তার বিনিময়ে আমাকে ঠকিয়ে দেয়
🍀বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 🍀
☘️ আসসালামু আলাইকুম।
ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ☘️
💖 আমার জীবনের গল্প 💖
🍁শুরু করিতেছি পরম করুনাময় মহান আল্লাহ্ তায়ালার নামে। শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান সৃষ্টি কর্তার প্রতি। যিনি আমাদের কে সুস্থ ভাবে জিবীত রেখেছেন এই দূর্যোগ পূর্ণ মহামারীর সময়ে । আশা নয় বিশ্বাস করি প্রিয় প্লাটফর্মের সকল ভালোবাসার ভাই ও বোনেরা ভালো আছেন । আপনাদের দোয়ার বরকতে আমি ও ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ🍁
🌸দূরুদ ও সালাম জানই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি। যিনি পৃথিবীতে এসেছেন সমস্ত মানব জাতির মুক্তি ও কল্যাণ এর দূত হিসাবে। জাহাকে সৃষ্টি না করলে এ দুনিয়ায় কিছুই সৃষ্টি করতো না 🌸
🎋শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি আমার প্রিয় মা বাবা কে যাদের উছিলায় এই সুন্দর পৃথিবীটা দেখতে পেরেছি। বড় হয়েছি তাদের অফুরন্ত ভালোবাসায়। মা বাবার ঋণ কখনো শোধ হবার নয়।
কোন সন্তানেই পারবেনা মা বাবার ঋণ শোধ করতে। আমাদের গায়ের চামড়া দিয়েও যদি মা বাবার পায়ের জুতা বানিয়ে দেওয়া হয় তবুও সম্ভব নয় তাদের ঋণ শোধ করা। সৃষ্টি কর্তার পরেই মা বাবার স্থান।
অনেক মিচ করি এবং অনেক ভালো বাসি আমার প্রিয় মা বাবাকে।🥀
🌿 প্রথমে কৃতজ্ঞতা জানাই আপনার আমার সু পরিচিত এমন একজন মহামানব যিনি আমাদের মাঝে একটি পরশ পাথর হয়ে এসেছেন। যার জন্ম না হলে আমরা পেতাম না এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম। যিনি লক্ষ মানুষের হৃদয়ের স্পন্ধন। হাজারো উদ্যোক্তার নয়নের মণি। যার নাম স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া । পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। পরশ পাথরের স্পর্শে যেমন লোহা স্বর্ণ হয়ে যায়। ঠিক তেমনি স্যারের স্পর্শে আমরা সবাই ধন্য হচ্ছি। তিনি আর কেউ নন। তিনি আমাদের ভালোবাসার প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার 🌿
🌷আমার জীবন কাহিনী 🌷
🌷আমি জন্মগ্রহণ করেছি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার এক প্রতান্ত গ্রামে। যেখানে ছিলনা বিদ্যুৎ গ্যাস রাস্তা ঘাট। কাঁদা মাটির রাস্তা পেরিয়ে যেতে হত আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বাজারে ।🌷
🌼🌼শৈশব কাল 🌼🌼
🌹আমি ছিলাম মা বাবার আদরের সন্তান। আমরা চার ভাই তিন বোন। সবার ছোট আমি। আমার শৈশব কাল টা হেসে খেলে ভালই কেটেছে। আমার বাবা একজন কৃষক। আমি যখন একটু বুঝি। আমি দেখতাম আমার বাবা অনেক পরিশ্রম করতো। ফজরের নামাজ পরেই মাঠে চলে যেত। আমি মক্তব থেকে এসে আব্বুর জন্য খাবার নিয়ে যেতাম। খাবার শেষে গরুর জন্য ঘাস কেটে নিয়ে আসতাম। পরে স্কুলে যেতাম। এভাবেই চলছিল আমার কিশোর জীবন।
ছাত্র তেমন ভালো ছিলাম না। তবে আউট নলেজ একটু বেশিই ছিল। কোন কিছু দেখলে শুধু ভাবতাম। এটা কিভাবে হলো কিভাবে বানালো।
আমাদের একটা রেডিও ছিল । আমরা বলতাম টেন্ডেস্টার । আমার মনে কৌতুহল । এই রেডিওর ভিতর গান গায় ছোট ছোট মানুষ। একদিন রেডিও নিয়ে চাং (পাটাতন) এর উপর উঠে খুলে দেখি ভিতরে মানুষ নাই। এমনই পাগলামি পাগলামি মনোভাব ছিল🌹
🍀আমার জীবনের শিক্ষা ও বেড়ে ওঠা 🍀
🌿 আমি সর্বদায় স্বপ্ন দেখতাম। আমি বড় হয়ে এক জন মানুষের মত মানুষ হব। ছোট থেকেই আমি অনেকটাই লাজুক ছিলাম। আমার আম্মু আমাদের পাড়ার কোন বাড়ি থেকে কোন কিছু আনার জন্য বললে। আমি বাড়ি থেকে ঠিকই যেতাম। যেয়ে ঐ বাড়ির কাছ থেকে ফিরে এসে বলতাম, ঐ বাড়িতে এই জিনিস নেই। