মেয়ে হয়েও পারি সেটা প্রমান করতে পেরেছি।
🌿🌿 "অধ্যায়নরত শিখার্থী হয়েও, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প 🌿🌿
।।।।।।।।।।☘️☘️☘️।।।।।।।।।।।
☘️আসসালামুআলাইকুম,,,,,☘️
🔸আমি আশা করছি আল্লাহর মহিমায় সবাই ভাল আছেন।আল্লহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ যাপন করছি আমাকে এ দুনিয়ায় সুস্থভাবে বাচিয়ে রাখার জন্যে।
🔸আমার বাবা- মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই যারা আমাকে লালনপালন করছেন।যাদের হাতে ধরে বড় হয়েছি। আল্লাহ আমার মা- বাবার উপর রহমত বর্ষিত করুক।
🔸 শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা যানাই আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি।যার অক্লান্ত পরিশ্রম আমাদের উদ্যোক্তা জীবনে ভূমিকা পালন করছে।
🔸নিজের বলার মতো প্লাটফর্মের প্রত্যেকজন সদস্যকে আবারও শুভেচ্ছা জানাাই এবং প্রত্যেকের জন্যে দোয়া ও ভালবাসা রইল।
।।।।।।🌿🌿🌿🌿🌿🌿।।।।।।।
আমার জীবনের গল্প..............
🟠শৈশবকাল :
আমার জন্ম টাংগাইলেই।
আমি আমার বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। আবার নানুবাড়ির মধ্যেও প্রথম ছোট সদস্য ছিলাম। আদরের কমতি নেই কোথাও। আমার পরিবারের সকলের চোখের মণি আমি।
সকলের ভালবাসার প্রিয় সদস্য আমি। আমার যখন জন্মের পর ১ দিন বয়স আমার দাদু আমাকে হসপিটালে দেখতে যান। সকলেই দাদুকে বলে আমাকে কোলে নেওয়ার জন্যে। কিন্তু আমার দাদু আমাকে কোলে না নিয়েই বলেন, মেয়েই তো হয়েছে কোলে তুলে কি করব?
কথাটা বড় আঘাত পান আমার মা। কিন্তু আমার বাবা আমার মাকে সান্তনা দিয়ে বলেন, আমার পুতুলের মতো মেয়েকে দেখলে তার ( দাদু) অভিমান ভেঙে যাবে।
আমার বাবা - মায়ের ১ম রাজকন্যা আমি ভালবাসায় বড় হচ্ছি। 😊১ম ছোট রাজকন্যা বলে পরিবারের সবাই ভালবাসায় আকড়ে রাখত। বর্তমানে আমরা ৩ বোন । আমার বাবা সবচেয়ে খুশি হন যখন কেও জীঙ্গাসা করে, ভাই আপনার কয়জন সন্তান?
আমার বাবা বলেন," আমার তিনজন রাজকন্যা, আমার তিনটি মেয়ে অথ্যার্ৎ আমি জান্নাতের মালিক "।।।।
কিন্তু আমার দাদু বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি। তিন বোন বলে আজও আমাদের হীন চোখে দেখেন। তার দৃষ্টিভঙ্গিএখনও পরিবর্তন হয়নি 😢। ছোটবেলায় দেখতাম বাচ্চারা দাদা - দাদুর অনেক আদর পায়, ভালবাসা পায়। তবে আমরা তিন বোন আজও দাদুর সেই আদর, ভালবাসা পায়নি 😢।
দাদুকে আমার বাবা বোঝানোর চেষ্টা করেছে তবে কোন লাভ হয়নি। আমার একটাই কষ্ট, সবার আদর পেয়েছি কিন্তু দাদুর আদর পায়নি কারন আমরা মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে।
কষ্টটা ছিল আমার সবচাইতে বেশি,দাদুর ভালবাসা পায়নি বলে। আমার বাবা আমাকে বুঝিয়ে বলেন,
' মেয়ে বলে কি তুমি থেমে থাকবে? দেশের প্রধান মন্ত্রী একজন মেয়ে, আমাদের উপজেলার মেজিস্ট্রেট একজন মেয়ে তাহলে তুমি কেন পারবে না?,
আমার দৃঢ় বিশ্বাস তোমার মধ্যে সেই গুণ ও মেধা আছে ভাল কিছু করার জন্যে।'
বাবার কথা শোনার পর নিজের প্রতি বিশ্বাস বেড়ে যায়।
