তখন আর্থিক সংকট এবং সময়ের অভাবে কাজ শুরু করা হয়নি
🌺 বিসমিল্লাহি রহমানির রহিম 🌺
🌹আসসালামু আলাইকুম 🌹
♦️প্রথমে শুকরিয়া জানাই সৃষ্টির্কতা মহান আল্লাহর, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, রিযিক ও সুস্থতা দান করেছেন, যার রহমতে এই সুন্দর পৃথিবীতে মানুষ রুপে আবির্ভূত হয়েছি, তার শুক্রিয়া আদায় করতে পারছি।
♦️সালাম ও দুরুদ জ্ঞাপন করছি আমাদের
প্রিয় নবী যিনি সারা জীবন উম্মতের জন্য কেঁদেছেন সেই শ্রেষ্ঠ মানব, রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজামোবারক এ।
🌺🌺 আবারও হাজার সালাম ও ভালোবাসা জানাই আমার প্রিয় পিতা-মাতার প্রতি যাদের আদর-ভালোবাসায় বেড়ে উঠেছি 🌺
♦️আমি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি প্রিয় মেন্টর, লাখো তরুণ-তরুণীদের স্বপ্নদ্রষ্টা, শতাব্দীর সেরা কিংবদন্তী, পরামর্শদাতা, একজন ভালো মনের মানুষ আমাদের সকলের প্রিয় জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।
আজকে আমি বলবো আমার জীবনের কিছু কথা।
♦️জীবন গল্প
আমার অফিসিয়াল নাম মাহবুবা মুনমুন আর ডাক নাম মহুয়া। বাবা-মার আদরের নাম গেদী। যদিও গেদী নাম আমার তেমন পছন্দ না। মেয়েবেলায় প্রচন্ড ডানপিটে ছিলাম। গাছে চড়া, সাতার কাটা, ক্রিকেট, ফুটবল, লাটিম, মার্বেল, পুতুল, গোল্লাছুট, সব খেলায় আগে আগে। আমার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর থানার কয়েড়া গ্রামে। যাইহোক, বড় দুইভাইয়ের এক বোন আমি। বাবা শুরুতে পুলিশে চাকুরী করলেও পরবর্তীতে লঞ্চ কিনে লঞ্চ মালিক হয়ে ছিলেন। কিন্তু সে সুখ বেশি টিকেনি। যমুনা নদীতে সেতু হওয়াতে লঞ্চ ব্যবসা তুঙ্গে উঠে। তখন অবশ্য আমি তেমন কিছু বুঝতাম না। এরপর চেয়ারম্যানের নির্বাচন করে ব্যাপক অর্থ নষ্ট। তারপর আব্বা বিভিন্ন বিজনেস করে করে টাকা লস করে আমরা প্রায় সর্বশান্ত। তখন মা সংসারের হাল ধরেন। উল্লেখ্য মা পরিবার পরিকল্পনাতে চাকুরী করন, আগামী বছর চাকুরী থেকে অবসরে যাবেন। অই সময়টাতে চরম অর্থ সংকটে কেটেছে আমাদের সংসারে। পরিবার পরিকল্পনার চাকুরীটা তখনো রাজস্বতে যায়নি। মার বেতন সেবার ৫-৬ মাস বন্ধ ছিলো। সংসারে চলছিলো চরম অর্থসংকট। সেইসব দিনগুলো ছিলো আমার জীবনে চরম শিক্ষণীয়। আমি জীবনে উত্থান-পতন খুব কাছ থেকে দেখেছি।
আমার শিক্ষা জীবনঃ
আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিলো নিজ গ্রামের প্রাইমারী- কয়েড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আমার স্মৃতিশক্তি ছিলো খুব তীক্ষ্ণ কিন্তু আমি প্রচন্ড রকমের ফাকিবাজ। সারাদিন খেলাধুলা নিয়েই বেশি ব্যাস্ত থাকতাম। প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম থাকলেও তৃতীয় শ্রেনীতে রোল ছিলো চৌদ্দ। যেহেতু মা চাকুরীজীবী ছিলো সেই সময় খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। এবার মা আবার লাগাম টেনে ধরলেন ফলে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে আবারো প্রথম। কিন্তু এর মানে এই না যে খুব পড়তাম। এভাবেই মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় কেন যেন না পড়েই প্রথম হয়ে যেতাম। আসলে ভেড়ার পালে বাছুর ই শ্রেষ্ঠ। তবে আমার জীবনে চাকুরী করার কোন ইচ্ছে কোন্দিন ছিলো না। মাকে খুব মিস করতাম তো তাই আমার কেন যেন মনে হতো আমি কোনদিন চাকুরী করবো না। তাই ভাবতাম না পড়েই প্রথম হলে কষ্ট করে পড়বো কেন? বিপত্তী বাধলো ২০০৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায়। মাত্র ৩.