স্বপ্ন যখন আকাশছোঁয়া মেঘ দেখে তবে কেন ভয় পাওয়া?
_____________ 💐জীবনের_গল্প💐________________
নমস্কার,
প্রথমে ধন্যবাদ জানাই অসীম করুণাময় সৃষ্টিকর্তাকে। যিনি আমাকে ও আপনাকে এই মহান বিশ্বের সৃষ্টির সেরা জীব,মানুষ হিসেবে এই সুন্দর ভুবনে এখন ও বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং আলো, বাতাস, পানিসহ পৃথিবীর সমস্ত কিছু দিয়ে আমাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমার বাবা-মায়ের প্রতি যাদের জন্য আমি এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছি। পেয়েছি আপনাদের মতো হাজারো ভাই বোনের ভালবাসা।
🌸কৃতজ্ঞতা_প্রকাশ🌸
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আমাদের সবার প্রিয় মেন্টর""জনাব_ইকবাল বাহার জাহিদ ""স্যারের প্রতি কোটি কোটি সালাম, শ্রদ্ধা,সম্মান ও ভালবাসা জ্ঞাপন করি। আমাদের প্রিয় স্যার বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের মধ্যে এক মহা মূল্যবান রত্ন।স্যারের নিঃস্বার্থ ভালবাসা, পরিশ্রম, টানা লেগে থেকে নিজ হাতে তৈরি করেছেন এই প্লাটফর্ম। বাংলার বুকে একজন ভালো মানুষ, মানবিক মানুষ,সাহসী মানুষ, উদ্যোক্তা মানুষ, আমাদের প্রিয় "জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ" স্যার হচ্ছে আমাদের জন্য একটা জলন্ত প্রদীপ। যে প্রদীপের আলোয় আলোকিত করছেন হাজারো তরুণ -তরুণীদের। বর্তমান পরিস্থিতিতে আজ সবাই অস্থির, দিশেহারা মানব জাতি।
কি করবে, কি করা উচিত, কীভাবে করলে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা যায় সেটাই ভাবছে !!! কিন্তু পথ খুঁজে পায় না।
পথ খুঁজে না পাওয়া, দেশের মানুষের মনে আশার আলোর জ্বালানোর যে শিক্ষা স্যার দিয়ে যাচ্ছে সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।যে মানুষটা তিল তিল করে মানুষের জন্য সব ত্যাগ শিকার করে যাচ্ছে, উনার প্রতি বিশ্বের বুকে বাস করা লাখো লাখো পরিবারের, লাখো লাখো মানুষের অন্তরের দোয়া ও আমাদের সবার মানবিক নিস্বার্থ ভালবাসা আবারও জ্ঞাপন করি।
প্রিয় স্যারের লেখা প্রতিটি সেশন থেকে চমৎকার উপস্থাপনা ও সেশন চর্চার মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।উদ্যোগক্তা হওয়ার স্বপ্ন পুরণের লক্ষ্যে।
এছাড়াও নিজ জেলা ফরিদপুর এবং নগরকান্দা উপজেলার দায়িত্বশীল_ ভাই-বোনের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। দায়িত্বশীল সহ যারা আমায় সহযোগিতা করছে।ফাউন্ডেশনের সকল আজীবন সদস্যদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা জানাই।
🌼আমার_পরিচয়🌼
আমি পূণিমা রানী মালো,
আমি MBA করেছি,এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছি।
