,আত্বীস্বজনের সাথে তর্ক বিতর্ক, সবমিলিয়ে অর্থনৈতিক অভাবে পারিবারিক অশান্তি লেগেই থাকতো।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। প্রথমে অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করছেন। আরো শুকরিয়া আদায় করছি, আমি প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মত হতে পেরে।
আমি অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাদের সবার প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারকে।
যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভালো মানুষ তৈরি করার কারিগর হিসেবে তৈরি করেছেন" নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন" প্লাটফর্ম। যে প্লাটফর্ম থেকে লাখ লাখ ভালো মানুষ এবং উদ্দ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। শুধুমাত্র স্যারের দিকনির্দেশনা মেনেই হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবনকে পরিবর্তন করছেন। স্যারের দিকনির্দেশনা মেনে আমিও এখন একজন উদ্যোক্তা।
জন্ম ও পরিচয় ঃ ২০০০ সালের ২২শে এপ্রিল নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করি। নাটোরের বনলতা সেন,চলনবিল,হারতিল বিল,কাঁচাগোল্লা এছাড়াও রয়েছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি। দীর্ঘ ১৮ বছর কেটেছে এই নাটোর জেলায়।
আমি খুবই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার বাবা একজন রিকশাচালক। মা একজন গৃহিণী। খুবই দারিদ্র্যতার মধ্য দিয়ে জীবনযুদ্ধ করে এতদুর পর্যন্ত আসতে পেরেছি । দারিদ্রতা কারো অভিশাপ কারো জন্য আশীর্বাদ। আমার জীবনে দারিদ্রতা এসেছিলো আশীর্বাদ হিসেবে।
শিক্ষাজীবন ঃ ২০০৬ সালে ভর্তি হই শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারি স্কুলে প্রতি ক্লাসে ফার্স্টবয় ও ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলাম।২০১০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেই। সেই পরীক্ষায় ফার্স্ট ডিভিশন পাই এবং প্রথম হই। ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি হওয়ায় মা-বাবা ২০১১ সালে দিঘলকান্দি দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়। সেখানে শিক্ষাব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ২০১৩ সালে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হই শ্রীরামপুর এস উচ্চ বিদ্যালয়ে। ২০১৩ সালে জেএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করায় ২০১৪ সালে সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হই বড়াইগ্রাম সরকারি অনার্স কলেজে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপরই শুরু হয় আমার জীবনযুদ্ধ। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপরই অর্থনৈতিক অভাবে প্রায় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি হয়। কিন্তু আমি হাল ছাড়ি নি। সাইন্সের ছাত্র হওয়ায় কয়েকটা প্রাইভেট পড়তে হতো। প্রাইভেট পড়ার খরচ চালানোর জন্য ছুটির দিন শুক্রবার এবং বিকেল বেলায় ভ্যান গাড়ি চালিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতাম। সেই ভ্যান চালানোর টাকা দিয়েই পড়াশোনার খরচ চালিয়ে ২০১৮ সালে সাইন্স থেকে ভালো রেজাল্ট করে ইন্টার পাশ করি। কিন্তু ছোটবেলা থেকে লালিত স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার। তাই একমাত্র সম্বল ভ্যান গাড়ি বিক্রি করে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকা