একটা মানুষের জীবন অনেক বড় সেই জীবনের সমস্ত গল্পটা এভাবে লিখে শেষ করাটা সম্ভব নয়।
🌻🌼আমার জীবনের গল্প 🌼🌻
"বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম"
আসসালামু আলাইকুম।
❤️🥀 প্রিয় ফাউন্ডেশনের ভাই ও বোনেরা আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহ পাকের রহমতে ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি।❤️🥀
❤️❤️❤️ শুরুতেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মহান আল্লাহ পাকের প্রতি যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং এখনো পর্যন্ত সুস্থ রেখেছেন। এবং আমাকে দিয়েছেন সবটুকু যা আমি চেয়েছি তার থেকে অনেক বেশি।❤️❤️❤️
❤️🥀🥀 কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর প্রতি,যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে "নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন" এর মত প্লাটফর্ম পেয়েছি। যেখান থেকে আমার মত হাজারো তরুণ - তরুনী হতাশা থেকে মুক্তি পেয়ে জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে পেরেছেন।আমি সেই মহান মানুষ প্রিয় স্যার এর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।❤️🥀🥀
🌿🌿🌿🌿জীবনের শুরু 🌿🌿🌿🌿
ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম খুব শান্ত স্বভাবের। কারো সাথে উচ্চস্বরে কথা বলতাম না। সব সময় চুপচাপ থাকতাম। সবার কথা শুনে চলতাম সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলতাম।
বন্ধুবান্ধবের কাছে ছিলাম খুব প্রিয়। ছোটবেলায় হাঁস-মুরগি, পশুপাখি, ফুলগাছ এগুলোর সাথে আমার সম্পর্ক খুব বেশি ছিল। আমি মানুষের সাথে কম মিশতাম সব সময় মুরগি, পাখি, ফুল গাছ এগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম।
আমার মনে আছে ছোটবেলায় আমাদের বাসায় অনেকগুলো কবুতর ছিল। আমি যখন স্কুলে যেতাম কবুতরগুলোকে খাইয়ে যেতাম। তাদের সাথে সময় কাটাতাম। এবং যখন বাসায় ফিরতাম তখন কবুতরগুলো আমার জন্য মাঝ রাস্তায় অপেক্ষা করতো। বাসার সামনে কিছু গাছ ছিল সেই গাছের উপর কবুতরগুলো বসে থাকতো। আমাকে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে দেখেই সবাই চলে আসতো আমার কাছে। আমি কোনরকম স্কুল ব্যাগটার রেখেই তাদের খাবার দিতাম। এবং তাদের হাতে করে খাইয়ে দিতাম।
বাসায় বিভিন্ন ফুল গাছ লাগানো এটা ছিল আমার দৈনন্দিনের কাজ।এটা ছিল আমার ছোটবেলার গল্প। অনেক সুন্দর ছিল আমার দিনগুলো।
যখন আমি বড় হতে থাকি তখন বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মানুষ আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে। সেসব কথা এখন বলতে গেলে এভাবে লিখে শেষ হবে না। তাই সে প্রসঙ্গ এখন থাক। অন্য কোনদিন আপনাদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করব।
