নিজেরাই ক্রেতা এবং নিজেরাই বিক্রেতা। চাকরি করবো না চাকরি দিবো।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম মুসলিম ভাই বোনদের, হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্য ধর্মের ভাই বোনদের শুভেচ্ছা।
সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি।
শুকরিয়া, মহান প্রতিপালক আমাকে সুস্থতা দান করেছেন, সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হিসেবে এই সুন্দর পৃথিবীতে পাঠিয়ে দুনিয়ায় সকল নাজ নেয়ামত ভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন।
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জনাব “ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার” এর প্রতি। যার প্রচেষ্টা ও দিকনির্দেশনায় আশাহত, স্বপ্ন ভঙ্গ ও লক্ষ লক্ষ তরুন যুবক ও যুবতী অনুপ্রেরণা পেয়েছেন , অনেকে ঘুরে দাড়িয়েছেন। নিজ কর্মগুনে, নিজের বলার মত একটা গল্প” ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকলের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। যে ফাউন্ডেশনে এসে মানুষ শিখছে, স্বপ্ন দেখছে, সাহসী হচ্ছে, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প তৈরি করে শোনাচ্ছে। মহৎ ঐ ব্যক্তি যে নিজ উদ্যেগে মানব কল্যানে কাজ করে। তেমনি এক মহৎপ্রাণ, বাংলার মাটি ও মানুষের মাঝে সেতুবন্ধন রচিত করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন কারী, মহাবীর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। যার অনুপ্রেরণায় ভবিষ্যতে নতুন গল্প তৈরি করতে প্রিয় ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হই।
👉 আমার পরিচয় ✍️✍️
তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। বাবা সরকারি চাকুরীজীবি ও আম্মা গৃহিনী। দাদার পরিবারের তুলনায় নানার পরিবার অনেক বেশি সম্পদশালী হলেও আম্মা সব কিছু মানিয়ে নিয়েছেন খুব সুন্দর ভাবে। বাবার বয়স যখন ছয় মাস তখনই দাদা দুনিয়ায় মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। আরেক সংগ্রামী নারী জয়নব বিবি যার প্রচেষ্টায় বাবা ও জেঠু উচ্চ শিক্ষিত হয়ে সরকারি চাকুরীজীবি হয়েছিল এবং একমাত্র ফুফুকেও পাত্রস্থ করেছেন সরকারি চাকুরীজীবি দেখে। উল্লেখ থাকে এই জয়নব বিবি হলেন মনির আহমেদ ভুইঁয়া, জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়া ও বিবি মরিয়মের গর্ভধারিনী মা, আমার দাদী।
৭১ সালে যখন দেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে যাওয়ার ডাক আসে ঠিক তখনি রণাঙ্গনে ঝাপিয়ে পড়েন আমার বাবা ও জেঠু। শত্রুর বুলেটে বাবার বাম হাতের বাহুর মাংস উড়ে গেলেও, অল্পের জন্যে প্রান রক্ষা পাওয়া আমার পিতা যুদ্ধ শেষ না করে বাড়ি ফিরে আসেন নি। আমি গর্বিত এমন ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে। আফসোস সু-প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই 2007 সালে আমার গর্বিত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা পরলোক গমন করেন। আল্লাহ বাবাকে জান্নাত বাসী করুক।
আমার পিতা ছয় মাস বয়সে নিজ বাবাকে হারিয়ে সম্পদশালী হতে না পারলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ ও নিজের সরকারি চাকুরির বেতন দিয়ে আমাদের পাঁচ ভাই বোনের পড়ালেখা চালিয়ে নেন ঠিকঠাক মতো।
বয়স যখন ৫-৬ বছর তখন আমার প্রধান কাজ ছিল বাড়ীর কেউ হাঁস মুরগী বেঁধে রাখলে তা ছেড়ে দেওয়া। ছেড়ে দিয়ে হাঁস মুরগীর পিছু নেওয়া। বাড়ির লোকের বকাবকি আমি ও আম্মা ভাগাভাগি করে শুনলেও প্রায়ই বাচ্চা ধরার কারনে মুরগির আক্রমণের শিকার হয়েছি আমি একা। আক্রমনে শিকার হয়ে হাউ মাউ করে কাঁদলেও অন্যদের উপহাসের সম্মুখীন হতে রক্ষা পাইনি। আর মুরগির বাচ্চা ধরবি, আর মুরগি ছেড়ে দিবি, আক্কেল হোক, আরো অনেক কথা। যে যাই বলুক হাঁস মুরগির জীবনাচরণ দেখেই আমি মুগ্ধ হতাম। প্রকৃতি ছিল আমার ভালো লাগার জায়গা। আমি বরাবরই ছিলাম নতুন কিছু দেখা, নতুন কিছু শেখা এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে নিজের আত্মতৃপ্তি খুঁজে নিতাম। উল্লেখযোগ্য ছিল বিদ্যুৎ বিহীন রেডিও ও জিআই তার এর সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি। অনুকরণ করতে পারি খুব সহজেই। সব ধরনের খেলাধুলা করলেও ফুটবলে ছিলাম পারদর্শী।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পিচ ডালা ঐ পথটারে ভালো বেসে, আল্লাহর দয়ায় নিজেকে আবিষ্কার করতে সামর্থ হয়েছি একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে। সবকিছু চলছিলো ঠিকঠাক মতই। হঠাৎ অন্ধকারের ঘনঘটা.....