আসার পর ভর্তি হই বাড্ডা শাখার UCC কোচিং সেন্টারে। । ৬ মাস পরেই পরিবার আর খরচ চালাতে পারে না। তখন ঢাকাতে খুবই হতাশায় ভুগেছি কয়েক মাস। বিভিন্ন যায়গায় চাকরি বা টিউশনি খুঁজেছি। কিন্তু চাকরি বা টিউশনি পাই নি। ঠিক তখনই চান্স হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কবি নজরুল সরকারি কলেজে। চান্স পাওয়ার পর পরিবার থেকে ভর্তি হওয়ার টাকা দিতে পারে নি। এদিকে বাসার ম্যাচ ভাড়া বাকি পরেছে। অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়েছে। তখন আমার কলেজে যাওয়ার একটা সাইকেল ছিলো, সেটা বিক্রি করে দিয়ে বাসার ম্যাচ ভাড়া এবং খাওয়ার টাকা ম্যানেজ করি। আর নানির কানের গহনা এবং ছাগল বিক্রি করে কবি নজরুল সরকারি কলেজে ভর্তি হই।
কবি নজরুল সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেই পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করতে চাই। কিন্তু কি করবো, চাকরি করলে তো পড়াশোনার ক্ষতি হবে। আবার চাকরি বা কোনো কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে। সে সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। ঠিক কয়েক দিন পর দেখা হয় UCC কোচিং এর এক বন্ধুর সাথে। বন্ধু মাসুদের কাছে সকল সমস্যা শেয়ার করি। বন্ধু আমার কথা শুনে বাড্ডাতে ২টা টিউশনির ব্যবস্থা করে দেয়। এবং তিনি বলে আসো আমরা শেয়ারে বিজনেস করি। তখন মিরপুর এক বড় ভাইয়ের কাছে ২০০০ টাকা এবং এক আন্টির কাছে ৫০০০ টাকা অর্থাৎ মোট ৭০০০ টাকা লোন নিয়ে কসমেটিকসের বিজনেস শুরু করি।
কর্মজীবন ঃ ২০১৯ সালের ১৭ই জানুয়ারি ৭০০০ টাকা বিনিয়োগ করে গুলশান ১ এ বিজনেস শুরু করি। এবং সেই বিজনেসের টাকা দিয়েই পড়াশোনার খরচ চালাতাম। ক্লাস করতাম,বিকেলে বিজনেস করতাম, রাতে টিউশনি করতাম। ৬ মাস বিজনেসের অভিজ্ঞতার আলোকে বিজনেস বড় করার সিদ্ধান্ত নেই। তখন ব্যাংক থেকে ১৪০০০০ টাকা উত্তলন করে কোম্পানি থেকে সাব ডিলার নেই। বিজনেসে সময় দিতে গিয়ে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়। ব্যাংকের কিস্তি ছিলো মাসে ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু বিজনেসে যে টাকা লাভ হতো সে টাকা দিয়ে নিজের খরচ,পড়াশোনার খরচ,ব্যবসায়িক খরচেই টাকা শেষ হয়ে যেত। কিস্তি ঠিকমতো দিতে পারতাম না। পরিবারে অনেক টাকা ঋণ ছিলো। আমার বাবা মার পক্ষে খুবই কষ্ট হচ্ছিল কিস্তি দিতে। যার ফলে বাবা মার সাথে সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকতো।
তবে বিজনেস যখনই ভালো অবস্থানে আসলো ঠিক তখনই শুরু হলো বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা। সেই মহামারি করোনাতে বিজনেসে অনেক টাকা লস করি। ব্যাংকের মাসিক কিস্তি আমার পক্ষে দেওয়া আর সম্ভব হয় না। তখন মা বাবা অনেক কষ্টে কিস্তি পরিশোধ করে। আমি টাকা পাঠাতে না পারায় বাবা মার সাথে সম্পর্ক একটু খারাপ হয়। এদিকে মহামারী করোনাতে টিউশনি বন্ধ, ব্যবসা বন্ধ, ইনকাম নেই এবং বিজনেসে লস করায় বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ নেই। ঠিক সেই মুহুর্তে ২০২১ সালের জানুয়ারি তে শুরু করি রাস্তায় ভ্যান গাড়িতে কাঁচা মালের ব্যবসা। কিছু সমস্যার জন্য সেই কাচামালের ব্যবসাও দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। তখন শুরু হয় আমার জীবনের অর্থনৈতিক অভাব। বাসা ভাড়া, দোকান বাকি আমার পক্ষে দেওয়া যেন অসম্ভব হয়ে পরে।