আমি জানিনা মানুষ আর একটা মানুষের ক্ষতি করে কি পাই। আমি যেমন স্বভাবের মেয়ে ছিলাম সেখান থেকে কারো কোন ক্ষতি আমি কখনো করিনি। বরং মানুষের উপকার করার কথা ভেবেছি বা করেছিও। কিন্তু কিছু মানুষ এমন ভাবে আমার সাথে শত্রুতা করে, যার কারণে আমার জীবনে অনেক বড় ঝড় শুরু হয়ে যায়। এবং আমি এতটাই ভেঙে পরি যে সেই সময় আমি প্রায়ই পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম। মানসিক চাপে আমাকে ঘিরে রেখেছিল।
মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে কয়েকবার আত্মহত্যার কথা ভেবে নিয়েছিলাম। একবার একদম সিদ্ধান্ত নিয়েই নেই যে, আমি আর বেঁচে থাকবো না। কারণ আমার সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না। তো সেইসময় আমি রাতে বসে বসে এগুলো ভাবছিলাম ঠিক সেই সময়ে আমার রুমের পেছনে কান্নাকাটি শব্দ পাওয়া যায়। আমি রুম থেকে বের হয় এবং বাইরে যেয়ে দেখি, পাশের বাসার একজন ভাবি বিষ খেয়েছে। এবং সেখানে অনেক মানুষ জড়ো হয় এবং তারা বলাবলি করছিল যে, "জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেগুলো মানুষকে দুর্বল করে দেয়। জীবন একটা পরীক্ষা সেই পরীক্ষায় আত্মহত্যা করা মানেই পরাজয়। দুঃখের পর সুখ আসবে এটাই স্বাভাবিক। এখন হয়তো কষ্ট হচ্ছে পরবর্তীতে কষ্টগুলো আর থাকবে না এটাই তো মানুষের জীবন।"
এ কথাগুলো সবাই বলাবলি করছিল। ঠিক তখন আমার মনে হয়েছিল এই কথাগুলি হয়তো আমার জন্যই বলা হয়েছে। মানে কথাগুলো আমার জীবনের সাথে মিলে যাচ্ছে। এবং তাদের সেই কথাগুলি তখন আমি উপদেশ হিসেবে গ্রহণ করি মনে মনে। এবং আমি আত্মহত্যার কথা বাদ দিয়ে নতুন করে সব কিছু শুরু করার সিদ্ধান্ত নেই।
দুঃখের বিষয় ভাবি টি মারা গিয়েছিল। তখন আমি ভাবতাম যে ভাবি মারা গিয়েছে তার জায়গায় ঠিকি পূরণ হয়ে যাবে। ২,৬ মাস সবাই তাকে মনে রাখবে। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে আর কে মনে রাখবে না। এখন আমিও যদি আত্মহত্যা করি আমার পরিবার-পরিজন আশেপাশের সবাই হয়তো কান্নাকাটি করবে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা সবাই আমাকে ভুলে যাবে। শুধু আমি চলে যাব সব কিছু ছেড়ে।
পরবর্তীতে আমি সিদ্ধান্ত নেই আমি স্কুলে ভর্তি হবো। আমার পড়াশোনা টা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কিছু কারণে। কিছু মানুষ আমার গোছানো জীবনটাকে অগোছালো করে দিয়েছিল।
অনেক কষ্টে নিজেকে বুঝিয়েছিলাম যে আত্মহত্যা করলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। আর আমি শুরু করতে চাই শেষ নয়।
🌻🌻আমার মায়ের স্বপ্ন 🌻🌻
আমার মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করব। আমি একজন শিক্ষিকা হব। আমার পরিচয় আমার মায়ের পরিচয় হবে। পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিলাম যার কারণে আমিও ছোট থেকেই তাই ভাবতাম, আমি বড় হয়ে চাকরি করব। আমার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করব। আর সব থেকে বড় কথা আমি উপার্জন করে আমার আব্বুর পাশে দাঁড়াবো। আমার আব্বু আমাদেরকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে। সবকিছু চাওয়ার আগেই হাতের নাগালে নিয়ে এসে দিয়েছে। সে কখনো কোনো কিছুতেই না করেনি। কখনো একটা ধমক দিয়ে কথা পর্যন্ত বলেনি। এতটাই ভালোবাসে আমাদেরকে।
