যুক্ত হওয়ার পর আমার বুকে একটা স্বপ্ন এসেছে আমি একটা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
ছাত্র জীবনে পাঁচ টাকা দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প।
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়া’লা জন্য যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করে সুস্থতার সহিত কাজে লেগে থাকার তাওফিক দান করেছেন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ সন্তান লাখো লাখো উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর প্রিয় মেন্টর প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি যার অনুপ্রেরণায় আমরা পেয়েছি লাখো লাখো ভালো মানুষ ও উদ্যোক্তার বন্ধন।
হিফজুল কোরআন শেষ করে কিতাব বিভাগে ভর্তি হলাম শুরু হলো নতুন যাত্রা। আমি হলাম বাড়ির আদরের ছোট ছেলে। যখন যেটা চাই এবং তা পেয়ে যায়। পড়াশোনার মাঝে মাঝেই দিক বেদিক ছোটে চলা মন পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলো না।তার মধ্যে এলাকায় থেকে পড়াশোনা বাবার মাদ্রাসায়! হুজুর দের নিকট থেকে একটু বাড়তি আদর পাওয়া। এলাকার বড়ো দের সাথে মিশা। বাড়ির টুকটাক কাজ করা।এর মধ্যো দিয়ে হেফজ শেষ করলাম ।
তো আমার ইচ্ছে সেই ছোট থেকে
আমি একজন উদ্যোক্তা/ ব্যবসায়ী হবো আর এই ইচ্ছে জাগ্রত হয় আমার মায়ের মাধ্যমে বাড়িতে লাগানো টুকটাক সবজি, চাউলের বস্তা ইত্যাদি আমাকে দিয়ে বিক্রি করাতো। যখন কিতাব বিভাগে পড়া শুরু করলাম সকল ছাত্রদের কলম প্রয়োজন হয় আর ক্লাসের মধ্যে কলম না থাকলে হুজুরের ভয় তো সবার মাঝেই আছে। আমি এখানেই চেষ্টা চালালাম ব্যবসা করার জন্য। পাঁচ টাকা দিয়ে একটি কলম কিনে আনলাম বিক্রির জন্য। তো একদিন ক্লাসের মাঝে এক ছাত্র ভাই এর কলম শেষ গেলে অন্য ছাত্রদের কাছে কলম চাইতে লাগলো কেউ দিলো না। আমি বললাম আমি কলম বিক্রি তুমি কিনবা? সে তখন আমার কাছ থেকে কলম কিনলো ৬ টাকা দিয়ে। আমার ১ টাকা লাভ হলো। এরপর ৪৫ টাকা দিয়ে ১২ পিছ কলম আনলাম সবাই আমার থেকে কলম কিনতে শুরু করলো। সবার বিপদের বন্ধু হিসাবে কলম বিক্রি করে কিছু টাকা লাভ হলো। বছর শেষে আমার লাভের পরিমাণ ৩ হাজার টাকা । আলহামদুলিল্লাহ যেত।
এরপর একটু সম্পসারণের চিন্তা নিয়ে বাবার মাদ্রাসায় ছোট্টা একটা কেন্টিন দিলাম বড় স্বপ্ননিয়ে। চলতে শুরু করলো আমার জীবনের প্রথম প্রতিষ্ঠান ২ বছর চলার পরে এখন ক্যাশ ৩০ হাজার টাকা খুব আনন্দে আমি ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার মাত্র একটা শূন্য বেড়েছে। আর আমার স্বপ্ন গিয়ে দাড়িয়েছে হাজার শূন্যে। হাটাৎ একদিন আমার কলিজায় অর্থাৎ স্বপ্নে আঘাত আহ্। চোরা মামু আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে নিয়ে গেল আহ্ আমি শুধু কাঁদতে লাগলাম। এরপর ভাঙ্গা মন নিয়ে আবারো স্বপ্নের পথ ধরতে লাগলাম অল্প কিছু টাকা বাকি ছিল সেগুলো উঠিয়ে আবার শুরু করে দিলাম। এর মধ্যে আমার মন চাচ্ছিল আরো বড় কিছু করার জন্য সে চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমার এই ক্যান্টিন বড় ভাইকে দিয়ে দিলাম। আর আমার এলাকায় এই সময়টায় প্রচণ্ড সিলিন্ডার গ্যাসের চাহিদা এই দিকটায় আমার টাকা ইনভেস্ট করলাম। সাথে একজনকে শেয়ারে নিলাম শুরুর দিকে ভালোই চলছিল ৬ মাস পর আমাদের দুজনদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হল হিসাব ঠিকমতো হচ্ছে না। যার কারণে আমি হতাশ হয়ে গেলাম। এবং এখান থেকে আমাকে গুটিয়ে নিলাম। আর আমার প্রত্যেকটা কাজে মা ও ভাইদের সাপোর্ট ছিল। এরপর নানান চিন্তা মাথায় এখন কি করব আমি তো স্বপ্নবাজ স্বপ্ন দেখি ছয় মাস বসে রইলাম পড়ালেখার গতিটাও চলছে এখন শেষ পর্যায়ে পড়ালেখার। চিন্তা তো আরো বেড়ে গেল। আমি কি করবো? কোন ব্যবসা খুঁজে পাচ্ছি না। আবার সেই ক্যান্টিনের হাল ধরলাম। এর মধ্যেই আমার পড়াশোনা শেষ হয়ে গেল। বছর খানেক পরে দেশে ভয়াবহ অবস্থা । করোনা ভাইরাস সারাদেশ না কাল। