এই ছোট জীবনে অনেক হোচট খেয়েছি,পড়ে গিয়েছি,আবার উঠে দাড়িয়েছি,হাল ছেড়ে দেইনি।
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় সহযোদ্ধা ভাই ও বোন।
নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন যুক্ত হওয়ার পরে নিয়মিত সময় দিয়ে যাচ্ছি।
অনেক ভাইয়া ও আপুদের জীবনের গল্প পড়েছি,আমার খুব ভালো লাগে পড়তে,অনেক কিছু শিখতে পারছি স্যারের সেশন গুলো থেকে ও প্রিয় ভাইয়া এবং আপুদের জীবনের গল্প থেকে।
স্যারের সেশন থেকে যেমন অনুপ্রেরণা পাই তেমনি তাদের জীবনের গল্প থেকেও
অনুপ্রাণিত হই।
আর সেই অনুপ্রেরণা থেকেই নিজের ছোট জীবনের গল্প লিখতে সাহস করেছি।
আমি গুছিয়ে লিখতে পারি না তবুও নিজের জীবনের
কথা গুলো আপনাদের কাছে শেয়ার করার বৃথা চেষ্টা মাত্র।
ভুল গুলো ছোট বোন মনে করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করছি।
🌸আমার জীবনের গল্প 🌸
শুরু করছি অসীম দয়ালু ও পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে।
🌸পারিবারিক পরিচিতিঃ
আমি আনিকা ইসলাম তানহা,পিতাঃ মোঃ আমির হোসেন,মাতাঃ আয়েশা বেগম।
আমার জন্ম ২০০০ ইং সালে শরীয়তপুর জেলার অন্তর্গত পালং থানার বিলাসখান গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে।
বাবা-মা ও আমরা দুই ভাই-বোন মিলে চারজনের ছোট পরিবার।
আমি আমার পরিবারের বড় সন্তান।
আমার ছোট ভাই মোঃ তামিম হোসেন।
🌸শৈশব ও কৈশোরঃ আমার জম্মের ১৩ দিনের মাথায় আবার বাবা আমাদের কে নিয়ে জীবীকার তাগিদে কৃত্রিম শহর ঢাকায় পাড়ি জমান।
তখন থেকে এই ইট পাথরে ঘেড়া কৃত্রিম পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা।
আর পাঁচ জন বাচ্চার চাইতে আমার শৈশব টা একটু ভিন্নতর,আমি একটু দুরন্ত স্বভাবের ছিলাম,কিন্তু বাবা-মা দুজনেই কাজের জন্য বাইরে চলে যেতেন,আমাকে একা থাকতে হতো।
তাদের জীবন যুদ্ধের ব্যস্ততার কারনে আমাকে তেমন সময় দিতে পারতো না,ছোট বেলা থেকেই বাবা-মায়ের আদর,স্নেহ থেকে এক প্রকার বঞ্চিত ছিলাম।
কৃত্রিম নগরীর সবাই ঘড়ির কাটার মত ছুটতে থাকে আপন গতিতে।
ছোট মানুষদের ও যে অনুভূতি থাক,সময় কাটানোর মানুষ প্রয়োজন হয়,বিভিন্ন আবদার থাকে,কিন্তু এগুলো পূরনের জন্য তাদের এত সময় কোথায়?
দিন শেষে তারা তো আমাদের জন্যই পরিশ্রম করে যাচ্ছেন,
আমাদের একটু ভালো রাখার চেষ্টায়,ভবিষ্যতের কথা ভেবে।
দিনের বা মাসের সমস্ত পারিশ্রমিক বিলিয়ে দিচ্ছেন আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে।
তাদের উপর আমার কোন অভিযোগ নেই কারন
আমি আমার বাবা-মা কে প্রচন্ড ভালোবাসি।
আর তাদের কাছে আমি তাদের রাজকন্যা।
🌸 শিক্ষা জীবনঃ আর পাঁচটা ছেলে মেয়ের মতই আমার মায়ের হাতেই আমার পড়াশোনার হাতেখড়ি,আমার মা আমার প্রথম শিক্ষিকা।
পারিবারিক শিক্ষার গন্ডি পেড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শুরু করি এবং ক্লাস ওয়ান থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত সফলতার সাথে শেষ করেছি প্রাইমারি স্কুল জীবন,পরে লেক সার্কাস গার্লস হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা ঠিকমতো চলছিলো কিন্তু বাঁধ সাধে ২০১৩ সালে অষ্টম শ্রেণিতে এসে।
২০১৩ সাল টা ছিলো আমার জন্য কালো একটি অধ্যায়,অষ্টম শ্রেনীর মাঝামাঝি সময়ে যখন আমি জে এস সি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবো তখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরি,বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা,আমার বাবা-মা ও ডাক্তারের চেষ্টা এবং সৃষ্টিকর্তার অশেষ দয়ায় জীবন ফিরে পাই,সুস্থ হই।