যাই হোক এই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আসি আমি যখন স্কুলে ভর্তি হতে চাই তখন আমার আশেপাশে কিছু মানুষ আমাকে হেয় করে কথা বলত। তাদের কথার প্যাটার্ন ছিল এরকম "কত ছেলে মেয়ে ভালো ভালো ডিগ্রী অর্জন করে বসে আছে চাকরি হচ্ছে না। আর এখন উনি পড়াশোনা শেষ করে তারপরে চাকরি করবে। কবে পড়াশোনা শেষ হবে আর কবে চাকরি হবে। চাকরি তো সবাই নিয়ে বসে আছে।"
বিয়ের কথা না ভেবে মেয়ের কথায় নাচছে।
তখন আমি তাদের মুখের উপরে কোন জবাব দিইনি।
আমি সিদ্ধান্ত নেই আমি আর পিছু ফিরে তাকাবো না। অনেকের অনেক কটু কথা শুনেছি। যেটাই করতে গিয়েছি সবকিছুতে আমাকে বাধা দিয়েছে। আমি কারো বাধা আর মানবো না।
তখন ভর্তির সময় ছিল না। তাই ভাবলাম পরবর্তীতে যখন ভর্তির সময় আসবে তখন আমি ভর্তি হব।
🌺🌺🌺🌿নতুন জীবন 🌿🌺🌺🌺
এভাবেই অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে।সেসব কথাগুলো না বলাই ভাল। কারণ কাউকে ছোট না করাই উচিত। যে যেমন কর্ম করবে সে তেমন ফল ভোগ করবে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো দিন পার হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে আমি নিজেকে নতুনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করেছি। যেমন ধরেন আমি আগে কারো সাথে কথা বলতাম না। সে ভাবে কারো সাথে মেশা হতো না। কিন্তু এখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি সকলের সাথে কথা বলব। পরিচিত হব এবং মানুষ সম্পর্কে জানব। একাক টা মানুষ একাক রকমের হয়ে থাকে। আমি যদি মানুষের সাথে না মিশি তাহলে আমি কখনোই মানুষের ভেতরটাকে বুঝতে পারব না। সবসময় বাইরের রূপটা দেখেই ঠোকে যাব।
অনেক ছেলে মেয়েদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়। সোশ্যাল সাইট বলেন বা আমার পরিচিত মানুষ বলেন, আমি সকলের সাথেই ফ্রি হয়ে কথা বলি। কথা বলতে শুরু করি যেটা আমাদের প্রিয় ইকবাল স্যার বলেছিলেন যে মুখের জড়তা কাটানো দরকার। আমিও সেভাবে চেষ্টা করি সকলের সাথে ফ্রি মাইন্ডে মেশার জন্য। এরমধ্যেই আমি অনেকের সাথে মিশি এবং কে কোন প্রকৃতির, তাদের আচার-ব্যবহার, তারা আসলেই ভাল মানুষ কিনা? নাকি সবাই মুখোশধারী। সেগুলো সম্পর্কে আমি রিচার্জ করতে থাকি,বলতে পারেন। তারপর এমন কিছু মানুষের সাথে দেখা হয় বা পরিচয় হয় যারা উপরে ভাল অথচ ভেতরে সত্যিই অনেক ভয়ঙ্কর। হাসি মুখে সে আপনার ক্ষতি করে দিতে দুইবার ভাববে না। আমি আস্তে আস্তে অনেক কিছু শিখি অনেক কিছু জানি অনেক মানুষ সম্পর্কে জানি।