আমার জন্মস্থান ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায়, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম হয়-১৯৯০ সালে, আমরা ২ বোন ১ ভাই। আমি আমার বাবা মায়ের ১ ম সন্তান। আমার বাবা একজন মৎস্যজীবী। আমার মা একজন আর্দশ গৃহিনী।
🌹আমার_শৈশব🌹
আমি পূর্ণিমা, আমি আমার পরিবারের তিন ভাই- বোনের মধ্যে একমাত্র আমি ছিলাম খুব শান্ত শিষ্ট। আমি বাবাকে প্রচন্ড ভয় পেতাম,এখনও অনেক ভয় পাই,জানিনা কেন তবে সে আমাকে অনেক ভালোবাসে,আমিও বাবা ও মাকে অনেক ভালো বাসি।
বন্ধুদের সাথে আমার শৈশবকাল বেশ ভালই কেটেছে। আমি একজন মেয়ে শিশু হওয়াতে আমার অধিকাংশ বন্ধু ছিল মেয়ে। আমরা অনেক আনন্দের সাথে কানামাছি ভোঁ ভোঁ, বউচি, গোল্লাছুট এবং আরো বিভিন্ন খেলা খেলতাম।
তবে আমি ছোট বেলা থেকে একটা বিষয় নিয়ে খুব বেশি কষ্ট পেতাম,আমার গায়ের রং কালো,এই বিষয়টি নিয়ে আমাকে অনেকে কথা শোনাতো,আমার পাড়া প্রতিবেশী,আত্মীয় স্বজনরা আমার বাবা মাকে বলতো তোমাদের মেয়েটা এত কালো হয়েছে,ওকে নিয়ে আমাদের বড় চিন্তা হয়,কি করে যে ওকে বিয়ে দিবে,এ কথা গুলো শুনে আমার বাবা - মা যেমন কষ্ট পেত,ঠিক তেমনি আমিও অনেক কষ্ট পেতাম,যে কষ্ট গুলো কাউকে শেয়ার করা যেত না।এখন আমি আমার কাছের মানুষ, ভালোবাসা মানুষ আমার শ্রদ্ধেয় সকল ভাই- বোনদের পেয়েছি যাদের কাছে সমস্ত কষ্টের কথা শেয়ার করা যায়।
আমার বিয়ের পর এই কালো হওয়ার কারণে অনেক বিড়ম্বনায় পরতে হয়।
University জীবনে আমার ঘটে যাওয়া একটি স্মরণীয় ঘটনা, আমার স্বামী আমাকে প্রথম দিন University তে নিয়ে যায়, ও ক্লাসের বাইরে অপেক্ষা করছিল,আমি ক্লাস করছিলাম,আমাদের পরিচিতি পর্ব চলছিল,স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল তোমার নাম কি,আমি আমার নাম বললাম,স্যার আমার নাম পূর্ণিমা
স্যার হেসে বললেন তোমার নামের সাথে তো তোমার চেহারার মিল নেই,তোমার নাম পূর্ণিমা না হয়ে অমাবস্যা হলে ভালো হতো,আমি খুব কষ্ট পেলাম,আমি আমার জীবনে একথা গুলো অনেক শুনেছি কিন্তু কখনো প্রতিবাদ করিনি।
আমি আমার চারপাশে তাকালাম,দেখলাম ছেলে মেয়েরা সবাই হাসছে,তখন আমি সহ্য করতে পারলাম না,আমি তখন স্যার কে হেসে দিয়ে বললাম স্যার হয়তো আমি আপনাদের চোখে সুন্দর নই কিন্তু আমি আমার বাবা- মায়ের চোখে পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও বেশি সুন্দর,তাইতো তারা আমার নাম রেখেছেন পূর্ণিমা।
স্যার তখন সরি বলে বললেন আসলে আমার একথাটি বলা ঠিক হয়নি, তুমি কষ্ট পেও না।
আমি সকলের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলবো
কালো হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেয়া কোন পাপ নয়,
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।
শৈশব সবার কাছেই অনেক প্রিয়,আমি ও খুব মিস করি।
শিশুকালের সেই দিনগুলো কতই না সুন্দর এবং নিষ্পাপ ছিল। মাঝে মাঝে আমি ভাবি কেন আমার ওই শিশুকাল হারালাম।
কিন্তু হায়!
