মানুষের জন্যে কাজ করলে জীবীকার অভাব হয় না"।
🍁সুপ্রিয় বন্ধুরা
আসসালামু আলাইকুম
🍁চলে এলাম আমার জীবনের কিছু গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে। আশাকরি এই জীবনঘনিষ্ঠ গল্প কারও হৃদয়কে কিয়দাংশ হলেও স্পর্শ করবে। কেননা, স্যারের শিক্ষাকে ধারণ করেই, আমার বাস্তবতার গলিপথে পথ চলা। হাজারো অন্ধকার পথ পাড়ি দিয়ে আলোর পথের সন্ধান পেয়েছি।
সেই সাথে আপনাদের অবগতির জন্যে বলছি, বর্তমানে বেশি লিখলে মানুষ ধৈর্য হারিয়ে, পাঠবিমুখ হয়ে পড়ে। তাই আমার জীবনের অসংখ্য গল্প বলে, পাঠকের মূল্যবান সময় নষ্ট না করে, শুধু জীবনের উল্লেখযোগ্য অংশগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
🍁শুরুতেই শুকরিয়া আদায় করছি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে। যিনি আমাদেরকে এত সুন্দর করে সৃষ্টি করে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং বর্তমানে এখনো সুস্থ রেখেছেন। কারণ,সুস্থতা হচ্ছে স্রষ্টার সবচেয়ে উত্তম নেয়ামত।
🍁শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার বাবা-মা'র কাছে। যাদের জন্যে---আজ আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছি।
🍁 শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, যে মানুষটি অক্লান্ত পরিশ্রম করে এমন চমৎকার একটি প্ল্যাটফর্ম উপহার দিয়েছেন। যিনি লাখো তরুন -তরুনীর উজ্জ্বল স্বপ্নের দিশারী, বর্তমান প্রজন্মের আলোকবর্তিকা, সমাজের নিবেদিতপ্রাণ, তরুণদের হৃদয়ের স্পন্দন, একনিষ্ঠ মেন্টর, শিক্ষাগুরু জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যিনি পৃথিবীতে না এলে, হয়তবা এমন বিনে পয়সার বিশাল প্রতিষ্ঠান বিশ্বে আর কেউ সৃষ্টি করত না।
" বাবা - মা "
যাদের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে আসা তাঁদের কথা না বললেই নয়।
বাবাকে একজন মানসিক প্রতিবন্ধি হিসেবেই আমার জন্মের পর থেকে দেখে আসছি। বাবার স্নেহ মায়া মমতা ভালবাসা কিছুই পায় নি। আমার পাশে কোনো এক ভাইয়ের বাবাকে দেখলে আফসোস হয়, আমি যদি আমার বাবার হাত ধরে হাঁটতে পারতাম, বাবার পাশে ঘুমাতে পারতাম, আমার সকল ভালোলাগা খারাপ লাগার কথাগুলো বাবার সাথে শেয়ার করতে পারতাম। আমার জনম-দুঃখিনী মা আমাকে প্রতিনিয়তই সান্ত্বনা দিয়ে গেছেন। বাবার অভাব কখনো বুঝতে দেন নি। আমার বন্ধুর মতো আমার মা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে, আজকে আমাকে উদ্যোক্তা হতে শিখিয়েছে। আমার মা আমাকে সাহস যুগিয়েছে। প্রতি নিয়ত বলেছে, তুমি পারবে, তোমাকে পারতেই হবে।
🍁মা-বাবাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন
আমার হালাল উপার্জন দিয়ে। তাদেরকে নিয়ে পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করবো। সেই সাথে আজীবন আমি আমার সঙ্গে আমার বাবা-মাকে' কাছে রাখবো। বিদেশ যাওয়ার সুযোগ আসে নি এমনটা নয়। জানেন তো আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমার বাড়ি। গ্রামে অধিকাংশ বাড়ি থেকে ২/১ করে হলেও জীবিকার সন্ধানে বিদেশ-বিভুঁইয়ে পাড়ি জমিয়েছে। আমি শুধু যায় নি
একমাত্র, আমার প্রতিবন্ধী প্রিয় বাবা ও জনমদুঃখিনী মা'য়ের কষ্টের কথা ভেবে!