এরমধ্যে ভালো মানুষ খারাপ মানুষ ও উভয় ছিল। যারা খারাপ ছিল যাদের মেন্টালিটি খারাপ ছিল।আমি সেসব মানুষকে এভয়েড করি। এবং তাদের থেকে দূরে থাকি থাকার চেষ্টা করি। তারমধ্যে আমার একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয় এবং অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। যাকে আমি সেভাবে চিনতাম না। তবে জানতাম তার পরিচয়টা, কারণ তার বাসা আমাদের এখানেই ছিল। তার সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর সে সর্বপ্রথম আমাকে জিজ্ঞেস করে যে, আমার কি করতে ভালো লাগে? আমি বলি যে আমি কিছু করতে চাই জীবনে। তখন সে আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা জোগায়। অনেক মোটিভেশনাল কথাবার্তা বলে যেগুলো আমার অনেক উপকারে আসতো। আমি সব সময় ইউটিউবে মোটিভেশনাল ভিডিও গুলো দেখতাম। তারা কিভাবে নিজের জীবনটাকে পরিবর্তন করেছে সেগুলো দেখতাম। তার মধ্যে আমার এই বন্ধুটি ও আমাকে ঠিক সেইভাবেই অনুপ্রেরণা যোগাতে থাকে। যাতে করে আমি আমার স্বপ্নটাকে পূরণ করতে পারি।
আমার বন্ধু আমাকে বলে চুপচাপ বসে না থেকে কোন একটা হাতের কাজ শুরু করতে। তখন আমি তাকে বলি আমি অনেক ধরনের হাতের কাজ জানি। তবে জেনে কি করবো? কিছু করতে গেলেই সবাই বলে এইসব তোর দ্বারা হবে না। এমন অনেক কথা বলে যেগুলো শুনলে মনটা ভেঙে যায়।
তখন সে হাসে আর বলে তোমার মধ্যে কোনো চেষ্টা নেই। তুমি যদি চেষ্টা করো তবে তোমার দ্বারা অনেক কিছু করা সম্ভব। লোকে অনেক কথাই বলবে। লোকের কথা কানে নিলে জীবনেও কিছু করতে পারবে না।
এভাবে অনেকক্ষণ তার সাথে কথা হয় এবং আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই আমি কিছু একটা শুরু করব। যেইভাবা সেই কাজ। সেলাই এর কাজ দিয়ে শুরু করি। কিছু কিছু অর্ডার আসে আমার কাছে। আমি অর্ডার এর কাজগুলো করে দিতাম। প্রথম বার অর্ডার পায় ৩৫ পিস বেবি ড্রেসের। এই অর্ডারটা ছিল আমার বাসার পাশের। তারপর আমার বন্ধু আমাকে আইডিয়া দেয় আমি যেনো আমার কাজগুলো নিয়ে বাজারে কিছু কিছু দোকানে স্যাম্পল হিসেবে দেখায়।
তাঁর কথা মতো আমি বাজারে যাই এবং আমার কাজগুলো দেখায়।
সেখান থেকে আমি ৫০ পিস এর অর্ডার পেয়ে যাই। কিন্তু তখন কেউ আমাকে সাহস দেয় না বরং ভয় দেখায় যে, এত বড় কাজ তুই করতে পারবি না। অযথা সবার কাছে ছোট হবি ইত্যাদি ইত্যাদি। আর তখন আমিও ওদের কথা শুনে ভয় পায় যে আসলেই কি আমি পারবো? এমন একটা মনোভাব সৃষ্টি হয় যার কারণে আমি কাজটা করি না।
আমি কাজটি ছেড়ে দেয়াতে আমার বন্ধু আমার উপরে খুব রাগ করে। এবং বলে পরবর্তীতে এই ভুলটা যেন আমি দ্বিতীয়বার না করি। হয়তো তখন ওই অর্ডারটা ছেড়ে না দিলে এত দিনে আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতাম।
যাইহোক, মানুষ ভুল থেকেই শিখে।
এরমধ্যে আমার সেই বন্ধুটি আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। ছেলে ভদ্র শিক্ষিত এবং মার্জিত পরিবারের হওয়াই আমার বাসা থেকেও রাজি হয়ে যায়। কিন্তু কিছু সমস্যার কারনে তারা বিয়েটা ছয় মাস পর দেওয়ার মতামত পোষণ করে।
এরমধ্যে আমার বন্ধু বাসায় একটা আর্জি জানাই যে, আমাকে একটু আমার মতো করে থাকতে দেওয়া হোক। আমি যে কাজটা করতে ভালোবাসি আমাকে সেটা করতে দেওয়া হোক। অন্য কারো কথা শুনে আমার উপরে কোন পেশার যাতে না দেওয়া হয়। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে একটা সমস্যা খুব বেশি দেখা যায় সেটা হচ্ছে— লোকে কি বলবে?