তখন চাকরির জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করি। কিন্তু কোথাও চাকরির ব্যবস্থা হয় না। বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে কোনো কাজ হলেই চলবে। এদিকে একটি মুদির দোকানে ৫০০০ টাকা বাকি পরে যায়। বন্ধুবান্ধব থেকে অনেক টাকা ধার করি। তখন রুমমেটের সহায়তায় কাজ না পেয়ে রাস্তায় আইসক্রিম বিক্রির সিদ্ধান্ত নেই।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সেখানেও আমার কোনো কাজের ব্যবস্থা হয় না। সেই বরফ ফ্যাক্টরিতে ছয় দিন যাওয়ার পরেও আমার কোনো কাজের ব্যবস্থা হয় না। অন্য ফ্যাক্টরিতে ২ দিন যাওয়ার পরেও সেখানেও কোনো কাজের ব্যবস্থা হয় না। এমন কষ্টের জীবন পার করতে করতেই হঠাৎ রাতে বাড্ডার বড় ভাই মামুন ফোন করে। তিনি বলেন তার পরিচিত এক কোম্পানির মালিকের কোম্পানিতে ম্যানেজার পদে লোক দরকার। সেখানে ইন্টারভিউ দিয়ে আমার চাকরি টা হয়ে যায়। মনে যেন একটা প্রশান্তি ফিরে পেলাম। ২০২১ এর ২৩ মার্চ চাকরিতে ম্যানেজার পদে জয়েন হলাম। চাকরি পাওয়ার পর এদিকে পরিবারের সাথে ধীরে ধীরে সম্পর্ক ভালো হতে লাগলো। তারপর ঈদের ছুটিতে বাড়ি চলে আসলাম। ওইদিকে করোনার লগডাউনে কোম্পানি বন্ধ থাকে।
এদিকে বাড়িতে ওই ১৪০০০০ টাকার জন্য পারিবারিক ঝগড়া,আত্বীস্বজনের সাথে তর্ক বিতর্ক, সবমিলিয়ে অর্থনৈতিক অভাবে পারিবারিক অশান্তি লেগেই থাকতো। তখন পারিবারিক অশান্তির জন্য বাড়ি থেকে রাগ করে ৪ সেপ্টেম্বর আবার ঢাকায় চলে আসি। ঢাকা আসার পর রুমমেটের সহযোগিতায় শাহাবুদ্দিন মেডিকেলে চাকরি নেই। চাকরি করে সময় ভালোই কাটছিলো, কিন্তু অনার্স ২য় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষার জন্য সেই চাকরি টা ছেড়ে দেই। পরীক্ষা দিয়ে আবার শুরু হয় অর্থনৈতিক অভাব।
তখন দেখতাম আমার এক রুমমেট নাজমুল খান রুবেল অনলাইনে বিজনেস করতো। তখন তার থেকে আমি অনলাইন বিজনেস শিখতে চাই। তিনি আমাকে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে এড করে দেয়। ১৬ তম ব্যাচ থেকে এই ফাউন্ডেশনের প্রিয় স্যারের পোষ্ট, ভিডিও, ইউিটিভি লাইভ এগুলো দেখতে দেখতে ফাউন্ডেশনের এক বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। তার সাথে ক্যাটারিং এর খাবারের বিজনেস শুরু করি। তখন
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে ১৭ তম ব্যাচে রেজিষ্ট্রেশন করি । ১৭ তম ব্যাচে একটানা তিন মাস কোর্স কমপ্লিট করেছি। বর্তমান গুলশান জোনের বাড্ডা থানার একজন একটিভ মেম্বর হিসেবে কাজ করছি।
বর্তমান অবস্থাঃ আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেক ভালো আছি।
অনার্স তৃতীয় বর্ষের পড়াশোনার পাশাপাশি গত সাত মাস ধরে খাবারের বিজনেস করছি। খাবারের ব্যবসার পাশাপাশি শুরু করেছি ARR Online Shop. গ্রামে ১৭ শতক জমিতে ARR Agro Garden করেছি। আমার পড়াশোনা শেষ করতে আরো ৩ বছর সময় লাগবে। এই তিন বছরের একটা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। পড়াশোনা শেষ করেই কোম্পানির পরিপূর্ণ কাজ শুরু করতে চাই। সবশেষে একজন ভালো মানুষ হতে চাই এবং সমাজ ও দেশের সেবা করতে চাই।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮০১
তারিখ ১৭-০৫-২০২২
পরিচয় পর্ব 🌞
👤নামঃ আবু রায়হান রিন্টু
🏙 জেলাঃ ঢাকা
🏠উপজেলাঃ বাড্ডা
** জোনঃ গুলশান
🏨বর্তমান অবস্থানঃ মধ্যবাড্ডা, ঢাকা
**নিজ জেলাঃ নাটোর
**নিজ উপজেলা ঃ বড়াইগ্রাম
🎓ব্যাচঃ ১৭
📃রেজিষ্টেশন নং ৮২০৯০
🔴রক্তের গ্রুপঃ B+
🕵পেশাঃ Student, কবি নজরুল সরকারি কলেজ
** Founder at ARR Online Shop