সবার বাবা যখন সন্তানকে বুকে জড়িয়ে আদর করতো, আমার বুকের ভেতরটা তখন কিরিচের খোঁচার মত মোচড় দিয়ে উঠতো! সবার বাবা যখন বাইকে করে নিজ সন্তানকে সাথে নিয়ে স্কুলে যেত, আমার কলিজার ভেতর তখন,কাঁচের কুচির মত কুরে কুরে খেতো। সবার বাবা যখন সন্তানের সামনে বল রেখে খেলতে বলতো, আমার ভেতরে তখন যন্ত্রণার অসহনীয় ঢেউ বয়ে যেত! একাএকা গুমরে গুমরে কেঁদে উঠতো অসহায় এ মন! সব গুলোর কারণ,একটাই, তা হলো আমার বাবা স্বাভাবিক ছিলো না---ছিল প্রতিবন্ধী।
🍁শিক্ষা জীবন🍁
আমার পড়া লেখা শুরু আমাদের গ্রামের একটি প্রাথমিক স্কুলে। প্রাইমারি শেষ করে মাধ্যমিকে ভর্তি হই একটি টেকনিক্যাল স্কুলে। সেখান থেকে SSC পাস করি এবং 4.50 রেজাল্ট করি।আমার সরকারী কলেজে ভর্তির যোগ্যতা থাকা সত্বেও কেবলমাত্র অর্থ সঙ্কটের কারণে গ্রামের একটি বেসরকারি কলেজে ভর্তি হই। সেখান থেকে HSC পাস করি জিপিএ 4.45, পেয়ে এবং বর্তমানে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে Economics এ অনার্স পড়ছি। ছোটবেলা থেকেই চরম অর্থকষ্টে কেটেছে আমার দিন। শিক্ষা জীবনে কখনো প্রাইভেট পড়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি, সুযোগ হয়নি কখনও নতুন বই কেনার। তারপরেও লেখাপড়া বাদ দেয় নি। সেই সাথে সকল প্রকার মোটিভেটেড মূলক কনটেন্টগুলো নিয়মিত চর্চা করে থাকি।
🍁 খেলাধুলা ও পুরস্কার 🍁
আলহামদুলিল্লাহ খেলাধুলাই অনেক ভালো ছিলাম।প্রাইমারি,মাধ্যমিক,সব জায়গায় পুরস্কার পেয়েছি।
ইসলামি সংগীত,অভিনয় করে পুরস্কার পেয়েছি প্রচুর। এসব গুণের কারণে ক'য়েকজন তরুণী'র (♥) হৃদযন্ত্রণার কারণ হয়েছি কিন্তু কোনোটাই আমি নিজে আমলে নেই নি। কারণ, চোখে মুখে যার উদ্যোক্তার নেশা, সস্তা প্রেম-ভালোবাসা করে সে কি তার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে পারে? যার কারণে বর্তমানে জ্ঞানের পরিধি যত বাড়ছে;উদ্যোক্তা হওয়ার নেশাটা আমার হৃদয়-সমুদ্রে উত্তাল তরঙ্গের মত সীমাহীন ঢেউ হয়ে উথাল পাথাল বয়ে চলেছে।
🍁উদ্যোক্তা হওয়া স্বপ্ন 🍁
এবার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আপনাদের সামনে বলবো কিছু কথা।
পোর্ট এলাকায় জন্ম হয়েছে আমার তাই ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতাম ইমপোর্ট এক্সপোর্ট এর ব্যবসা করব।
তখনো জানতাম না উদ্যোক্তা কি??
কিন্তু একটা স্বপ্ন ছিলো আমার একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকবে, যেখানে দু'দেশের মানুষই আমাকে চিনবে। এবং বাস্তবে হয়েছিলও তাই।
পড়াশুনার পাশাপাশি বড় ভাইদের অফিসে গিয়ে পারিশ্রমিক ছাড়াই কাজ শিখতাম। আমার কাজের প্রতি যত্নশীল হওয়ায় অনেক খুশি ছিল অফিসের বস কিন্তু একটা সময় এসে আমি যেই অফিসে কাজ করতাম, সেই অফিসে নেমে এলো দুর্ভিক্ষ। ভাগ্যাকাশে জমে উঠল সীমাহীন কালো মেঘের ঘনঘটা! এমন অবস্থা হলো যে, আর কোনো পাথর আমদানি করতে পারত না। তখন আমার কাছে মনে হলো,পুরো আকাশটা আমার মাথায় চেপে বসলো নতুবা বজ্রের চমকানো রুপালি আলোকছটা আমার চোখদুটোয় বেদনার সীসা ঢেলে দিলো!