লোকে কি বলবে এটা ভেবেই অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের ইচ্ছেগুলোকে দাবিয়ে রাখে এবং তাদেরকে সবসময় পেশার দেওয়া হয়,পড়াশোনা করে চাকরি করার জন্য। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষকে যে চাকরি করতে হবে এমন কোন কথা নেই। চাকরি বাদেও অনেক কর্ম মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারে।
করোনাকালীন সময়ের কারণে স্কুলে ভর্তি হওয়া টা আমার আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আমার স্বপ্ন ছিল আমি কিছু একটা করবই। পড়াশোনা হয়নি তো কি হয়েছে, অন্য কিছু করব।
আমি একটু একটু করে যখন বিভিন্ন নারীরা কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সে গল্প গুলো পড়তে থাকি, তখন আমার মনের মধ্যে একটা স্বপ্ন তৈরি হয় যে আমি একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেখাবো। তখন আমি কাজ শুরু করার জন্য উদ্যোগ নিয়। এজন্যও আমাকে কম কথা শুনতে হয়নি। তারা বলেছিল ছোট একটা শহর এখানে কি কিছু করা সম্ভব একটা মেয়ে হয়ে। তুই কি শুরু করিস ২ দিন পর পর।
আমাকে এমনও শুনতে হয়েছে স্বামীর টাকা থাকলেই যথেষ্ট। ঘর সংসার ফেলে অন্য কিছু করার কোন প্রয়োজন হয় না। তখন এইসব কথার কোন জবাব আমি দেইনি। কথাগুলো মনের মধ্যে রেখে দিয়েছি সযত্নে। যখন আমি সফল হব ইনশাআল্লাহ এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেব।
কিছুদিন এইভাবে পার হয়ে যায় কিন্তু বিপত্তি তখনই শুরু হয় যখন ছয় মাস হয়ে যায় অথচ বিয়ের ব্যাপারে এখনো কোনো কথা সেভাবে আগায় না। এর জন্য প্রধান কারণ ছিল করোনা এবং দ্বিতীয়তো ছিল আমার হবু শশুর খুব অসুস্থ ছিলেন। যার কারনে এই অবস্থায় বাসায় বিয়ের কথা বলাটা সত্যিই খুব খারাপ দেখায়। কিন্তু কিছু মানুষ ছিল যাদের অন্যের ব্যাপারে নাক গলানটাই হচ্ছে প্রধান কাজ। এবং তা নিয়ে আলোচনা করা ছিল তাদের স্বভাব।
কিন্তু আমার হবু বর আমাকে সবসময় বলত লোকের কথায় কান না দিয়ে নিজে যেটা করছো সেটা করতে থাকো। আমিও তাই করি হাতের কাজের সাথে সাথে ব্লক, বাটিক এবং হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজ শিখে ফেলি। এর মধ্যেই কিছুদিন পর আমার হবু শ্বশুর মারা যান। বিয়েটা আরো পিছিয়ে যায়।
এভাবে চলতে চলতে একটা সময় আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়। এবং আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি অনেক ভালো আছি।
তবে বিয়ের পরেও কিছু মানুষ আমার হাজবেন্ডের নামে উল্টাপাল্টা কথা আমাকে বলতো। এবং আমার নামে নানান রকমের কথা বানিয়ে বানিয়ে তাকে বলতো। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না এইসব মানুষগুলো আমার এত ক্ষতি করে তাদের লাভটা কী হয়?
