আর যেন অসহায়ের মতো চোখের পানি ফেলতে না-হয়
🎿বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 🎿
🎿আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমত ল্লাহু ওয়াবা রাকাআত,, 🎿
🎋আমি রোজিনা খাতুন রোজী 🎋
🚸আমার জীবনের কিছু দুঃখ বেদনার গল্প
বলতে এসেছি আপনাদের মাঝে,
আর এই উৎসাহ টুকু আমি পেয়েছি, নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের ইউটিউব সহ জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের বিভিন্ন ভিডিও সেশন দেখে, 🚸
🙏আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মহান আল্লাহর এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের,
👉আমি ১১ ব্যাচ থেকে এই গুরুপ সেশন গুলো নিয়মিত দেখে আসিতেছি, রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন পথ খুজে পাইনি, অবশেষে সাথী আক্তারের সহযোগিতায় আমি ১৭ তম ব্যাচে রেজিষ্ট্রেশন করতে পেরেছি, এবং স্যারের দেওয়া সেশন গুলো নিয়মিত ফলো করিতেছি এবং সেশন চর্চা ক্লাশে নিয়মিত যুক্ত থাকি, এবং আমি এখান থেকে আমার জীবনের গল্পটা লেখা শুরু করি,,
🎤কিছুটা বলা হয়তো ঠিক হয়নি,কারণ আমি জন্ম থেকে জ্বলছি। যা হোক, গল্প লিখতে এসে আগেই কান্না এসে ভিড় করছে।আমি যখন আমার মায়ের গর্ভে তখন আমার বাবা আরেকটা বিয়ে করেন, এমতাবস্থায় আমার মা রাগারাগি করে আমার নানা বাড়িতে চলে আসে,তার কিছুদিন পরে আমার মা আমার বাবার সাথে সংসার করবেনা, এ কথা বলে গ্রামের গণ্য মান্য ব্যাক্তিদের বলে, এবং একটা বৈঠক বসায়,সেখানেই আমার মা, বাবার ডিভোর্সের কথা নিশ্চিত করা হয়,আমি মায়ের গর্ভে থাকাতে, মা বাবার ডিভোর্স ইস্তোগিত থাকে, সেখান থেকে দুমাস পরেই আমার জন্ম হয়,এই পৃথিবীতে। আমার জন্মের একুশ দিন পরে আমার মা বাবার ডিভোর্স কার্যকর করা হয়,এরপর আমার বয়স যখন দেড় বছর তখন আমার মায়ের অন্য জায়গায় বিয়ে দেন আমার নানা এবং মামারা , ঐ ভদ্রলোক মানে আমার মায়ের স্বামী অবিবাহিত থাকায়, আমাকে মায়ের সঙ্গে রাখতে রাজি হননি, আমি তখনও দুধের শিশু, এমতাবস্থায় আমার ছোট খালা ও মামারা আমাকে লালন পালন করতে থাকে, একটা সময় আমার ছোট খালার বিয়ে হয়ে যায়, তখন আমি একদম একা হয়ে যাই, এরপর একটা সময় আমার মা তার কাছে আমাকে নিয়ে যায়, আমার তখন পাঁচ ছয় বছর বয়স চলে, ততোদিনে আমার মায়ের স্বামীর ঘরে একটি ছেলে সন্তান হয়,তাকে দেখে শুনে রাখতে হয়তোবা আমাকে নিয়েছিল, মায়ের মমতা কাকে বলে সেভাবে কখনো পায়নি, মায়ের বুকে মাথা রেখে কখনো ঘুমিয়েছি কিনা জানিনা মনে পড়ে না, আমার মা তার স্বামী সন্তানেরে নিয়ে খাটের ওপর ঘুমাতো, আর আমাকে মেঝেতে শুয়াতো এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পরে,আমাদের বাড়ির পাশের এক চাচা এক রাতে আমাদের ঘরে কি জন্য যেন আসেন,এবং উনি দেখতে পান আমি মেঝেতে শুয়ে আছি, তখন আমার মায়ের নাম ধরে ডেকে বলে, ছোট বাচ্চা এভাবে মেঝেতে শুয়ে থাকলে তো ওর নিউমোনিয়া হয়ে যাবে, আমার মা উত্তরে বললো কিছু হবে না, তারপর চাচা আমার খালার কাছে কথা গুলো বললো এবং আমার খালা সাথে সাথে আমাকে নিয়ে চলে আসলো নিজের কাছে, আমার খালু অনেক ভালো মনের মানুষ ছিল, খালারও একটা ছেলে ছিল,, আমি খালার কাছে এসে দেখি, আমার খালা আর খালু নিচে বিছানা করে ঘুমালো, আর আমাকে ও খালাতো ভাইটাকে খাটের ওপর শুয়ালো, আমার খালাতো ভাইয়ের বয়স তখন দু'বছর ও অনেক ছোট, তারপর থেকে আমি আর মায়ের কাছে যেতে চাইতাম না খালার কাছে থাকতাম, খালা খালু দুজনেই আমাকে কম বেশী লেখা পড়া শিখিয়েছে,যখন আমি ক্লাস সিক্স এ পড়ি তখনই আমার বিয়ের প্রস্তাব আসে, আমার মায়ের দূরসম্পর্কের মামাতো ভাইয়ের ছেলে,তখন সে এস এস সি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে মাত্র, সবাই বলে ছেলে ভালো আর রোজির মা বাবা থেকেও নেই, আত্মীয়র ভিতরে বিয়েটা দেওয়া ভালো হবে, বিয়ের কথা আলোচনা করতে করতে আমি সিক্স পাশ করে সেভেনে উঠলাম, সে সময় আমার বিয়ে দিলো,