👉 কর্মজীবি থেকে কর্মহীন ✍️✍️
২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হয়ে যায়। জনগনের মধ্যে সচেতনতা না থাকা, সরকারি ভাবে বা বেসরকারি পর্যায়ে কোন প্রকার প্রোটোকল না থাকায় চিকিৎসা পেশায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছিলো চরম পর্যায়ে। জনগণের কথা আর কি বলবো। চাচা আপন জান বাঁচা। কর্মহীন হয়ে পড়ি। সিদ্ধান্ত নিই পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত গ্রামের বাড়ি ফেনীতে অবস্থান করবো। ২৫ এপ্রিল ২০২০ নানা ভোগান্তি শেষে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ফেনী সদর উপজেলা ফাজিল পুর ইউনিয়ন এর শিবপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতে সক্ষম হই। বাড়ির সীমানা থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হতাম না। কখনো বের হলেও গণপরিবহন বাদ দিয়ে বাইক নিয়ে বের হতাম।
কয়েকদিন পর সকাল বেলায় হঠাৎ আম্মার চেচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গে। চোখ ডলতে ডলতে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আম্মা ? উত্তরে আম্মা বললেন ছয়টি বাচ্চা সহ মুরগী ছেড়ে দিতে না দিতেই একটি বাচ্চা নিয়ে গেলো বেজি ( নেইল )।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ।
👉 নতুন উদ্যেগ, নতুন গবেষণা ✍️✍️
বাড়িতে বসে থেকে সময় পার করে লাভ নেই। কর্মহীন সময় পার করাও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনটি বড় মুরগী ও পাঁচটি বাচ্চা নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলাম। বানিজ্যিকায়ন না হোক অন্তত নিজেদের খাওয়ার জন্যে হলেও। ভোটাভুটিতে হেরে গেলাম। আমিতো ধমে যাওয়ার মানুষ নই। বাড়ীর সবাই আমার বিপক্ষে ভোট দিলেও আম্মার সমর্থন ছিলো তা বুঝতে পারছি। সবাই একটু আড় চোখে দেখতে লাগলো, স্ত্রী'ও তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত। শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না। এতদুর পর্যন্ত পড়াশোনা করে, চিকিৎসা পেশা বাদ দিয়ে হাঁস মুরগী লালন-পালন করবে এসব নিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছি প্রতিনিয়ত। বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় ততদিন বসে বসে কি করবো। এটাতো খারাপ কোন কাজ নয়। সারাদিন মোবাইল টিপাটিপি করে সময় পার না করে প্রকৃতি নিয়ে থাকি। সময় ও কাটবে কিছু আয়ও হবে। সবার এক কথা পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। জেদ আরো বেড়ে গেলো।
পাগলামি থেকে যদি ভালো কিছু বের হয়ে আসে তাহলে পাগলামিটাই ভালো। কালের বিবর্তনে দেশি মুরগী হারিয়ে যেতে বসেছে। বাচ্চা মুরগী গুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার দেওয়ায় কয়েকদিনের ব্যবধানে বেশ বড় হয়ে খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে গেলো। সবাই খুব মজা করে খেয়েছে বটে কিন্তু আমার ভোট তখনও অর্ধেকের নিছে। মা ছেলের সংগ্রাম চলছে, চলবে।
💪 চালিয়ে যাচ্ছি পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় তিনটি মুরগী নিয়ে। অল্প সময়ের মধ্যে দুটি মুরগী ডিম দিয়ে ডিমে তা দেওয়া শুরু করলো। ২১দিন পর ৫+৭=১২টি বাচ্চা পেলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের লালনপালন শুরু। এমন সময় গ্রামের এক মহিলা কিস্তি পরিশোধ করতে তিনটি দেশী মুরগী বিক্রি করতে চাইলে কোন ভাবনা চিন্তা না করেই নিয়ে নিলাম। এগিয়ে যাবো দূর্বার গতিতে। কিছু দিন অনুকূলে থাকলেও মাঝে মাঝে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলাও করতে হয়েছে। কোন এক সময়ে নতুন এবং পুরাতন মিলে দৈনিক গড়ে ২-৩ টি মুরগী ডিম পাড়তে লাগলো। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একসাথে একই দিনে বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা করলাম। এখন আর পিছনে কে কি বলে ওইসব আমলে নেওয়ার সময় নেই। ভোটাভুটিতে হারবো না জিতবো ওসব নিয়েও ভ্রুক্ষেপ নেই। এখন শুধু আপন মনে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে। চলছে অবিরাম গবেষণা, দিন নেই, রাত নেই। গবেষণায় মগ্ন হয়ে কখন যে রাত দুটো পেরিয়ে গেছে সেই খেয়ালও ছিল না।
