একই সাথে আমাদের পরিবারের সকল আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়।
আসসালামু আলাইকুম
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন-এর সকল সদস্যকে আন্তরিক ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রিয় মেন্টার জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। প্রিয় স্যারের কারণে আজকে আমরা পেয়েছি নতুন একটি পরিবার ও বিশ্বব্যাপী একটি নেটওয়ার্ক যেখানে লক্ষ লক্ষ প্রিয় ভাই ও বোন, নতুন করে নিজেকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছে স্বপ্ন দেখেছে আগামী সুন্দর ও স্বজ্জিত এক পৃথিবীর।
সবার সাথে আমার জীবনের ছোট একটা গল্প শেয়ার করবো, আমার জীবনের গল্পটি পড়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
আমি মোঃ মেহেদী হাসান (হৃদয়)। পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানায় আমার নানাবাড়িতে আমার জন্ম। ছোটবেলায় ছিলাম খুবই দুষ্ট এবং পরিবারের বড় ছেলে আমি। নানা নানী দাদা দাদীসহ সকলের সর্বোচ্চ আদর ভালোবাসা ছিলো সবসময়। ছিলাম বড় নাছোড়বান্দা!
শিক্ষাজীবনের শুরুর গল্পটা খুবই অদ্ভুত। বাবা আমাকে এলাকার "ইসলামিক ফাউন্ডেশনে" প্রাক-প্রাথমিক এ ভর্তি করানোর কিছুদিন পর শিক্ষকের খড়ির পিটানের কারনে সাথে সাথে স্কুল ত্যাগ করি এবং অবুঝ মনের সিদ্ধান্ত আর স্কুলে যাবোনা। পরিবারের কেউ শতভাবে বুঝিয়ে পুনরায় স্কুলে যাবার জন্য আমাকে রাজি করতে পারে নাই৷ পরে স্বপরিবারে ঢাকা চলে যাই, ঢাকা গিয়ে স্কুলে ভর্তি হই। ভর্তির সময় মামার দেওয়া নতুন পেন্সিল, রাবার ও কাটার পেয়েই আবার ভালো লেগে যায় পড়াশোনা। ঢাকায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কেজি পর্যন্ত পড়ার পর গ্রামে এসে ক্লাস থ্রি তে ভর্তি হই। প্রথম ফাইনাল পরিক্ষায় টপ ফাইভে নিজেকে স্থান করে সকলের মনে জায়গা করে নেই। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবনে সব শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রিয় ছাত্র ছিলাম। পড়াশুনা খুব কম করলেও মনোযোগ দিয়ে বুঝে শুনে পড়াশুনা করতাম বিধায় ভালো ফলাফল অর্জন করতাম। এভাবেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন শেষ হয়।
ছোটবেলায় নিজের মনের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন নিয়েই পড়াশোনা করছি। কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে একটু হলেই ছিটকে যেত স্বপ্ন, কারন এসএসসিতে ভুল পরামর্শ শুনে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা নিয়ে এসএসসি পাশ করি। এরপর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি পরিক্ষার মাধ্যমে কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ সুযোগ পেয়ে আবার আমার স্বপ্নটা বহাল রাখি। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালীন সময়ে আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রিন্সিপাল স্যারসহ বিভাগীয় শিক্ষকরা অনেকভাবে সহযোগিতা করছে। তাছাড়া আইটি রিলেটেড দক্ষতা অর্জন করার বন্ধু ল্যাপটপ দিয়ে অনেক কাজ শিখতাম নিজে নিজে। এবং সফলভাবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করি৷
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার সাথে সাথে একটা ছোট চাকরি পেয়ে যাই, তার কয়েকমাস পরেই নর্দার্ন ইউভার্সিটি বাংলাদেশে বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হই। ভর্তি হবার পর কেরানীগঞ্জ পেটেলকো তে ৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে জয়েন করি। তখন প্রতি শুক্রবার সকালে ভোরে কেরানীগঞ্জ থেকে বনানী যেতাম ক্লাস করতে এবং ক্লাস শেষে ফিরতাম রাত ১২ টার দিকে। খুবই কষ্টকর ছিলো। ১ বছর পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় ভার্সিটির কাছাকাছি অন্য একটা চাকরিতে জয়েন করি।