কিন্তু তারা কখনোই সাকসেস হতে পারিনি। কারণ আমার হাসবেন্ড লোকের কথায় কান দেয় না। এবং আমিও অন্যের কথা শুনে সংসারে অশান্তি করি না। এখনও পর্যন্ত আমার বন্ধুটি নানা ভাবে আমাকে নতুন নতুন আইডিয়া দেয়। এবং অনলাইনে বিজনেস শুরু করার কথা বলে। প্রথমদিকে আমি ভেবেছিলাম কিভাবে কি করব। বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে সে আমাকে সব শিখিয়ে দেয়। তখন আমি শুরু করি। প্রথমে আমি সেভাবে কোন রেসপন্স পাইনি।
তাই আমি খুব মনমরা হয়ে ছিলাম যে আসলেই আমি পারবো কিনা। তখন প্রত্যেক বারের মতো সে আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায় এবং বলে লেগে থাকলে অবশ্যই তুমি একদিন সফল হবে। আর তুমি যদি মনে করো আমি পারছিনা থাক আমি এই কাজটা বাদ দিয়ে অন্য কিছু করি। তাহলে তুমি জীবনে কোন কিছুতেই সফলতা অর্জন করতে পারবে না। যেকোনো একটা লক্ষের উপরে তোমাকে স্থির থাকতে হবে।
তারপর তার কথা শুনে আমি আবার শুরু করি অনলাইনে পোস্ট করা। এবং আনন্দের বিষয় আমি দুইটা পাঞ্জাবি অর্ডার পায়। তখন অফলাইনেও টুকটাক দুয়েকটা অর্ডার পেয়েছিলাম। এখন মদনা, চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা সব জায়গা থেকেই টুকটাক অর্ডার আসতে শুরু করেছে। যদিও আমি এখনো সেভাবে বিজনেসটা শুরুই করিনি। কিন্তু তার পরেও আমার কাছে অর্ডার আসে টুকটাক।
এখন আমার মনে হয় আমি সফলতার দিকে হাটি হাটি পাপা করে এগিয়ে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে সফলতার চূড়ান্ত শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।
এবং বর্তমানে আমার জীবনের সবথেকে বড় লক্ষ, আমার সাথে সাথে আমি আমার গ্রামের কিছু অসহায় মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমি চাই কিছু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের কাজের ব্যবস্থা করে দিতে। যাতে তারা কাজ করে কিছু উপার্জন করে নিজের সংসারটা সচ্ছল ভাবে চালাতে সক্ষম হয়।
ইনশাআল্লাহ আমি পারবো।যদি আপনারা আমার পাশে থাকেন।
🍁🌼🌼জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ 🌼🌼🍁
আমার জীবন থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। অজানা কে জেনেছি। মানুষের সাথে কনফিডেন্স এর সহিত কথা বলতে শিখেছে। কিভাবে নিজেকে ভালোবাসতে হয় ভালো রাখতে হয় সেটা শিখেছি। আর এই সব কিছুর মধ্যে প্রধান যেই বিষয় টি আমি শিখেছি তা হলো– অন্যের কথায় কান না দিয়ে কিভাবে নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়।
🥀🥀🥀কিছু কথা 🥀🥀🥀
অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন যে কেন আমার পিছনেই সবাই লাগে। কেন আমার ক্ষতি করার কথা ভাবে। সত্যি কথা বলতে আমিও জানিনা। তবে দুই একটা কারণ এরকম যে, আমি খুব অল্পতেই মানুষের সাথে মিশে যায় এবং প্রথমবারের মতো কেউ আমার সাথে কথা বলেই আমাকে তার বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে। কিছু মানুষ আছে যাদের এই বিষয়টা একদমই পছন্দ হয়না। কিছু মানুষ আছে যারা আমাকে অত্যন্ত হিংসা করে। এবং নানাভাবে তারা আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে। অনেকবার এমন হয়েছে যে, আমার বিরুদ্ধে অনেক কে উস্কানিমূলক কথা বলেছে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় তারাই সবার কাছে ছোট হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত এমন অনেক মানুষই আমার আশেপাশে আছে। কিন্তু তার পরেও আমি আমার লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যায়নি।
আমার মনের মধ্যে অনেক বড় ধরনের জেদ রয়েছে একটা বিষয় নিয়ে।
যারা আমাকে হেয় করেছে যারা আমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাবে কথা শুনিয়েছে। এবং আমার উপর হিংসে করে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। আমি সেই সকল মানুষের মুখের উপরে যোগ্য জবাব দিতে চাই। তবে কিছু বলে নই। তাদেরকে কথা শুনিয়া নয়। আমি আমার সফলতা দিয়ে তাদেরকে বুঝিয়ে দেবো যে, তারা যেটা বলেছে তারা যেটা করেছে সেটা সম্পূর্ণ ভুল। তাদেরকে আমি এই অনুশোচনা টুকু ফিল করাতে চাই।