🌐 শুরু হলো আমার সংসার জীবন🌐
আমাদের গ্রামে তখন রাতে বিয়ে হতো,তো বিয়েতে কি নিয়ে যেনো ঝামেলা হচ্ছিল, একটা সময় বরযাত্রী সব চলে গেলো বিয়ের রাতেই, পরের দিন দুপুর বেলা আবার বর কিছু লোকজন নিয়ে বিয়ে করতে আসলো,আমাকে আবার কনে সাজিয়ে বিয়েতে বসালো এবং বিয়ে হয়েও গেল, কথায় আছে যার জন্ম থেকে কপাল পোড়া তার আজীবন কপাল পোড়াই থাকে।
🏆শুরু হলো আমার সংসার ও জীবন যুদ্ধ 🏆
🚸আমার ,বিয়ে শেষ. শশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা হলাম, শশুড় বাড়ির গেটের সামনেই আমার শাশুড়ী দাঁড়ানো ছিল আমি গেটের কাছে আসতেই আমাকে জোর করে ধরে হিচরে আমার কাপড় প্রায় খুলেই ফেললো,কারণ শাশুড়ী দেখতে চেয়েছেন কি কি গহনা আমার শরীরে আছে, তারপর যখন দেখলো কোনো গহনা নাই তখন ওখানেই আমাকে অনেক গালিগালাজ করতে শুরু করলো,এরপর প্রতিবেশীরা শাশুড়ীকে বুঝিয়ে শান্ত করে আমাকে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেলো,পরের দিন বউ ভাতের অনুষ্ঠান, আমার মামার বাড়ি থেকে কিছু কন্যাযাত্রী আসলো,তখনও তাদেরকে ও অপমান করা হলো,কারণ যারাই আসছিল তারা গরু ছাগল ও অন্যানন্য জিনিস পত্র নিয়ে আসেনি কেনো সে জন্য তাদের সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করলো,
এবং আমি দেখলাম আমার স্বামী ও একটা কুকুর ধরে এনে বেঁধে রেখেছে এবং কুকুরের গায়ে রং লাগিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখছে, যে আসছে তাকেই সে বলছে আমার শশুড় বাড়ি থেকে এই গরুটা দিয়েছে, এবং সবাই এটাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতেছে,এমনকি মাটির কলসি পাতিল নিয়েও আমার স্বামী অপমান করতে লাগলো,বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষে, আমি যখন মামার বাড়িতে আসি,সেখান থেকে কয়েকদিন পরে আমাকে নিতে আসে আমার শশুড় বাড়ির লোকজন, তখন আমি আর যেতে রাজি হয় না,এরপর দুপক্ষের গার্ডিয়ান একত্র হয়ে মিলমিশ করিয়ে আমাকে পাঠিয়ে দেন,আমি বিকেলে দিকে পৌছায়েছি,শশুড় বাড়ি, তারপর দেখি আমার শশুড় বাড়ির সবাই আমার জায়েরা ননদ শাশুড়ি আমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যাবহার করতেছে, আমি তখন নিরবে শুধু চোখের পানি ফেলছি,,,,,
এমন সময় আমার স্বামী ঘরে আসে, এবং সে দেখে আমি কাঁদছি, তখন সে জিজ্ঞেস করে আমাকে কি হয়েছে, আমি তখন নতুন শশুর বাড়ি গেয়েছি তারপর আমার বয়স ও তখন কম,তাই আমি চুপ করে থাকি, কোনও কথার উত্তর দিচ্ছি না দেখে, আমার স্বামী চিৎকার চেচামেচি শুরু করে, তখন আমি ভয় পেয়ে যাই এবং আমি তখন বলি যে,আপনি জিনিস পত্র ছাড়া কেনো বিয়ে করেছেন, জিনিস পত্র যখন আমার বাড়ির মানুষ দিত পারেনি,তাহলে আমাকে তালাক দিয়ে দেন,এ কথা বলার সাথে সাথেই আমার স্বামী আমাকে মারপিট শুরু করে, মাইরের পরে আমি একটা সময় বেহুস হয়ে পড়ে যাই, তখন আশপাশের লোকজন চলে আসে,এবং আমাকে হুশ করায়,এরপরে আমার স্বামী সহ আশপাশের লোকজন সবাই আমাকে বোঝায়,আমাকে যে মেরেছে একথা কাউকে যেন না বলি,আমি ও সবার কথা মেনে নিয়ে, সংসার করতে লাগলাম, আমার অভিভাবক সঠিক না থাকায় আমাকে আর কেউ নিতে ও আসে না এবং সেরকম খোঁজ খবর ও নেয় না,আমি তাদের কাছে একটা বোঝা ছিলাম, আমাকে তাদের কাঁধ থেকে নামাতে পারছে এটাই অনেক কিছু, আমি ও কোনো উপায় না পেয়ে, লাঞ্চনা গঞ্জনা সহ্য করে সংসার করতে লাগলাম, ছয়মাস পরে আমার মা আমার এক খালাতো বোনকে পাঠায় আমার খোঁজ খবর নিতে, খালাতো বোন দেখে আমার জীবন যায় যায় অবস্থা, তখন খালাতো বোন আমার শশুড় শাশুড়ী সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমাকে তার সাথে করে নিয়ে আসে, আমার মায়ের কাছে, মায়ের আমার প্রতি একটু মায়া লাগলো আমাকে দেখে, মা তখন আমাকে নিয়ে একটি হাসপাতালে যায়, সেখানে আমাকে ডাক্তার দেখান। আর ডাক্তার অনেক কথা বলেন।