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। তখন মোটামুটি ভালই বুঝি। আমার বুঝে আসে লেখাপড়া করলে চাকরি হয় না। মামা খালু থাকতে হয়। আমার তো আর বড় বড় চাকরি জীবী মামা খালু নেই,যে আমাকে চাকরি দেবে। ফাইভ পাশ করলাম। বাড়ি থেকে কওমি মাদ্রাসায় পড়ানোর জন্য পাঠালো । এক বছর পড়লাম। ওখানে অনেক পরিশ্রম করেছি। সকালে চাউল, কালেকশন পাট, ধান, কালেকশন বোর্ডিং এর লাকড়ি(খড়ি) গোছানো খাওয়ার কষ্ট, একপর্যায়ে আমার বড় ভাই বলল । হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,এমন একটা সময় আসবে টাকা ছাড়া ঈমান বাঁচানো দায় হয়ে যাবে। আমি ভাবতাম হুজুর হতে হলে সু মধুর কন্ঠ হতে হবে। আর আমার কন্ঠ যেন একটা ফাটা বাঁশ। এক পর্যায়ে আমার ভাই আমাকে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করালো। বলল দুনিয়া এবং আখেরাতে দুটোতেই কাজে লাগবে। আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হলাম ব্যাসদী মাদ্রাসায়। বাড়ি থেকে প্রায় 4 কিলোমিটার দূরে। অনেক কষ্ট হত যাতায়াতে। হেঁটে যেতাম হেঁটে আসতাম। অবশ্য ভ্যান গাড়ি চলত । ভ্যানে চড়ার সমর্থ ছিল না। একপর্যায়ে মাদ্রাসার পাশেই লজিং পেয়ে গেলাম। লেখাপড়া ভালোই চলছিল। ক্লাস সেভেনে উঠি আলহামদুলিল্লাহ। রোল নাম্বার হয় তিন। এদিকে আমার বড় বোনের বড় ছেলে লেখাপড়া করতো বালিয়াকান্দির এক এতিম খানায়। একদিন ছুটিতে ও আমাদের বাড়িতে আসে আমিও বাড়িতে আসি। দুদিন পর ভাই বলল ওকে মাদ্রাসায় দিয়ে ওই পথে আমাকে মাদ্রাসাতে যাওয়ার জন্য। আমি যখন ভাগনাকে নিয়ে মধুখালী পর্যন্ত যাই, ভাগনা বলল মামা আমি একাই যেতে পারব । এক পর্যায়ে সুগার মিলের এক গাড়িতে ভাগনাকে উঠিয়ে দেই। এবং আমি লজিং বাড়ি চলে যাই। চারদিন পর আবার যখন আমি বাড়িতে যাই ভাই বলল, লিটনকে ঠিক মতো মাদ্রাসায় পৌঁছে দিয়েছিলি ? আমি বললাম না ওকে মধুখালী থেকে মিলের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছি। লিটন বলেছে ও একাই যেতে পারবে। তখন ভাই আমার সাথে অনেক রাগারাগি করেছে। ভাই বলল যদি ড্রাইভার ওকে ঠিকমত নামিয়ে না দেয়। কিংবা অন্য কোথাও নিয়ে যায়। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম । এখনকার মতো মোবাইল ফোন ও ছিলনা কিভাবে খবর নিব। এক পর্যায়ে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে মিথ্যা কথা বলে পঞ্চাশ টাকা হাওলাত নিলাম । গেলাম ভাগ্নের কাছে, দেখলাম আলহামদুলিল্লাহ ভালই আছে। এখন চিন্তা অন্য একটা শুরু হল । পঞ্চাশ টাকাতো হাওলাত করেছি টাকা কিভাবে পরিশোধ করব। যেভাবেই হোক 50 টাকার ব্যবস্থা আমাকে করতেই হবে। ভাবলাম হাটে যেয়ে জন (কৃষান) বিক্রি হব । যেই ভাবনা সেই কাজ গেলাম ফরিদপুর। সঁন্ধ্যা হয়ে গেল কেউ আমাকে কাজে নিলো না। জীবনের দুঃখ এখানেই শুরু। রাত হয়ে গেল কোথায় যাব, কি খাব। এক পর্যায়ে গেলাম মসজিদে। নিচতলায় মার্কেট দোতলায় মসজিদ। এশার নামাজের পর সবাই চলে যাওয়ার পর মসজিদে তালা মেরে দিল। আমি মসজিদের সামনে দোতলায় এক পর্যায়ে রাতটা কাটিয়ে দিলাম। সকালে রওনা দিলাম কানাইপুরের উদ্দেশ্যে। ওখানেও একই অবস্থা সবাই বলে তুমি বাড়ি থেকে নিশ্চয় রাগ করে এসেছো । তোমার কাচি নিড়ানি মেনি কোথায়? কি দিয়ে কাজ করবা। এক পর্যায়ে একজন লোক আমাকে নিলো 20 টাকা হাজিরায়। ঠিক মতো কাজ করতে পারিনা। চার দিন পর আমাকে বলল তুমি বাড়ি ফিরে যাও। আমাকে 100 টাকা দিল। এদিকে বাড়ির সব জানা জানি হয়ে গেছে আমি লজিং বাড়িতে যাই নাই। কারণ আমাদের পাশের বাড়ির এক হুজুর ঐ মাদ্রাসায় পড়াত। আসলাম বাড়ীতে 50 টাকা দেনা দিলাম। বিকাল বেলা আমার ভাই তাহার বন্ধু সহ গোসল করছে নদীতে। আমাদের বাড়ির সাথেই নদী। আমিও গেলাম গোসল করতে। ভাইয়ের বন্ধু বলল এই কয়দিন কোথায় ছিলি? আমি কোন উত্তর দেয়নি। তখন ভাই আমাকে খুব খারাপ খারাপ কথা বলেছে। আমার মন খারাপ হয়ে গেল। দ্বিতীয় বার আমি বাড়ি ছাড়লাম। আমার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলেদের সাথে। আবার সেই কানাইপুরের হাটে। মাঠের কাজে বিক্রি হয়ে গেলাম এক বাড়িতে। ওরা আগে থেকে মাঠে কাজ করতো। যেই বাড়িতে কাজে গেলাম ওই বাড়ির এক আত্মীয়। তার বাড়ি রাজবাড়ি। ওই লোকের কাছে সব কিছু খুলে বললাম। উনি আমাকে বললেন যে এক মটর গ্যারেজে