এতদিন পর্যন্ত আমার ইচ্ছা ছিল আমি কিছু একটা করব। কিন্তু সেই ইচ্ছাটা আজ শুধুমাত্র একটা ইচ্ছাতেই আটকে নেই। সেটা রূপান্তরিত হয়েছে জেদে। আর আমি আমার জেদটা পূরণ করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। আমার জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।
❤️❤️❤️প্রিয় প্লাটফর্ম থেকে পাওয়া ❤️❤️❤️
এই গ্রুপে আমি নতুন একজন সদস্য ১৮ নম্বর ব্যাচের। স্যারের দেওয়া প্রত্যেকটি সেশন আমি খুব ভালো ভাবে পাঠ করি। এবং সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি। চুয়াডাঙ্গা জেলাতে প্রতিদিন সেশনচর্চা হয় এবং আমি সেখানে সব সময় উপস্থিত থাকি। কারণ এখান থেকে আমার অনেক কিছু শেখার আছে। আর একটা কারণ হচ্ছে সেশন চর্চায় আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হই।
কিছুদিন আগেও যাদেরকে আমি চিনতামই না। কিন্তু আজ তাদের সাথে কথা না বললে ভালো লাগে না। সারাদিন অপেক্ষা করে থাকি কখন সেশন এর সময়টা আসবে। এবং কখন সবার সাথে কথা হবে। আপনাদের সবার জীবনের গল্প হয়তো আমি পড়তে পারিনি। তবে কিছু কিছু গল্প আমি পড়েছি। এবং সবার জীবন থেকে আমি কিছু না কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেছি।
জানতে পেরেছি শুধুমাত্র আমি একজন নয় যে, এত খারাপ পরিস্থিতির মধ্যেও এভাবে টিকে আছে। নিজের লক্ষ্যে স্থির আছে। আমার মত হাজারো তরুণ-তরুণী আছে যারা– হাজারটা খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত নিজের লড়াই লড়ে যাচ্ছে।
🌻🌻এত সুন্দর একটা প্লাটফর্মের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য মোহাম্মদ জুয়েল হুসাইন ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
এবং আবারো অসংখ্য অসংখ্য বার ধন্যবাদ মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার কে যিনি এত সুন্দর একটা প্ল্যাটফর্ম আমাদের কে উপহার দিয়েছেন। এবং সব সময় এত সুন্দর সুন্দর সেশন এর মাধ্যমে সুন্দর এবং সঠিক পথ প্রদর্শক হিসেবে আমাদেরকে সহায়তা করে যাচ্ছেন।
আল্লাহ পাকের কাছে সব সময় স্যারের সুস্থতা কামনা করি। এবং প্রার্থনা করি এভাবেই আমাদের পাশে থাকেন।
স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে আমার জীবনের গল্প এখানেই শেষ করছি।🌻🌻
❤️❤️এতক্ষণ ধরে আমার ছোট্ট এই জীবনের গল্পটি যারা শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদেরকে জানাই ধন্যবাদ এবং অনেক অনেক ভালোবাসা।
এই গ্রুপের ছোট বড় সকল ভাই-বোনকে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।❤️❤️
একটা মানুষের জীবন অনেক বড় সেই জীবনের সমস্ত গল্পটা এভাবে লিখে শেষ করাটা সম্ভব নয়। আমার জীবনের কিছু কিছু বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। এর মধ্যে যদি আমার কোথাও কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে আপনারা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
এবং আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন আমার লক্ষ্য পূরণ করতে পারি।
আবারও ধন্যবাদ জানাই, গ্ৰুপের সকল ছোট–বড় ভাই বোনকে পাশে থাকার জন্য। ভালবেসে আপন করে নেওয়ার জন্য।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি আমার ছোট্ট জীবনের একটি গল্প।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮১৯
তারিখ ১৩-০৬-২০২২ইং
আমি মায়া।
নিজ জেলাঃ চুয়াডাঙ্গা
থানাঃ দর্শনা
ব্যাচ নাম্বারঃ ১৮
রেজিস্ট্রেশন নাম্বারঃ ৯৮২৪২
কাজ করছি ব্লক, বাটিক, হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে।
আমার পেজের নাম বাটারফ্লাই ব্লক বাটিক ঘুরে আসার আমন্ত্রণ রইল।
ধন্যবাদ সবাইকে এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য।