লেগে থাকতে হবে, আপনাকে দিয়েই হবে আপনি পারবেন নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। **
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
❤️" মা তোমায় ভালবাসি কখনো হয়নি বলা। "❤️
💥💥 মা বাবা যে আমাদের জীবনে আল্লাহর দেয়া কত বড় নিয়ামত তা আমরা অনেকেই বুঝি না। আর বুঝি না বলেই আজকাল বাবা মায়ের প্রতি অবহেলা ও নির্যাতন হতে দেখা যায়। আমরা কেউ যেন বাবা মা-কে অবহেলা না করি। বাবা মা হারানোর আগে যেন তাঁদের কদর করতে শিখি।
🌼🌼" মা" কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু এর বিশালতা সুদূরপ্রসারী। আজ আমি আমার মাকে নিয়ে কিছু লিখব। মাকে নিয়ে আসলে লিখে কি কখনো শেষ করা যায়, যায় না। তেমন ভালো লিখতে পারি না তাও একটু লেখার দুঃসাহস করলাম।
🌼🌼 প্রথমেই শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি যিনি আমার সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং আমাকে এখনো এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
🌼❤️ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি" নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন "- এর রূপকার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক স্বপ্নের কারিগর, উদ্যোক্তা বন্ধু,লাখো তরুণ প্রজন্মের আইডল শতাব্দীর মহানায়ক এবং জীবন্ত কিংবদন্তি "ইকবাল বাহার জাহিদ" স্যারের প্রতি। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা পেয়েছি একটি ভালো মানুষ গড়ার কারখানা ভালোবাসার প্লাটফর্ম।
💞💞 বেঁচে থাকো হে সূর্য সন্তান যুগের পর যুগ
তোমার কারণে পথহারা মানুষ পেয়েছে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ 💞💞
❤️ আমার মা ❤️
🌼🌼 আমার মা অতি সাধারণ কিন্তু খুবই ধার্মিক মহিলা ছিলেন। নামাজ, রোজা আর সংসারের কাজই ছিল তার সবকিছু। ছোটদের পড়ানো, অসহায়কে সাহায্য করা ছিল তার খুবই পছন্দের কাজ।
ছোট বেলায় দেখতাম আমাদের বাসায় প্রতিদিনই কমবেশি মানুষ আসতো। কেউ কোন বিপদে পরেছে, কেউ অনাহারে আছে এরকম আরো অনেক সমস্যা নিয়ে আসতো। মা যতটা সম্ভব সবাইকে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। এরকম প্রায়ই হত সে খেতে বসেছে এমন সময় কেউ একজন এসে বলল সে কিছুই খায়নি আম্মু তার খাবার সেই অনাহারীকে দিয়ে নিজে না খেয়ে থাকত। আব্বু কিছু বললে মা বলতো আমি পরে কিছু করে খেয়ে নেব। কিন্তু তার আর খাওয়া হত না।
🌼🌼 মা অল্পতেই খুশি থাকতেন। মাকে দেখেছি অনেক অন্যায় আচরণ তার সাথে করা হলেও সে মুখ বুঝে সহ্য করেছেন। আমি যখন জিজ্ঞেস করতাম মা তুমি এটার প্রতিবাদ করছ না কেন আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলতেন -" মারে জীবনে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়, সব কিছুর জবাব মুখে দিতে হয়না,তুমি যদি মুখে জবাব দিতে যাও ঝগড়া বা অশান্তি হবে তার চেয়ে ভালো হয় কথায় জবাব না দিয়ে তোমার কাজের মাধ্যমে জবাব দাও। তুমি ভুল না সঠিক ভাল না মন্দ তখন সেটা সবাই বুঝে যাবে।
আমি সবেমাত্র H.S.C পাস করে অনার্সে ভর্তি হই হঠাৎ আমার মা স্ট্রোক করে, এতে তার বাম হাত পা অবশ হয়ে যায়। আমি যেহেতু বড় সন্তান তাই মায়ের দেখাশুনা, ডাক্তার দেখানো, সংসার সামলানো সবই করতে হত একা। সাথে নিজের লেখাপড়া। দীর্ঘ ৬ মাস ফিজিও থেরাপি দেওয়ার পর তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। অনেক খুশি হয়েছিলাম মা সুস্থ হয়ে গিয়েছে কিন্তু এই খুশি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। সুস্থ হবার ছয় মাসের মাথায় আবার স্ট্রোক করে। হাসপাতালে নিয়ে যাই কিন্তু দেখি মা স্বাভাবিক আচরণ করছে না। I.C.U - তে জ্ঞান ফেরার পর সে চিৎকার করে বলছিল "সবাই মুখোশ পরা কেউ সত্যিকারে ভালোবাসে না, ডাক্তারা রোগীকে ভালোবাসে না শুধু টাকার জন্য দরদ দেখায়।" আমাকে বলেছিল - " কাউকে বিশ্বাস করবি না সবাই অভিনয় করে।" আজও তার কথাগুলো আমার কানে বাজে।