কাজ দিয়ে দেবে। কাজ শেষে আমার সহকর্মীরা বাড়িতে চলে আসলো আমি চলে গেলাম রাজবাড়ী। রাজবাড়ী মোটর গ্যারেজ এ তিন মাস কাজ করি। এক পর্যায়ে আমাকে ভূলের জন্য আমার মাকে গালি দেয়। তখন ওখানে মারা মারি করি । মোটর গ্যারেজের মালিক আমাকে বের করে দেয় তিন শত টাকা দিয়ে। আমাদের গ্রামের একটা ছেলে কুষ্টিয়া হোটেলে চাকরি করতো । ভাবলাম ওর কাছে যাব। তখন রাত। যেতে হবে ট্রেনে। গেলাম রাজবাড়ী রেলস্টেশনে। টিটি আমাকে বলল তুমি টিকেট দেখোও তুমি কুষ্টিয়া থেকে এসেছো । আমি তাকে বোঝানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। আমি কুষ্টিয়া থেকে আসিনি আমি কুষ্টিয়ায় যাব। সারারাত আমাকে পুলিশের কাছে বসিয়ে রেখেছে। ভোর বেলা কুষ্টিয়ার ট্রেনে আমাকে উঠিয়ে দিয়েছে। কুষ্টিয়া যাওয়ার পর আমাদের গ্রামের ছেলেটা কে আমি আর খুঁজে পাইনি। দিন শেষে কোর্ট কুষ্টিয়া রেল স্টেশন রাত্রি যাপন করলাম। সকালে রওনা দিলাম মাগুরার উদ্দেশ্যে। ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করব। সারাদিন ঘোরাঘুরি করার পর হলের সামনে চায়ের দোকানের টেবিলে রাত্রি কাটিয়ে দিলাম। এদিকে আমার পকেটের টাকা শেষ। কোন কাজ পেলাম না। খুঁজতে শুরু করলাম কোথায় কামলা কৃষান বিক্রি হয়। অবশেষে খুঁজে পেলাম। কিন্তু আমাকে কেউ কাজে নিল না। কারণ একটাই আমি ছোট। অবশেষে আর একটা রাত কাটলো রাস্তায়। দ্বিতীয় দিনেও গেলাম হাটে কোন কাজ হলোনা। আরো দুইজন বয়স্ক লোকের সাথে গেলাম আড় পাড়ায়। সে হাটে যাওয়ার পর তারা ঠিকই বিক্রি হয়ে গেল। আমি বসে রইলাম। এদিকে ক্ষুধার জ্বালা সে কি যন্ত্রনা। আমার পকেটে একটা টাকাও নেই। কারো কাছে হাত পাততে ও পারছিনা। আল্লাহ আল্লাহ করছি। হায় আল্লাহ আমি এখন কোথায় যাবো। কি করবো আমি কি হেরে গেলাম। আমার কি বাড়ি ফিরে যেতে হবে। কিন্তু আমি তো বাড়ি যেতে চাই না। অবশেষে একটা লোক আমাকে নিয়ে গেল ২৬ টাকা হাজিরায়। আলহামদুলিল্লাহ তিন-চার দিন পরে ভাত খেলাম। পরের দিন সকালে আমাকে ধানের চারা উঠাতে দিল। আমি জোহর পর্যন্ত ভালোই ভালোই কাজ করলাম। কারণ ধানের চারা উঠানোর অভ্যাস আগে থেকেই ছিল। দুপুরে খাওয়ার পর আমাকে দিলো ধান লাগানোর জন্য আমার সাথে ওরা দুই ভাই ছিল। আমার ভাইয়ের বয়সের। উনারা ঠিকই রোপন করতেছে। কিন্তু আমি রোপন করতে পারছিনা। কারণ আমি আগে কখনো রোপন করিনি। ওরা আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা শুরু করে দিল। যা রোপন করি তাও আবার মাঝে মাঝে পানিতে ভেসে ওঠে। এদিকে অঝোরে বৃষ্টি নামছে। আমি কাঁদছি। আমার কান্না আমার চোখের পানি সব ই বেসামাল বৃষ্টি খেয়ে নিচ্ছে। এক পর্যায়ে ওর বড় ভাই আমাকে ধানের চারা উঠানোর জন্য পাঠালো । ওই বাড়িতে পাঁচ দিন কাজ করলাম। আবার রওনা দিলাম অজানার উদ্দেশ্যে। আবার সেই মাগুরার হাট। সেখান থেকে আল ধানী গ্রামে গেলাম মরিচ লাগানোর জন্য। ওখানে আর সমস্যা হলো না কারণ আব্বুর সাথে মাঝে মাঝে মরিচের চারা লাগাইতাম। এক সপ্তাহ কাজ করলাম একপর্যায়ে জানতে পারলাম ওই বাড়ির বড় ছেলে কুষ্টিয়া হোটেলে চাকরি করতো। হোটেল নাম শুনতেই আমি চমকে উঠলাম। কারণ আমাদের গ্রামের যে ছেলেটা কুষ্টিয়া হোটেল থাকে। একই নামের হোটেল। তাই আমি বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আমি দুদিন পর গেলাম কুষ্টিয়াতে। হোটেল ঠিকই পেলাম কিন্তু লোকটিকে পেলাম না। অবশেষে ওই হোটেলে খেতে বসলাম। খাওয়ার একপর্যায়ে দেখি ওই ছেলেটা ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে। তার পর কথা হল পরে জানতে পারলাম, ও নাম চেঞ্জ করেছে। আমাদের গ্রামের নাম ছিলো সাগর ওখানে নাম দিয়েছে মোস্তফা। যাই হোক ও আমাকে হোটেলে কাজ দিয়ে দিল। কাজ করতে লাগলাম। মাসে 300 টাকা বেতন তাও আবার ঠিকমতো দিত না। মাঝে মাঝে 50 টাকা100 টাকা দিতো কত কষ্ট যে হোটেলের চাকরি। যারা ম্যাচিয়ার, বাবুর্চি,অথবা উপর পদে কাজ করে তাদের দুপুরে রেস্ট আছে। আমি ছিলাম হেল্পার টেবিল পরিষ্কার করতাম। ভোর পাঁচটা থেকে রাত