🎏 মা হওয়ার স্বপ্ন 🎏
🕙আমি ও মা হতে যাচ্ছি, আরও বলেন এই টুকু বাচ্চা মেয়ের বাচ্চা হবে, আপনারা কি মানুষ এতোটুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, এরকম বলে অনেক বকাঝকা করলো, এরপর আমার মা বাচ্চা নষ্ট করার জন্য বলে ডাক্তারকে। ডাক্তার তখন আরও রেগে গিয়ে মাকে বললো, আপনার মেয়ে তো এখনো বাচ্চা, ওর বাচ্চা নষ্ট করতে গেলে তো আপনার বাচ্চা মারা যাবে, আমি এই ঝুঁকি নিতে পারবো না বলে ডাক্তার, এরপর বাড়ি চলে আসি,দুচারদিন যাওয়ার পরে দেখি,সৎ বাবা আমার মায়ের সঙ্গে সবসময় ঝগড়া করে, তারপর এই ও দেখি আমার মা আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে এতো লোকের মরণ হয় এদের কেনো হয় না, এর জন্য জীবনে সুখ পেলাম না, তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম স্বামীর বাড়ি চলে যাওয়াই ভালো, তাতে করে আমার মা ভালো থাকবে। আমার সাথে যা হয় হোক, আমি তো কপাল পোড়াই জন্ম নিয়েছি,আমাকে এই পোড়ার জ্বালা সহ্য করতে হবে, এই ভেবে আমি চলে গেলাম স্বামীর বাড়ি, সেখানেই থাকতে লাগলাম, এরপর আমার ডেলিভারির সময় হয়ে আসলো, ততোদিনে আমার অবস্থা খুবই খারাপ দিকে, আমার ছোট খালার তখন আমার কথা মনে পড়লো, তখন আমার খালা লোক মারফত আমার স্বামীকে দাওয়াত দিয়ে আসতে বলে, কারণ সামনে রোজার ঈদ ছিল, আমার স্বামী আমাকে নিয়ে বেড়াতে আসলো, এবং ঈদের পরের দিন সে চলে যাবে আমাকে নিয়ে, প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন সময় আমার খালা আমার স্বামীকে বোঝাই যে বাবা মেয়ের তো শরীর খুব খারাপ, ওর তো আর বেশিদিন বাকি নেই, ডেলিভারি হতে, তো রোজী এখানে থাকুক, বাচ্চা হয়ে গেলে তারপর নিয়ে যেও,একথা শুনেই আমার স্বামী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে, এবং আমার খালার সাথে তর্কে জড়ায়,আমাকে বলে গুছিয়ে নিতে এখনি সে চলে যাবে, আমি ও তখন আমার স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করি,কিন্তু সে বুঝতে চাইলোনা ,তখন আমি ও তার সাথে বাড়িতে যেতে রাজি হই না, তখন আমার স্বামী দিসামিসা না পেয়ে সে আমাকে রেখে চলে গেলো,সে চলে যাওয়ার এক মাস পরে আমার পেইন শুরু হয়,তারপর আমার মা আসে এবং আমাদের এলাকার দুজন ধাত্রীকে ডেকে আনেন,ধাত্রীরা আমাকে দেখে ভয় পেয়ে যান,কারণ আমাকে দেখতে পুরায় একটা কংকালের মতো, তখন তারা ডাক্তার ডাকতে বলে, তখন শুরু হয় আরেক কাহিনি, মা বলে আমার কাছে টাকা নাই কিভাবে ডাক্তার ডাকবো,তো খালা বলে আমার কাছেও টাকা নাই, এভাবেই চলতে থাকে পুরা এক সপ্তাহ আমার পেইন,এরপর গ্রামের প্রতিবেশীরা দলে দলে আমাকে দেখতে আসে, আর বলতে থাকে মেয়েটা বোধ হয় আর বাঁচবে না,তখন প্রতিবেশিরা অনেকেই টাকা সাহায্য করে এবং আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে, একটা সময় আমি নিস্তেজ হয়ে জ্ঞান হারায়, তখন বাড়ির পাশেই একটা ক্লিনিক ছিল, সেখানকার ডাক্তার ও নার্স আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে, ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী, একদিন পরে আমি মা হতে সক্ষম হয়,আমার কোল জুড়ে আমার ছেলে আসে, এবং আমি প্রতিবেশীর