৬৫ পেয়েছিলাম। লজ্জায় সেদিন মাথা নুইয়ে গিয়েছিলো। আব্বাকে বলেছিলাম একটা ভালো কলেজে ভর্তী করে দাও, বাবা গ্রামের কলেজেই ভর্তী করে দিয়েছিলো পাশাপাশি ভোকেশনালে আবার এসএসসিতে। ২০০৯ সালে ২মাসের ব্যবধানে এস.এস.সি আর এইচ.এস.সি দিলাম। এস. এস. সি তে ৪.৫৫ পেলাম। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম ডিপ্লোমা ইঞ্জিঃ পড়বো। কিন্তু এবারো আব্বা আপত্তি জানালেন, মেয়েদের বাহিরে থেকে পড়া যাবে না। অনেকটা জেদ করেই আব্বার অনুমতি উপেক্ষা করে আমার ছোট ভাইয়াকে সাথে নিয়ে টাঙ্গাইল পলিটেকনিক থেকে ফর্ম তুললাম এবং ওয়েটিং লিস্টে ইলেক্ট্রনিক্স ও কম্পিউটারে চান্স পেলাম। এর মাঝে আব্বাকে বুঝিয়ে সাথে করে নিয়ে গিয়ে ভর্তী হয়ে আসলাম পলিটেকনিকে। সেইদিন ই রেজাল্ট হলো এইচ.এস.সি। পেলাম মাত্র ৩.৪৫। যাই হোক বহু ঝড়-ঝাঞ্চা পেরিয়ে আশানুরুপ ৩.৬৬/৪ পেয়ে ২০১৪ সালে ডিপ্লোমা শেষ করলাম। এখানেও অনেক ইতিহাস আছে সেগুলোআরেকদিন সময় করে বলবো। এর মধ্যে ২০১৩ সালের জুন মাসের ২৮ তারিখ আব্বা হঠাৎ বিয়ের দাওয়াতে গিয়ে প্রেশার উঠে মারা গিয়েছিলেন। মাথার উপর থেকে ছায়াটা হঠাৎ করেই সরে গিয়েছিলো সেদিন। এত প্রতিকুলতার মাঝে লেখাপড়া ছাড়িনি। বিএসসি ইঞ্জিঃ করেছি বিইউবিটি থেকে। সেই সাথে শুরু করেছিলাম স্বপ্ন দেখতে।
আমার কর্ম জীবনঃ
আমার কর্ম জীবন প্রথম শুরু করেছিলাম ২০০৭ সাথে। এস.এস.সি পরীক্ষার পর আমি প্রথম টিউশনি শুরু করি এবং আমার কাকী তখন মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটানোর সময় আমি তার আনন্দ স্কুলে পাঠ দান শুরু করি। এগুলো সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে। একইভাবে এইচ.এস.সির পর ও টিউশনি করেছি নামে মাত্র মূল্যে। তবে প্রথম চাকুরী শুরু করেছিলাম ডিপ্লোমাতে ইন্টার্ণীতে থাকা অবস্থায় টাঙ্গাইল কলিং এ, কম্পিউটার ইন্সট্রাক্টর হিসেবে। তবে মাত্র ২-৩ মাস করেছিলাম। ২০১৪ সালে বিএসসি ইঞ্জিঃ ভর্তী হবার সময় মাকে বলেছিলাম তুমি প্রথম সেমিস্টারের টাকা দিবা বাকী টাকা আমি চাকরী করে পড়বো। আমার ভার্সিটির খরচ ছিলো ২৩৫০০০ টাকা। আল্লাহর রহমতে আমি প্রথম সেমিস্টারের মিডটার্মের পর আমার জব হয়েছিলো। Arena Phone BD তে UI/UX ইঞ্জিঃ পোস্টে বেতন ছিলো মাত্র ৭৫০০/- টাকা। যারা UI/UX যারা বুঝেন না তাদের জন্য বলি ওয়েব এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনার। ৬ মাস পর বেতন হয়েছিলো ১০৫০০/- সেটা ২০১৫ সালে। ১ বছর পর Teleba Solution ltd. এ জয়েন করি সফটোয়ার ইঞ্জিঃ হিসেবে ১৫০০০/- এ এবং পরে স্পাইয়ার টেকনোলজিতে ২০০০০/- এ ২০১৬ তে। এদিকে মাথায় মাথায় বিসিএস এর ভূত চাপে। জব ছেড়ে দিয়ে পড়তে শুরু করি পাশাপাশি একটা প্রাইভেট স্কুলে জয়েন করি স্কুলের নাম ছিলো নুরজাহান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এর পর দেশ পলিটেকনিকে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে ৬ মাসের মত চাকুরী করি। পরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন তথ্যআপা প্রকল্পে জয়েন করেছি ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে এবং বর্তমানে এখানেই আছি