প্রকৃতি যে তার নিজের গতিতে চলে। সময় তো আর থেমে থাকে না আমিই সেই পূর্ণিমা। এখন ভাবলে অবাক লাগে ছোট্ট বেলায় কেমন ছিলাম আমি। 🤗
📖আমার_লেখাপড়া📖
আমি প্রাইমারি শেষ করেছি সদরপুরের একটা প্রাথমিক স্কুলে । আমি যখন দশম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার বিয়ে হয়। তারপর আমার ইচ্ছা ও আমার স্বামীর ইচ্ছায় আমি আবার পড়াশোনা শুরু করি।তারপর বাণিজ্য বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচ এসসি পাশ করি সদরপুর থেকে।
সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আমি BBA এবং MBA পাশ করি।
✨✨✨✨✨আমার বেদনা✨✨✨✨✨
প্রতিটি মেয়ে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যায়, আমি ও গিয়েছিলাম কিন্তু না শ্বশুর বাড়ি তে যাওয়ার পরই আমার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল। আমার বাবা আমাকে এই কোথায় পাঠালো।এখানে শুধু দারিদ্র্যতা আর দারিদ্র্যতা।
বাবা এমনটি কেন করলো,ছোট বেলা থেকে সবাই আমাকে কালো বলতো, তাই আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমার মেয়ের জামাই হতে হবে সুন্দর। বাবা তাই করলো গরিব ঘরের এক সুন্দর ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিল।
বাবা বললো আমি তোমাকে সুন্দর বর দিলাম,এখন সুন্দর ঘর বানানোর দায়িত্ব তোমার।
আমার শ্বশুরবাড়ির অনেক ধার দেনা ছিল, তাই তারা তাদের ছেলেকে একটা কালো মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে মোটা টাকা পন নিয়ে তারা তাদের ঋণ পরিশোধ করতে চেয়েছিল।
আমাদের বিয়ের আগেই আমার স্বামীর ব্যবসা বাণিজ্য সব বন্ধ হয়ে গেল, তার মানে বিয়ের পরে আমার স্বামীর সম্পূর্ণই বেকার ছিল। বিয়ের পরেও আমি সুন্দর না বলে অনেক কথা শুনতে হয়েছে, এমনকি আমার স্বামীকেও অনেকে অনেক কথা শুনিয়েছেন।
আমরা দুজনে অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেই যে তুমি তোমার কাজ শুরু কর, আমি আমার পড়াশোনা আবার শুরু করি।আমি আমার বাবার বাড়িতে চলে যাই গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেই। এসএসসি পাস করি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য আমার বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন ছিল,কলেজে ভর্তি হওয়ার ওই সামান্য টাকা টুকু তখন আমি জোগাড় করতে পারিনি কারন আমার স্বামী যা ইনকাম করতো তার প্রায় সবটা ওর বাবা মাকে দিয়ে দিত।তখনো ওর বাড়ির অবস্থা অনেক খারাপ ছিল।আমি আমার বাবা-মাকে বলতে পারিনি আমার টাকা লাগবে। বিয়ের পরে বাবার বাড়িতে থাকা কতটা বেদনা দায়ক এটা বলে বোঝানো যাবে না।সরকারি কলেজে ভর্তির ডেট শেষ,আমার স্বামী বাসায় আসার পরে আমি প্রচন্ড কান্না করলাম ও আমার কান্না দেখে বাসা থেকে চলে গেল।কিছুক্ষন পর ও টাকা ধার করে নিয়ে আসলো, আমাকে বললো এখনি কলেজে যাও,আমি আমার কান্না থামিয়ে একটা বেসরকারি কলেজে ভর্তি হলাম। আমি আমার কলেজ লাইফটা মাত্র ৪ টা জামা দিয়ে কাটিয়েছি।আমি যখন আমার স্বামীকে বলতাম একই জামা পড়ে আমার প্রতিদিন কলেজে যেতে ভালো লাগেনা তখন ও আমাকে বলতো তুমি ভালো মানুষ হও,ভালো ভাবে পড়াশোনা কর যাতে সবাই তোমার গুণের প্রশংসা করে।ও সব সময় চাইতো