বারোটা-একটা পর্যন্ত। হোটেল বন্ধ হওয়ার পর টেবিল গুলো এক সাইডে রেখে তার পর ফ্লোরে ঘুমাইতাম। ওখান থেকে গেলাম কোর্ট কুষ্টিয়া রেল স্টেশন এর সাথে এক হোটেলে। ওই হোটেলের মালিক ছিল একজন হুজুর। দেখতাম সব সময় টুপি জুব্বা পাঞ্জাবি গায়ে দিতো। ভাবতাম লোকটা খুব ভালো । আসল কথা হলো আমি যেখানেই যাই আমার কপাল তো আমার সাথেই যায়। দেখতে দেখতে কেটে গেল নয়টি মাস। এদিকে বাড়ির সবাই পাগলের মত খুঁজতে থাকে আমাকে। একপর্যায়ে জানতে পারে আমি আছি কুষ্টিয়াতে। আমার সেজো ভাই আমাকে নিতে আসে। ঐ দিন দুই ভাই অনেক কান্নাকাটি করেছি। ভাইয়া বলল আব্বা তোকে আনতে গিয়েছিল রাজবাড়ীর গ্যারেজে। গ্যারেজের মালিক বলেছে এক দিন আগে আপনার ছেলে এখান থেকে চলে গেছে!!!!!! পড়ে এক পর্যায়ে আমি ভাইয়াকে বললাম, ঠিক আছে আমি বাড়ি যাব । আমি যে কাজ করছি আমার টাকা বাকি আছে। আমি দুদিন পরে টাকা নিয়ে আসতেছি। ভাই আমার কথামতো পরের দিন বাড়ি চলে গেল। পরে দুই তিন দিন পর অল্প কিছু টাকা দিলো আমার হোটেলের মালিক। আমি তখন বুঝতে পারলাম চক চক করলেই সোনা হয় না। যাই হোক এক পর্যায়ে ভাবলাম আমি বাড়ি ফিরে যাব না। আমি ঢাকাতে যাব। যেই ভাবনা সেই কাজ। আমি রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। আমার বড় ভাই ঢাকায় থাকে। আমি ক্লাস ফাইভে পড়া অবস্থায় একবার ঢাকা গিয়েছিলাম ভাইয়ের কাছে। তাই মনে মনে ভাবলাম ঢাকাতে যেয়ে কোন একটা কাজ করব । কুষ্টিয়া থেকে আবার ট্রেনে উঠলাম। রাজবাড়ী আসার পরে ট্রেন আর সামনে এগুলো না। রাতটা কাটিয়ে দিলাম স্টেশনে। পরের দিন গেলাম ঢাকায়। আমার ভাই ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকাতে থাকতো । জায়গাটা হল ইমামগঞ্জ পান ঘাট। আমার চাচাতো মামার দোকানে ভাই চাকরি করতো। কয়েক দিন পর ভাই আমাকে একটা দোকানে কাজ দিলো। এক পর্যায়ে ঈদের সময় ভাই আমাকে বাড়িতে পাঠালো । ঈদের পর ঢাকা গেলাম। কিন্তু ঐ কাজ আমার আর ভালো লাগেনা। কারন আমি কাজ করতাম খালী বস্তার কাটা ছিরা রিপেয়ারিং এ । ওখানে অনেক ধুলা বালি। ভাবলাম গার্মেন্টসে চাকরি নেব। বংশালে এক গার্মেন্টসে চাকরি নিলাম। বেতন 700 টাকা ওভারটাইম করাতো , কিন্তু টাকা দিতো না। ভাইয়ের বাসায় খাওয়া। আর ঘুমাইতাম মামার দোকানে। আমার ছুটি হত 10:30 11:00 টায়। দোকানে আসতে আসতে বারোটা বেজে যেত। একটা দেড়টার আগে ঘুমাতে পারতাম না। সকালে ছয়টা বাজে উঠে বুড়িগঙ্গা নদীতে গোসল করতাম নোংরা পানিতে। এভাবে ভালই কাটছিল আমি কাজ করতাম কাটিং সেকশনে। কিছুদিন পর আমি সাপ্লাই ম্যান হই। আমার বেতন হয় এগারোশো টাকা। একপর্যায়ে আমার চাকরিটা চলে যায়। আমি যাই লালবাগ ঢাকেরশরী মন্দির এর সাথে একটা গার্মেন্টসে। ঐ গার্মেন্টসে দুই মাস চাকরি করার পর গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যায়। কারণ মালিকরা ছিল পার্টনারে। অনেক যায়গায় চাকরি খুঁজেছি চাকরি পায়নি। এদিকে আমার পকেট শূন্য । একটি টাকা ও নাই আমার কাছে। ভাইয়ের বাসায় খাওয়া দাওয়া করে আর মামার দোকানে ঘুমাই। ভাবি কেমন যেন করতো। এক দিন দেখি পেপারে সার্কুলার দিয়েছে ইসলাম পুর সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে নিটিং -এ লোক নিবে। দক্ষ অদক্ষ। আমি গেলাম ওখানে। বায়ো ডাটা জমা দিলাম। আমার কাজ শেখার সুযোগ দিল । ভাইয়ের বাসা থেকে অনেক দূর, দুপুরে খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। আমার কাছে যে টাকা ছিল তিন চার দিনের শেষ হয়ে গেছে। এক দিন ভাবিকে বললাম ভাবী আমাকে কিছু টাকা দেন । ভাবী বলল টাকা দিয়ে কি করবে। আমি বললাম আমি সোয়েটারের কাজ শিখব। ওখান থেকে লাঞ্চে খেতে আসা সম্ভব না। আমার কাছে যা টাকা ছিল শেষ হয়ে গেছে। ভাবী কোন কথা বলল না । ভাইয়া বাসায় আসলো ভাইয়াকে ভাবী বলল, তোমার ভাইকে খাওয়াবো আবার নগদ টাকা দিব তা সম্ভব না। আমি পরের দিন কাজে গেলাম লাঞ্চে কিছু খেলাম না কারণ আমার কাছে টাকা নাই। সবাই দুপুরে খানা খায়। আমি ফ্যাক্টরির