🌷উদ্দোক্তা জীবন শুরুঃ
২০১৫ সালে প্রথম স্বপ্ন দেখি নিজের একটা ই-কমার্স বিজনেসের। তখন আর্থিক সংকট এবং সময়ের অভাবে কাজ শুরু করা হয়নি। তবে পেইজ ও ডোমেইন নিয়েছিলাম। বিবাহবাজার আমার স্বপ্ন। যেটা আমাকে অনেক রাত ঘুমাতে দেয়নি। আর মেয়েদের দুর্দশা, আত্ন উন্নয়নের জন্য কাজ করার চিন্তা আসে বাবা মারা যাবার পর। তখন মনে হয়েছিলো বাবার বর্তমান ও অবর্তমানে মা যেভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন সেই সময় থেকে মনে হয়েছে প্রতিটি মেয়ের উচিৎ কিছু করা নিজের জন্য পরিবারের জন্য।কিন্তু আমার এই জব, সংসার, সন্তানের চাপে সব স্বপ্ন হারিয়ে গিয়েছিলো। হঠাৎ একদিন অনলাইনে দেখলাম স্যারের বিভিন্ন ভিডিও। যুক্ত হলাম গ্রুপে। বান্ধবী যখন রেজিষ্টেশন করে দিতে বলে তাকে রেজিঃ করে দিতে গিয়ে সাথে নিজেও রেজিঃ করে নিলাম ১৭ তম ব্যাচে। কিন্তু গ্রুপের কারো সাথে পরিচয় ছিলো না। নিজে থেকে খুজে বের করলাম উপজেলা গ্রুপ। এর কিছুদিন পরেই ছিলো যোগদিলাম মহা সম্মেলনে। ফিরে পেলাম আমাকে, স্বপ্নকে, ঘুম না আসা রাতগুলোকে। কিন্তু ভয় তো একটা ছিলোই। আমি কি পারবো, সবাই তো করছে তাই বলে কি আমারো হবে। রিক্স নিয়ে ঈদে কিছু পন্য কিনে আনলাম। বাহ বেশ সাড়া পেলাম। কিন্তু ঈদে সময় পেয়েছিলাম মাত্র ১৫-১৬ দিন। আলহামদুলিল্লাহ সেও কম ছিলো না। এই ঈদে নিজের একটা শোরুমের কথা চিন্তার পাশাপাশি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। সবার কাছে দোয়া প্রার্থী।
আমার স্বপ্ন পূরনের কান্ডারীঃ
যদিও স্বপ্নটা আমার ছিলো কিন্তু আমার সাহস ছিলো না, আর ধৈর্য ও কম। কিন্তু প্রিয় ইকবাল বাহার স্যারের সেই মূল্যবান কথা
"স্বপ্ন দেখুন,
সাহস করুন,
শুরু করুন,
লেগে থাকুন,
সফলতা আসবেই"
নিজের অন্তরে ধারন ও লালন করে এগিয়ে চলছি সফলতার জন্য। এই চলার পথে আরো যাদের অনুপ্রেরণা পুজি করে নিয়েছি তারা হলেন ইবনে সাইম রানা, Kh Istiak Ahmed Shajib, Tareque Akand, Sagarika Ekbal, যূঁথি মির্জা, ইনায়া ইসলাম বৃষ্টি, Azizul Hakim, Sabina Yasmin Sabina, Salma Begom, Md Habib, Afroza Akter Thia, Suma Sarker Khadiza Hosenইবনে সাইম রানা Roksana Khan। প্রিয় স্যারের অভিবাবকত্বে আপু ভাইদের মত এমন একটা লাখো ভাই বোনের পরিবার পেয়ে আমি গর্বিত। আমি সবসময় আপনাদের ভালোবাসা ও দোয়াই স্থান নিতে চাই।
কষ্ট করে সময় নিয়ে আমার জীবনের গল্পটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকবেন সব সময় বিধাতার নিকট এই প্রার্থনা করছি।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮১৯
তারিখ ১৩-০৬-২০২২ইং
🌷🌷🌷ধন্যবাদান্তে----------🌷🌷🌷
মাহবুবা মুনমুন মহুয়া
ব্যাচঃ ১৭
রেজিঃ ৮৪৯৪৩
উপজেলাঃ ভূঞাপুর
জেলাঃ টাঙ্গাইল
ফাউন্ডারঃ বিবাহবাজার