সাহায্য পেয়ে, আমি ও আমার সন্তান সুস্থ থাকি,পাড়া প্রতিবেশীরা অনেক ভালো ভালো খাবার রান্না করে এনে আমাকে খাওয়াতো,আমি চিরো কৃতজ্ঞ তাদের কাছে, আমি আজও তাদের জন্য সবসময়ই দোয়া করি, এরপর এক সপ্তাহ পরে আমার শশুড় বাড়িতে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে একটা চিঠি পাঠায়,আমার মা এবং খালা ছেলে হয়েছে এই খবরটা দেয়, সেখান থেকে কিছু দিন পরে আমার স্বামী আসে ছেলেকে দেখতে, আমার স্বামী ছেলেকে দেখতে আাসে একদম খালি হাতে সে কিছুই নিয়ে আসে নাই, এটা নিয়ে আবারও আমার মা এবং খালার সাথে ঝামেলা শুরু হয়, আমার স্বামী একদিন থেকে সে চলে যায়, এবং যাওয়ার আগে আমাকে বলে যায়, সে বাড়ি গিয়ে আমার শশুড়কে পাঠাবে আমি যেন আমার শশুড়ের সাথে বাড়ি চলে যাই, যেই কথা সেই কাজ, সে বাড়ি গিয়ে কয়েকদিন পরে আমার শশুড়কে পাঠায়,আমার শশুরও একটা খালি ব্যাগ নিয়ে আমাকে নিতে আসে, এটা নিয়ে ও অনেক কথা কাটাকাটি হয়,কিন্তু আমি তখন সবাইকে বলি আমি চলে যাবো আমার শশুড়ের সাথে,এরপর প্রতিবেশী ও আমার আত্মীয়রা সবাই সাহায্য করে, যে যেমন পারে কিছু টাকা সাহায্য করে, তারপর আমাকে ও আমার ছেলে কে কিছু কেনাকাটা করে দেয়, এরপর আমি শশুড়ের সাথে চলে যাই স্বামীর বাড়ি, যাওয়ার পরে ও অনেকের অনেক প্রশ্ন, নানার বাড়ি থেকে নাতি ছেলেকে কি কি দিয়েছে, একেক জনের একেক রকম প্রশ্ন, এদের ভিতর কিছু মানুষ আমার পক্ষে ও কথা বলেছিল সেদিন, যায় হোক এভাবে তিন চার মাস অতিবাহিত হলো,আমার ছেলে বুকের দুধ পাইনাই,তাকে কৌটার দুধ কিনে খাওয়ানো হতো, আমি শশুড় বাড়ি আসার সময় দুইটা কৌটা কিনে আনছিলাম, এরপর আমার ছেলের দুধ আনতে বললে, শশুড় শাশুড়ী এবং আমার স্বামী সহ সবাই বলে, আমাকে দু তিন বেলা খাওয়ায়ে কি লাভ, যদি ছেলের দুধ কিনে খাওয়ানো লাগে,এরকম কথা শুনার পরে আমি যদি কিছু বলতে যায়, তখনই আমাকে মাইর খেতে হয়, এরপর গ্রামের কিছু মহিলারা বললো আতপ চাল বেটে সুজির রান্না করে খাওয়াতে, তাই করতে থাকলাম, এরপর মাইর ধোর খেয়ে ঘাত প্রতিঘাত সয়ে বছর দুই পার হলো,এখন আমার ছেলে কিছু চাইতে ও শিখছে খাইতে ও শিখছে, তখন আমি আমার স্বামীকে ছেলের জন্য কিছু খাবার আনতে বললে, প্রথম দিকে বলতো মনে নাই খাবার আনতে, তখন আমি একটি আধটু কথার উত্তর দিতাম বা তর্ক করতাম, শুধু মাত্র আমার ছেলের জন্য, এরপর যদি ও একআধটা দিন খাবার নিয়ে আসতো,তো তখন আমার শাশুড়ী বলতো ছেলের ছুতায় পোয়াতি বাঁচে, অর্থাৎ আমি আমার ছেলের কথা বলে খাবার আনায়,এবং সেটা আমি খেয়ে ফেলি,এভাবেই সংগ্রাম করে সংসার চলতে থাকলো আর ও কিছু মাস,এরপর আমি একদিন স্বামী সন্তান নিয়ে খালার বাড়ি ও মায়ের বাড়ি বেড়াতে আসলাম, চার পাঁচ দিন থাকলাম,চলে যাওয়ার আগের দিন আমার খালার কাছে আমি ছিলাম, সেদিন দুপুরের পরে আমার ছেলে, খালাদের পুকুরে ডুবে যায়, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে,ঐ খানে আমার মা এসে পৌছায়,এবং পুকুরের ঘাটে পা ধুতে যায়, তখন আমার মা আমার ছেলেকে দেখতে পাই,এবং সাথে সাথে লাফ দিয়ে পানিতে পড়ে আমার ছেলেকে উঠায়,আমার মায়ের চিৎকার শুনে আমি সহ আশপাশের লোকজন হাজির হয়,এরপর একটা লোক আমার ছেলেকে মাথার উপর নিয়ে ঘোরাতে থাকে, কিছুক্ষণ ঘোরানোর পরে লোকটা বলে বাচ্চাটা মারা গেছে, এটা শুনে আমি তো ছটফট করতে লাগলাম, তারপর আমার এক মামা আমার ছেলেকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়, এবং সেখানে ডাক্তার ও মৃত্য বলে, এরপর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে,আমার স্বামী কোনো একটা বাজারে ছিল, সেখান থেকে সে শুনতে আমাদের ছেলে পানিতে পড়ে মারা গেছে, সে দৌড়ায়ে