নিচের থেকে ঘুরে আসি। এসে এক গ্লাস পানি পান করে কাজে লেগে যাই। আমার এখনো মনে আছে প্রতিদিন দুপুরে একটি করে সিঙ্গারা খেয়ে চার দিন কাজ করেছি একে একে দুই দিন হয়ে গেল দুপুরে কিছু খেতে পাইনি। তিন দিনের দিন রাতে বাসায় গেলাম। ভাই আমাকে বলল কিসের টাকা চাচ্ছিস। আমি ভাইয়াকে খুলে বললাম সোয়েটারের কাজ শিখলে মাসে চার পাচঁ হাজার টাকা বেতন পাওয়া যায়। ভাইয়া আমাকে বলল নগদ যা পাও তাই করো । কবে কাজ শিখবে তারপর বেতন পাবে। তার থেকে দোকানে যাও দোকানে কাজ করো। আমার আর সোয়েটারের কাজ শেখা হলো না। অনেক কেঁদেছি ঐ দিন অবশেষে আমাকে ভাইয়া পাঠিয়ে দিল গাজীপুর জয়দেবপুরে। ওখানে আমার এক দুঃসম্পর্কের মামার দোকান। খালী বস্তা খালী ড্রাম এসবের। প্রতি বৃহস্পতিবার সারা দিন ডিউটি করতাম, এবং রাত্রেও। কারণ রাত্রে মাল লোড করে ঢাকায় পাঠাতে হত। রাত্রে ট্রাক লোড করতে অনেক কষ্ট হতো। আমি আর লিখতে পারছিনা। শুধু কান্না আসে। জীবনের গল্প লিখে কি লাভ। আমি জানি আমার এই জীবনের গল্প কেউ পড়বে না। কারণ এত বড় লেখা। সবাই ব্যস্ত প্রতিটি মিনিটের অনেক মূল্য। আমি লিখতে চাইনি। তবুও আমাদের নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীলদের অনুপ্রেরণায় লিখছি । আমি যখন লিখতে বসি দু চোখ অশ্রুতে ভিজে যায় তখন আর লিখতে পারি না।আমি জানি আমার এই লেখা কেউ পড়বে না। কারণ লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে।তবুও আমি লিখছি প্রতি দিন একটু একটু করে। কারণ আমাকে যে লিখতেই হবে।আমি কখনো হাল ছাড়িনি । আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন প্রতিষ্ঠিত অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এখন আমি একজন সফল মানুষ এবং সফল উদ্যোক্তা 🏝️
🏝️জয়দেবপুর কিছু দিন কাজ করার পর গেলাম মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ওখানে আমার আর এক মামার দোকান। ওখান থেকে আসলাম কেরানীগঞ্জ আব্দুল্লাহপুর ভাওয়ার ভিটিতে। এভাবে কেটে গেল কয়েকটি বছর। এদিকে আমার বড় বোন ঢাকায় থাকতো আমি দুই বার কেরানীগঞ্জ থেকে আমার বোনের সাথে দেখা করতে ঢাকায় গিয়েছিলাম। দুঃখের বিষয় বোনের বাসা খুঁজে পায়নি। কারণ তখন তো আর মোবাইল ফোন ছিল না। তৃতীয়বারে আবার আমি ঢাকা গেলাম সঠিকভাবে ঠিকানা নিয়ে এবার আর ভুল হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ তখন আমার বোনের বাসা পেলাম ঢাকা খিলগাঁও তিলপাপাড়া।একপর্যায়ে বোনের সাথে পরামর্শ করে আমি চলে গেলাম ঢাকায়। গার্মেন্টসে চাকরি নিবো বলে। গার্মেন্টস চাকরি করতে তো শার্ট প্যান্ট লাগবে। আমারতো শার্ট আছে প্যান্ট নাই। গুলিস্তান ফুটপাত থেকে একটা পুরাতন প্যান্ট কিনলাম। এক সপ্তাহ হয়ে গেল কোন চাকরি পেলাম না। এদিকে আমার ভাগিনা কারেন্টের কাজ করতো। ও এক দিন আমাকে বলল মামা যদি কিছু মনে না করেন, একটা কথা বলবো। আমি বললাম বল কি বলবি। বলল আমার মালিকের এক সাইডে একটা যুগালী লাগবে। মানে হেল্পার। আমি রাজি হয়ে গেলাম। যেয়ে দেখি একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরী। দোতলায় নতুন নিটিং ম্যাশিন এর ফ্লোরে কারেন্টের কাজ করাবে। আমি তো দেখে মহা খুশি। কারণ এই সোয়েটারে কাজ শিখতে যেয়ে আমি অনেক কষ্ট করেছি। তবুও শিখতে পারিনি।ওখানে দুই দিন কাজ করলাম। তৃতীয় দিন ফ্লোর ইনচার্জ এর সাথে আমি কাজ করলান। নতুন মেশিনের প্যাকিং খোলা স্টান্ডে উঠানো। এই কাজে সারাদিন কেটে গেল । পরের দিন আবার আসলাম ওই ভাই বলল কাজ তো শেষ আজ কেন এসেছেন । ভাইটির বাড়ি বরিশাল। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। এত বছর পর এখনো তার কথা মনে পড়ে।তো আমি বললাম ভাইয়া আপনি যদি একটু সুযোগ দেন তাহলে আমি এই কাজ শিখতে চাই। ইনচার্জ রাজি হয়ে গেল । এবং গেটে বলে দিল এই ছেলেটা যখন গেটে আসবে ওকে ভীতরে আসতে দেবে। আলহামদুলিল্লাহ আমি তো অনেক খুশি হয়ে গেলাম।