১০০০০০ মেম্বার রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লিট নিয়ে আমার অনুভূতি।
#১০০০০০ মেম্বার রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লিট নিয়ে আমার অনুভূতি।
আসসালামু আলাইকুম।
প্রথমেই কৃতজ্ঞতা মহান রবের প্রতি যিনি আমাকে এখনো পর্যন্ত ভালো রেখেছেন। ফাউন্ডেশনের ভাই বোন দের প্রতি অনেক বেশী ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
আমাদের জন্য একটা আনন্দদায়ক দিনই বটে যে আজ আমাদের প্লাটফর্ম এর ১ লক্ষ মেম্বার রেজিষ্ট্রেশন কমপ্লিট হয়েছে। খুব গর্ব নিয়েই বলতে পারি আমি নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর আজীবন সদস্য তাই নয় কি। মাঝে মাঝে অনেকেই বপ্লে কি একটা প্লাটফর্ম পাইছে এইটা নিয়ে সারাদিন পরে থাকি। আসলে আমার প্লাটফর্ম টা আমার জন্য আমার প্রথম বিদ্যালয়। যেমন আমরা প্রাইমারি অ আ পড়ার পরই তো উপরের দিকে উঠি।তেমনি একজন আদর্শ মানুষ ও উদ্যোক্তা হওয়ার জন্যই আমার এই প্লাটফর্ম আমার সর্বপ্রথম বিদ্যালয়।এখান থেকে শিখে আমি অন্য জায়গায় গিয়ে সহজেই টিকে যাবো কিন্তু আমার যে বিবেক বাধা দেয় আমার প্রথন শিক্ষক ও বিদ্যালয় কে ভুলে যেতে। এখানে যুক্ত হওয়া ও কিছু প্রাপ্তি নিয়ে কিছু অনুভূতি শেয়ার করবো
মনে পড়ে সে দিন টির কথা ২০২০ এর কোন এক ফেব্রুয়ারিতে যখন চরম হতাশাগ্রস্ত আমি খুজেছিলাম একটা ভরসা পাওয়ার জায়গা। সারাদিন অসুস্থতা,, বিষন্নতা,, একাকিত্বে বেচে থাকার ইচ্ছে শক্তিও যেনো মরে গেছে ঠিক সেই সময় এক ভাইয়ের মাধ্যমে এই ফাউন্ডেশনে আসা। তখন ঘরের কাজ আর ঘুম ছাড়া সারাদিনই থাকতাম অনলাইনে। তারপর যখন এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হই তখন অনেকটা সময়জুড়েই ফাউন্ডেশন এর সাথে থাকতাম। আমি যখন যুক্ত তখন এই প্লাটফর্ম ফাউন্ডেশন হয় নি। শুধুই নিজের বলার মতো একটা গল্প ছিলো,, প্রথমে নাম টা দেখে মনে হলো এটা আবার কেমন নাম,, এই গ্রুপের কাজই বা কি,, পরে সপ্তাহখানেকের ভিতর বুজতে পারি গ্রুপের নিয়ম কানুন সব কিছুই।
*এই ফাউন্ডেশন থেকে আমার সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি আমি নিজে নিজেকে অনেক বেশী ভালোবাসতে শিখেছি,,, আমার চারপাশের সবাইকে ভালোবাসতে গিয়ে সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে গিয়ে কখনো নিজেকে কোন কোয়ালিটি টাইম দিই নি। এই ফাউন্ডেশন আমাকে শিখিয়েছে যে নিজেকে ভালো না বাসলে অন্যকে ভালোবাসা কখনোই যায়। হয়তো এত দিন যাকে আমরা ভালোবাসা মনে করতাম তা হয়তো কিছু দ্বায়িত্ব,, কিছু কর্তব্য কিংবা কিছু মানবিকতা। আজ এত কিছুর ভীড়েও নিজেকে বড্ড বেশী ভালোবাসি। এখন সুযোগ পেলে নিজেই নিজেকে কিছু সময় দিই,,, কে কি বললো না বললো তা চিন্তা না করে নিজের ভালোলাগার কিছু করি।এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে। আমার নিজের পরিচয়টাও তৈরি করেছি এই ফাউন্ডেশনে এসে ভাবছে এ আবার কেমন কথা আমার কি কোন পরিচয় নেই,,, আরে আমি তো সে পরিচয়ের কথা বলছিনা,, আগে তো পরিচয় ছিলো কারো বৌ,,কারো মেয়ে,,কারো বোন কিন্তু নিজের তো কোন পরিচয় ছিলনা। আমার এই পরিবার আমার সেই পরিচয় আমাকে তৈরি করে দিয়েছে। আমার যে এখন নিজস্ব এক্টা পরিচয় আছে যে পরিচয়ে অন্য ১০ জন আমায় চিনে। আগে নিজের সোশ্যাল একাউন্ট টাও নিজের নামে ছিলো না,,কেমন যেনো একটা ভয় কাজ করতো,,এই প্লাটফর্ম আমাকে আমার নিজের প্রকৃত আইডেন্টিটি তৈরি করে দিয়েছে যে পরিচয় দিতে সংকোচ বরং গর্ব হয়। Iqbal Bahar Zahid স্যার আপনিই শিখিয়েছেন শুধু নিজে একা বড় হওয়া নয় অন্য ১০ জন কে বড় হওয়ার পিছনে রয়েছে অনেক বড় তৃপ্তটা যা হয়তো কোটি টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় না।
কিছুদিন আগে অসুস্থ ছিলাম,,,আমার এমনো অনেক ভাই বোন আমার খোজ নিয়েছেন যাদের আমি কখনো দেখিওনি কিংবা তারা আমার পূর্বপরিচিত নয়,,,এখান থেকেই তাদের সাথে আমার পরিচয়,,কেউবা ছোট্ট একটা উপকারের কথা আজো মনে রেখে স্মরণ করে সব সময়,,,
আমরা নারী,আমরা পারি কথাটা কি সর্ব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় মোটেই নয়। নারী কে ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই আমরা হাটু ভেঙে বসিয়ে দিই,,,আর সেই যদি হয় গ্রামীণ নারী তাহলে তো কথায় নেই। গ্রামের প্রচলিত তথা অনুযায়ী নারীকে কোন প্রয়োজনেও ঘর থেকে বের হতে গেলেও সমস্যা হয়,,, নানান মন্তব্য শুনতে হয়,,, আর সে জায়গা থেকে বিজনেস করাটাও মোটেই সহজলভ্য নয়।
আমার গ্রাম থেকে শহর প্রায় ১০ কিলোমিটারের ও বেশি,,, পথ যদিও ততটা বেশী নয় তবুও সকাল সন্ধ্যা চাইলেই বেরোনো যায়। দিনে একবারের বেশী দুবার বেরোতে অনেক সংকোচ বোধ হতো আর তার উপর কাচামাল সংগ্রহ থেকে প্যাকেজিং রেডি করে কুরিয়ার সবই নিজে একা করতে হয়েছে।
ঠিক এরকম অনেক প্রতিকূলতাকে জয় করেই আজকে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করেছি। সেই সময়কার সাপোর্ট বলতে পুরোটাই ছিলো এই প্লাটফর্ম। যখন আমি একটু হতাশাগ্রস্ত হই,,,মনে হয় যে থামা দরকার আর পারবোনা,, মনে হয় হেরেই যাবো ঠিক সেই সময় স্যারের একটা ভিডিও কিংবা সেশন আমার চোখের সামনে পরতো আর মনে হতো যে আরে স্যার মনে হয় এই কথাটা আমাকেই বলছে। আবার শুরু হতো ঘুরে দাড়ানোর লড়াই।
দেখতে দেখতে দেড় বছরেরও বেশী সময় চলতেছে। এরই মাঝে অনেক পরিবর্তন হয়েছে নিজের মাঝে যেই পরিবর্তন গুলো একজন উদ্যোক্তা ও একজন ভালো মানুষের জীবনে খুবই প্রয়োজন ছিলো।
** আরেকটা জিনিস শিখেছি তা হচ্ছে লেখালিখির অভ্যাস। আমরা অনেক সময় নিজের ভিতর থাকা কিছু প্রতিভা কে হারিয়ে ফেলি চর্চা না করার অভাবে।
আমার যুক্ত হওয়া এই ফাউন্ডেশনএর নবম ব্যাচ থেকে,,, মাঝে মাঝে ছোট ছোট কন্টেন্ট লিখতাম,, দশম ব্যাচের শেষের দিকে তখন স্যার বললেন সেল পোস্ট গুলো একগেয়েমী,,গল্পে গল্পে সেল পোস্ট দেয়ার জন্য,,,, এদিকে চলছিলো কোরবানির হাট। একটা সেল পোস্ট দেয়ার পর দেখলাম রাত্রে সেটি SOD হলো। সেদিনের খুশিটা অন্য রকম লাগলো এর পর নিজের ভিতর একটা লোভ কাজ করতো ২/১ দিন বা ৪/৫ দিন পর পর লিখতাম জীবনের নানান গল্প,,,ফাউন্ডেশন এর প্রাপ্তি,, স্যারের শিক্ষা নিয়ে,,, এর মাঝে অনেক গুলোই SOD হয়েছে কখনো যদি টানা অনেক দিন লিখা বন্ধ করে দিতাম,,, তখন আমার খুব কাছের একজন নিঝুম আমিন এর কল পেতাম,,, কল করেই লিখোনা কেন,,, এভাবে লিখা বন্ধ করে দিলে আবার ওর ভয়ে লিখতাম। এমনো হয়েছে যে টানা ৬ দিন হয়েছি SOD । ঠিক তেমনি এক সন্ধ্যা ২৭ শে অক্টোবর ২০২১ লিখেছিলাম একটি লিখা আমার প্রিয় মানালী কে নিয়ে।