আজ আমার নিজের বলার মতো একটা গল্প তৈরি হয়েছে। ৩টি মুরগী নিয়ে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০০ (পাঁচ হাজার) মুরগী বিক্রি করেছি। প্যারেন্টস আছে ৭০টি বর্তমানে। ১০টি কোয়েল পাখি থেকে প্রায় ২০ হাজার বাচ্চা ও বড় পাখি বিক্রি হয়েছে এই পর্যন্ত। পরিবারের মাংসের চাহিদা পুরন করেছি। কোয়েল পাখি থেকে ডিমের চাহিদা পুরন করেছি। পরিবারের মাংস ও ডিমের চাহিদা মিটিয়ে আয়ের উৎস তৈরি করতে পেরেছি। এটিকে কিভাবে বানিজ্যিকায়ন করা ও দেশী মুরগী লালন-পালন এর মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা যায় সেই লক্ষে কাজ করছি।
👉 প্রিয় প্লাটফর্মে কেন, কিভাবে আসা ✍️✍️
কাকতালীয় ভাবে মোবাইলে প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর দিক নির্দেশনা মুলক বক্তব্য শুনলাম। কেন জানি মনে হয়েছে উনি আমাকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বলেছেন। হওয়ার কারন একটাই অতীতে আমার ভুল গুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তাই। ২০০৫ সালে আমার ক্ষুদ্র কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি যে কারনে হারিয়েছি, শেয়ার বাজারে গিয়ে কি ভুল করেছি, সব শেষ ২০১৮ সালে "সাফ স্যাটেলাইট ক্লিনিক " করতে কোন কোন ভুল কাজ করেছি ঠিক সেই কথা গুলোই প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার তার একাধিক অনুপ্রেরণা মূলক আলোচনা বলেছেন। আলোচনা গুলো এক এক করে শুনছিলাম। ততক্ষণে প্রিয় মানুষটির প্রেমে পড়ে গেছি। পথ খুজতে শুরু করলার প্রিয় মেন্টরের সোহবতে আসার। খুজতে খুজতে প্রিয় মেন্টর এর ফাউন্ডেশনের সন্ধান পাওয়া মাত্র দেরি না করে রেজিষ্ট্রেশন করে ফেললাম। হয়ে গেলাম আজীবন সদস্য।
নিজেরাই ক্রেতা এবং নিজেরাই বিক্রেতা। চাকরি করবো না চাকরি দিবো। নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়বো। নিজেকে ভালোবাসুন। পরিবারকে ভালোবাসুন। বাবা মা'কে কিভাবে ভালোবাসতে হয়। স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেও কিভাবে নতুন করে বাঁচা যায়। অন্যের দয়ায় বেঁচে না থেকে কিভাবে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচা যায় এসব কথা গুলো আজ অবধি কেউ বলেন নি বা শুনায় নি। শুনিয়েছেন সাদা মনের মানুষ, উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর, নিঃস্বার্থ ভাবে, মন প্রান উজাড় করে মানব কল্যানে নিবেদিত প্রাণপুরুষ জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার। আল্লাহ উনাকে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুক। ভালোবাসায় অবিরাম প্রিয় মানুষটির জন্য। মানব কল্যানে প্রিয় জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে হায়াতে তাইয়েবা দান করুক আমিন।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৭৯১
তারিখ ২৮-০৪-২০২২
পুষ্টিবিদ মোঃ গিয়াস উদ্দিন
রেজি: ৮৬৫১১
ব্যাচ : ১৭
প্রশিক্ষক এগ্রো ফোরাম
উপজেলা : ফেনী সদর
জেলা : ফেনী
বর্তমান অবস্থানঃ ফেনী ও ভোলা ।
📞 01775979778
ফেইজবুক আইডি লিংক: https://www.facebook.com/dm.gias
বিসনেস পেইজ লিংক: https://www.facebook.com/GAS-AGRO-LTD-111144917450859/