সময় বুঝে স্বপ্নকেই পরিবর্তন করে ফেলতে হয়।
আসসালামু আলাইকুম। সবাই কেমন আছেন?
আজ আমি আপনাদের কাছে আমার জীবনের গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি।আশা করি সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
🌷তার আগে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের সকলের প্রিয় আর শ্রদ্ধেয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যিনি আমাদের জন্য এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরী করেছেন। ভালো মানুষের প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে স্যার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।স্যারের জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা।
✳️আমার জীবনের গল্প✳️
আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।তিন ভাই বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। মধ্যবিত্ত পরিবারের হলেও বাবা মা অনেক যত্নে বড় করেছেন।বাবার চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং হলেও আমাদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য জামালপুর শহরে থাকতাম ।বাবার অল্প বেতনের চাকরি দিয়ে বাসা ভাড়া আর তিন ছেলে মেয়ের পড়ার খরচ চালাতে প্রতি মাসেই টানাটানি বেজে যেতো।অনেক ছোট বয়সেই বাবার কষ্ট বুঝতে পারি।তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে বাবার কষ্ট দূর করবো।
আমি পড়াশোনায় বরাবরই মাঝামাঝি ধরনের ছাত্রী ছিলাম।কিন্তু ইচ্ছা ছিলো ডাক্তার হবার।সেই ইচ্ছায় দিন রাত এক করে পড়েছি।ঢাকায় কোচিং করতে এসে অনেক কষ্ট করেছি।থাকা খাওয়ার কি করুন অবস্থা! প্রায়ই না খেয়ে থাকতাম।মহান আল্লাহ আমাকে কষ্টের প্রতিদান দিয়েছেন।আমি প্রথমবারেই সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের ডেন্টালে চান্স পেয়ে যাই।
ভর্তির পরে অমানুষিক কষ্ট করে ৪ বছরে বিডিএস ডিগ্রী অর্জন করি।
আমাদের পড়া শেষ হবার সাথে সাথেই একটা স্পেশাল বিসিএসের সুযোগ আসে।কিন্তু তখন আমার আব্বু অনেক অসুস্থ। হার্টের সমস্যা টা বেড়েছে।পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে আমি হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছি।পাচটা ব্লক ধরা পড়ে।ইমার্জেন্সি অপারেশন করতে হবে।ডাক্তার আর টাকা ম্যানেজ করতে দৌড়াদৌড়ি। মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় কোনো অপারেশনের টাকা যোগাড় করাই এক যুদ্ধ।একবছর আগেই আব্বু রিটায়ার্ড হয়েছেন। আব্বুর পেনশনের টাকা তখনও পায়নি।অনেক কষ্টে জোড়াতালি দিয়ে অপারেশনের টাকা ম্যানেজ হয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে আব্বুর অপারেশন ভালো হয় কিন্তু আব্বুর বাম হাত টা প্যারালাইসিস হয়ে যায়।এত বড় অপারেশন ভালোমতো হওয়াতে খুশি হতে পারিনি আব্বুর হাতের দিকে তাকিয়ে।তারপরও আল্লাহ আমার আব্বুকে সুস্থ রেখেছেন আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া।
সেই একটা সুযোগ হারালাম।যখন আমার ব্যাচের মোটামুটি অনেকেরই চাকরি হয়ে যায়।তখন থেকেই হতাশ হয়ে যেতাম।পড়াশোনা করতাম আর চাকরি খুজতাম।একটা চেম্বার খুজতাম বিনা বেতনে কাজ করার জন্যও খুজেছি কিন্তু পাইনি।
বিয়ের পর পড়াশোনা করাটা কষ্টকর হয়ে যায়।চাকরি খুজতে থাকি।একটা চেম্বারে অল্প বেতনে একটা চাকরি পাই।কিন্তু ভাগ্যের পরিক্রমায় মহামারিতে সেই চেম্বার বন্ধ হয়ে যায়।
এমন সময় আমার উদ্যোক্তা জীবনের সূচনা ঘটে।টাকা পয়সা নাই।কিছুতো করা লাগবে।আমি আর আমার হাজব্যান্ড মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম বিজনেস শুরু করবো।সেই থেকে শুরু।মাত্র ১০ পিস বেডশিট নিয়ে শুরু করেছি আলহামদুলিল্লাহ ১ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে আমার বিজনেস।এখন এটাই আমার স্বপ্ন।
শুরুটা অনেক কঠিন ছিলো ডাক্তার হয়ে চাদর বিক্রি করা।কাছের মানুষদেরও পাশে পাইনি।ঘরের মধ্যে লুকিয়ে শুরু করি।অনেকে ফোন দিয়ে,মেসেজ দিয়ে সরাসরি বলেছে ডাক্তারি বাদ দিয়ে কি শুরু করলাম।আমি কারো কথা পাত্তা দেইনি।আমার কাজে মনোযোগ আরও বাড়িয়েছি।এটা বুঝতে পেরেছি ভালো কাজে মানুষ সহযোগিতা করতে চায়না খালি পেছনে টানতে চায়।
💠আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে আরও একটা নেক মকসুদ আছে।আল্লাহর ইচ্ছায় দ্বীনের বুঝ আসে।আর পর্দা রক্ষা করে ঘরে বসেই আমি বিজনেস করতে পারছি।হালাল পথে আমার নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য কিছু করতে পারছি।
✨জীবন থেকে একটা শিক্ষা মনে গেথে নিয়েছি --সব স্বপ্ন পুরন হয়না।কিন্তু সময় বুঝে স্বপ্নকেই পরিবর্তন করে ফেলতে হয়।
🌺এই ছিলো আমার এখন পর্যন্ত ছোট জীবনের গল্প।সবার কাছে আমার জন্য ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া চাই।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮০৩
তারিখ ১৯-০৫-২০২২
সোনিয়া আফরোজ স্মৃতি
নিজ জেলাঃ জামালপুর
বর্তমান ঠিকানাঃ ঢাকা, যাত্রাবাড়ী
ব্যচঃ ১৩
রেজিঃ ৫০৩২৩
ওয়ারী জোন
অনলাইন শপঃ Shotok- শতক
পেইজ লিংকঃ https://www.facebook.com/shotokbd/