স্যার সবসময় ভরসা পাই আপনি আছেন আমাদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য।তেমনি আমারো সৌভাগ্য যে অনেক মানালীদের জন্য আমরাও ভরসার জায়গা তৈরি করতে পারি।সেই সন্ধ্যে মানালীর জীবন কথা লিখেছি,,, কিন্তু কে জানতো মানালী নতুন জীবনের ছোট্ট একটা গল্প আমার জীবনের এক স্বর্ণালী সন্ধ্যা নিয়ে আসবে। সেই গল্পটিই নজর কাড়ে আমার মেন্টরের। যখন স্যারের কমেন্ট পাই পোস্টে তখন মনে হয়েছিল যে আমি যেন আকাশের এক টুকরো চাঁদ হাতে পেয়েছি এত খুশি যে লেগেছিল আমি কোন ভাষায় তা প্রকাশ করতে পারবোনা,,,এর দু মিনিটের মাথায় স্যার আমায় ইনবক্স করেন তখন আমি স্যারের মেসেজ টা দেখেই কান্না করে দিই৷ এর পরে স্যারের সাথে কিছু কথোপকথন হয়। তার পরের দিন স্যার আমায় #UTV লাইভে আমন্ত্রণ জানান ১১ নভেম্বর এর জন্য। তখন বার বার মনে হয়েছিলো মানালীর ঘুরে দাড়ানোর দোয়া বোধহয় আমার জীবনের ঘুরে দাড়ানোর গল্প তৈরি করেছে। স্যার প্রতিটা দিন আপনার সেশন দেখে যতটা আত্মবিশ্বাসী হই সেই দিনের ৪০/৪৫ মিনিটে আমি যেনো আরো বেশী আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি,,, তখন বার বার আপসোস হচ্ছিলো স্যারের সাথে আরো আগে দেখা করা উচিৎ ছিল। ঘুরে দাড়ানোর আরেকটা ধাপ এগিয়ে নিজের বাড়িতেই ছোট্ট একটা ডিসপ্লে দিই নিজ প্রডাক্টের। অনলাইন থেকে অফলাইনেও নিজের বিজনেস টা কে প্রসারিত করার চেষ্টা করতেছি সর্বদাই।
** এদিকে নিজের আরেকটা বড় স্বপ্ন ছিলো আমার তা হলো আমার কুকিং বেকিং নিয়ে,,, যদিও এখন কাজই বন্ধ প্রায় অসুস্থতার জন্য। তারপরও এই কুকিং এর জগতে এসে বাংলাদেশের সেরা ঐতিহ্যবাহী বই তে আমার নিজের রেসিপি দিয়ে সিলেক্টেড হই। এর পর প্রস্তাব পাই দেশের দুটি বড় আন্তর্জাতিক টেলিভিশনে টিভি শো এর জন্য। যদিও সব কিছু ফাইনাল হওয়ার পরেই আমি শো গুলো আর করেনি। মিডিয়া আর আমি দুটি দুই জগতের তা আগেই বুজা উচিৎ ছিলো।
যদিও অনেক টা মন খারাপ হয় তারপরও ভালো লাগা কাজ করছিলো যে অন্তত আমি যে প্রস্তাব পেয়েছি বা এতটুকু এসেছি এটাই এনাফ।
স্যার আপনি এমন একটা প্লাটফর্ম করেছেন যেখানে আমরা নারীরা রক্ষণশীলভাবে নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করে যেতে পারি। তা হয়তো অন্য কোন জায়গা থেকে সম্ভব নয়।
সর্বোপরি এমন একটা ভালোবাসার প্লাটফর্ম পেয়েছি যেই প্লাটফর্ম এর হাজার ভাই বোনের ভালোবাসা,,,প্রিয় মেন্টরের একটা ভরসার হাত আমাকে একটা নতুন জীবন দিয়েছে। নিজের পরিচয় দিয়েছে। নিজেকে রংধনুর সাত রঙে রাঙানোর পাশাপাশি অন্য নারীদেরো হাত বাড়িয়ে দিয়েছি আমার ছড়িয়ে দেয়া রঙে তারাও যেন নিজেদের রাঙাতে পারে।
কৃতজ্ঞতা Iqbal Bahar Zahid মেন্টর আপনার প্রতি।
📌 স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮১৬
তারিখ ০৮-০৬-২০২২ইং
নওশিন তারানুম
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
নবম ব্যাচ
রেজিষ্ট্রেশন নম্বরঃ১২৬২৮
জেলাঃ ফেনী
ব্যবসাঃ ফুড ও ফ্যাশন আইটেম
পেজঃ Fashion Food BD