নিরাশ হলে চলবে না নতুন করে আবার শুরু করতে হবে,
✍️✍️✍️জীবনের গল্প 📋📋
আসসালামুয়ালাইকুম, কেমন আছেন সবাই?আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন, আলহামদুলিল্লাহ আমিও অনেক ভালো আছি। প্রথমে শূকরিয়া জ্ঞ্যাপন করছি মহীয়ান,গরিয়ান সর্বশক্তি মান মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি যিনি আমাকে সু্স্থ্যতার এখনো পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছেন।
আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব "আমার জীবনের গল্প "
আশা করি সবাই ধর্য্য সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়বেন
#তাহলে শুরু করা যাক ✍️
শৈশব কাল: আমার জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ী থানার যশলং ইউনিয়নের সেরাজাবাদ গ্রামে ১৯৮০সালে,এক যৌথ পরিবারে , আমি আমার পরিবারের ছয় ভাইবোনের মধ্যে বড় সন্তান,সে জন্য আমার আদর ভালোবাসার কমতি ছিল না,দাদাবাড়ী ও নানা বাড়ির , সবাই যত্ন করেছেন,এ ভাবেই আদর ও ভালবাসার মধ্যে কেটে গেল আমার শৈশব কাল।
কৈশোর কাল: আমার কৈশোর কাল কেটেছে আনন্দ ও খেলা ধুলার মধ্যে, অনেক মজা করতাম পাড়ার সকলে মিলে, সকালে ঘুম থেকে উঠে মক্তবে যেতাম কোরআন পড়তে কতোই না ভালো লাগতো।
প্রাইমারি স্কুল লাইফ: আমার বয়স যখন ৫বছর তখন আমি প্রাইমারি স্কুলে যেতাম, আমাদের বাড়ির পাশেই স্কুল ছিল , সেখানে অনেক দূর দুর্দান্ত থেকে ছেলে মেয়েরা আমাদের স্কূলে আসতো ,সে সময়টা কি যে মজা করে কাটিয়েছি, সেখান থেকে পন্ঞ্চম শ্রেনি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি।
হাই স্কুল লাইফ: পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আমাদের এলাকার যে হাই স্কুল 🏫 আছে সেখানে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিলাম, আসলে প্রথম দিন হাই স্কুলের অভিজ্ঞতা ছিল অন্য রকমের , আমি যখন স্কুলে গেলাম, আমার মনে একটা ভয় কাজ করছে,যে কোথায়?কার সাথে প্রথম দেখা করব আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না,তারপর এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছি্ কার কাছে জিজ্ঞেস করবো, কারন আমার সাথে কেউ যায়নি, অন্যরা যারা ভর্তির জন্য আসে, সবাই অভিভাবক নিয়ে আসে তারপর যেভাবে হোক আমাদের স্কুলের কেরানির মাধ্যমে ভর্তি হলাম, আলহামদুলিল্লাহ।
ভর্তির কিছু দিন পর থেকেই আমাদের ক্লাস শুরু হলো, প্রথম প্রথম স্কুলে যেতে একটু ভয় ও লজ্জা লাগছে, কারন এখানকার টিচারদের সাথে তেমন একটা পরিচয় ছিলনা,যখন নিয়মিত স্কুলে যাওয়া শুরু করলাম,পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে গেছে , তারপর আশেপাশের দু একজনের সাথে পরিচয় হলো এবং প্রতিদিন স্কুলে যেতাম, এভাবে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা নিজে নিজে কস্ট করে কোন প্রাইভেট ছাড়া পাশ করে উঠেছিলাম,আর পড়াশোনার পাশাপাশি আমি