ফ্লোর চালু হলো। সবাইকে মেশিন দিল কিন্তু আমাকে দেয় না আমি দেখছি এই মেশিন, ওই মেশিন, এই অপারেটরের কাজ, ওই অপারেটর কাজ। তিন চার দিন পর আমি ভাইয়াকে বললাম আমাকে একটা মেশিন দেওয়ার জন্য । ভাইয়া আমাকে নতুন মেশিন দিলানা। নিচতলা যেয়ে একটা পুরাতন মেশিন দিল। সাথে একটা অর্ডার। প্রথম অর্ডার বানাতে আমার এক সপ্তাহ লেগে গেল (১২পিচ) ।শুরু করলাম নতুন কর্মজীবন। আগেই বলেছি গুলিস্তান থেকে একটা প্যান্ট কিনেছিলাম। আমার বড় বোন আমি ডিউটি থেকে আসার পর আমার কাপড়চোপড় ধুয়ে দিত। পরের দিন সকালে ওই কাপড় পরে ডিউটিতে যেতাম। আমার বড় বোনের কাছে আমি অনেক ঋণী। আসলে জীবন মানেই যুদ্ধ। জীবন থাকতে হয় তো এ যুদ্ধ শেষ হবার নয় 🌿
🌿🌿সংসার ও বিবাহিত জীবন 🌿🌿
🌹🌹কাজ শেখার কিছু দিন পর শুরু হল বন্যা। সেই ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যা এক পর্যায়ে ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেল বাসার ভিতরে গলা পর্যন্ত পানি। অবশেষে বাড়িয়ালার পাঁচতলা বিল্ডিং এর ছাদে থাকলাম। কিছুদিন বন্যা কমে গেল আমি চাকরি নিলাম মালিবাগ চৌধুরীপাড়া পেনাকেল সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে। মাসখানেক পর আমাকে আইডি কার্ড দিল। আলহামদুলিল্লাহ ভালই চলছিল কাজ। এদিকে আমার আম্মু ভীষণ অসুস্থ হয়ে গেল। একপর্যায়ে ঘরে পড়ে গেল চলাফেরা করতে পারে না। আমার ভাবি দেখা শোনা করতো। একদিন হঠাৎ করে খবর এলো হয়তো বা আম্মু পৃথিবীতে নেই। সবাই মিলে দেখতে গেলাম। আলহামদুলিল্লাহ আম্মুকে সহিসালামতে পেলাম। আমাদের বাড়িতে দুটো ছাপড়া ছিল। টিনের এক চালা। একটিতে ভাই ভাবি আর আম্মু থাকতেন, অন্যটি আমার বাবা। আম্মুকে দেখার জন্য ঢাকা থেকে আমার বড় বোন ও আসে। বাড়িতে জায়গা কম থাকায আমি আমার এক বন্ধুর বাড়িতে ঘুমানের জন্য যাই । সকালে বাড়িতে এসে শুনতে পাই, রাত্রে অনেক ঝগড়াঝাটি হয়েছে মাকে নিয়ে। ভাই ভাবি দের কথা হলো আমার একার আম্মু না তাহলে কেন শুধু আমরাই দেখাশোনা করবো। মানে শফিকুল কে বিয়ে দিতে হবে। এদিকে ভাবি বলছে যে ওর নিজের খাবারই তো জোগাড় করতে পারে না। বিয়ে করে বউকে কি খাওয়াবে। বড় আপু বলল, তোকে বিয়ে দিয়ে তারপর ঢাকা যাবো তার আগে নয়। এদিকে আমি নতুন চাকরি নিয়েছি। ছুটি না নিয়ে আমি বাড়িতে এসেছি আম্মু কে দেখতে । কোথায় যাবো মেয়ে দেখতে কোথায় বিবাহ করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। আমার এক সেট ভাল পোশাক ও নেই। আমার এক ফুফাতো ভাইয়ের ছেলের একটা প্যান্ট নিলাম কিন্তু মাজা অনেক বড়......। বাড়ি থেকে বের হলাম অজানার উদ্দেশ্যে। সাথে আমার আব্বু, এক দুলাভাই, ঐ ফুফাতো ভাই এর ছেলে, আমার এক নানা।কয়েকটি বাড়িতে গিয়েছি। কিন্তু কেও মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি নয়। সবাই একটি কথাই বলেন ছেলে ঢাকায় থাকে আবার হঠাৎ করে বিয়ে।
বিস্তারিত খুলে বলার পারে ও কেউ রাজি হচ্ছিল না। আমাদের এলাকার চেয়ারম্যানের মারফতে এক বাড়িতে গেলাম। তারা হা ও বলে না না ও বলে না। একপর্যায়ে আমাদের আশ্বাস দিলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল আমরা অপেক্ষায় রইলাম। তারা বলেছেন মেয়ের মামা এসে কথাবার্তা বলে পাকা কথা দিবেন। এদিকে আমাদেরকে বসিয়ে রেখে দুই বার আমাদের বাড়িতে এসেছে। কারণ আমরা সত্যি বলছি না মিথ্যা বলছি যাচাই করার জন্য। একপর্যায়ে মেয়ের মামা এলো। মেয়ের মামার একটিই কথা ছেলে ঢাকা থাকে হুট করে এ ছেলের সাথে বিয়ে দেয়া যাবে না। এদিকে আমার হবু শাশুড়ি এক পায়ে খারা। সমস্ত জল্পনা কল্পনা শেষে রাত তিনটের পরে বিয়ে হল। পরের দিন বিকেল বেলা আমরা বাড়িতে আসলাম । বাড়িতে যেয়ে সবাই কান্নাকাটি। বিয়ে মানে আনন্দ ফুর্তি কিন্তু আমার কপালে তা জুটেনি। আমার তো ঘর নেই বাসর ঘর হবে কোথা থেকে । সরি কেন যেন দু চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যাচ্ছে। যখন লিখতে বসি 1-2 লাইনের বেশি লিখতে পারিনা। শুধু চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে।আমি অতীতকে ভুলতে পারিনি আজ অবধি।…….