তারপর থেকে আর কোনদিন আমার মা স্বাভাবিকভাবে কথা বলেনি।কাছে ডেকে নিয়ে আদর করেনি,বলেনি তুই কেমন আছিস,কি করছিস। আমার সেই হাসিখুশি মিষ্টিভাষী মাকে হারিয়ে ফেলি। আমার মা হয়ে যায় একটি ছোট শিশু।
🌼🌼 সকালে ঘুম থেকে ডেকে তোলা, দাঁত ব্রাশ করানো, নাস্তা খাওয়ানো, দুপুর বা রাতের খাবার সব কিছুর আগে তাঁর হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। উত্তর দিলে হবে না, উত্তর তাঁর মনের মত হতে হবে তবেই সে খাবে,অন্য কিছু করবে।কারো কোন কথা সে শুনত না, বিশ্বাস করত না শুধু আমার কথা ছাড়া। আমার একটা বিষয় আজও ভালো লাগে মা এই অসুস্থ অবস্থায়ও বিশ্বাস করত তাঁর মেয়ে কখনো মিথ্যা কথা বলবে না।(কেননা আমার মা জানত ছোটবেলা থেকেই আমি কখনো মিথ্যা কথা বলিনি। কোন অন্যায় করলেও তা স্বীকার করে নিতাম।)
আমার মায়ের যত বায়না, যত রাগ সব ছিল আমার কাছে। রাগ করে তাঁকে কোন কথা বলা যেত না তাহলে তার খাওয়া গোসল সব শেষ, কিছুই করত না। আমিও রাগ করতাম না যদি কখনো রাগ করতাম ভাবতাম আমি যখন ছোট ছিলাম তখন মাকে কত বিরক্ত করেছি তখন সে কি রাগ করেছে, সে তো সব সহ্য করছে তাহলে আজ আমি কেন পারবনা সহ্য করতে। এভাবে সবসময় নিজেকে বুঝাতাম। যদিও আমার মাকে সামলানো ৪/৫ টা বাচ্চা সামলানোর চেয়ে কঠিন ছিল। কেউ যদি কিছু সময়ের জন্যও দেখেছে তাহলে একটি কথাই বলেছে-" তুমি এসব কিছু কিভাবে করছ আর সহ্য কর কিভাবে।" সবাই দোয়াও করত আমাকে। আমি নিজেও জানতাম না আমি কিভাবে সব সামলাতাম,এত ধৈর্য্য আমি কোথায় পেয়েছি।
🌼🌼 প্রতিদিন একটি আশায় আমার ঘুম ভাঙ্গত আজ আমার মা সুস্থ হয়ে যাবে। কত জায়গায় কত ডাক্তারের কাছে গিয়েছি কোন ডাক্তার বলে না আমার মা সুস্থ স্বাভাবিক হবে। একটু সুপ্ত আশা বুকে জ্বালিয়ে রাখতাম মা আমার সুস্থ হয়ে যাবে কিন্তু না তা আর হয় না। বছরের পর বছর যায়।
কোথায়ও কোন মাকে যদি তাঁর মেয়েকে আদর করতে দেখতাম বুকটা ফেটে যেত। আমিও ছিলাম আমার মায়ের খুব আদরের।
একটু শরীর খারাপ হলে যে মা মুখে তুলে খাইয়ে দিত এখন প্রচন্ড শরীর খারাপ হলে শুয়ে থাকলে বলে কিরে উঠ রান্না করবি না। না উঠা পর্যন্ত ডাকতেই থাকে। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি 'একি আমার সেই মা।' চোখের পানি যেন বাঁধ মানে না।
মায়ের সামনে কান্না করা যেত না,বলত- "তোকে খুব কষ্ট দিচ্ছি এ জন্য কান্না করছিস, তাহলে আল্লাহরে বল আমাকে নিয়ে যেতে।" একদিন আমি কোন এক কারনে কাঁদছিলাম মা এসে দেখে ফেলে আর বলে -" মারে কাঁদিস না, তুই কাদলে আল্লাহ সহ্য করব না।" কেন বলেছিল জানি না। এখন আর কেউ এমন করে বলে না।
দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি - মাগো আজ তোমার মেয়ে প্রতিদিন অশ্রুগঙ্গায় ভিজছে তুমি কি দেখতে পাও না, একটি বার এসে বল - "তুই আর কাঁদিস না।" তুমি ছাড়া এই পৃথিবী অর্থহীন মা।
🌹🌹কৃতজ্ঞতা প্রকাশ 🌹🌹
🍁🍁 মায়ের মৃত্যুর পর আমি নিঃস্ব হয়ে যাই। কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করতো না। স্বামী - সন্তান,আত্মীয় - স্বজন প্রতিবেশি কাউকে ভালো লাগতো না। এই পৃথিবীতে আমার "মা" আমার কাছে কি ছিল তা বলে বোঝাতে পারব না। মানসিক ভাবে আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়ি। আমার আচরনও কিছুটা মানসিক রোগীর মত হয়ে যায়। এ সময় যার বা যাদের বেশি সাপোর্ট আমার দরকার ছিল সেটা আমি পাইনি। তবে আমার ছোট্ট ভাই সবসময় আমাকে সাহস দিয়েছে, সাপোর্ট করেছে।