বাড়ি আসে, এবং ঘটনার সত্যতা দেখে আমাকেও মেরে ফেলবে বলে আমার দিকে তেড়ে আসে, তখন ওখানকার উপস্থিত সবাই তাকে সামলানোর চেষ্টা করে, আর আমাকে দুরে সরিয়ে দেয়,এরপর আমার স্বামী বলে তার ছেলেকে সে নিজের বাড়ি নিয়ে মাটি দিবে, এরপর যখন সবাই তোরজোর করছে আমার ছেলেকে নিয়ে আমার শশুড় বাড়ি যাবে, ঠিক তখনই ফেরেস্তার মতো একজন ঐখান আসলো,উনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন, ওনার কাছে আমি কয়েক বছর ফ্রীতে প্রাইভেট পড়েছিলাম,হিসাব মতো লোকটা আমার স্যার ছিলেন, তো স্যার যখন শুনলেন, আমার ছেলে মারা গেছে, তখন স্যার ও স্যারের এক বন্ধু ছেলেকে দেখতে আসেন,দেখতে এসে স্যারের বন্ধু সবকিছু শুনে বুঝে উনি তখন বলেন পানিতে পড়া রুগী সহজে মরে না,লোকটা তখন ডাক্তারি পড়তেন, তো উনি বললো আমি একটু চেষ্টা করে দেখবো, তখন সবাই বললো হ্যা দেখেন, উনি তখন পালস করে অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টা করলেন, কিছুক্ষন করার পরে আমার ছেলে নাকি নড়ে উঠেছে, তখন লোকটা বললো একটা ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান বাচ্চা এখনো বেঁচে আছে, উনার কথা শুনে অনেকেই অনেক কথা বলতে লাগলো, তখন আমার এক মামা ও আর এক ভদ্রলোক আমার ছেলেকে নিয়ে আবারও সদর হাসপাতালে যায় তখনো সদরে ভর্তি নেয়নি, এরপর একটা প্রাইভেট ক্লিলিনিকে নিয়ে গেল, সেখানে সারা রাত ধরে ছেলের চিকিৎসা চললো,এবং উপর ওয়ালার দয়ায় আল্লাহর কৃপায়, ও আল্লাহর আমাকে মেহেরবানি করে আমার ছেলেকে বাচিয়ে দেয়, সারারাত ক্লিনিকে থেকে সকাল এগারোটার দিকে বাড়িতে আনা হয়,এই এতো সময় ধরে ছেলের চিকিৎসা চলা কালিন আমাকে একটা ঘরে বন্দি করে বেধে রেখে দেওয়া হয়েছিল, যখন ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে আসলো তখন আমাকেও নিয়ে গেলো তখনও আমার ছেলে বুকের দুধ খাইতো আমি ছেলেকে বুকে নিয়ে পাগলের মতো কাঁদতে লাগলাম, ছেলেকে একটু সুস্থ করে শশুড় বাড়ি চলে আসলাম, এখন আমার স্বামীর কিছু কথা বলি আমার স্বামী ছিল একজন নাম করা জুয়ারি,সে জুয়া খেলতো সবসময় আর মেয়েলি বিষয়ে ও তার স্বভাব চরিত্র খারাপ ছিল সে জন্য কারণে অকারণে সবসময় সংসারে মারামারি ঝগড়াঝাটি অশান্তি লেগেই থাকতো,একটা সময় আমার স্বামীর সঙ্গে আমার অনেক ঝগড়া হয়,এবং আমি ছেলেকে নিয়ে আমার মায়ের কাছে চলে আসি,এরপর আমার স্বামী আমাকে নিতে আসলে তাকে বোঝায় আমাকে নিয়ে মায়ের কাছাকাছি ঘর ভাড়া নিয়ে সংসার করতে, অনেক বোঝানোর পরে সে রাজি হয় এবং আমরা একট টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করি বেশ কিছু দিন ভালো চলার পরে, আমার স্বামী পরকিয়ায় জড়ায় এবং সেই মহিলাকে নিয়ে কোথায় যেন চলে যায়, তখন আমি ছেলেটাকে নিয়ে আবারও সমস্যায় পড়ে যায়, ও আমার মায়ের কাছে চলে আসি, সেখানে ও অশান্তি লেগেই আছে আমাকে নিয়ে, এরপর দুসপ্তাহ পরে আমার স্বামী আমার খালার কাছে আসে, খালার কাছে ক্ষমা চেয়ে,খালাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমাকে এনে দিতে বলে, খালাও আমাকে বুঝিয়ে স্বামীর সঙ্গে যেতে বলে, আমি ও গেলাম, আমার স্বামী যে উপার্জন করতো তা দিয়ে সংসার ভালো ভাবে চালানো যেতো,কিন্তু আমার স্বামীর,যে বদ অভ্যাস গুলো ছিল, সে কারণে সংসারে অভাব অনাটন লেগেই থাকতো কোনোদিন একবেলা খেয়ে থাকি তো দুবেলা না খেয়ে থাকি, আাবার কোনদিন দুবেলা খাই তো একবেলা না খেয়ে থাকি, এরপর ও সংসারে কখনো নির্যাতিতো হয়,আবার কখনো স্বামীর হাতে মাইর খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি,এভাবে কয়েক বছর কেটে গেল,তখন আমার ছেলের বয়স আট বছর, সে সময় আবার একটা বাচ্চা