নিয়মিত অনেক ফুটবল ও ক্রিকেট 🏏 খেলতাম, খেলাধুলার পরে সাঁতার কাটতাম,যেহেতূ আমাদের বাড়ির পাশেই রয়েছে খাল, বর্ষায় অনেক মজা করতাম বিলে যেতাম শাপলা কুঁড়াতাম ও অনেক মাছ🎏 ধরতাম, এভাবে অস্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা মোটামুটি চলছে, কিন্তু আমার পরিবার ছিল নিম্ম মধ্যবিত্তের,যার কারনে আমার বাবার পক্ষে ছয় ভাই-বোন সহ আট জনের সংসার এবং পড়াশোনার খরচ চালাতে তার অনেক বেক পেতে হচ্ছে, আমার আশেপাশের যারা আছে সবাই তারা প্রাইভেট সহ স্কুলের টিফিন সব কিছু সুন্দর ভাবে খরচ চালাতো কিন্তু আমার পক্ষে খুবই কঠিন ছিল তারপর আমার কোন সাপোর্টার ও ছিল না, আত্বীয় স্বজন টাকা 💸 পয়শাওয়ালা ছিল, কি আর করার নিজে নিজে চেষ্টা করে অস্টম শ্রেনী থেকে নবম শ্রেণীতে উঠলাম, এখন নবম শ্রেণীতে উঠা মানে SSC পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতির প্রথম বছর, এখানে সবকিছু আলাদা,যেমন সাবজেক্ট, পরীক্ষার জন্যে বোর্ড রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, কিন্তু এই রেজিস্ট্রেশন এর টাকা 💸 যোগাড় করতে আমার পড়াশোনাই বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম, আত্বীয় স্বজনের মধ্যে কেউ বলে ফেলল,আর পড়াশোনার দরকার নাই,ঢাকাতে কারোও দোকানে দিয়ে দিন, তখন মন অনেক খারাপ হয়ে গেল, ভাবলাম এই পর্যায়ে এসে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, আমার কমপক্ষে মেট্রিক পাস করতে হবে, এই চিন্তা করে নিজের উপর আস্থা রেখে, মাকে মেনেজ করে রেজিস্ট্রেশন এর টাকা যোগাড় করে, রেজিস্ট্রেশন করলাম সায়েন্সে ,পরে ভালো ভাবে পড়াশোনা শুরু করলাম, তারপর দশম শ্রেণীতে উঠলাম এবার এস এস সি টেস্ট পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি চলছে, সকলে প্রাইভেট সহ নানানভাবে কোচিং করতে শুরু করলো কিন্তু আমি পারিনি,কারন? একটাই টাকা! যাইহোক টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি ভালো ভাবেই, পরে এস এস সি ✍️দিলাম, আলহামদুলিল্লাহ ,ফাস্ট ডিভিশন পেলাম, আমাদের সময় ডিভিশন ছিল,এখন গ্রেড পয়েন্ট আসছে।পাশ যখন করলাম তখন কলেজে পড়ার স্বপ্ন দেখছি,কি করার সেখানে ও ভর্তির জন্য এবং বই কেনার টাকা প্রয়োজন। পরে আমাকে আমাদের এক শিক্ষক আমাকে হেল্প করেছেন কলেজে ভর্তির জন্য সেখানে আমি অল্প টাকায় ভর্তি হলাম, প্রতিদিন যাতায়াতের জন্য ও বাস ভাড়া দরকার, পরে পাশের বাড়ির দূইটা ভাতিজাকে প্রাইভেট পড়ালাম এভাবে ছয় মাস চলে, পরে হঠাৎ একদিন আমাদের পাশের বাড়ির এক চাচাতো ভাই আমার মাকে বলে চাচী জসিমকে আমাদের দোকানে দিয়ে দিন,ওখানে আমরা কলেজে ভর্তি করিয়ে দিব, পরে মা এবং আমি ও ভাবলাম তাহলে তো ভালোই,রাজি হয়ে গেলাম, আমি ঢাকা চলে আসলাম তাদের দোকানে, এভাবে এক মাস ,দূই মাস যেতে লাগলো আমি বললাম ভাই আমাকে ভর্তি করাবেন না?