তার মধ্যে পারিবারিক কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়। আমার কাছে মনে হতে লাগলো আমার কোন ঘর নেই, পরিচয় নেই আমার নিজের বলে কোন কিছুই নেই। শ্বশুর বাড়ির সবাই বলতে লাগলো তুমি নিজে কিছু কর। ( আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি আমার বিয়ের আগেই মারা গিয়েছে )
আমার ছোট দুটো বাচ্চা, এ বয়সে ওদের এখন মায়ের সবচেয়ে বেশি দরকার। তার উপর আমার শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো না। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। ঘরে বসে কি করা যায় অনেক চিন্তা করে স্বল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করলাম আমার পথ চলা বাসায় বসে। মোটামুটি ভালো চলছিল। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে আমার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।আমি হতাশ হয়ে পরি।
একদিন ইউটিউবে শ্রদ্ধেয় স্যারের একটা ভিডিও দেখি। যেটা আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করে, আরো কয়েকটি ভিডিও দেখি। এর পর আমি খু্ঁজতে থাকি, অনেক চেষ্টার পর "নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন" এ নিজের নাম রেজিষ্ট্রেশন করি।
স্যারের দেয়া প্রত্যেকটা সেশন পড়তাম বুঝার চেষ্টা করতাম।
স্যারের প্রতিটা সেশন ও ভিডিও আমাকে সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা যোগায়। এখন কোন কারণে হতাশ হয়ে পরলে আমি স্যারের ভিডিও দেখি আর মনে সাহস সঞ্চার করি।
🚩🚩 এখনো প্রতিদিন নিজের সাথে নিজে লড়াই করে যাই ভেঙে পড়ি আমি পারব না আবার মনে সাহস আনি। ** স্যার বলেন - লেগে থাকতে হবে, আপনাকে দিয়েই হবে আপনি পারবেন নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। **
স্যারের কথাগুলো আমাকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি জোগায় প্রতিদিন। স্যারের দেয়া উদ্যোক্তা হবার নীতি ও আদর্শ বুকে ধারন করে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি, ইনশাআল্লাহ একদিন সফল হব এই আশায়।
🌼🌼 এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া স্যারের দেয়া অনুপ্রেরণা ও সাহস এবং অসংখ্য ভালো মনের ভাই-বোন। যারা সবসময় সুবিধা অসুবিধায় সার্পোট দিয়ে যায়। বিশেষ করে আমাদের মিরপুর মডেল জোনের জেসমিন আক্তার জুঁই আপু ( জোন এম্বাসেডর) যিনি আমাকে এই লেখাটি লেখার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন সবসময়। অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় আপু আপনাকে। সেই সাথে আমাদের মেজবাহ উদ্দীন ভাইয়া (DA), জোন এম্বাসেডর হামিদা রহমান আপু, মাজেদুল ভাই সবাই খুব সুন্দর মনের মানুষ। সবসময় আমাদের সাপোর্ট দিয়ে যান। ধন্যবাদ জানাই আমাদের মিরপুর মডেল জোনের সকল ভাইয়া ও আপুদের।
অন্তরের অন্তঃস্তল থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের প্রিয় মেন্টর শ্রদ্ধেয় "ইকবাল বাহার জাহিদ" স্যারের প্রতি। যার কল্যাণে এতো সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছি। যেখানেই এই ফাউন্ডেশনের সদস্য আছে তারা সবাই মনে হয় যেন এক বিনি সুতায় গাঁথা একটি সুন্দর পরিবার।
🙏🙏লেখায় কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এতক্ষন ধৈর্য্য ধরে আমার লেখাটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই সবাইকে।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮১৭
তারিখ ১০-০৬-২০২২
🧕 রেহানা আক্তার
🥈 ব্যাচ - ১৫ তম
📝 রেজিঃ নম্বর - ৬৮৫৯৫
🏡 নিজ জেলা -ফেনী
🏠 বর্তমান অবস্থান- মিরপুর
🏢 ভাষানটেক থানা এম্বাসেডর
🩸 রক্তের গ্রুপ - বি পজিটিভ
👕🥻👗কাজ করছি মেয়েদের থ্রি পিস,ছোটদের পোশাক ও ছেলেদের টি-শার্ট, পাঞ্জাবি নিয়ে।
আমার পেইজের নাম - Raiyan Fashion
পেইজ লিংক - https://www.facebook.com/Raiyan-Fashon-101000632045637/