নেওয়ার জন্য আমার স্বামী সহ আত্মীয় স্বজনরা আমাকে বলে, আমার স্বামী ভালো না,এই বলে আমি দ্বিতীয় বাচ্চা নিতে রাজি হয় না, তখন সবাই মিলে আমার উপর চাপ সৃষ্টি করে, আরেকটা বাচ্চা হলে তোর স্বামী ভালো হয়ে যাবে, আমি ও দেখছি কিছু দিন যাবৎ আমার স্বামী খুব ভালো ব্যাবহার করছে আমার সঙ্গে, তখন আমি ও আরেকটা বাচ্চা নিতে আগ্রহী হলাম,তারপরের বছর আমার কোল আলো করে কন্যা সন্তান আসে, মেয়েকে দেখে সবাই খুব খুশী হলাম, এরপর আবার শুরু হলো আমার দুঃখের জীবন, আমার মেয়ের যখন তিন মাস বয়স, তখনও আমার স্বামী আরেকটা বিয়ে করে আমার শশুড় বাড়ি চলে যায়, এবং সে বলে আমি তার বাড়ি থাকতে চাই না, তাই সে দ্বিতিয় বিয়ে করেছে, এরপর আমি কিছু গন্যমাণ্য লোক পাঠাই শশুর বাড়ি, তাদের কে আমার স্বামী বলে আমি যদি সংসার করতে চাই, তাহলে তার বাড়িতে গিয়ে সতিনের সঙ্গে মিলেমিশে সংসার করি, একথা শুনে সবাই চলে আসে,এবং আমাকে বলে তুমি কি করবা সিদ্ধান্ত নাও,এদিকে আমি স্বামীর ভালো ব্যাবহার দেখে, তাকে একটা এনজিও থেকে কিছু টাকা লোন নিয়ে দিয়েছিলাম, সব মিলিয়ে তখন আমি চোখে অন্ধকার দেখছি, এক দিকে আমার ছেলে মেয়ে কে নিয়ে খাবারের চিন্তা,ঘর ভাড়ার চিন্তা তো অন্যদিকে কিস্তির চিন্তা, আমি পুরাই পাগলের মতো শুধু কান্না করছি।কিছু কিছু মানুষ তখন আমাকে বলে দুটো বাসা বাড়িতে কাজ করলে পেটের ভাত হয়ে যাবে, তবুও ঐ স্বামীর ঘরে যাস না,কিন্তু আমি তো বুঝতেছি আমার নগদ টাকার দরকার, কারণ প্রতি সপ্তাহে ২২৫টাকা করে কিস্তি পরিশোধ করা লাগে, আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি,তখন আমাদের বাড়ির পাশে একটা ভাবি দেখে আমি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে নির্জন একটা জায়গায় বসে কান্না করছি জোরে জোরে, তখন ভাবি আমার কাছে এসে কি হয়েছে আমার জিজ্ঞেস করে, আমি ভাবিকে সবকিছু বলি,এরপর ভাবি আমাকে বলে তোর মেয়েকে কারো কাছে রাখা যাবে, তাহলে তোকে আমি কাজে নিয়ে যেতে পারি, আমি বললাম হ্যা সারাদিন রাখা যাবে, তখন ভাবি বললো চিন্তা করিস না, সকালে আমার সাথে কাজে যাস,ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকা খাওয়ার কস্ট হবে না আর,আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম কি কাজ,তখন ভাবি বললো, জায়গাটার নাম নিলাম না,ভাবি বললো ওখানে একটা প্রোজেক্ট এর কাজ চলছে অনেক মহিলারা ওখানে কাজ করছে, প্রতিদিন ৬০.৭০ টাকা করে পাই, তুই ও কাজ করলে ৬০-৭০ টাকা করে পাবি,তাহলে তোর আর চিন্তা থাকবেনা, তখন আমি ভাবিকে বললাম আমি পারবো করতে ভাবি বললো পারবি,আমি আছি না।
🌋আল্লাহর রহমতে শুরু করলাম জীবনের প্রথম কর্মস্থল 🌋🚸
💞পরের দিন মেয়েকে আমার এক খালাতো বোনের কাছে রেখে গেলাম কাজে, কাজ শেষ করে সন্ধায় ফিরে এসে দেখি ছেলে মেয়ে দুজনের দিকে তাকানো যাচ্ছে, দুটো ছেলে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় আসলাম, আমি ও কাদি আমার ছেলেও কাদে এমনকি আমার অবুঝ বাচ্চাটাও কাঁদে। এভাবে দু'সপ্তাহ কাজ করছি, কিন্তু দেখলাম এক সপ্তাহ কাজ করলে ৪২০ টাকার মতো পাই,এটা দিয়ে খাবো না কিস্তি চালাবো,তখন ঘরের কিছু জিনিস পত্র বিক্রি করে কিস্তি পরিশোধ করে দিয়ে, ইতিমধ্যে দুমাস পার হয়ে গেছে, আমার স্বামী আবারও আমাদের এলাকায় আসছে, তখন সচারাচর মোবাইল ফোন ছিল না বিধায়,আমি তার আর খোঁজ খবর নিতে পারিনি, এবং সেও নেয়নি,তারপর সে এসে যখন দেখলো আমি ছেলে মেয়েকে রেখে কাজ করছি, তখন আাবারও সে আমার মায়ের কাছে ও খালার কাছে গিয়ে তাদেরকে কি দিয়ে কি বলে বোঝায় আমি জানিনা,সে নাকি পরে বিয়ে করা বউকে তালাক দিয়ে আসছে, তখন আমার মা খালা আমাকে বোঝায়, আমি তার