তারপর হঠাৎ করোনা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার কারনে সব বন্ধ হয়ে যায়। একই সাথে আমাদের পরিবারের সকল আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকমাস ভালোভাবে গেলেও হঠাৎ কঠিন অবস্থা শুরু হয়৷ ছোট ভাই তার কোম্পানিতে পুনরায় জয়েন করতে পারলেও আমি পারিনি কারন করোনা পরিস্থিতির কারনে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন চলমান ছিলো। আমার অবস্থা দিনে দিনে বাজে হতে লাগলো। কখনো দুবেলা খেয়ে থাকতাম৷ কখনো বা একবেলা কিন্তু তিনবেলা খাওয়ার সৌভাগ্য হইনি করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে। টাকা ধার নিয়ে চলে এলাম ঢাকা শহরে আয়ের উৎস খোঁজার জন্য। অনেকের কাছে গিয়েছিলাম চাকরির ব্যবস্থার জন্য কিন্তু কেউই পারে নি, কারন লকডাউনে চাকরি পাওয়া অসম্ভব ছিলো। তারপর এলাকার এক চাচার অনলাইন ব্যবসার প্রোডাক্ট ডেলিভারি করা শুরু করলাম। প্রতি ডেলিভারিতে ৬০ টাকা পেতাম। ডেলিভারি করে কোনোদিন ৬০ টাকা, কোনোদিন ২৪০ টাকা পেতাম আবার কোনোদিন পেতাম ই না। শুধু ক্ষুধা নিবারনের জন্যই কাজে মনযোগ দেই। হঠাৎ একদিন খুব ক্ষুধা পায় কিন্তু পকেটে টাকা নাই এমনকি ছোটভাইয়ের বাসায়ও খাবার নাই। তখন হাতে থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল বিক্রির জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেই। সন্ধ্যায় ফোনটা ৭০০ টাকায় বিক্রি করে ২৫০ টাকা দিয়ে আরেকটা ফোন কিনে নেই। ৬০ টাকা দিয়ে খাবার খেতে খেতে ২৫০ টাকা দিয়ে কেনা পুরাতন মোবাইলটি ৫০০ টাকায় বিক্রির চিন্তা করে বিজ্ঞাপন দিয়ে ৪৫০ টাকায় বিক্রি করে ৪৫০ টাকা দিয়ে ২ টা ফোন কিনে বিক্রি করি। যাই হোক দুঃসময়ে কিছুটা স্বস্তি পাই। এরপর কয়েকটা জায়গা চাকরির জন্য এপ্লাই করি। মিরপুর ১২ এর স্বনামধন্য ব্রডব্যান্ড কোম্পানি থেকে ইন্টারভিউ এর জন্য কল করলো। ইন্টারভিউ এর দিন সকাল থেকে ক্ষুধার্ত, বিকালে ইন্টারভিউ দিবার জন্য রওনা হলাম। হঠাৎ অসুস্থতা বোধ করি। কাছাকাছি পৌছানোর আগেই পুরো শরীর কন্ট্রোল লেস হয়ে যায় সাথে সাথে মিরপুর ১১ তে মাটিতে লুটিয়ে পরি। মিনিট বিশেক পর জ্ঞান ফিরলে সাথে সাথে খালাতো ভাইয়াকে ফোন করে তার বাসায় বিশ্রাম নেই। ওইদিন রাত ৯ টায় দারাজ বাংলাদেশ থেকে কল করে আমাকে পিরোজপুর দারাজ হাব এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আমাকে সিলেক্ট করে দারাজে হিউম্যান রিসোর্স এর এক স্যার। আমি চিরকৃতজ্ঞ তার প্রতি।
তখনই আমাদের ভার্সিটির অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। শেষ সেমিস্টারে এসে অনেক টাকা পেমেন্ট পেন্ডিং ছিলো। মাত্র কয়েকদিন সময় দিয়েছিলো ভার্সিটির অথোরিটি, পরিশোধ করতে না পারলে সমাপনী পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেওয়া হবে না। আমার মায়ের প্রচেষ্টা ও এলাকার এক প্রিয় মামার আর্থিক সহায়তার কারনে পেমেন্ট ক্লিয়ার করে পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফলভাবে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েশন শেষ করি।(আলহামদুলিল্লাহ) আমার দুঃসময়ে অনেকের অবহেলার স্বীকার হয়েছি যেটা ছিলো কষ্টকর কিন্তু শিক্ষনীয়। বিপদে আপদে মহান আল্লাহকে স্মরণ করেছি। আমার জীবনের আরো অনেক কিছু ঘটনা আছে যেগুলো লিখলে অনেক বড় বই বানানো সম্ভব। যদি কখনো নিজের জীবনী নিয়ে বই লেখার মতো পরিচয় তৈরী করতে পারি তাহলে লিখবো।(ইনশাল্লাহ)
আমাকে নিজে বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে সংযুক্ত হতে সহায়তা করেছেন আমার প্রিয় ভাই Anisur Rahman Akash (মামাতো বোন জামাই)। যদিও 10 Minute School এর ভিডিওতে এই গ্রুপের কর্ণধার ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের বিজনেস বিষয়ক লেকচার ভিডিও দেখেছিলাম। তার অনেক পর জেলা মেসেঞ্জার গ্রুপে সংযুক্ত হবার পর থেকেই নিজেকে আরো কয়েকধাপ এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। এবং কথা বলার জড়তা কাটিয়ে হাজার মানুষের সামনে পাবলিক স্পিকিং করা, অফিসের জরুরী মিটিং, মোটিবেশন স্পিকিং সহ আরো অনেক কিছু আয়ত্ত্ব করতে পারছি নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের কারনে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাওয়া হলো নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করা। আরো বহুদুর যেতে হবে।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি,
নিজে বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশনের পিরোজপুর মডারেটর A M Saiful Islam ভাই, জেলা প্রতিনিধি G M Shakil ভাই ও কান্ট্রি এম্বাসেডর Imran Hossain ভাই সহ সকল দায়িত্বশীলদের প্রতি। সর্বশেষে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৭৭৬
তারিখ ০১-০৪-২০২২
মোঃ মেহেদী হাসান
ব্যাচঃ ১২ তম
রেজিষ্ট্রেশন নং ৩০১৭৪
পেজঃ Hriday Mehedi
জেলাঃ পিরোজপুর