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আমার ক্যান্টিন টাও বন্ধ হয়ে গেলো। এখন কি করবো? আর হ্যাঁ আমার বাড়িতে ছোট একটা গরুর খামার আছে যেখানে দুধের প্রোডাকশন হয়। এই সময়গুলোতে দুধ বিক্রি করতে লাগলাম। এরমধ্যে কওমি উদ্যোক্তা নামে একটি নতুন উদ্যোক্তা তৈরির প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি হল যেখানে আমি আমার নিবন্ধনটা করে ফেললাম এবং আমার খামারের দুধ বিক্রি করার চিন্তা ভাবনা করলাম। কিন্তু দুধ কিভাবে বহন করব সেইটা আমি ভাবতে পারতেছি না। এজন্য এটা বাদ দিয়ে দিলাম। এখন আমি সম্পূর্ণ পানি মুক্ত দুধ ঢাকা শহরে ডেলিভারি দেওয়ার চিন্তা নিয়ে কাজ করছি। কিছুদিন পর আমার বড় ভাই মধু নিয়ে কাজ করার চিন্তাভাবনা করছে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে মধু এনে বিক্রি করবে আর বন্ধু থাকে লালবাগ সেখান থেকে মধু এনে বিক্রি করার জন্য আমাকে বলল। আমি বললাম মধু আনতে লালবাগ যাব কেন? সাভারেই তো মধু পাওয়া যায় সেখানে যোগাযোগ করে নেই। সাভার অন্ধ মার্কেট থেকে আমার এক বড় ভাই ও বন্ধু তার থেকে পাঁচ কেজি মধু আনি। তো কাস্টমার শুধু জিজ্ঞেস করে থাকে মধু কি আপনি নিজে উপস্থিত থেকে কেটেছেন? উত্তরে না বললে কেউ আর মধু নেয় না। তখন আমি ওই ভাইয়ের কে মধু ফিরত দিয়ে দেই। এবার আমাদের বাড়ির পাশের এক মাদ্রাসার শিক্ষক। তার শেলক মধু কেটে বিক্রি করে সে তার থেকে ৫ কেজি মধু এনে দেয়। এবারও একই কথা আপনি নিজে কেটে এনেছেন? উত্তর আমি বলি না। এখন আমি খুঁজতে লাগলাম কার মাধ্যমে সরাসরি গ্রাম থেকে চাকের মধু কেটে আনা যায় তো টাঙ্গাইল থেকে এক ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করি উনি আমাকে মধু দিতে পারবে বলে একটা ডেট দেন এবং বলেন খুব ভোরে যেতে হবে ।যেহেতু আমার বাসার সাভার। আবার এর আগে আমি একা কোথাও যাইনি তাই বাড়ি থেকে আমাকে যেতে দিবে না। আমাকে বলে তুই কি ওই লোককে চিনিস? কি আর বলবো আমি বললাম হ্যাঁ আমি তাকে চিনি। একথা বলার পরে বাড়ি থেকে অনুমতি মিলল। ১০ কেজি মধুর টাকা নিয়ে গেলাম প্রথমে দেখি কেমন চলে এই চিন্তা ভাবনা নিয়ে। গাছ থেকে মধু কাটা দেখে আমার মন ভরে যায় এবং এক ধাক্কায় ৩০ কেজি মতো নিয়ে আসি। ৩০ কেজি মধু আবেগের ঠেলায় নিয়ে আসি বাসায় এসে চিন্তা করি এর মধু কোথায় বিক্রি করব? এলাকায় এসে ভালো করে মার্কেটিং শুরু করতে লাগলাম এখন তো আর সেই চিন্তা নেই মানুষ বলবে তুমি নিজে কেটে এনেছো। আলহামদুলিল্লাহ। বাসায় এসে পৌঁছলাম। তিনটার দিকে আসরের নামাজ পড়ে বাজারের দিকে বের হলাম এবং মার্কেটিং শুরু করলাম প্রথম দিনই একজনই ৭ কেজি মধু নিয়ে নিলেন। আমি তো চরম খুশি যাক এক সপ্তাহের মাঝে ৩০ কেজি মধু পুরোটাই বিক্রি হয়ে গেল ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। এখন তো আমি মহা খুশি আর চিন্তা করলাম কারো মাধ্যমে কেন মধু সংগ্রহ করবো? সরাসরি আমি নিজেই সংগ্রহ করতে পারি যদি মৌয়াল থেকে। যাক চেষ্টার মাধ্যমে এক মৌয়ালকে খুঁজে পেলাম। তার থেকে মধু সংগ্রহ করতে গেলাম। মৌয়াল মানেই ২ নাম্বার চরম বাটপার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে চোখের সামনে দুই নাম্বারি করার চেষ্টা করে।তো আমি যে নতুন এটা সে বুঝতে পেরেছে। সেজন্য সে আমাকে ঠকিয়েছে। কিছু দামে কমের জন্য আমি একটু মাদবরি করতে গিয়েছিলাম কিন্তু পুরাটাই ধরা খেয়ে গেলাম। এখন যেটা এনেছি সেটা আর বিক্রি করতে পারলাম না।