তারা বললো এবার আর সময় নাই, এবং দোকানে ও অনেক কাজ,বাস্ আমার পড়াশোনার ইতি ঘটে গেল, তাদের ওখানে প্রায় তিন বছর চাকরি করলাম,তারপর আমি ভাবলাম আমি আর চাকরি করবনা, নিজে একটা দোকান নিব , সেটাও নিলাম বঙ্গ বাজারে টি সার্ট হোল সেল ,সেখানে প্রায় তিন বছর ব্যবসা করলাম, দেখলাম বেশি উন্নত করতে পারছিনা তাই বিদেশে যাওয়ার জন্য পাগল হলাম, আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে চলে গেলাম, ওখানেও প্রায় ছয় বছর কাটালাম, তেমন একটা কিছু করতে পারিনি কারন অল্প বেতনে চাকরি এরপর কলেজের টিউশন ফি দিয়ে সেভ করা কঠিন,যে টাকা ছিল তা দিয়ে কিছু স্বর্ন অলংকার কিনলাম কারন বিয়ে করতে হবে, পরে দেশে চলে আসলাম , কিছুদিন বাবার দোকানে সার্ভিস দিলাম, এরপরে কন্যা দেখা শুরু, বিয়েও হয়ে গেল পরে ভাবলাম বাবার দোকানে আর কতদিন কারন নিজের একটা খরচের দরকার আছে,সবসময় বাবার থেকে চেয়ে নিয়ে চলা সম্ভব নয় এরপর আমি নিজে একটা জুতার রিটেইল দোকান নিলাম মোটামুটি ভালো চলছে এখানেও প্রায় তিন বছর ব্যবসা করলাম ,এরই মাঝে আমাদের ঘরে আসলো এক কন্যা সন্তান আলহামদুলিল্লাহ,পরে আবার মাথায় আসলো এখানে যে টাকা ইনকাম করি,তাতে ভবিষ্যতের জন্য সেভ করা কঠিন,তাই আবার বিদেশের ভুত মাথায় চাপলো, পরে এক বন্ধুকে কনভিন্স করে কুয়েত চলে আসলাম এখনো পর্যন্ত আছি জানিনা আল্লাহ তাআলা কতদিন রিজিক রাখছে, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তবে যত ভালোই থাকি না কেন,দেশে ফিরে যেতে হবে এবং কিছু একটা করতে হবে, সেজন্য টাকা সেভ করার চেষ্টা করছি।
আমি ফেসবুক, ইউটিউব দেখি প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই দেখি , নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন 'সেখান প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের কয়েকটা ভিডিও দেখি পরে ভালো লেগে যায়, মনে হচ্ছে যেন, স্যারের সেসান গুলো আমাকে ঘিরে এবং আমার জন্য ,আমি কতটা না ভূল করেছি, আমি যদি স্যারের একটা বাক্য যদি ১৫-২০বছর আগে পেতাম ,বাক্যটা হলো লেগে থাকুন আমি কিন্তু স্বপ্ন দেখছি,সাহস করছি, শুরুও করেছিলাম কিন্তু লেগে থাকিনি,যদি লেগে থাকতাম ইনশাআল্লাহ অবশ্যই সফলতা আসতো, কারন আমার সাথে যারা যারা ছিল ,আজ তারাই আমার জন্য উদাহরণ হয়ে গেছে ,তারা সকলেই সফল।তাই নিরাশ হলে চলবে না নতুন করে আবার শুরু করতে হবে, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, ইনশাআল্লাহ আমি যেন সফল হতে পারি।
ধন্যবাদ সবাইকে, আমার নিজের বাস্তব জীবনের গল্পটা ধৈর্য্য সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য,
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮১৯
তারিখ ১৩-০৬-২০২২ইং
ধন্যবাদান্তে🌷
নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন""
🧑🍼জসিম উদ্দিন
📖ব্যাচ:১৭
📚রেজিস্ট্রেশন নম্বর:৯৫৩৯৯
🇧🇩জেলা: মুন্সীগঞ্জ
🇰🇼বর্তমান কুয়েত প্রবাসী
#একজন সফল উদ্যোক্তা ও ভালো মানুষ হতে চাই ।