পরের দিন গেলাম শ্বশুরবাড়ি। লুঙ্গি পড়ে গিয়েছিলাম, ঐ দিন আমাকে অনেকেই বাজে কথা বলেছে। কেন আমি নতুন জামাই হয়ে লুঙ্গি পড়ে শশুর বাড়ি আসলাম। তাদের নাকি মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে গেছে। একদিন পর আমরা সবাই ঢাকা চলে যাই। দুই সপ্তা ডিউটি করার পর হঠাৎ করে আমার মনে হলো, আমার আইডি কার্ডটা বাসায় রেখে যাই । এক দিন পর আমার বড় বোনের দেবর আমার আইডি কার্ড নিয়ে গেটে হাজির। আমাকে বলল বাড়িতে যেতে হবে, আম্মু নাকি অনেক অসুস্থ। সবাই মিলে বাড়িতে গেলাম। এবার আর আম্মু কে জীবীত পেলাম না। আমরা বাড়িতে যাওয়ার আগেই পরপারে চলে গেছেন।শত চেষ্টা করেও আমার আম্মুকে আজও ভুলতে পারিনি।আমার বিয়ের 18 দিন পরে আম্মু মারা গেলো। আমাদের বাড়ি রাস্তার সাথে। ঈদের আগে যখন আমরা বাড়িতে যেতাম। অবশ্য যাওয়া হতো রাত্রে। সারাদিন ডিউটি শেষে রওনা দিতাম। রাত তিনটা চারটা বেঁজে যেত বাড়িতে যেতে । দেখতাম আম্মু জেগে আছে। রাস্তা থেকে বাড়ির দিকে নামার সময় আম্মু বলতো শফিকুল এসেছিস?তারমানে ঈদের 2-3 দিন আগে থেকে মা আমাদের অপেক্ষায় থাকতো। তখন এত বুঝতাম না এখন বুঝি মা কি জিনিস। আমি আমার এই লেখার মাধ্যমে সবাইকে বলতে চাই। আমাদের যাদের মা বাবা জীবিত আছে। তাদেরকে সব সময় খোজ খবর নেব। তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করার চেষ্টা করব। তাদের মৃত্যুর পরে চল্লিশা খাওয়ানো। হুজুর ডেকে এনে মিলাদ না পরিয়ে আমরা সবাই আমাদের মা বাবার জন্য দোয়া করবো। "রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা" আমার মা বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন। অবশ্য আমার ভাবী অনেক কষ্ট করেছেন কারণ আম্মু ঘরে পড়েছিলেন অনেকদিন। তাই আমি দোয়া করি পৃথিবীর সমস্ত মা-বাবা যেন সুস্থ থাকতেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেন ।মানে উনারা যেনো অচল হয়ে ঘরে পড়ে থেকে কারো বোঝা না হয়। যাই হোক কিছুদিন পর আব্বু এবং ভাইয়ের সাথে ঝগড়াঝাটি হয়। ভাইয়া একপর্যায়ে ভাবিকে নিয়ে ঢাকা চলে যায়। আমাদের ফাঁকা বাড়ি। আশেপাশে পড়শী নেই। তাই আমার স্ত্রীকে আমার শ্বশুরবাড়ি রেখে আসে। কিছু দিন পর ভাইয়া আব্বুকে কে নিয়ে যায় ঢাকাতে। আমি আগেই বলেছি আমাদের বাড়িতে এক চালা ওয়ালা দুটি ছাপড়া ঘর ছিল।কিছুদিন পর তা বিক্রি করে দেয় আব্বু অথবা ভাইয়া। আমরা সবাই ছন্নছাড়া হয়ে যাই। যা সত্য তাই তুলে ধরছি। এখানে আমার লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। আমি খুবই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম হঠাৎ করে বিয়ে। আম্মু চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এদিকে মাথার গোঁজার ঠাঁই টাও নাই। সবই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল। এদিকে আমার কাজের দক্ষতা যখন একটু বাড়লো।তখনই চলে এলো অফ সিজন। মানে কাজের চাপ কম। যেহেতু আমরা পিস রেটে কাজ করতাম। হতাশা আর পিছু ছাড়ছে না। নিজেকে একটা অপদার্থ মনে হচ্ছিল ।সবাই কেমন যেন নেগেটিভ চিন্তাভাবনা শুরু করলো। শ্বশুর বাড়ি এলাকার মানুষরা উল্টা পাল্টা বলছে। দেখা সোনা না করে মেয়েটাকে বিয়ে দিলো………….।।।।
স্ত্রীকে ঢাকা নিয়ে আসলাম, বড় আপুর পাশের রুম।এক পর্যায়ে দেনা হয়ে গেলাম অনেক। খবর পেলাম সাভার ইপিজেডে সব সময় কাজ থাকে আমার একমাত্র মামাশ্বশুর দুই খালা শাশুড়ি ওই ইপিজেডে চাকরি করে। আমি ঢাকা থেকে গেলাম। নতুন ইপিজেটের রিং শাইন এ ইন্টারভিউ দিলাম। ইন্টারভিউ শেষে বললো একদিন পর রেজাল্ট দেয়া হবে। আমি খুবই আশাবাদী ছিলাম চাকরিটা আমার হবে । এদিকে আমার মামা শশুরের সাথে দেখা করতে হলে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমার পকেটের টাকা শেষ। গাড়ি ভাড়া, হোটেলে খাওয়া, ভাবলাম যে তাদের সাথে দেখা করে কিছু টাকা নিয়ে ঢাকাতে যাব। সন্ধ্যার পর তাদের দেখা পেলাম।