যদিও দাদুর ভালবাসার অভাব পূরণ করেছে আমার নানুমনি।
আমার নানা - নানু আমাকে দাদুর আদরের কমতি বুঝতে দেইনি। কোলেপিঠে তুলে আদর করেছেন তারা 🙂।
বাবা - মায়ের বাহিরে আমার স্ট্রঙ অভিভাবক আমার মামা এবং নানুমনি।
।।।।☘️☘️☘️।।।।☘️☘️☘️।।।।
আমার হাতেখড়ি হয় আমার মায়ের কাছেই । আমি পড়ালেখায় খুব একটা খারাপ নই। মেধাতালিকায় আমি স্থান অজর্ন করেছি।আমার কো- কারিকুলাম এক্টিভিটিকস মোটামুটি ভালই।
এই কো- কারিকুলাম এক্টিভিটিসের উপর ১৮ টি পুরষ্কার এবং ১ টি ক্রেস আছে।
আমি পড়ালেখার পাশাপাশি ড্রইং, কবিতা আবৃতি, বক্তব্য,উপস্থাপিকার দায়িত্ব, অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছি এবং সবকিছুই আমার হাতের মুঠোয়।
আমি বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাএী।
যে বিদ্যালয় সারা বাংলাদেশে ১১ তম স্থান অর্জন করেছে।
আমি আমার স্কুলে একাধারে ক্লাস 4-10 পযর্ন্ত ক্যাপ্টেন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি।
আমি আমার স্কুলে গালর্স গাইডের মেইন দায়িত্বেয় ছিলাম।
বলতে গেলে আমি সবসময় লিডার ছিলাম 😸😸।।।
এখন আমি আমার ইনস্টিটিউটের ক্যাবিনেট ও VP হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
অথ্যার্ৎ লেডি বস 😊 বলতে পারেন।
এখনও অধ্যায়নরত শিখার্থীদের মধ্যে আমি একজন।।।।।।।📖📖📖📃🖋️
🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿
🟠নিজের মধ্যে থাকা মেধার সুপ্ত বিকাশ :
সময়টা ২০২০ সালে যখন সারা পৃথিবী থমকে ছিল COVID 19 এর ধাক্কায়। লকডাউন পরিস্থিতি সবার মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছিল। হঠাৎ আমার মায়ের বডি পেইন বেড়ে গেল ডক্টর ৬ মাসের বেড রেষ্ট দিলেন। এমন একটা অবস্থা একদিকে আমি রান্নাবান্না পারি না,আবার কাজের খালারও ,,,বাসায় আসা নিষেধ ছিল লকডাউন পরিস্থিতির জন্যে।
অন্যদিকে আম্মু অসুস্থ।।
লকডাউনে বাবার কাজের চাপ ছিল অনেক।
কারণ আমার বাবা ২ টা ক্লিনিকের মালিক এবং সেই সাথে #স্বাধীন বাংলা ই-কমার্সের চেয়ারম্যান । দুই জায়গায় বাবাকে বসতে হতো কারণ দুই জায়গায় বাবা প্রধান ভূমিকা পালন করছেন।
তাই বাসায় সময় দেওয়া সম্ভব হত না। বাসায় আমি রান্নাবান্না পারি না, এদিকে আম্মুর খাবার খাওয়ানোর প্রতি ঠিকমতো কেয়ার নিতে হবে কি করব টেনসনে পড়ে যাই। বাবা আমাকে তার শত ব্যাস্ততার মাঝে আমাকে হেল্প করত কিভাবে জানেন?
🔺সকালে নামাজ পড়ে সকালের রান্না করে যেত 😋 রান্না করা খাবার সত্যিই মজা ছিল।
দুপুরবেলা আমি রান্না করতাম,নিজে মাতাববরি করে রান্না করলে সেটা আর খাওয়া যেত না😸।
তাই আমি ইউটিউব দেখে দেখে রান্না করতাম। সাথে মা আমাকে বলে দিত টানা ৭ মাস লকডাউনে আমি রান্না করেছি
যেখানে আমি রান্নাই পারতাম না এখন আমি কনটেইন ফুড রান্নাও করতে পারি।।।।
বাসায় মোবাইলে আমাদের মেন্টর ইকবাল বাহার স্যারের উদ্যোক্তাদের লাইভ ভিডিও দেখতাম। যা আমাকে সজাগ করে তুলত। তার কথাগুলো আমার মনে গেঁথে গেল.......
কথাগুলো হলো.....