কারন এটা ফেক মধু। আমি হতাশ! বাড়িথেকেও বকাবকি করতে লাগলো। যাহোক আমার সেই ভাইয়ের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করলাম এবং বিক্রি করতে লাগলাম। ভালই চলছিল। অনেকের সাথে পরিচিত হয়ে গেলাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার বয়স যাই হোক আমার শরীরের গঠনটা বাচ্চাদের মতো মুখে দাড়ি নাই মাথায় চুল নাই। তাই বড় ভাইয়েরা ছোট মনে করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় না। এই কারণে আমাকে অনলাইনে গাইড দেওয়ার মত কোন লোক পাচ্ছিলাম না। শত চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলাম । তখন আমি আগাতে পারেনি। মার্চ মাস ২০২২ কওমি উদ্যোক্তার জাতীয় মহাসম্মেলন মতিঝিল সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত । সেখান থেকে ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের কথা শুনতে পাই স্যার বলেন আমরা নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে মাধ্যমে টানা ৯০ দিন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উদ্যোক্তা হবার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বাসায় এসে খুঁজতে থাকি নিজের মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন। রোজার ঈদের পর স্যারের একটা সেশন ইউটিউবে দেখতে পাই। তারপর গুগলে গিয়ে সার্চ করি নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন। এরপর নিবন্ধন করে ১৮ তম ব্যাচে ফেলি। আমার বাসা যেহেতু সাভার তাই আমাকে সাভার জোন মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত করে দেওয়া হয়। সাভার জোনে এক সপ্তাহ সেশন চর্চা ক্লাস হয়। তারপর সবাই ব্যস্ত হয়ে যায় কেউ সেশন চলছে ক্লাসে যুক্ত হয় না। আমি হতাশ! হয়তো এখানেও কিছু পাবো না। আমি নিজেই লিংক দিলাম এবং দু একজন ভাই যুক্ত হলো সবাই নতুন। তারমধ্যে এক ভাই যার নাম মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম খান উনি থাকেন সাভারে কিন্তু ওনার নিজ জেলা টাঙ্গাইল। উনি আমাকে বলল হুসাইন ভাই আপনাকে টাঙ্গাইলের লিংক দিয়ে দেই আপনি সেখানে যুক্ত হন। অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আর আমার দাদা বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ছিল সেক্ষেত্রে আমার পূর্বের জেলা টাঙ্গাইল। এখানে যুক্ত হয়ে জেলার সমন্বয়ক সেশন চলছে ক্লাসের অভিভাবক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ সজীব ভাই ও সম্মানিত কোড় ভলান্টিয়ার ও মডারেট ইবনে সায়েম রানা ভাইয়ের দিকে নির্দেশনা অনেক কিছু শিখতে পারছি এবং আগে কথা বলতে পারতাম না। আলহামদুলিল্লাহ এখন সপ্তাহে একদিন সেশন চর্চা ক্লাস উপস্থাপনা করার সুযোগ পেয়েছি। প্রাণের বড় ভাই পেয়েছি প্রাণের অভিভাবক পেয়েছি এখন আমরা স্বপ্ন আরও বেড়ে গেছে। এখানে যুক্ত হওয়ার পর আমার বুকে একটা স্বপ্ন এসেছে আমি একটা এখন কারখানা দিব। যেখানে পুতের ব্যাগ বানানো হবে পুতি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র ঘর সাজানোর জন্য তৈরি করা হবে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ পাক যেন আমাকে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার তৌফিক দান করেন। এবং আমি যেন একজন ভালো মানুষ হয়ে আজীবন বুক ফুলিয়ে বেঁচে থাকতে পারি। নিজের বলার মত একটা গল্প তৈরি করতে পারি।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৩৩
তারিখ ১৮-০৭-২০২২ইং
হুসাইন আহমাদ
ফাউন্ডার এইচ.বি.বাজার
ব্যাচ ১৮
রেজিষ্ট্রেশন ৯৭০৮৫
উপজেলা সাভার
জেলা ঢাকা।