৮৫০০ ব্রয়লার মুরগির ফার্ম ছিল। ভয়ে, আতঙ্কে, হতাশায় ডুবে গিয়েছি
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য,যিনি আমাকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আমি আরোও শুকরিয়া জানাই মাবুদের কাছে, আমাকে আমাদের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী আমাদের জীবনের চেয়েও প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে এই পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য।
আমি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে।যিনি নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম,মেধা, কর্ম ও ভালো মানুষী মন মানসিকতা নিয়ে ভালো মানুষ গড়ার কারিগর "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" তৈরি করেছেন। যেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে লক্ষ লক্ষ তরুণ তরুণী ভালো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এবং বাস্তবে তা বাস্তবায়ন করে ভালো মানুষ হিসেবে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করে যাচ্ছে। শুধুমাত্র স্যারের দিকনির্দেশনা ফলো করে পজিটিভ হয়ে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।তার মধ্যে আমিও একজন।
আমি এমিলি গিয়াস।স্যারের ইউ টিভি লাইভ, ট্রেইনিং , সেশন চর্চা ইত্যাদি দেখে ভালোবেসে যুক্ত হয়েছি এই ফাউন্ডেশনে ১৭ নাম্বার ব্যাচে।
আজ আমি আমার জীবনের গল্প শেয়ার করব আপনাদের সাথে।
""আমার ছোটবেলা""
আমার জন্ম সিলেটের এক উচ্চবিত্ত পরিবারে। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি বলতে পারেন। দাদা ,নানা দুজনেই জমিদার ছিলেন। আমার দাদা ছিলেন সুরততরী ব্রাহ্মণ (ভট্টাচার্য)। কিন্তু আপনারা চিন্তা করছেন তাহলে আমি কিভাবে মুসলিম?কারণ আমার আব্বা ইসলামকে ভালোবাসে উনার বিয়ের আগেই মুসলমান হয়ে যান এবং কিছুদিন পর বিয়ানীবাজারের এক জমিদার কন্যা আমার মাকে বিয়ে করেন।ব্রিটিশ আমলে এসএসসিতে গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত আমার আব্বা।সিলেটের একজন স্বনামধন্য উকিল ছিলেন।বিভিন্ন দেশের ভাষায় কথা বলতেন দক্ষভাবে। সেই অসম্ভব মেধাবী বাবার মেয়ে আমি। এমন মেধাবী মানুষ আমি আর এখন কোথাও দেখিনা।"হে আল্লাহ তায়ালা আমার আব্বাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন"আমিন। স্কুল ও কলেজ জীবনে পড়াশোনাতে অসম্ভব ভালো ছিলাম আমি। লেখাপড়ার পাশাপাশি সঙ্গীত, খেলাধুলা,গার্লস গাইড,ইয়েলো বার্ড সহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলাম। এবং প্রচুর পুরস্কার অর্জন করেছি। কলেজে থাকা অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর বিয়ে হয়ে যায় আমার। স্বামী অবস্থাসম্পন্ন, ব্যবসা করেন আর্মি কনস্ট্রাকশনে। খুবই ভালো অবস্থা ছিল আমাদের। কিন্তু বিধিবাম হঠাৎ করে একটা বড় কন্ট্রাক্ট নিয়ে ঝামেলা হয়ে গেল আমার স্বামীর ব্যবসাতে। মাথা গরম করে আরবিটেশনে কেইস করে ফেললেন তিনি।শুরু হল আমাদের দুঃখের জীবন ।স্বামীর ইনকাম বন্ধ কিন্তু কেইসের পিছনে প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে।জমানো টাকা শেষ, সম্পত্তি বিক্রি করতে শুরু করলাম। এর মধ্যে আমাদের দুটো সন্তান পৃথিবীতে এসেছে।একজন ছেলে ও একজন মেয়ে।দুজনেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করত।কোনভাবেই কুলাতে পারছিলাম না।মা ,ভাই ,বোন সবাই কোনো না কোনো সময় সাহায্য করেছে।কিন্তু আমার আত্মসম্মানবোধ প্রকট ছিল। বড় ছোট মনে হত নিজের কাছে নিজেকে।প্রচুর কান্না করতাম আল্লাহর কাছে।রাতদিন বলতাম" হে আল্লাহ পাক, আমাকে সাহায্য করো,আমাকে রাস্তা দেখাও"।