🔸উদ্যোক্তা হতে হলে স্টুডেন্ট হয়েই লেগে থাকতে হবে।।।।
🔸সপ্ন দেখুন সাহস করুন লেগে থাকুন সফলতা পাবেন।।।।
আমি এই কথাগুলো নিজের ভিতর গ্রহন করি। এবং উদ্যোক্তা হওয়ার সপ্ন দেখি। ১ম আমি ফুডপান্ডায় খাবার দিতাম। সেখান থেকে বিরাট সারা পেতাম। কিন্তু সেটা লকডাউন অবস্থায়। লকডাউন উঠানোর পর আমিও খাবার পুসআপ করা বন্ধ করে দেই।
নিজে একা করতে চাইতাম
বাবাকে বললে বাবা রাজি হবে না আমি জানতাম তাও বললাম আমার ইচ্ছার কথা।। বাবার সাথে আমার প্রচুর ভাব। বাবাকে কনভেনস করতে আমার বেশি সময় লাগল না।
বাবা আমার সাপোর্টার হল।
আমি যেহেতু নিজে শুরু করতে চেয়েছিলাম তাই নিজের সঞ্চয়ের মাএ ৩০০০৳ দিয়ে শুরু করার সাহস করেছি। এত দিনে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন উদ্যোত্তা কেন্দের একজন সদস্য হয়ে গেলাম। ১৭ তম ব্যাচের সাথে যুক্ত হয়ে যাই এবং অনেক কিছু শিখেছি।
নিজেকে কিভাবে উদ্যোক্ত হিসেবে গড়ে তুলবো। ৯০ দিনের কোর্স আমাকে অনেক কিছু শেখায়। আমি ফ্রোজেন আইটেম নিয়ে শুরু করি আলহামদুলিল্লাহ অনেক সেল হতো। তাই প্রি আডারকৃত খাবারের অডারের নিতাম যেটা সম্পূন আমার মায়ের সাহায্যে তৈরি করা। যেখানে আমার ৩০০০ টাকা দিয়ে শুরু ছিল এখন আমার ইনভেস্টমেন্ট প্রায় ৪৫০০০ টাকা আলহামদুলিল্লাহ!!!!!!
এই প্লাটফমের কাছ থেকে আমার শেখা অনেক কিছু আমার বড় অর্জন এই প্লাটফমের আজীবন সদস্য হয়ে।। শেখার কোনো বয়স হয় না সেটা আমি বিশ্বাস করি তাই তো এই প্লাটফমের সাথে এখনও লেগে আছি।
পরিস্তিতি বাস্তবতাকে চেনায় আর আমিও বাস্তবতাকে চিনতে শিখেছি।। যেখানে আমি রান্নাই পারতাম না সেখানে এখন আমি ২৫+ খাবার আইটেম তৈরি করতে পারি।
আমার ফ্রোজোনআইটেম গুলো হলো :
চিকেন অনথন, চিকেন রোল, চিকেন টিকিয়া, চিকেন ফ্রাই, ভেজি টেবল রোল, ভেজি টেবল সমুচা, ভেজিটিবল অনথন, পরটা, রুটি,সিংগারা,পিয়াজু ইত্যাদি আরও ফ্রোজোন আইটেম যে আইটেম গুলো সম্পূর্ণ হোমমেড এবং নিজের হাতে তৈরি।
তবে প্রি অডারকৃত করা খাবার আমার মায়ের সাহায্য তৈরি কারন প্রী অডারকৃত খাবার ২০-১০০ জনের জন্যে করা হয়।
🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿
শখ বশত নিজের উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছি। মেয়ে হয়েও পারি সেটা প্রমান করতে পেরেছি।
মনে রাখবেন.....
Don't neglect the girls, because the girls are strong verb to you....
আমি আমার দাদুর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারিনি। কিন্তু অনেকের দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন করতে পেরেছি । আমার দাদুর ও দৃষ্টিভঙ্গি একদিন পরিবর্তন হবে আমার বিশ্বাস ।।
📌স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে ৮৪১
তারিখ ৩১-০৭-২০২২ইং
সকলের প্রতি শ্রদ্বা জানাচ্ছি।।
নিশাত সিদ্দিকী মম।
ব্যাচ : ১৭
রেজিস্ট্রেশন নং : ৮৭৫৩৫
জেলা : টাংগাইল
থানা : কালিহাতি
মূলত কাজ করছি,,,
খাবারের ৩০+ আইটেম নিয়ে এবং ফ্রোজেন আইটেম নিয়ে।
🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿
,
ধন্যবাদ সবাইকে আমার গল্পপড়ে দেখার জন্য।।।