ওয়ারী জোন, দনিয়া ঢাকা।