আমি অনেক পড়াশোনা করি,অনেক বড় মানুষ হই,আমি যেন সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি, সমাজের মানুষ আমার গায়ের রং নিয়ে যে কটু কথা বলতো ও সেটা সহ্য করতে পারতো না। ও আমাকে অনেক ভালোবাসে আমিও ওকে অনেক ভালোবাসি।
আজকের আমি শুধু ওরই অবদান।
তারপর ও ব্যবসা বাণিজ্য করে একটা ভালো পজিশনে আসলো,আমরা জায়গা কিনে বাড়ি করলাম,ওরা ৫ ভাই দুই বোন, ভাই বোন সহ ওর বাবা মাকে আমাদের নতুন বাড়িতে নিয়ে আসলাম।সমস্ত পরিবার ওর টাকায় চলতো।
ভালোই কাটছিল আমাদের দিন। এভাবে কয়েক বছর কেটে গেল।ও ওর দুই বোনকে বিয়ে দিয়ে আবার অনেক টাকা দেনা হয়ে গেল। এরই মধ্যে আমি দুই সন্তানের জননী।
যখন অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেলাম তখন তারা আমাদের আলাদা করে দিল,তারা আমাদের সাথে থাকতে চাইলো না।
আবার আমরা একা হয়ে গেলাম।আবার আমাদের যুদ্ধ শুরু।
ও মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়লো। আমি তখন ও কে বললাম তোমার বাবা- মা, ভাই- বোন তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে তাতে কি হয়েছে, আমি তো তোমার পাশে আছি।এরপর আমরা ঢাকা চলে এলাম ও একটা কোম্পানি তে চাকরি নিল,আমি একটা কোম্পানি তে চাকরি নিলাম
এখন আমরা ঋণ পরিশোধ করে, ঢাকা দুটো দোকান দিয়েছি,আমরা দুজনে জব করছি,ভালো আছি।
☘️স্বপ্ন_উদ্যোগক্তা হবো☘️
স্বপ্ন যখন আকাশছোঁয়া
মেঘ দেখে তবে কেন ভয় পাওয়া?
ছোট বেলা থেকেই কেন জানিনা আমি সবসময় গল্প করতাম আমি নিজে ব্যবসা করবো,আমি আমার টাকা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে মানুষকে সাহায্য করবো।আপনারা সবাই আমাকে আর্শীবাদ করবেন আমি যেন আমার স্বপ্ন সত্যি করতে পারি। মুলত সেখান থেকেই আমার স্বপ্ন দেখা শুরু যে আমি বড় হয়ে চাকরীর পাশাপাশি নিজে কিছু করবো এবং নিজেকে গড়ে তুলতে সময় মতো পেয়ে গেলাম নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন।
তাই আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতিটা সেশন থেকে আমি শিক্ষা নিচ্ছি।
আমি তা অর্জন করতেছি যা আমাকে একজন সফল উদ্যোগক্তা হতে অনুপ্রেরণা যোগায়।
🌷পরিশেষে🌷
আমাদের প্রিয় মেন্টর" জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ" স্যারের প্রতিটি কথা বুকে ধারণ করে চলছে সকলেই আমার জন্য আর্শীবাদ করবেন।
প্রিয় স্যারের এই শিক্ষা যেন নিজের মধ্যে লালন করতে পারি।
যারা ধৈর্য্য সহকারে আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার এই পুরো গল্পটি পড়েছেন।
তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। সকলেই সুস্থ থাকুন, সুস্বাস্থ্যের থেকে মূল্যবান সম্পদ আর কিছুই হতে পারে না। সবার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল। সবাই আমাকে আর্শীবাদ করবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ।
📌 স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৭৮২
তারিখ ১০-০৪-২০২২
নামঃ পূর্ণিমা রানী মালো
ব্যাচঃ ১১
রেজিষ্ট্রেশন নং ২০২২৬
জেলাঃ ফরিদপুর।
বর্তমান অবস্থানঃ ঢাকা
আমি কাজ করছি শাড়ি, থ্রি পিছ,পান্জাবী এবং জুয়েলারি আইটেম নিয়ে।
আমার ফেসবুক পেজ লিংক ঃ https://www.facebook.com/sajgoj90/