হঠাৎ করে একদিন পাশের বাসার এক আপা তার বাচ্চাকে নিয়ে আসেন আমাদের বাসায়।কথায় কথায় বলেন, আমি যে স্কুলে পড়েছি (সরকারি অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয়) সেখানে তার বাচ্চাটাকে ভর্তি করে দেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য।পরদিন আমি ওই আপা সহ আমার প্রিয় স্কুলে যাই।এবং হেডমিস্ট্রেস এর চেয়ারে বসা দেখি আমাদের বাংলা টিচার পান্না আপাকে। আপা আমাকে দেখে চিনতে পারেন এবং কি করি এসব জিজ্ঞেস করেন?আমি যে কারণে গিয়েছি তা বলি এবং কিছুক্ষণ পর আপা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,তোমার কি কোন সমস্যা? তুমি অনেক উৎফুল্ল একটা মেয়ে এরকম হয়ে গেছো কেন?আমি জানি না কেন জানি তখন আমার দুঃখের সবটুকু টপটপ করে কান্না হিসেবে বের হয়ে আসলো। আপা বললেন তুমি অনেক গুণী একটা মেয়ে, আমাদের গর্ব ।শুনেছি তুমি খুব ভালো রান্না কর ,তুমি এটাকে কাজে লাগাও। তারপর আপা উনার বাসায় ২০ জন মেহমানের রান্না করে দেয়ার জন্য আমাকে বললেন। আমি ভয়ে ভয়ে রোস্ট, পোলাও,কাবাব,খাট্টা বেগুন,ও গরুর মাংস রান্না করে দিলাম।তখন মোবাইল এর তেমন প্রচলন ছিল না।রাতে টিএনটি তে ফোন দিয়ে আপা বললেন,খাবার খুব ভালো হয়েছে। এবং উনার হাজবেন্ড পাতিলের নিচে যে ঝোল ছিল,তাও মুছে খেয়েছেন।আলহামদুলিল্লাহ।পরদিন আপা ৩৫০০ টাকা খাবারের বিল হিসেবে দিলেন।এটাই আমার জীবনের প্রথম ইনকাম। এই বিপদের দিনে ওই টাকাটা আমার কাছে লক্ষ টাকা মনে হয়েছিল। এই হল আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু হওয়ার গল্প।
তারপর আরো অনেক কাজ করেছি। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছি।রাতদিন মেহনত করেছি,বারবার পড়েছি, আবার উঠে দাড়িয়েছি, কান্নায় ভেঙে পড়েছি।সেই গল্পগুলো ধারাবাহিকভাবে লিখব, আপনাদের মাঝে।কি কি কাজ করেছি তার ধারাবাহিক নাম গুলা লিখছি শুধু।প্রতিটা কাজের পেছনের গল্প গুলো ও লিখব আপনাদের মাঝে ধীরে ধীরে।
১)পাইলট স্কুলের টিফিন সাপ্লাই ছিল
২)অগ্রগামি স্কুল টিফিন সাপ্লাই ছিল
৩)মহিলাকলেজ ক্যান্টিন ছিল
৪) ৮৫০০ ব্রয়লার মুরগির ফার্ম ছিল
৫) ৯০০ মাশরুমের স্পন ছিল
৬ছোট একটা কাপড়ের দোকান ছিল
এখন তার কিছুই নেই। নতুন করে আবার শুরু করেছি। মেয়েদের পোশাকের অনলাইন বুটিকস, ফরমালিনমুক্ত আচার আমার মায়ের রেসিপি দিয়ে তৈরি, সিলেটের ক্লোন চা পাতা,ও নতুন শুরু করেছি ক্যাটারিং সার্ভিস।
করোনা এসে আমার জীবনটাকে আবারো তছনছ করে দিয়েছে। অনেকেই মারা গিয়েছেন নিজেদের মধ্যে।ভয়ে, আতঙ্কে, হতাশায় ডুবে গিয়েছি।বড় ধরনের ঋণে পড়ে গিয়েছি।আল্লাহর কাছেতখন সারাক্ষণ সাহায্য চাই। কোন কাজ নেই, বাসায় বন্দি দুইটা বছর। মোবাইলে মোটিভেশনাল স্পিচ গুলা দেখি শুধু। এর মধ্যে একদিন মোবাইল চাপতে গিয়ে ইউটিভি লাইভ এ "জীবনে বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশনে" ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের সামনে বসা দুজনের সাক্ষাৎকার শুনি।তাদের জীবনের দুঃখ-কষ্ট, পড়ে যাওয়া এবং আবার উঠে দাঁড়ানো। এইগুলা শুনে আবার একটু একটু করে সাহস সঞ্চয় করতে শুরু করি।নেশার মতো হয়ে যায়, প্রতিদিন সেশন চর্চা ও ইউ টিভি লাইভ দেখা। চুলায় রান্না চড়িয়ে ভুলে যাই।আমি তো ব্যস্ত ইউ টিভি লাইভে।রান্না পুড়ে ছাই।এখন মাথায় আসলো কিভাবে যুক্ত হবো এই ফাউন্ডেশনে? হঠাৎ আবুল খায়ের ভাই এর রেজিস্ট্রেশন করবেন, পোস্টটা দেখে উনাকে মেসেজ দিয়ে অনুরোধ করি আমাকে যুক্ত করার জন্য।তখন উনি আমাকে এই ফাউন্ডেশন এর ১৭নাম্বার ব্যাচে যুক্ত করে দেন।তারপর থেকে অনেক ভাল মানুষের সাথে প্রতিদিন কথা হচ্ছে। গুলশান জোনের প্রতিদিন সেশন চর্চা মিট আপে যুক্ত হচ্ছি। ঈদমেলা করলাম তিনদিন।স্যারের সাথে তখন দেখা হল ,কথা হল।হাসিমুখে স্যার বললেন, "সাহস করে লেগে থাকুন, সব ঠিক হয়ে যাবে"। মেলায় সালাউদ্দিন জীবন ভাই, ফারহানা জীতু আপু,আব্দুল্লাহ আল রবি ভাই উনাদের সহযোগিতা ও আন্তরিকতা ছিল অতুলনীয়। স্যারের "সাহস করুন,লেগে থাকুন, সফলতা একদিন আসবেই"এই স্লোগানটা মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।
অনেক ধন্যবাদ সবাইকে। দোয়া করবেন আমার পরিবারের জন্য,আমার ব্যবসার জন্য।
দোয়া করি স্যার আপনার জন্যও। আল্লাহ তা'আলা যেন আপনাকে নেক হায়াত দেন।আমরা যেন আপনার কাছ থেকে আরো অনেক ভালো ভালো জিনিস শিখি।এবং আজীবন ভালো মানুষ হিসেবে বুক ফুলিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৭৯৩
তারিখ ০৭/০৫/২০২২
এমিলি গিয়াস
ব্যাচঃ ১৭
রেজিস্ট্রেশন ৮৮৩২২
নিজ জেলাঃ সিলেট
বর্তমান অবস্থান বনানী,ঢাকা
ভালোবেসে যুক্ত আছি:দুর্দান্ত সিলেট টিম ও গুলশান জোনের সাথে।