নতুন বউ বাড়িতে রেখে ৭৫০ টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম চাকরি খুজতে
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
বিয়ে থেকেই শুরু
নতুন বউ বাড়িতে রেখে ৭৫০ টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম চাকরি খুজতে। ৩ দিন পর পকেট খালি । বংশের বড় ছেলে এবং আমার বাবার একমাত্র ছেলে বলে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা শেষ করতে না করতেই বাবার অসুস্থতার কারনে বাড়ির সবাই আমাকে বিয়ের মাধ্যোমে সংসার নামক সিকলে বেধে দিয়েছিলেন। ছোট বেলা থেকেই আমি খুব জেদি টাইপের ছিলাম, নিজের জিদটাকে পুজি করে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাধ্যে হয়ে রাতের অন্ধকারে রড সিমেন্টের দোকানে ট্রাক থেকে বালু নামিয়ে সারা রাতে ১২০০ টাকা ইনকাম করি, ওটাই ছিলো আমার জীবনের প্রথম পরিশ্রমে টাকা ইনকাম করা। কাজের অভ্যাস না থাকায় সারা শরির ব্যাথা হয়ে গেলো, হাতে ফোস্কা পরে হাত ফুলে গেলো । কোন কিছুকে গুরুত্ব না দিয়ে আবার শুরু হলো চাকরি খোজা । ৪ দিন পর একটা নতুন শোরুম চাকরি ঠিক করলাম বেতন ৮,০০০/-
শুরু হয়ে গেলো আমার চাকরি জীবন।কম্পিউটার এ কাজের দক্ষতা ও নিজের মেধায় ৩ বছর পর আমার বেতন হয়ে গেলো ১৮,০০০/-
সবকিছু ঠিকই চলছিলো কিন্তু নিজের মধ্যে একটা সপ্ন উকি দিচ্ছিলো যেটার জন্যে আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না, হঠাৎ আমি নিজেকে পাল্টালাম, মনে মনে ভাবলাম আমি নিজেই ব্যাবসা করবো, তার আগে ফেসবুক এ নিজের একটা পেজ খুলে কাজ করবো। কিছু জমানো টাকা থেকে একটা কম দামে ল্যাপটপ কিনলাম,
শুরু হয়ে গেলো ২য় মিশন, সকাল ১০টা থেকে রাত ৯ টা ডিউটি করতাম, রাতে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে শুরু করতাম নিজের পেজ এর কাজ । যদিও আমার কাজ ছিলো অনলাইন বেজ, কিন্তু আমি এই ব্যাবসা করবো বলে কাচামাল থেকে শুরু করে ভোক্তা পোর্যন্ত সকল কিছু আয়োত্ত করে নিলাম । আমার কাজে আমাকে পাশে থেকে সাপোর্ট দিয়েছে আমার স্ত্রী তাকে কিছুই দিতে পারি নাই শুধুমাত্র আমার সপ্নটাকে সত্যি করবো বলে, যাইহোক এভাবে চাকরির পাশাপাশি নিজের পেজটাকে দার করালাম, এবার পেজ থেকে ২/১ টা অরডার আশা শুরু হলো, শোরুম না থাকায় অনেক অরডার নিতে কষ্ট হতো, দরকার পরলো একটা শোরুম, পরিচিত এক ভাই এর শোরুম ঠিক করলাম আমার পেজ এর কাষ্টমার শোরুম এসে অরডার করলে যা লাভ হবে ৮০% আমার আর ২০% ওনাকে দিতে হবে। এবার চাকরি দিলাম ছেড়ে, ভয় হচ্ছিলো যদি ইনকাম না হয় তাহলে কি হবে?
ইতিমধ্যে আমাদের ঘর আলো করে এলো আমার ছেলে আরিয়ান। জীবনের নানা উত্থান পতনের মাঝেও সবকিছু ভালোই চলছিলো। এবার হানা দিলো ভয়ংকরী করনার থাবা। ঢাকার সবাই সবকিছু গুটিয়ে গ্রামে যাওয়া শুরু হয়ে গেলো । আমিও বাবা মায়ের আদেশে গ্রামে চলে গেলাম।
কয়েকদিন থাকার পরে গ্রামে আর আমার ভালো লাগছিলো না, কারন মনের মধ্যে সপ্নটা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো। অবসর সময়টা কাজে লাগালাম, ড্রাইভিং শিখে নিলাম। ড্রাম ট্রাকে ডিউটি শুরু করলাম যদিও আমার ফ্যামিলি এ পেশাকে সাপোর্ট দেয় নি।
হঠাৎ ঢাকা থেকে ফোন পেয়ে আবার সবকিছু ছেরে ঢাকায় এলাম কিন্তু আবার চাকরিতেই ঢুকলাম টাকার অভাবে।
হঠাৎ একদিন ফেসবুকের টাইমলাইনে মাউস স্ক্রল করতে করতে একটা গ্রুপ এর নাম দেখে আমার হাত আটকে গেলো
নামটা ছিলো- নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন - উদ্যোক্তা তৈরির কেন্দ্র,নামটাই আমার ভালো লেগে গেলো তাই জয়েন করে ফেললাম। তারপর থেকে গ্রুপের পোষ্টগুলো আমার খুব ভালো লাগলো আমি প্রতিটা পোষ্ট পড়তাম আর শিখতাম, কিভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায়? কিভাবে একজন ভালো ব্যাবসায়ী হওয়া যায়?
একদিন রেজিষ্ট্রেশন এর একটা পোষ্ট দেখে বুঝতে পারলাম আমার রেজিষ্ট্রেশন করা উচিত,করেই ফেললাম ১১তম ব্যাচে, সেই থেকে আমি একজন এই গ্রুপের রেজিষ্টারভুক্ত সদস্য । স্যার এর ক্লাস থেকে শিক্ষা নিতাম এবং বাস্তব জীবনে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতাম।
কিছুদিন চাকরি করার পর আবার কিছু টাকা জামাতে থাকলাম আর নিজে শোরুম দেয়ার জন্যে একটা ছোট শোরুম খুজতে থাকলাম।কিছুদিন খুজতে খুজতে পেয়েও গেলাম। কিছু টাকা লোন করে শেষমেশ শোরুমটা নিয়েই নিলাম আলহামদুলিল্লাহ
তখন থেকে আমি কাষ্টমারদের বলা শুরু করলাম
এবার আমি কাষ্টমারকে বলতে পারি - স্যার আমার শোরুম আছে, প্রডাক্ট না নিলেও আসবেন ইনশাল্লাহ এককাপ কফি খেয়ে যাবেন।
এখন সকল ভাইজানদের এবং আমার বোনদের বলছি -প্রডাক্ট না নিলেও আসবেন ইনশাল্লাহ এককাপ কফি খেয়ে যাবেন --- ইনশাআল্লাহ।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮২০
তারিখ ২০-০৬-২০২২ইং
আমি ফার্নিচার নিয়ে কাজ করছি ।
আমার ফেসবুক পেজ এর নাম Max Furniture
নামঃ রনি হাসান
ব্যাচঃ ১১ তম
রেজিষ্ট্রেশনঃ ৩৭৩৪৬
জেলাঃ সিরাজগঞ্জ
উপজেলাঃ তাড়াশ
রক্তের গ্রুপ : ০+
বর্তমান অবস্থানঃ বাড্ডা ,ঢাকা