তখন শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ি।
ক্লাসমেট রা সব সিনিয়র হয়ে গেছে এতদিনে,কিভাবে পড়াশোনা করবো কিছুই ভাবতে পারছিলাম না কিন্তু হাল ছাড়িনি,পরিবারের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করেই স্কুল পরিবর্তন করে আবার পড়াশোনা শুরু করেছি।
জেএসসি পাশ করেছি,এস এস সি পাশ করেছি,এরপর একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হই
নাজনিন স্কুল এন্ড কলেজ নামক একটি কলেজে সেখান থেকে
এইচএসসি শেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চেষ্টা
করে ব্যার্থ হই,সিদ্ধান্ত নেই নার্সিংয়ে পড়বো,শুরুও করেছিলাম কিন্তু হঠাৎ আমার পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দেয়,অর্থের অভাবে আবারও বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা,এক বছর ড্রপ দেই,ভেবেছিলাম ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু তা আর হয়নি,২০১৯ সালে কৃত্রিম নগর ছেড়ে চলে আসতে হয় আমার জন্মস্থান শরীয়তপুর।
এখানে এসে শরীয়তপু সরকারী কলেজে প্রাণী বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হই এখন আমি অনার্স
২য় বর্ষের ছাত্রী।
এই ছোট জীবনে অনেক হোচট খেয়েছি,পড়ে গিয়েছি,আবার উঠে দাড়িয়েছি,হাল ছেড়ে দেইনি।
জীবনেকে নিয়ে অনেক সপ্ন দেখেছি তা ভেঙ্গেপ গিয়েছে কিন্তু সপ্ন দেখা বন্ধ করিনি।
প্রতিদিন সপ্ন সাজাই ও তা বাস্তবে রুপ দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
নিজে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি কিন্ডার
গার্ডেন স্কুলে শিক্ষকতা করছি।চাকরির সুবাদে পরিচয় হয় নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশনের পজিটিভ শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলা এম্বাসেডর সালমা আক্তার আপুর সাথে এবং আপুর থেকে এই প্লাটফর্ম সম্পর্কে অবগত হয়েছি এবং আমার আগ্রহ জন্মেছে,তখনই আমি রেজিষ্ট্রেশন করার মাধ্যমে এই প্লাটফর্মের একজন গর্বিত সদস্য হই।
নিয়মিত সেশন চর্চার মিটআপে যুক্ত হয়ে এবং স্যারের সেশন
গুলো পড়ে প্রতিনিয়ত শিখছি কিভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায়,কিভাবে সপ্ন পূরন করা যায়।
🌸কৃতজ্ঞতাঃ প্রথমে কৃতজ্ঞতা জানাই মহান প্রতিপালকের দরবারে।
কৃতজ্ঞতা জানাই শতাব্দীর সেরা আবিষ্কা,আমার মত লক্ষ তরুন-তরুনীর সপ্ন পূরনের আলোর দিশারি,প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি এমন অসাধারণ একটি প্লাটফর্ম আমাদের উপহার দিয়েছেন।
সেই সাথে কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয় সালমা আক্তার আপুকে,,,,, ফজিলাতুন্নেছা রাবেয়া আপু,,,, এর সাথে আরও কৃতজ্ঞতা জানাই মোঃ আলি আকবর ভাইয়া ও রোকুনুজ্জামান দিদার ভাইয়া কে।
আপু আর ভাইয়ারা আমাকে অনেক সাপোর্ট দিচ্ছে। তাদের অনুপ্রেরণায় আমার নতুন চলার পথ টা একটু হলেও মসৃণ হয়ে যাচ্ছে। ওনারা না থাকলে আমার এই অচেনা অজানা পথ চলতে সত্যি খুব কষ্ট হয়ে যেতো।
পরিশেষে বলতে চাই এই হলো আমার ছোট জীবনের গল্প।আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি স্যারের শিক্ষা বুকে ধারন করে,আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা নিয়ে,একজন ভালো মানুষ,একজন পজিটিভ মানুষ হয়ে আমার সপ্নের সফলতা আনতে পারি।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৭৯০
তারিখ ২৫/০৪/২০২২
🌸 আনিকা ইসলাম তানহা
🌸ব্যাচঃ ১৭তম
🌸রেজিঃ ৯১৮৩৭
🌸জেলাঃ পজিটিভ শরীয়তপুর
🌸উপজেলাঃ পালং
🌸বর্তমান অবস্থানঃ পালং