ঐ সময়ই অনেক অফিস থেকেই আমার কাছে অনেক লোভনীয় প্রস্তাব আসতে থাকে। বলতো," আমার এখানে এসো তোমাকে সম্মানজনক বেতন দিয়ে রাখবো, ওর ওখানে কাজ করে লাভ নেই। ওখানে থাকলে তোমার জীবনটাই বৃথা। আর ওরা আমাকে কেন অফার দিতো সেটাও জানি।কারণ,ততদিনে আমি এই কাজটা খুব দক্ষতার সাথে রপ্ত করে ফেলেছি।
কিন্তু আমি তাদেরকে বলে ছিলাম, "আমি এত বড় নেমকহারাম না, যে কাজ শিখলাম একজনের কাছে,আর ক'টা টাকার জন্যে ছেড়ে চলে যাব আরেকজনের কাছে।ছোটবেলা থেকে অর্থকষ্ট অনেক পেয়েছি ,কিন্তু নীতিবোধ কখনও বিসর্জন দেয় নি। আর এই গুণটা অর্জন করেছি কেবলমাত্র আমার নিজ পারিবারিক বলয় থেকে।
একদিন হঠাৎ করে আমার বস প্রস্তাব দিলো, চলো আমরা দু'জন মিলে আবার কাজ শুরু করি। তুমিও কিছু অর্থ ব্যবস্থা কর। যেমন চিন্তা তেমন কাজ,ঠেকায় পড়ে অল্প দামে জমি বিক্রি করে শুরু করলাম, নতুন রূপে নতুন সাজে নতুন করে আবার ব্যবসা।
আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটা ভালোই চলছিল। জমে উঠলো জমজমাট কারবার।কিন্তু বছর খানেক যেতেই আমার যেই পার্টনার ছিল সেই পার্টনার হঠাৎ করে বলল, সে বিদেশে চলে যাবে।
ব্যবসাটা যখন ভালো চলছিল ঠিক সেই সময়ই হঠাৎ করে পার্টনারশিপ ভেঙে গেলে আমি পড়ে গেলাম মহা বিপদে।
সেই হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় স্যার-এর বাণী হঠাৎ করে আমার চোখের সামনে "আলোকবর্তিকা" হয়ে ভেসে উঠলো।
"স্বপ্ন দেখুন,সাহস করুন, শুরু করুন,এবং লেগে থাকুন, সফলতা আসবেই"
তাই নতুন করে শুরু করার জন্যে আরও কিছু অর্থের প্রয়োজন ছিল। সেই অর্থটা আমার কাছে ছিল না।একবার জমি বিক্রি করার পর আবার কিভাবে দুঃখিনী মা'য়ের কাছে টাকা চাইবো? কিন্তু আমার ভেতরের আমি ছিলো অদম্য। আমি ভেতর থেকে নিজেকে হার মানাতে পারলাম না। তবে আমি এলাকার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছিলাম। তাই আমার অতি পরিচিত একজন বড়ভাই আমাকে হঠাৎ করে এসে বললো,ভেঙে পড়ো না দেলোয়ার, আমি তোমাকে হেল্প করবো। এখন সহযোগিতা নেয়া-না নেওয়া তোমার ব্যাপার। এমন হতাশার মাঝে তখন আমার কাছে মনে হলো,সপ্তম আশ্চর্যের পর যদি কিছু থাকে তাহলে অন্তত,আমার জীবনে এই ভাই 'অষ্টম আশ্চর্য'!
সেই থেকে নতুন করে আমার যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে আর আমাকে পেছনে তাকাতে দেয়নি আমার ভাগ্য। জানি না, এটাকেই বাবা-মা'র দোয়া কিঙবা 'মীরাক্কেল' বলে কি-না।তবে স্যারের কথা বারবার মনে হয়, এটাই বুঝি সেই মা-বাবার দোয়া। আমি আর একটা স্বপ্ন দেখতাম,তা হলো, আমার নিজের পরিচয়ে যেন সবাই আমাকে চেনে। আর মহান সৃষ্টিকর্তার কল্যাণে সেইটা আমি রপ্ত করতে পেরেছি। আজকে আমার নাম দিয়েই এলাকায় সবাই আমাকে চেনে। আর এখন আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটা প্রথমে গুটিগুটি পায়ে হলেও এখন বেশ ভালোভাবে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। যারা এই মুহূর্তে আমার গল্পটি দেশ অথবা বিদেশ থেকে পড়ছেন,আপনাদের সকলের কাছে আমি দোয়া প্রার্থী। কারণ, মানুষের দোয়াই এখন আমার একমাত্র ভরসার স্থল।
জেনে খুশি হবেন,
"যদি সুস্থ থাকতে চান
প্রাকৃতিক খাদ্য খান "
এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে, সম্প্রতি চার বন্ধু মিলে আমরা নতুন একটি যৌথ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান খুলেছি। নাম দিয়েছি,"বাংলাদেশ অর্গানিক ফুডস্ এন্ড ফ্যাশন"। চৌষট্টি জেলায় এখন আমরা পণ্য সরবরাহ করে থাকি। আমাদের স্লোগান হলো,
"চৌষট্টি জেলা পঞ্চাশ দেশ
ইকবাল বাহারের বাংলাদেশ "
আপনাদের দোয়াই এবার ঈদে নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা যথেষ্ট পাঞ্জাবি এবং অন্যান্য মশলাদি পণ্য সেল করেছি।
পরিশেষে সবার প্রতি নিবেদন, আমাদের উচিৎ, নিজ জায়গা থেকে কিছু না কিছু করা। পরিশেষে স্যারের একটা উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই," মানুষের জন্যে কাজ করলে জীবীকার অভাব হয় না"।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৩৭
তারিখ ২২-০৭-২০২২ইং
দেলোয়ার চৌধুরী
ব্যাচ নং ১৭
রেজিঃনং ৯২৮৭১
ব্লাড ম্যানেজমেন্ট টিম মেম্বার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার
উপজেলাঃ শিবগঞ্জ
জেলাঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ
পেজ লিংক https://www.facebook.com/বাংলাদেশ-অর্গানিক-ফুডস্-এন্ড-ফ্যাশন-110687615025359