সাথে সংসার করতে আর রাজি হয় না, এরপর আমি যখন কাজে চলে যায় তখন সে ছেলে মেয়েকে নিয়ে, গ্রামের গন্যমান্য লোকদের কাছে যায়, তখন এলাকার লোকজন আমাকে ডেকে বুঝিয়ে আবারও সংসার করতে বলে,তাদের কথা উপেক্ষা করা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল, তাই আমি তাদের কথা মতো আবারও সংসার শুরু করি, তারপর আমি কাজটা বাদ দিয়ে দেয়, যেহেতু আমার স্বামী ভালো না, তাই আমি আবারও আমাদের এলাকায় হাতের কাজ করায় এমন একটা সমিতি ছিল, আমি সেখান থেকে হাতের কাজ বাসায় এনে কাজ করি,মাস শেষে কিছু টাকা পাই তা দিয়ে আমার ও ছেলে মেয়ের কাপড় চোপড়,ও হাত খরচটা চলে, এভাবে চলতে থাকলো জীবন যাত্রা, এর ভিতর ও অনেক ঘাত প্রতিঘাত ঝড়বৃষ্টি পার করে ছেলে মেয়ের কথা ভেবে সংসার চললো,প্রায় ৮-৯বছর পরে আবারও আমার স্বামী অন্য একজনের স্ত্রীর সঙ্গে পরোকিয়ায় লিপ্ত হয়,এবং এলাকার মানুষের কাছে ধরা পড়ে, এরপর সেটা নিয়ে ও অনেক পানিঘোলা হয়,তারপর আমার স্বামী ডিসিশন নেই, আমাদের নিয়ে ঢাকা যাবে, ঢাকাতে তার আত্মীয় স্বজনরা থাকে, ওদের মাধ্যমে,এখানকার সমস্ত কিছু বিক্রি করে দিয়ে ঢাকা চলে যায়, তখন আমার ছেলে ক্লাস টেনে পড়তো,ও মেয়ে ক্লাস থ্রিতে পড়তো,ঢাকা যাওয়ার পরে আমরা দুজনেই একটা গার্মেন্টসে চাকরি পাই, কোয়ালিটি সেকশনে,এখন চাকরি তো পেলাম ছেলে মেয়ের পড়াশোনা কি হবে, ঢাকায় পড়াশোনা করাতে গেলে অনেক টাকার দরকার, তখন আমার ছেলে আর পড়াশোনা করতে চাই না বলে,অনেক বোঝানোর পরে ও আমার ছেলে আর পড়াশোনা করতে রাজি হলো না,বললো বোনটিকে ভালো একটা জায়গায় রেখে পড়াশোনা করাও,তখন আমি ছেলেকে বললাম পড়াশোনা না করলে তো কাজ করা লাগবে না হলে তো তুমি নষ্ট পথে চলে যাবে, তখন আমার ছেলে বললো আমি কাজ করবো কিন্তু আর পড়াশোনা করবো না, এরপর আমার স্বামীকে বুঝিয়ে আমার মেয়েকে যশোরে আমার এক খালাতো বোনের কাছে পাঠাই দিই,তার কাছে থেকে আমার মেয়ে পড়াশোনা করবে, মাসে মাসে টাকা পাঠাবো।এরপর ঢাকার জীবন যাত্রা শুরু হলো,ছেলেটাকে একটা কাজে দিয়ে দিলাম, এখন আমরা তিন জন সদস্য কাজ করছি, মাস শেষে ভালো একটা স্যালারি আসে সংসারে,ঢাকার শহরে সবকিছু খরচ খরচা করেও বেশ কিছু টাকা জমা থাকে, আমি ও আমার ছেলে মাসে যে টাকাটা পাই সব আমার স্বামীর হাতেই তুলে দিই,সে আমার ছেলেকে বলে, খেয়ে দেয়ে যা থাকবে প্রতি বছর এক বিঘা করে ধানের জমি বন্ধক রাখবো,এভাবে দুতিন বছর চললো কোনো রকমে
কিন্তু সে তার সবাব পালটাতে পারে নি,চরিত্র হিন ব্যাক্তি কখনো ভালো হয় না সে
আবারও প্রেম করা শুরু করে, এটা অনেকের চোখে পড়ে এবং আমাকে সবাই অনেক কথা বলে,আমি বাসায় এসে জিজ্ঞেস করলে উল্টো আমাকে জানোয়ারের মতো মারা শুরু করে, এভাবে কিছু দিন চলতে থাকলো, তারপর একদিন আমি আমার ছেলের কাছে বললাম, ছেলে তো তখন মাশাল্লাহ অনেক বড়ো হয়েছে, ছেলে সব শুনে বুঝে প্রতিবাদ করতে গেলে তখন সে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে,তখন আমার ছেলে রেগে গিয়ে অনেক কথা শুনায়,ও আমাকে বলে তুমি চলে যাও,আমি ও চলে যাবো এটা বলে ছেলেটা আমার অনেক কান্নাকাটি করে, ছেলের কান্না দেখে আমি তখন চুপ হয়ে যায়, তখন ভাগ্যের উপর জীবনটাকে ছেড়ে দিই,এবং মনে মনে নিজের জন্ম হওয়াটায়,আজন্ম পাপ বলে, মনকে বোঝায়,আমার ছেলে মেয়ে ভালো থাকুক আমি তো জন্ম থেকে জ্বলছি, আমিই জ্বলি,এভাবেই লাঞ্চনা গঞ্জনা মাইর খেয়ে সহ্যকরে থাকতে লাগলাম, এরপর ২০১৬সালে আমার স্বামী আবারও একটা বিয়ে করলো,তখন আমি আর কারও কাছে কিছু না বলে, সাথে সাথে তাকে ডিভোর্স দিয়ে, যশোর চলে আসি, এরপর আমার স্বামী ও আমার ছেলে সেই বউকে নিয়ে আমার শশুড় বাড়ি চলে যায়, এর মধ্যে আমি ডিসিশন নেই আমি বিদেশ আসবো,আমার মায়ের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো এই একটা বিষয়ে, সেটা হচ্ছে আমি আমার মাকে বলি মা আমি বিদেশে যাবো,হয় তুমি আমার বিদেশ যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দাও,আর তা নাহলে আমি আত্মহত্যা করবো,তখন আমার মা আমাকে বোঝলো বললো ধৈর্য্য ধর,আমি তোকে বিদেশে পাঠাবো,