তাদের বাসায় গেলাম বিস্তারিত কথাবার্তা হল। তারা আমার কথা বিশ্বাস করছে না। আমি রিং শাইন এ ইন্টারভিউ দিয়েছি। পরের দিন সকালে তারা ডিউটিতে যাওয়ার আগে আমি তাদেরকে বললাম। আমার কিছু টাকা লাগবে। তারা আমাকে বলল যে আমাদের কাছে তো কোন টাকা নেই। এই বলে তারা ডিউটিতে চলে গেল। আমি টেনশনে পড়ে গেলাম কি করব এখন। ভাবছি তিন জন মানুষ চাকরি করে তাদের কাছে একটা টাকাও নেই।একটা কথা আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট । আমি একা রুমে। খুজতে লাগলাম কোথাও টাকা আছে কিনা। প্রথমে হাত দিলাম চাউলের ড্রামে আলহামদুলিল্লাহ পেয়ে গেলাম টাকা। ওখান থেকে 100 টাকা নিলাম এবং বসে বসে একটা চিঠি লিখলাম। চিঠিটা রুমে রেখে রিং সাইন এর সামনে গেলাম।আলহামদুলিল্লাহ ইন্টারভিউতে এলাও হয়েছি। এক সপ্তা পর ডিউটি। চলে গেলাম ঢাকাতে। আমার স্ত্রীর খালাতো ভাই ছিল পল্লী বিদ্যুতে নবীনগরের পাশে। এসে উঠলাম তাদের কাছে। নতুন কর্মজীবন শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এখানেও ছিল পিস রেট। বারো মাস কাজ থাকতো। বেতন পেতাম পনেরো হাজার আঠারো হাজার চৌদ্দ হাজার। অতীতের সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গেলাম। ছোটবেলা থেকেই উদ্যোক্তা হবার মনে বাসনা ছিল তারই পরিপ্রেক্ষিতে লাঞ্চের সময় পেপার পড়তাম। নয়া দিগন্ত পত্রিকা ছিল। ওই পত্রিকাটা আমি শুধু একটা পেজের জন্য কিনতাম। পেজটা হল মুরগির ফার্ম, গরুর ফার্ম, মৌমাছি পালন, মাশরুম, ইত্যাদি নিয়ে লেখা লেখি হতো। প্রতিদিন লাঞ্চের টাইমে ওই পেজটা পড়তাম। ইপিজেডের পিছন সাইটে কয়েকটি মুরগির ফার্ম ছিল। ছুটি পেলে অথবা ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকলে ওই ফার্ম গুলোর কাছ দিয়ে ঘোরাঘুরি করতাম। খুবই ভালো লাগতো।
🍀🍀প্রবাসের সূচনা 🍀🍀
🌱 2006-7 সাল সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে শুরু হল আন্দোলন।আন্দোলনের প্রথম সূত্রপাত রিং সাইন এর শাখা থেকে। ফ্যাক্টরি টা ছিল জামগড়া ফ্যান্টাসি কিংডমের সাথে। একপর্যায়ে ছড়িয়ে গেল সারা বাংলাদেশে। ইপিজেডের রণক্ষেত্রে পরিণত হল। পুলিশ আর্মি বিডিআরে একাকার হয়ে গেল।অনেক পিটুনি খেলাম। শ্রমিক ইউনিয়নে নির্বাচন হলো। রিং শাহিনে আমাদের প্যানেল জয় যুক্ত হলেন। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা আস্তে আস্তে উশৃংখল হয়ে উঠলো। আমরা কয়েক বন্ধু যুক্তি করলাম যে আমরা বিদেশে চলে যাব। যেই ভাবা সেই কাজ। আমরা কয়েকজনে ছুটি নিলাম পাসপোর্ট বানানোর জন্য। বাড়ি থেকে ঢাকা আসার একমাস পর ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিল। পাসপোর্ট হাতে পেলাম। সরাসরি বনানী এক অফিসে পাসপোর্ট জমা দিলাম। বলল মরিশাসে পাঠাবে। এক সপ্তাহ পর বলল মরিশাসে আর লোক নিচ্ছে না। তো অফিস থেকে বলল সৌদি আরব যাওয়ার জন্য। আমি রাজি হয়ে গেলাম। 1 লক্ষ 70 হাজার টাকা লাগবে। আমি কথা পাকা করে গেলাম বাড়িতে। এলাকার সবাই বলছে যে তুই বাটপারেরপাল্লায় পড়েছিস।কারণ 1,70,000 টাকায় সৌদি আরব যাওয়া যায় না।আমি বললাম দেখা যাক আল্লাহ কি কপালে রেখেছে। আমি এতো সরল সোজা ছিলাম বিদেশে যাব বেতন এর ব্যাপারে কোন কথা আমি প্রশ্ন করি নাই। অবশ্যই এখনও শেই সরল সোজাই রয়ে গেছি। এখনো মানুষ আমাকে পদে পদে ঠকায়। কারন আমি সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করি। তার বিনিময়ে আমাকে ঠকিয়ে দেয়।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -৭৯২
তারিখ- ০৬-০৫-২০২২
👨🏫নামঃশফিকুল ইসলাম
🎓ব্যাচঃ১৬
🖋️রেজিঃ৭৭৮৮৯
🇧🇩জেলাঃফরিপুর
🇸🇦বর্তমানঃ সৌদি আরব পবিত্র মদিনায়
আমি একজন উদ্যোক্তা
🌱আমার উদ্যোগের নাম আল বারাকাত ফার্নিচার এন্ড প্যাকেজিং🌱