🕹এখন গন্তব্য সৌদি আরব কর্মস্থল 🕹
✍️যে কথা সেই কাজ, আমার মা তখন পাশের বাড়ির এক বোনের সঙ্গে কথা বলে আমাকে সৌদি পাঠানোর সমস্ত ব্যাবস্থা করে, আমি সৌদি আসার আগে আমার মেয়েটাকে মায়ের কাছে রেখে আসি,সৌদি আসার প্রায় আট মাস পরে আমার ছেলে আমাকে ফোন দেয়, এবং সে কান্নাকাটি করে,, আমি তখন আমার ছেলেকে যশোর চলে আসতে বলি,সে আমার কথা মতো যশোর চলে আসে,এরপর আমার ছোট খালার ছেলে আমার ছেলেকে একটা ফার্নিচার শোরুমে কাজে দেয়, এভাবে বেশ কয়েকমাস চললো ততোদিনে আমার সৌদি আসা দেড়বছর হয়ে গেছে, তখন আমি শুনতে পাই আমার স্বামী আমাদের এলাকায় এসে পাগলের মতো আচার আচরণ করছে, এবং সে বলে বেড়াচ্ছে আমি খুব ভালো ছিলাম, সে আমার সম্পর্কে যে কলংক দিয়েছিল সেটা ও মিথ্যা বলেছিল, তারপর সে যাকে বিয়ে করেছিলো তাকেও রাখবে না,এরকম অনেক কথা বলতেছিলো, সবার কাছে, আমাকেও তখন অনেকে ফোন দিয়ে আমার স্বামীর সম্পর্কে অনেক তথ্য জানায়,তখনও আমি কারোর কথায় কোনো গুরুত্ব দেয় না,এমতাবস্থায় আমার স্বামী আবারও ঘর ভাড়া নিয়ে আমাদের গ্রামে থাকতে শুরু করলো,এবং ছেলে মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখলো,ছেলে মেয়ের তো কিছু করার নেই, যতোই খারাপ হোক বাবাতো ওদের ও বাপের প্রতি মায়া লাগে, এভাবে দুই তিন মাস পরে শুনলাম সে যাকে বিয়ে করেছিলো তাকে তালাক দিয়ে দিচ্ছে, আর মানুষের কাছে বলছে সে আমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবে, এই বলে সে আমাদের গ্রামেই থাকতে লাগলো, এর মধ্যে আমার মা খালাকে আবারও রাজি করালো তার সাথে আমি যেন আবার সংসার শুরু করি, ছেলে মেয়ের কথা ভেবে আবারও তার সাথে সংসার করতে রাজি হলাম, এরপর আমার স্বামী তার মতো করে আমার ছেলে মেয়েকে নিয়ে নতুন করে আবারও সংসার করার আসায় সংসার পেতে, আমার দেশে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকলো,আমি ও ২০১৯সালে দেশে গিয়ে আবারও আমরা আমাদের সংসার শুরু করি, তারপর আমার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে আমি আবারও সৌদি চলে আসি, আমার আবারও সৌদি আসার কারণ আমি নিজে কিছু করতে চাই,যদি আবারও সংসার কোনো সমস্যা হয়,তখন যেন আমার একটু সাফট খুঁজে পাই, আর যেন অসহায়ের মতো চোখের পানি ফেলতে না-হয়, ভালবাসার প্লাটফর্মে অনেক আশা নিয়ে যুক্ত হয়েছি,যেন দেশে গিয়ে কিছু একটা করে চলতে পারি, নিজের বলার মতো একটা গল্প যেনো আমি তৈরী করতে পারি,আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের দোয়া ও আমাদের এই ভালবাসার প্লাটফর্মের সকল ভাই ও বোনদের দোয়া ভালবাসা থাকলে,হয়তো আমার আগামীর পথ চলা টা মসৃন হতে পারে, আপনাদের সকলের দোয়া আমার কাম্য,।♦♦♦♦♦♦♦♦♦
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রিয় স্যারের প্রতি এতো সুন্দর প্লাটফর্ম তৈরি করে দেবার জন্য।
☣পরিশেষে সবার দীর্ঘায়ু কামনা করে আমার ক্ষুদ্র লেখাটুকু পড়ার অনুরোধ রইল। কথায় যাকে বলে জীবন কাহিনী ☣
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৭৭৮
তারিখ ০৫-০৪-২০২২
রোজিনা খাতুন রোজী
🇧🇩জেলা - যশোর
থানা কোতোয়ালি,
গ্রাম- চাচড়া বাজার,
❣️ব্লাডগ্রুপঃ B+
🎖️ব্যাচ নং-১৭
🥇রেজিষ্ট্রেশন - ৯০২৪৭
🇸🇦বর্তমান অবস্থান -সৌদ আরব,